বিজ্ঞান প্রযুক্তি

বিজ্ঞান ভাবনা (১০১): পারমাণবিক যুদ্ধ কি আসন্ন?

-বিজন সাহা

গত সপ্তাহে কাউন্টার অ্যাটাক নিয়ে লিখেছিলাম। এরপর অনেক ঘটনা ঘটে গেছে। ভ্লাদিমির পুতিন বেশ কয়েকটি সাক্ষাৎকার আর ফোরামে এ নিয়ে কথা বলেছেন। সেরগেই শইগু, সেরগেই লাভরভ এ নিয়ে কথা বলেছেন। এবং সবাই বেশ কঠোর ভাবেই কথা বলেছেন। এর মধ্যে সেরগেই কারাগানভ এমনকি পারমাণবিক আক্রমণের প্রশ্ন তুলেছেন। এতদিন পর্যন্ত শুধুমাত্র পশ্চিমা বিশ্ব থেকে রাশিয়া ইউক্রেনের উপর ট্যাক্টিক্যাল পারমাণবিক অস্ত্র ব্যবহার করতে পারে বলে বিভিন্ন উস্কানিমূলক কথা বলত। এদিকে সলবিয়ভ, সাতানভস্কি, এমনকি মেদভেদেভ মাঝে মধ্যে লন্ডন বা ওয়াশিংটনে আক্রমণের কথা বলত। তবে সেগুলো ছিল মূলত কথার পিঠে কথা, বলার জন্য বলা। কিন্তু কারাগানভের লেখা নিয়ে কী রাশিয়া, কী পশ্চিমা মাধ্যমে অনেক কথাবার্তা, অনেক জল্পনাকল্পনা শুরু হয়েছে, হচ্ছে। কারণ তিনি অফিসিয়াল পদাধিকারী না হলেও নেপথ্য থেকে তিনি রাশিয়ার নীতি নির্ধারণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন। কী বলেছেন সেরগেই কারাগানভ?

সম্প্রতি লেখা এক প্রতিবেদনে তিনি বলেছেন প্রথমে পারমাণবিক আঘাত হানা ছাড়া রাশিয়ার কাছে আর অন্য কোন পথ খোলা নেই। উল্লখ করা যেতে পারে যে বর্তমানে পারমাণবিক অস্ত্রের পেছনে খরচ অনেক বেড়েছে। বাড়ছে। বর্তমানে সেটার পরিমাণ বছরে প্রায় ৮০ বিলিয়ন ডলার। প্রতি মিনিটে খরচ ১৫০ হাজার ডলারের বেশি। এই ৮০ বিলিয়নের মধ্যে ৪৩ বিলিয়ন খরচ করে একা আমেরিকা, ১৪ চীন আর ১০ রাশিয়া। এর পরে আছে উত্তর কোরিয়া, ইংল্যান্ড, ফ্রান্স, ইসরায়েল, ভারত। সম্প্রতি আমেরিকার পক্ষ থেকে রাশিয়ার আছে আবার পারমাণবিক অস্ত্র নিয়ন্ত্রণের প্রস্তাব দেয়া হয়েছে। ভ্লাদিমির পুতিন সেই সম্ভাবনা নাকচ করে দিয়েছেন। ইতিমধ্যে আমেরিকার নিও কনজারভেটর পত্রিকায় ইউক্রেনকে ট্যাক্টিক্যাল নিউক্লিয়ার উইপন দেবার দাবি উঠেছে।

এতদিন পর্যন্ত পারমাণবিক অস্ত্র বিশেষ করে আমেরিকা ও রাশিয়ার পরস্পরের বিরুদ্ধে যুদ্ধে না নামার অন্যতম প্রধান ফ্যাক্টর হিসেবে কাজ করেছে। এই যুদ্ধ দুই দেশ তো বটেই এমনকি সারা বিশ্বের প্রাণীকুলের ধ্বংসের কারণ হতে পারে। তবে এটা ঠিক পারমাণবিক অস্ত্র যখন প্রথম তৈরি করা হয় এটাকে তখন যুদ্ধের প্রতিষেধক  হিসেবে দেখা হয়নি। এটা ছিল যুদ্ধে ব্যবহারের জন্য প্রচণ্ড শক্তিশালী এক অস্ত্র। যদিও জাপানে পারমাণবিক অস্ত্র ব্যবহারের কোনই সামরিক প্রয়োজন ছিল না তারপরেও হিরোশিমা ও নাগাসাকিতে বোমা বর্ষণ করা হয় মূলত সোভিয়েত ইউনিয়নকে সতর্ক করার জন্য। তবে এই আক্রমণ থেকে যে ধরণের এফেক্ট আশা করেছিল যুদ্ধবাজরা সেটা সেদিন তারা পায়নি, কেননা কার্পেট বম্বিং করে কোন দেশের অনেক বেশি ক্ষয়ক্ষতি করা যায়। তবে সেই সময়ে রেডিয়েশন সম্পর্কে মানুষের তেমন জ্ঞান বা ধারণা ছিল না। তাই জাপানে বোমা ফেলার আগে আট বার অনেক সেনার উপস্থিতিতে এই বোমার কার্যকারিতা চাক্ষুষ দেখার জন্য পরীক্ষা চালানো হয়। ফলে পঞ্চাশের দশকে বোমার সংখ্যা বাড়ানো হয়। তবে কোরিয়ার যুদ্ধ মতামত বদলাতে বাধ্য করে, কেননা সে যুদ্ধে প্রচুর বিমান ধ্বংস হয়। তখনও বোমা বহনকারী রকেট বা ক্ষেপণাস্ত্র তৈরি হয়নি। তাই বোমা থাকলেও তা কিভাবে শত্রুর দেশে ফেলা যাবে বা আদৌ যাবে কি না সেটা নিয়ে সন্দেহ জাগে। ক্যারিবিয়ান ক্রাইসিস পারমানবিক অস্ত্রকে নতুন পর্যায়ে নিয়ে যায়। সে সময় প্রথম বারের মত যুদ্ধ প্রতিরোধে পারমাণবিক অস্ত্রের গুরুত্ব অনুধাবন করে রাজনীতিবিদরা। ক্যারিবিয়ান ক্রাইসিসের সময় মার্কিন জেনারেলরা সোভিয়েতের বিরুদ্ধে পারমাণবিক অস্ত্র ব্যবহারের পক্ষে মত দেয়, তবে কেনেডির দৃঢ়টার কারণে সেটা সম্ভব হয়নি। মনে হয় একারণেই পরবর্তীতে কেনেডিকে প্রাণ দিতে হয়েছিল। এ সময়ই রবার্ট ম্যাকনামারা পারস্পরিক নিশ্চিত ধ্বংস ও পারামানবিক প্রতিষেধক শব্দ দুটো চালু করেন। তার মতে বিরোধী পক্ষ কখনই আক্রমণ করবে না যদি জানে প্রত্যুত্তরে নিজের অস্তিত্ব বিপন্ন হবে। ষাটের দশকে সোভিয়েত ইউনিয়নের কনভেনশনাল অস্ত্র বেশি ছিল। আমেরিকা তথা ন্যাটো ধারণা করে যে পারমাণবিক অস্ত্র ব্যবহার করে সেই অভাব পুষিয়ে নেবে। সত্তরের দশকে আরও নিখুঁতভাবে লক্ষ্যভেদী সিস্টেম তৈরি হয়। ফলে এক আঘাতে প্রতিপক্ষের নেতৃত্ব ধ্বংস করে যুদ্ধে জেতার স্ট্র্যাটেজি নিয়ে অনেকে ভাবতে শুরু করে কারণ এক্ষেত্রে প্রতিপক্ষের হাতে উত্তর দেবার সময় থাকবে না। ১৯৭৩ সালে নতুন ডক্ট্রিন প্রকাশিত হয় – যার লক্ষ্য ছিল শত্রুকে নেতৃত্বহীন করা। ফলে মূল প্রশ্ন দাঁড়ায় কত অল্প সময়ে নিক্ষিপ্ত ক্ষেপণাস্ত্র শত্রুকে আঘাত হানতে পারবে। আর এ কারণেই মস্কোর কাছাকাছি অস্ত্র বসানোর দরকার হয়। এই সূত্র ধরে জার্মানি, ইতালি, তুরস্ক এসব দেশে পারমাণবিক অস্ত্র মোতায়েন করা হয়। শুধু ন্যাটোর দেশগুলোতেই নয়, ওয়ার্স চুক্তিভুক্ত দেশগুলোতেও তখন পারমানবিক অস্ত্র মোতায়েন করা হয় বলে শোনা যায়। আজ যে পোল্যান্ড বা রুমেনিয়ায় ঘাঁটি তৈরি, ইউক্রেনকে ন্যাটোর অন্তর্ভুক্ত করার প্রচেষ্টা সেটা এই ডক্ট্রিন অনুসরণ করেই। ১৯৮৭ সালে গরবাচেভ – রিগ্যান সল্ট চুক্তির পরে আসে পারস্পরিক নিরাপত্তা নিশ্চিত করার ডক্ট্রিন। তবে সেটা বেশি দিন টেকেনি। উল্লেখ করা যেতে পারে যে বর্তমান দাবি অনুযায়ী পারমাণবিক সিস্টেম এমন ভাবে গড়া যে এমনকি যদি নেতৃত্ব ধ্বংস হয়েও যায় তারপরেও শত শত ক্ষেপণাস্ত্র পারমাণবিক ওয়ার হেড নিয়ে প্রতিপক্ষের উপর ঝাঁপিয়ে পড়বে। ফলে পালনোর কোন উপায় নেই।

ফেরা যাক কারাগানভের কথায়। তিনি বলছেন পাশ্চিমা এলিট শ্রেণী আজ এতটাই অপরিণামদর্শী যে তারা আর পারমাণবিক যুদ্ধের ভয় পায় না। ফলে বর্তমানে পারমাণবিক অস্ত্র যুদ্ধের প্রতিষেধক হিসেবে আর তারা দেখছে না। যদি আগে পারমাণবিক যুদ্ধ মানেই গ্লোবাল যুদ্ধ হিসেবে দেখা হত এখন অনেকেই ভাবছেন এই অস্ত্র লোকালি ব্যবহার করা সম্ভব। তাই কারাগানভ প্রশ্ন তুলছেন সেই অস্ত্র যদি থাকে তাহলে কেন ব্যবহার করা হবে না। তিনি স্বীকার করেন এটা নিঃসন্দেহে কঠিন সিদ্ধান্ত, তবে যখন অন্য উপায় না থাকে তখন এ ধরণের সিদ্ধান্ত নিতে হয়। এটা অনেকটা ব্যাপক রিস্ক থাকার পরেও অস্ত্রপ্রচার করা। কারণ এর ফলে রুগি বাঁচলে বাঁচতেও পারে, অন্যথায় মৃত্যু অনিবার্য। তবে কারাগানভ কোন মতেই ইউক্রেনে আঘাতের পক্ষপাতি নন। তার মতে ইউক্রেন বিপথগামী হলেও আমাদের ভাই। আজ আমাদের মধ্যে যে যুদ্ধ তার হোতা অন্যেরা। ইউক্রেনে আঘাত হেনে ভবিষ্যৎ যুদ্ধ এড়ানো যাবে না। তাহলে কার উপর সেই আঘাত হানতে হবে? একথা ঠিক যে যুদ্ধের পেছনে কলকাঠি নাড়াচ্ছে আমেরিকা ও ইংল্যান্ড। হয়তো বা সেখানে আঘাত করাই ঠিক। কিন্তু সেক্ষেত্রে পাল্টা আঘাত এড়ানো যাবে না। সেটা হবে মানবজাতির জাতির জন্য ক্যাটাস্ত্রফিক। তাঁর বিশ্বাস – যদি ইউরোপের কোথাও, যেমন জার্মানি বা পোল্যান্ডে আঘাত হানা হয় তবে আমেরিকা সেটা এড়িয়ে যাবে। কারণ আমেরিকা তখন বুঝবে রাশিয়া মস্করা করছে না, বাজির দান অনেক উঁচু। তাই যথেষ্ট সম্ভাবনা আছে যে আমেরিকা তখন আলোচনায় বসবে এবং নিজেদের তথা বিশ্বের অস্তিত্ব রক্ষায় সমঝোতায় আসবে। আর যদি আমেরিকা শেষ পর্যন্ত রাশিয়ার উপর আঘাত হানে তাহলে ফুল স্কেল পারমাণবিক যুদ্ধ হবে। অবস্থার যেভাবে অবনতি হচ্ছে তাতে আজ হোক আর কাল হোক এটা করতেই হবে। কিন্তু এখনও রাশিয়া বিভিন্ন দিক থেকে পারামানবিক অস্ত্রে আমেরিকার থেকে এগিয়ে আছে, এই আঘাত তাদের ধাতস্থ হতে সাহায্য করবে। সেক্ষেত্রে সর্বগ্রাসী পারমাণবিক যুদ্ধ কয়েক দশক পিছিয়ে নেয়া যাবে। প্রশ্নটা ইউরোপ বা আমেরিকার মানুষের নয়, প্রশ্ন এসব দেশের এলিট নিয়ে, যাদের স্বেচ্ছাচার শুধু রাশিয়া বা তৃতীয় বিশ্বকেই জিম্মি করছে না, নিজের দেশের মানুষকেও বন্দী করে রেখেছে। বর্তমানে রাজনৈতিক, সাংস্কৃতিক, সামাজিক ক্ষেত্রে যে পরিবর্তন নিয়ে আসা হচ্ছে, সেটা সংখ্যাগরিষ্ঠের মতামত নয়, স্বল্প সংখ্যক এলিটের চাপিয়ে দেয়া ব্যবস্থা যাদের পেছনে প্রকৃত অর্থে জনসমর্থন নেই, যা আছে, সেটা সামাজিক ও সংবাদ মাধ্যমের তৈরি করা। তাই যদি এ ধরণের কোন আঘাত হানা হয় তবে এসব দেশের মানুষ বর্তমান এলিট শ্রেণীকে গদি ছাড়া করবে। এসব দেশে এখনও চিন্তাশীল মানুষের অভাব নেই। তারা যদি ক্ষমতায় আসে তাহলে ইউরোপে বা বিশ্বে শান্তি প্রতিষ্ঠা করা অসম্ভব নয়। আসলে বর্তমানে যে যুদ্ধং দেহি মূর্তি ধারণ করেছে পশ্চিমা এলিট সেটা তাদের সবলতা নয় – দুর্বলতা। আগে পশ্চিমা বিশ্ব বিশ্বের অন্যান্য দেশগুলোকে নিজেদের বলয়ে রাখতে শুধু অস্ত্র, অর্থ – এসবই ব্যবহার করত না, তাদের ছিল বিভিন্ন ধরণের সফট ফোর্স – সেটা এনজিও হোক বা অন্যান্য প্রোজেক্ট হোক। কিন্তু বর্তমানে স্যাঙ্কশন, সামরিক শক্তি প্রয়োগ, বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংস্থার মাধ্যমে সাবোটেজ এসবই তাদের মূল অস্ত্র। আর শক্তি প্রয়োগ – এটা দুর্বলতা।

পড়ুন:  বিজ্ঞান ভাবনা (১০২)  দুনিয়া কাঁপানো একদিন: বিজন সাহা

একটা সময় ছিল যখন ইউরোপের বৃহৎ পুঁজি বিজ্ঞানের হাত ধরে এগিয়ে গেছে, খোলা মনে পরিবর্তনকে গ্রহণ করেছে। বর্তমানে প্রযুক্তির যে বিকাশ তাতে ইউরোপের অবদান অসীম, কিন্তু সেটাকে বাস্তবে রূপ দিয়েছে এশিয়া, আফ্রিকা, ল্যাটিন আমেরিকার বিভিন্ন দেশে থেকে লুট করে আনা অঢেল সম্পদ। প্রত্যক্ষ ঔপনিবেশিক শাসন শেষ হবার পরে আসে অর্থনৈতিক উপনিবেশ। কিন্তু সোভিয়েত ইউনিয়নের পতনের পরে নিজেদের অপ্রতিদ্বন্দ্বী ও অপরাজেয় ভেবে পশ্চিমা দেশগুলো বিশেষ করে রাজনৈতিক ক্ষেত্রে একের পর এক ভুল করতে শুরু করে। এ থেকেই আফগানিস্তানে লজ্জাজনক পলায়ন। এ থেকেই ইরাক, লিবিয়া, সিরিয়ায় ব্যর্থতা। একটা সময় ছিল যখন ভৌগলিক কারণে ইংল্যান্ড, আমেরিকা নিজেদের ধরাছোঁয়ার বাইরে মনে করত। যদিও ইংল্যান্ড রোমানদের দ্বারা পরাভূত হয় তবে না নেপোলিয়ন, না হিটলার – কেউই তাদের পরাজিত করতে পারেনি। অন্যদিকে নাইন ইলেভেনের পর আমেরিকার প্রাচীরও আর অপ্রতিরোধ্য নয়। হয়তো বা এসব কিছুই পশ্চিমা বিশ্বকে মরিয়া করে তুলেছে। তারা পরিবর্তনকে আর গ্রহণ করতে পারছে না বলেই এখন সমস্ত শক্তি নিয়ে নেমেছে রাশিয়ার বিরুদ্ধে।

রাশিয়া ধীরে ধীরে উপলব্ধি করছে যে পশ্চিমা বিশ্বের সঙ্গে আর আলোচনা সম্ভব নয়। ফলে শইগু হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করেছেন যে স্টর্ম শ্যাডো, হাইমারস এসব অস্ত্র ব্যবহার করে যেসব এলাকা যুদ্ধ এলাকা বলে ঘোষিত হয়নি রাশিয়ার সেসব এলাকায় যদি আঘাত হানা হয় তবে রাশিয়া পাল্টা আঘাত হানবে। তবে সেটা আপাতত ইউক্রেন সীমাবদ্ধ থাকবে। ভ্লাদিমির পুতিন বলেছেন রাশিয়া যদি আমেরিকার পাঠানো পেট্রিয়ট ধ্বংস করতে পারে তাহলে তার পক্ষে কিয়েভ বা ইউক্রেনের যেকোনো জায়গায় যেকোনো স্থাপনা ধ্বংস করা কোন ব্যাপারই নয়। এটা মনে হয় ইউক্রেনের নেতৃত্বের উদ্দেশ্যে বলা। অন্যদিকে তিনি এটাও বলেছেন যে হাইমারস, পেট্রিয়ট এসবের মতই এফ-১৬ বিমান পুড়বে ইউক্রেনে। আর যদি এসব বিমান অন্য দেশ থেকে এসে যুদ্ধে অংশ নেয় তবে রাশিয়া ভেবে দেখবে কোন দেশে এসব বিমান ধ্বংস করবে। আন্তর্জাতিক আইন অনুযায়ী তৃতীয় কোন দেশ থেকে উড়ে এসে বিমান হামলা চালালে এরা সেই দেশের বিমানবন্দর আক্রমণ করতে পারে। জো বাইডেনকে কিছু বলতে চান কিনা এই প্রশ্নের উত্তরে পুতিন বলেন – “তিনি বয়স্ক মানুষ, অভিজ্ঞ রাজনীতিবিদ। তিনি যা ভালো মনে করেন তাই করতে পারেন। আর আমরা নিজেদের দেশের স্বার্থে যেটা ভালো সেটা করব। শুধু একটা কথাই বলতে চাই রাশিয়ার স্বার্থ কেউ উপেক্ষা করতে পারবে না, রাশিয়া এখন থেকে আর সেটা করতে দেবে না।” এরপর অবশ্য বাইদেন এক ইন্টার্ভিউতে বলেন যে তিনি বিশ্বাস করেন প্রয়োজনে পুতিন পারমাণবিক অস্ত্র ব্যবহার করতে পারে। এটা যদি তিনি সত্যি সত্যি বিশ্বাস করেন, তাহলে সম্ভাবনা আছে উত্তেজনা কমার। কিন্তু সমস্যা হল – বাইডেন নিজেই নিজের জন্য সবচেয়ে বড় সমস্যা, বিশেষ করে তাঁর ছেলে হান্টার। তাই নিজের রাজনৈতিক উচ্চাভিলাষকে বাস্তবে রূপ দিতে জো বাইডেন যদি মানবজাতির স্বার্থকে পদদলিত করেন তবে ইউক্রেনের যুদ্ধের আগুনে আরও বেশি করে ঘি তাঁকে ঢালতেই হবে। সেই আগুন কতটুকু তাদের নিয়ন্ত্রণে থাকবে সেটা মিলিয়ন ডলার প্রশ্ন। এমনকি স্ট্র্যাটেজিক পারমাণবিক যুদ্ধের সম্ভাবনা উড়িয়ে দেয়া যায় না। রাশিয়াকে যেকোনো মূল্যে পরাজিত করার যে মন্ত্র আজ পশ্চিমা নেতারা জপছে সেই মূল্য দিতে হবে মানবজাতিকে। সোভিয়েত ইউনিয়নে এক সময় বলা হত এমনকি রাঁধুনি পর্যন্ত রাষ্ট্র চালাতে পারে। পশ্চিমা বিশ্বের ক্ষমতাসীন এলিটদের দেখে বলা যায় – কথাটা একেবারেই মিথ্যা। তারা রাষ্ট্র চালাতে নয়, রাষ্ট্র ধ্বংস করতে পারে।

এতদিন পর্যন্ত পশ্চিমা বিশ্বের বিশ্বাস ছিল খুব করে চেপে ধরলে রাশিয়া শেষ পর্যন্ত পিছু হটবে। যদি এতদিন তারা রাশিয়ার কাছ থেকে কন্ট্রিবিউশনের কথা বলে আসছিল, এখন কম্পেন্সেশনের কথা আসছে। কন্ট্রিবিউশন দাবি করা হয় পরাজিত পক্ষের কাছ থেকে, কম্পেন্সেশন বিজয়ীর কাছ থেকে। এটা আসলে রাশিয়ার পশ্চিমা বিশ্বে আটকে দেওয়া রিজার্ভ চুরি বৈধ করার প্রচেষ্টা। অন্যদিকে রাশিয়ার জয় অনিবার্য পরোক্ষ ভাবে সেটা মেনে নেওয়া। এ ব্যাপারে কিছু না বললেও রাশিয়া ধীরে ধীরে স্পষ্ট করে জানিয়ে দিচ্ছে যে পশ্চিমা বিশ্বের কোন অস্ত্রই আর এখানে কাজ করবে না। বর্তমানের হুঁশিয়ারি আসলে তাদেরকে নিজেদের লক্ষ্যে পৌঁছুনর দৃঢ় প্রতিজ্ঞার কথা জানিয়ে দেয়া। কী সেই লক্ষ্য? নিজেদের নিরাপত্তা – নিউট্রাল ইউক্রেন, সেখান থেকে নাজীদের উৎখাত। এরপরও যদি পশ্চিমা বিশ্ব অন্ধবিশ্বাসে রাশিয়ার উপর আক্রমণ চালিয়ে যেতেই থাকে তাহলে অল আউট যুদ্ধ ব্যতীত কোন উপায় থাকবে না। সব কিছু নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যাবার আগেই তাই প্রিভেন্টিভ মেজার হিসেবে পারমাণবিক আঘাতের কথা বলছেন কারাগানভ।

গবেষক, জয়েন্ট ইনস্টিটিউট ফর নিউক্লিয়ার রিসার্চ
শিক্ষক, রাশিয়ান পিপলস ফ্রেন্ডশিপ ইউনিভার্সিটি, মস্কো