চলমান সংবাদ

আওয়ামী লীগে হাইব্রিড ও সুবিধাবাদীদের দাপটে ত্যাগীরা কোণঠাসা

আওয়ামী লীগ প্রতিষ্ঠার ৭৩ বছরে ক্ষমতায় থাকলেও হাইব্রিড আর বহিরাগতদের মোকাবেলায় হিমশিম খাচ্ছে। এই সমস্যার কথা উঠে এসেছে খোদ নিরাপত্তাসংক্রান্ত জাতীয় কমিটির সভায়।

এই কমিটির প্রধান হলেন প্রধানমন্ত্রী এবং আওয়ামী লীগের সভাপতি শেখ হাসিনা। গত সপ্তাহে ওই সভায় বলা হয়েছে, দলে হাইব্রিড এবং সুবিধাবাদীদের দাপটে প্রকৃত ত্যাগী নেতা-কর্মীরা কোনঠাসা। একারণে তৃণমূলের সাংগঠনিক অবস্থা দুর্বল হয়ে পড়েছে।

প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ঢাকা মহানগর উত্তর ও দক্ষিণ যুবলীগ, স্বেচ্ছাসেবক লীগ, ঢাকা মহানগর ছাত্রলীগ এবং কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগসহ বিভিন্ন অঙ্গ সহযোগী সংগঠনের দীর্ঘদিন সম্মেলন ও নতুন কমিটি নেই। মূল দলসহ অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনে প্রচুর পরিমাণে হাইব্রিড, বহিরাগত অনুপ্রবেশকারী রয়েছে।

ছাত্রলীগ, যুবলীগ, স্বেচ্ছাসেবী লীগ, শ্রমিকলীগ ও যুব মহিলা লীগের সাংগঠনিক অবস্থা খুবই দুর্বল অবস্থানে রয়েছে। অনুপ্রবেশকরী এবং সুবিধাবাদীদের দাপটে প্রকৃত ও ত্যাগী নেতা-কর্মীরা কোণঠাসা। দীর্ঘদিন ক্ষমতায় থাকা দল এবং বিগত দুই বছর কোভিডের কারণে দলের সাংগঠনিক কার্যক্রম দূর্বল অবস্থায় পতিত হয়েছে। বর্তমানে ১৪ দলের সাংগঠনিক তৎপরতা অনেকাংশে শিথিল হয়ে আছে। বর্তমানে জাতীয় পার্টিসহ আওয়ামী লীগের রাজনৈতিক মিত্রদের সমন্বয় এবং মিত্র শক্তি অনেক দুর্বল হয়ে পড়েছে পড়েছে।
আওয়ামীলীগের হাইব্রিড এবং অনুপ্রবেশকারীরা ঢুকে আধিপত্য বিস্তারের কারণে দেশের বিভিন্ন এলাকায় আওয়ামী লীগ ও এবং তার অঙ্গ সংগঠনগুলোর মধ্যে সংঘাত সংঘর্ষ লেগেই আছে। দেশে যত রাজনৈতিক সংঘাত ঘটছে তার মধ্যে আওয়ামী লীগ ও সহযোগী সংগঠনগুলোর মধ্যে সংঘাতের ঘটনাই বেশি। মানবাধিকার সংগঠন আইন ও সালিশ কেন্দ্রের (আসক) হিসেবে চলতি বছরের প্রথম চার মাসে যে ২০১টি সংঘাত সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে তার মধ্যে শুধু আওয়ামী লীগ এবং তার সহযোগী সংগঠনগুলোর মধ্যে অভ্যন্তরীণ সংঘাতের ঘটনা ঘটেছে মোট ২৫টি।
‘আমার জানা মতে ২০-২৫ জন সংসদ সদস্য ও কিছু কেন্দ্রীয় নেতা হাইব্রিডদের ব্যক্তিগত স্বার্থে আওয়ামী লীগে জায়গা দেন’

২০২১ সালে আওয়ামী লীগ তার সহযোগী সংগঠনগুলোর মধ্যে অভ্যন্তরীণ সংঘাতের ঘটনা ঘটেছে ৯৬ টি। ২০২০ সালে তাদের অভ্যন্তরীণ সংঘাত হয়েছে ৭৪টি।
এদিকে হাইব্রিডদের দাপটের কারণে আওয়ামী লীগের জেলা ও উপজেলা পর্যায়ে অনেক কমিটি এখনো করা যায়নি। বছরের পর বছর ঝুলে আছে। আবার অনেক কমিটিতে হাইব্রিডরা জায়গা পাওয়ায় স্থানীয় পর্যায়ে অসন্তোষ দেখা দিয়েছে। রাজশাহী জেলা আওয়ামী লীগের কমিটিতে হাইব্রিডরা জায়গা পাওয়ার অভিযোগে সেখানে আছে অসন্তোষ। ফরিদপুর জেলা কমিটি হাইব্রিড মুক্ত করার দাবি ছিলো দীর্ঘদিন ধরে। অনেকটা মুক্ত হলেও এখনো হাইব্রডরা আছেন। হাইব্রিডদের বিরুদ্ধে ব্যাপক অসন্তোষ আছে নওগাঁ ও চাপাইনবাবগঞ্জ জেলায়।
হাইব্রিডের সাম্প্রতিক সময়ের একটি ভালো উদাহরণ হলো তাজরীন ফ্যাশানের বিতর্কিত মালিক দেলোয়ার হোসেন। অভিযোগ আছে আর্থিক সুবিধার বিনিময়ে তাকে ঢাকা উত্তর মৎস্যজীবী লীগের সভাপতি করা হয়েছে।
আওয়ামী লীগে কেন্দ্রীয় কমিটির উপ-কমিটিগুলো কেন্দ্রীয়ভাবে হাইব্রিড ঢোকানোর একটা ভালো জায়গায় পরিণত হয়েছে। বহুল সমালেচিত রিজেন্ট সাহেদ নামে পরিচিত মোহাম্মদ সাহেদ, হেলেনা জাহাঙ্গীর, জামাল হোসেন উপ-কমিটির সদস্য ছিলেন। যুব মহিলা লীগের কমিটিতেও হাইব্রিড ছিল।
অডিও শুনুন 03:25
‘হাইব্রিডরা কোনো কমিটিতে নেই, একমাত্র চাঁপাইনবাবগঞ্জে কিছু ঝামেলা আছে’

আওয়ামী লীগের মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক উপ-কমিটির সদস্য মনিরুজ্জামান মনির জানান,”আমার জানামতে ২৫-২০ জন সংসদ সদস্য ও কিছু কেন্দ্রীয় নেতা হাইব্রিডদের ব্যক্তিগত স্বার্থে আওয়ামী লীগে জায়গা দেন। কিছু সংসদ সদস্য আছেন তারা স্থানীয় রাজনীতিতে কোনঠাসা। তারা হাইব্রিডদের নিয়ে দল করেন। আবার কিছু সংসদ সদস্য আছেন যারা অন্য আদর্শ থেকে দলে এসেছেন তারা নিজেরাই হাইব্রিড, তাদের অনুসারীরাও হাইব্রিড।”
তিনি বলেন,”আওয়ামী লীগের কার্যনির্বাহী কমিটির সভায়ও সভানেত্রী হাইব্রিডদের নিয়ে কথা বলেছেন। তিনি বলেছেন দলে কয়েকহাজার হাইব্রিড অনুপ্রবেশ করেছে। তিনি দলের আরেক শীর্ষ নেতাকে অনুপ্রবেশকারীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে বলেছেন। কিন্তু দুঃখজনক হলেও সত্য যে তাদের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে না। এর ফলে ত্যাগী নেতা-কর্মীদের মন ভেঙে যায়।”
আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক এস এম কামাল হোসেন দলে হাইব্রিড ও বহিরাগতদের অনুপ্রবেশের কথা স্বীকার করলেও তিনি দাবি করেন,” হাইব্রিডরা কোনো কমিটিতে নাই। একমাত্র চাঁপাইনবাবগঞ্জে কিছু ঝামেলা আছে। এছাড়া আর যারা আছেন তারা কোনো নেতা বা এমপির সাথে ব্যক্তিগত সম্পর্কের কারণে আওয়ামী লীগের নাম ব্যবহার করে সুবিধা নিয়ে থাকতে পারেন।”
তার কথা,” আমাদের প্রতি নির্দেশনা হলো ২০০১-২০০৮ এই সময়ে আওয়ামী লীগের দুঃসময়ে যারা বিএনপি-জামাতের নির্যাতন সহ্য করে আওয়ামী লীগ করেছেন তারাই বিভিন্ন কমিটিতে স্থান পাবেন। যারা তাদের অতীতের ভুল বুঝতে পেরে বঙ্গবন্ধু ও আওয়ামী লীগের আদর্শে বিশ্বাসী হয়ে আওয়ামী লীগে আসতে চান তারা আসতে পারবেন। তাদের জন্য কোনো বাধা নেই।”

সূত্রঃ ডয়চে ভেলে