চলমান সংবাদ

রেল সিগন্যাল অমান্য, গেটম্যানের অবহেলায় ভয়াবহ দুর্ঘটনা ট্রেন-বাস-অটোরিকশা সংঘর্ষে নিহত ৩, আহত ৮

চট্টগ্রামের খুলশী থানার ঝাউতলা এলাকায় ডেমু ট্রেন, বাস ও সিএনজিচালিত অটোরিকশার ত্রিমুখী সংঘর্ষে পুলিশ সদস্যসহ তিনজন নিহত হয়েছেন। এদের মধ্যে একজন এইচএসসি পরীক্ষার্থীও রয়েছেন। আহত হয়েছেন আরও আটজন। শনিবার (৪ ডিসেম্বর) সকাল ১১টার দিকে ঝাউতলা রেললাইনে এ দুর্ঘটনা ঘটে। রেল সিগন্যাল অমান্য করায় এবং দায়িত্বরত গেটম্যানের অবহেলার কারণে এই দুর্ঘটনা ঘটেছে বলে অভিযোগ করছেন প্রত্যক্ষদর্শীরা। এই ঘটনায় নিহতরা হলেন- পুলিশ সদস্য মনির হোসেন (৪০), সিএনজি অটোরিকশার যাত্রী সৈয়দ বাহাউদ্দিন আহমেদ সোহাগ (৩০), পাহাড়তলী কলেজ থেকে এবারের এইচএসসি পরীক্ষার্থী সাতরাজ শাহীন (১৯)। দুর্ঘটনার কারণ ও দায়ী শনাক্তে তিন সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি গঠন করেছে রেল পুলিশ। প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, জাকির হোসেন সড়কের ওই লেভেল ক্রসিং দিয়ে একটি ডেমু ট্রেন নাজিরহাট থেকে চট্টগ্রাম স্টেশনে যাচ্ছিল। রেললাইনে দুই দিকের রেল গেইট আটকানো হয়েছিল। তার মধ্যেই ৭ নম্বর রোডের একটি বাস উল্টো পথে গিয়ে রেললাইন অতিক্রম করতে চেয়েছিল। বাসটি আসার সময় নগর পুলিশের ট্রাফিক উত্তর বিভাগে কর্মরত কনস্টেবল মনির সংকেত দিয়েছিলেন। কিন্তু বাসটি ট্রাফিক পুলিশের সংকেত মানেনি। এসময় বাসের ধাক্কায় রেললাইনে উঠে যায় সিএনজি অটোরিকশাটি। এ সময় ট্রেনটি সিএনজি অটোরিকশাকে এবং বাসের সামনের অংশে সজোরে আঘাত করে। ট্রেনের ধাক্কায় অটোরিকশাটি ছিটকে ট্রাফিক কনস্টেবল মনিরের ওপর পড়ে। এতে ট্রাফিক পুলিশ মনির ও সিএনজি অটোরিকশার যাত্রী ঘটনাস্থলেই মারা যান। নিহত বাহাউদ্দিন আহমেদের বাড়ি চট্টগ্রামের ফটিকছড়ি উপজেলায়। তিনি পেশায় একজন প্রকৌশলী। তিনি ডালি কনস্ট্রাকশন নামে একটি প্রতিষ্ঠানে কর্মরত ছিলেন। এদিকে শনিবার ঘটে যাওয়া ট্রেন, বাস ও সিএনজি অটোরিকশার মধ্যে সংঘর্ষে তাকে দায়ী করেছেন স্থানীয়রা। তারা জানান, খুলশীর ঝাউতলা রেললাইনে গেটম্যান হিসেবে দায়িত্ব পালন করছিলেন মো. আলমগীর। ঝাউতলার ওই রেললাইনের পূর্ব ও পশ্চিম পাশে দুটি ব্যারিয়ার রয়েছে। ট্রেন আসার আগে পূর্ব দিকের ব্যারিয়ারটি ফেলা হলেও আলমগীর পশ্চিম পাশের বারটি ফেলেননি। এতেই ভয়াবহ এ দুর্ঘটনা ঘটেছে বলে জানিয়েছেন প্রত্যক্ষদর্শীরা। এদিকে দুর্ঘটনার কারণ তদন্তে রেলওয়ে পুলিশের পক্ষ থেকে তিন সদস্যের একটি কমিটি করা হয়েছে। তদন্ত কমিটির প্রধান করা হয়েছে রেলওয়ে পুলিশের চট্টগ্রামের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার আব্দুল গফুরকে। এছাড়া রেলওয়ে পুলিশের সহকারি পুলিশ সুপার (সদর) ও চট্টগ্রামের রেলওয়ে থানার ভারপ্রাপ্ত কমকর্তাকে (ওসি) তদন্ত কমিটির সদস্য করা হয়েছে। চট্টগ্রাম রেলওয়ে পুলিশ সুপার মোহাম্মদ হাছান চৌধুরী বলেন, সকালে রেলক্রসিংয়ে ডেমু ট্রেনের সঙ্গে ত্রিমুখী সংঘর্ষে ঘটনাস্থলে ৩ জন নিহত ও ৬ জন আহত হয়েছে। রেল সিগন্যাল অমান্য করার কারণেই এ দুর্ঘটনা ঘটেছে। অতিরিক্ত পুলিশ সুপার আবদুল গফুর’র নেতৃত্বে ৩ সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। এ কমিটি তিন কার্য দিবসের মধ্যে প্রতিবেদন দেবে। তাদের তদন্ত প্রতিবেদনে সব উঠে আসবে। ঘটনার সময় গেটম্যানের অনুপস্থিতি ও ব্যারিকেড নামিয়ে না রাখার বিষয়টি খতিয়ে দেখা হচ্ছে।’ অন্যদিকে রেলওয়ে পূর্বাঞ্চলের মহাব্যবস্থাপক (জিএম) জাহাঙ্গীর হোসেন বলেন, গেটম্যানের কোনো অবহেলা থাকলে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে। আমরা এই বিষয়ে একটি তদন্ত কমিটি গঠন করব। নগর পুলিশের উপ-কমিশনার (উত্তর) মোখলেছুর রহমান বলেন, রেলক্রসিংয়ে গেট থাকলেও সেখানে যারা দায়িত্বরত তারা ট্রেন আসার আগে গেইট বন্ধ করতে দেরি করেন। এর ফাঁকে গাড়িগুলো রেললাইনে উঠে যায়। সেখানে দু’টি রেললাইন আছে। সংকেত থাকলেও গাড়ির চালকরা ভেবেছিলেন, অন্য লাইন দিয়ে গাড়ি যাবে। কিন্তুগাড়ি যে লাইনে উঠেছিল, ট্রেনটি সেই লাইন দিয়ে চলে আসায় দুর্ঘটনাটি ঘটেছে। পুলিশ জানিয়েছে, দুর্ঘটনায় আহত ছয়জন চমেক হাসপাতালে চিকিৎসাধীন আছেন। এরা হলেন- আবুল হোসেন (৬৫), জমির উদ্দিন (৪০), শহীদুল ইসলাম (৪০), জয়নাল (২৬), জোবায়দা (২০), আদনান (৭) এবং মোহাম্মদ (১০)। পাঁচলাইশ মডেল থানার ওসি (তদন্ত) সাদেকুর রহমান বলেন, আহতদের চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। আহতদের মধ্যে আবুল হোসেন (৬৫) ও জমির উদ্দিন (৪৮) নামে দুইজনের অবস্থা আশঙ্কাজনক। মরদেহ মর্গে পাঠানো হয়েছে। দুর্ঘটনার পর থেকে গেটম্যান আশরাফুল আলমগীর ভূঁইয়া পলাতক।

# ০৪.১২.২০২১ চট্টগ্রাম #