চলমান সংবাদ

শহীদ তাজুলের আদর্শ বাস্তবায়নে দলমত নির্বিশেষে ঐক্যবদ্ধ শ্রমিক আন্দোলন গড়ে তোলার বিকল্প নাই

১৯৮৪ সালের ১লা মার্চ স্বৈরাচার এরশাদের লেলিয়ে দেয়া গুন্ডা বাহিনীর হামলায় নির্মভাবে নিহত শ্রমিকনেতা  শহিদ তাজুল ইসলাম স্মরণে এক আলোচনা সভা অদ্য বিকাল ৪টায় বিলস-এলআরসসি মিলনায়তনে অনুষ্ঠিত হয়। চট্টগ্রাম যুব ট্রেড ইউনিয়ন নেটওয়ার্কের উদ্যোগে শ্রমিকনেতা মোহাম্মদ আলমগীর হোসেন এর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত উক্ত আলোচনা সভায় বক্তব্য রাখেন  বিলস এর  সিনিয়র কর্মকর্তা রিজওয়ানুর রহমান খান, পাহাড়ি ভট্টাচার্য, টিইউসি কেন্দ্রীয় কমিটির নেতা ফজলুল কবির মিন্টু, শাহেনেওয়াজ চৌধুরী মিনু, এডভোকেট মোঃ ইকবাল হোসেন, লুৎফুন্নাহার সোনিয়া, নাজমা বেগম, মোঃ জাবেদ আলম কমিউনিটি সেন্টার ও ডেকোরেটার্স শ্রমিক নেতা আব্দুর রহমান ও শেখ সেলিম, হোটেল শ্রমিক নেতা মোঃ হানিফ, হুমায়ুন কবির, মোঃ আলী, হাসিবুর রহমান বিপ্লব, রাশেদা বেগম প্রমুখ শ্রমিক নেতা

সভায় নেতৃবৃন্দ বলেন, এরশাদ বিরোধী রাজনৈতিক জোট সমূহের নেতৃত্বে ঘোষিত হরতালের কর্মসূচি সফল করার জন্য  শ্রমিক কর্মচারী ঐক্য পরিষদ (স্কপ)  শিল্প-কলকারখানায় ৪৮ ঘণ্টার ধর্মঘট আহ্বান করে।

স্কপের ধর্মঘট সফল করার লক্ষে দেশের কলকারখানা ও শিল্পাঞ্চলে ব্যাপক প্রস্তুতি চলছিল। তারই অংশ হিসেবে দেশের তৎকালীন সর্ববৃহৎ পাটকল ‘আদমজী’তে ধর্মঘট সফল করার প্রচার মিছিলে হামলা চালিয়ে খুনি এরশাদের মদদপুষ্ট সায়দুল্লাহ সাদুর গুণ্ডাবাহিনী ২৯ ফেব্রুয়ারি শ্রমিক নেতা তাজুল ইসলামকে ছুরিকাঘাত করে । ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে মৃত্যুর সঙ্গে পাঞ্জা লড়ে ১ মার্চ কমরেড তাজুল ইসলাম শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন।

৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধে তাজুল ন্যাপ-ছাত্র ইউনিয়ন-কমিউনিস্ট পার্টির যৌথ গেরিলা বাহিনীতে যোগদান করেন। যুদ্ধ শেষে নয় মাস পর দেশে ফিরে আসেন এবং দেশের বাম প্রগতিশীল ও অসাম্প্রদায়িক ছাত্র সংগঠন বাংলাদেশ ছাত্র ইউনিয়নকে সংগঠিত করার কাজে মনোনিবেশ করেন। তিনি দেশের অন্যতম প্রধান শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের একজন মেধাবী ছাত্র ছিলেন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় হতে অর্থনীতিতে এম এ পাশ করার পর তার সামনে সুযোগ ছিল কলেজ বা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক হওয়া কিংবা বড় ব্যাংকার অথবা সরকারী কোন বড় চাকুরী করার। কিন্তু সেগুলোর কোনটিই তাজুলকে আকৃষ্ট করতে পারেনি। তিনি বেছে নিয়েছিলেন শ্রমজীবী মানুষকে সংগঠিত করার লক্ষে দেশের সর্ব বৃহৎ পাটকল আদমজীতে বদলি শ্রমিকের চাকরি। শুধু তাই নয় আদমজীতে চাকরি নিয়ে শ্রমিকদের সাথে তাদের  কলোনীতেই থাকতেন এবং তিনি সাধারণ শ্রমিকদের মত অত্যন্ত  সাদাসিধে জীবন যাপন করতেন। ফলে কমরেড তাজুল খুব দ্রুত সাধারণ শ্রমিকদের মাঝে জনপ্রিয় হয়ে উঠেছিলেন। তার জনপ্রিয়তায় স্বৈরশাসক ও তার দোসরদের ভীত কেঁপে উঠেছিল তাই তারা তাকে অত্যন্ত পরিকল্পিতভাবেই হত্যা করেছিল। তাজুলের মৃত্যু নিছক কোন দুর্ঘটনা ছিলনা এটা ছিল একটা পরিকল্পিত হত্যাকান্ড।

কমরেড তাজুল নিজের সর্বস্ব ত্যাগ করে বাংলাদেশের শোষিত বঞ্চিত শ্রমজীবী মানুষকে মুক্তির মোহনায় পৌঁছে দেয়ার লক্ষে জীবনের শেষ মুহুর্ত পর্যন্ত কাজ করে গেছেন। তিনি আমাদের মাঝে ত্যাগের এক অনন্য ও উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত স্থাপন  করে গেছেন।

বাংলাদেশে শ্রম শোষণ এখন চরম আকার ধারন করেছে। বৈষম্য এখন আকাশচুম্বী। এই শোষণ এবং বৈষম্য থেকে মুক্তি পেতে হলে প্রয়োজন অসংখ্য তাজুল।  কমরেড তাজুল আগামী দিনের শ্রমিক আন্দোলনের পথ প্রদর্শক এবং অনুপ্রেরণা হয়ে বেঁচে থাকবে অনন্তকাল।

বক্তাগন শহীদ তাজুলের আদর্শ বাস্তবায়নে দলমত নির্বিশেষে ঐক্যবদ্ধ শ্রমিক আন্দোলন গড়ে তোলার উপর গুরুত্ব আরোপ করেন।