চলমান সংবাদ

অন্যের প্রাণ বাঁচাতে জীবন দিয়েছেন একজন পুলিশ কনস্টেবল

মনির হোসেন জীবন দিয়ে দায়িত্ব পালন করেছেন তিনি ট্রেন আসছে দেখেও রেললাইনের উপর উঠে আসা বাস-অটোরিকশার যাত্রীদের বাঁচাতে ছুটে গিয়েছিলেন নগর পুলিশের ট্রাফিক বিভাগে কর্মরত কনস্টেবল মনির হোসেন (৪৫)। জীবনের ঝুঁকি নিয়ে দায়িত্ব পালন করছিলেন তিনি। শনিবার (৪ ডিসেম্বর) সকালে নগরের খুলশি ঝাউতলা রেলগেটে ডেমু ট্রেন-বাস-আটোরিকশার সংঘর্ষে প্রাণ হারান তিনি। স্থানীয় ও প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, রেলগেটের একপাশে লোহার গেট খোলা থাকায় রেললাইনে উঠে যায় বাস, সিএনজি অটোরিকশা ও টেম্পো। এসময় নাজিরহাট থেকে চট্টগ্রাম স্টেশনগামী ডেমু ট্রেনের সঙ্গে গাড়িগুলোর সংঘর্ষ হয়। এসব গাড়িকে থামাতে গিয়ে দুর্ঘটনায় নিহত হন চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশ-সিএমপি ট্রাফিক উত্তর বিভাগের কনস্টেবল মনির হোসেন (৪৫)। তিনি নোয়াখালী জেলার বেগমগঞ্জ থানার খোয়াজপুর গ্রামের কেবিএম ফয়েজ হোসেনের ছেলে। তিনি নগরের বায়েজিদ বোস্তামী থানার চন্দননগর এলাকায় পরিবার নিয়ে বসবাস করতেন। ঝাউতলা রেল ক্রসিং এলাকায় মনির হোসেনের সঙ্গে দায়িত্ব পালন করছিলেন ট্রাফিক পুলিশ কনস্টেবল আলী। তিনি বলেন, মনির ভাই ভালো মানুষ ছিলেন। আমি রেলগেটের পশ্চিম পাশে ডিউটি করছিলাম আর মনির ভাই ছিলেন পূর্বপাশে। ডেমু ট্রেন আসার সময় রেললাইনের ওপর বাস, অটোরিকশা ও টেম্পো উঠে গেলে তিনি সেগুলো সরাতে ছুটে যান। যাত্রীদের বাঁচাতে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে ছুটে গিয়েছিলেন তিনি। এসময় ঘটে দুর্ঘটনা। দায়িত্ব পালনে তিনি পিছপা হননি। দুর্ঘটনার পর হতাহতদের চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেয়া হয়। নিহতদের স্বজনদের আহাজারিতে ভারি হয়ে ওঠে সেখানকার পরিবেশ। জরুরি বিভাগের সামনে বিলাপ করতে দেখা যায় নিহত ট্রাফিক পুলিশ কনস্টেবল মনির হোসেনের স্ত্রী-সন্তানদের। নিহত মনির হোসেনের স্ত্রী সেলিনা আক্তার বলেন, সরকারি পোশাক পরা অবস্থায় দায়িত্ব পালন করতে গিয়ে আমার স্বামী নিহত হয়েছেন। জীবনের শেষ সময় পর্যন্ত তিনি নিজের দায়িত্ব পালন করেছেন। এর বিনিময়ে আমরা পেয়েছি তাঁর রক্তাক্ত মরদেহ। আমাদের কি হবে? সন্তানদের নিয়ে কি করবো? তাদের দায়িত্ব কে নিবে? আমি এর বিচার চাই। যাদের গাফিলতিতে এই দুর্ঘটনা ঘটেছে তাদের সবাইকে সর্বোচ্চ শাস্তি দিতে হবে।’ নিহত মনির হোসেনের বড় মেয়ে মাহমুদা ফেরদৌস লিমা ও মেঝ মেয়ে বিবি ফাতেমা বলেন, বাবা আর নেই, আমরা কি করবো? আব্বুর মতো কেউ তো আর ভালবাসবে না। আমাদের দায়িত্ব কে নিবে ? বাবা ছাড়া আমরা অসহায়। আমার বাবার কি দোষ ছিল? সিএমপি সূত্রে জানা যায়, পুলিশ কনস্টেবল মনির হোসেন ১৯৭৭ সালে ১৫ এপ্রিল জন্মগ্রহণ করেন। ১৯৯৬ সালের ৮ জুন তিনি পুলিশে যোগদান করেন। সিএমপিতে যোগদান করেন ২০১৩ সালের ১৭ জুন। ট্রাফিক উত্তরে যোগদান করেন ২০১৯ সালের ৮ জুন। পুলিশের চাকরি জীবনে মনির হোসেন কাজের স্বীকৃতি স্বরূপ ৪৯ টি পুরস্কার পান ও চাকরি জীবনে কোন শাস্তি পাননি তিনি। সারাজীবন সততা-নিষ্ঠার সঙ্গে দায়িত্ব পালন করেছেন তিনি।

# ০৪.১২.২০২১ চট্টগ্রাম #