বিজ্ঞান প্রযুক্তি

বিজ্ঞান ভাবনা (১৪৬): বাইকাল-আমুর মাগিস্ত্রাল

– বিজন সাহা

বিজন সাহা (ফাইল ছবি)

এ বছর বাম বা বাইকাল-আমুর মাগিস্ত্রাল নামক রেলপথের ৫০ বছর পূর্তি হল। সোভিয়েত ইউনিয়ন জন্মক্ষণ থেকেই বিভিন্ন ধরণের যুগান্তকারী প্রজেক্ট হাতে নেয়। আসলে অক্টোবর বিপ্লব নিজেই ছিল এক ঐতিহাসিক তো বটেই, যুগান্তকারী ঘটনা। কৃষি প্রধান, পশ্চাদপদ দেশ থেকে সোভিয়েত ইউনিয়নকে শিল্পোন্নত দেশ ও পরাশক্তিতে পরিণত করাই তো ঐতিহাসিক ব্যাপার। সব নাগরিকের জন্য খাদ্য, বস্ত্র, শিক্ষা, চিকিৎসা, বাসস্থান ও কর্ম সংস্থান করার ঘটনা পৃথিবী আগে কখনও দেখেনি। এরপর মধ্য এশিয়ার মরুপ্রায় অনাবাদী ভূমিকে আবাদী করে মানুষের বসবাসের যোগ্য করে তোলাও যুগান্তকারী। ছিল মহাকাশে কৃত্রিম উপগ্রহ প্রেরণ, মহাকাশে প্রথম যে মানব শিশুর পদার্পণ ঘটে সেই ইউরি গাগারিন সোভিয়েত মানুষ। সে দিক থেকে বাম – এটা সেই প্রজেক্ট যার শুরু বিপ্লব পূর্ব রাশিয়ায়, জন্ম সোভিয়েত ইউনিয়নে আর বিকাশ আধুনিক রাশিয়ায়। যেহেতু আমার পাঠকের অনেকেই বাম রাজনীতি নিয়ে ভাবেন, অনেকেই সোভিয়েত ইউনিয়ন সম্পর্কে জানতে চান তাই আজ বামের নির্মাণের বিভিন্ন পর্যায় নিয়ে এই লেখা। আমরা যারা এই নির্মাণের সাথে প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষ ভাবে জড়িত ছিলাম – এটা এক ধরণের স্মৃতিচারণ।

বাম নির্মাণের প্রধান পর্যায় হিসেবে ধরা হয় ১৯৭৪ থেকে ১৯৮৪ সালকে। ১৯৭৪ সালে নির্মাণ কাজ পুনরায় শুরু হলে সারা সোভিয়েত ইউনিয়ন থেকে দলে দলে তরুণ তরুণী বা কমসোমল কর্মীরা এর সাথে জড়িয়ে পড়ে। বামের পশ্চিম ও মধ্যাংশ নির্মাণ করে বেসামরিক নির্মান কর্মীরা। এই অংশ তাইশেত থেকে তিন্দা পর্যন্ত বিস্তৃত। তিন্দা থেকে ভানিন সমুদ্র বন্দর পর্যন্ত পূর্বাংশ তৈরি করে সোভিয়েত সেনাবাহিনীর রেলওয়ে সেনারা। কঠিন ভূতাত্ত্বিক ও জলবায়ু পরিস্থিতির কারণে রেপথের মধ্যভাগ বা কেন্দ্রীয় অংশ তৈরিতে বার বছরেরও বেশি সময় লাগে। এসব কঠিনতম স্থানের অন্যতম ছিল সেভেরো-আমুরস্কি টানেল যা স্থায়ী ভাবে চালু হয় ২০০৩ সালে। বাইকাল-আমুর মাগিস্ত্রাল সোভিয়েত ইউনিয়নের সবচেয়ে ব্যয়বহুল ইনফ্রাস্ট্রাকচারাল প্রজেক্টের একটি। এর মূল উদ্দেশ্য ছিল এসব এলাকার প্রাকৃতিক সম্পদ আরোহণে সাহায্য করা। কিন্তু বিভিন্ন কারণে বামের আশেপাশে যেসব শিল্পপ্রতিষ্ঠান গড়ে তোলার পরিকল্পনা করা হয়েছিল তা বাস্তবায়িত হয়নি, যদিও রেললাইন তৈরির পাশাপাশি বিভিন্ন জনপদ গড়ে উঠেছিল।

বাইকাল-আমুর মাগিস্ত্রাল বা বাম এটা ৪৩২৪ কিলোমিটার দীর্ঘ রেল লাইন যা তাইশেত শহর থেকে শুরু হয়ে পূর্ব সাইবেরিয়া ও দূর প্রাচ্যের উপর দিয়ে চলে গেছে। পৃথিবীর দীর্ঘতম রেল লাইনের অন্যতম বাম বিশ্বখ্যাত ট্রান্স সাইবেরিয়ান রেলওয়ের সমান্তরালে প্রায় ৬১০ থেকে ৭৭০ কিলোমিটার উত্তরে অবস্থিত। এই রাস্তার বেশির ভাগই পারমাফ্রস্ট এলাকায় অবস্থিত। পারমাফ্রস্ট এটা হিমায়িত শিলার স্তর যা দীর্ঘ সময় গলে না। রাশিয়ায় ভূখন্ডের প্রায় ৪৭% এই পারমাফ্রস্ট। এগারোটি গভীর নদী ও সাতটি পর্বত শ্রেণির মধ্য দিয়ে চলে যাওয়া বাম তাইশেত থেকে ভানিন সমুদ্র বন্দর পর্যন্ত বিস্তৃত এবং ট্রান্স সাইবেরিয়ান রেলওয়ের থেকে দৈর্ঘ্যে ৫০০ কিলোমিটার ছোট। সীমান্ত থেকে ৭০০ থেকে ১০০০ কিলোমিটার গভীরে অবস্থান করার কারণে বাম-এর গুরুত্ব স্ট্রাটেজিক দিক থেকেও অপরিসীম।

১৮৮৮ সালে রুশ টেকনিক্যাল সোসাইটিতে বাইকাল হ্রদের উত্তর প্রান্ত দিয়ে প্রশান্ত মহাসাগরীয় রেললাইন তৈরির প্রজেক্ট নিয়ে আলোচনা শুরু হয়। ১৯৮৯ সালে সেপ্টেম্বর মাসে কর্নেল ভলোশিন ও ইঞ্জিনিয়ার প্রহাস্কোর নেতৃত্বে একটি দল উতস্কুত থেকে মুই নদী পর্যন্ত প্রায় এক হাজার কিলোমিটার রাস্তা অতিক্রম করে। বর্তমানের বাম ঠিক এই রাস্তা ধরেই নির্মাণ করা হয়। তবে তারা এই সিদ্ধান্তে উপনীত হন যে প্রযুক্তিগত ও অন্যান্য সমস্যার কারণে এখানে রেল লাইন তৈরি একেবারেই অসম্ভব। ভলোশিন নিজে পেসিমিস্ট ছিলেন না, তবে তিনি ছিলেন বাস্তববাদী এবং বুঝতে পারেন যে এই বিশাল কর্মযজ্ঞ সম্পন্ন করার মত প্রযুক্তিগত ও আর্থিক সামর্থ্য তৎকালীন রাশিয়ার ছিল না। ১৯১১ সালে ইঞ্জিনিয়ার মিখাইলোভস্কি ও আফোনিন ইরকুতস্ক – ঝিগালভো, তিরোত – ঝিগালভো, তুলুন – উতস্কুত, তাইশেত – উতস্কুত এলাকায় এক্সপিডিশন চালান। ১৯১৪ সালে সরকারের আদেশক্রমে এসব কর্মকাণ্ড চালিয়ে যাওয়া হয়। সে সময় স্থানীয় ব্যবসায়ী ও স্বর্ণ শিল্পপতিরাও নিজেদের উদ্যোগে এ এলাকায় রেলপথ তৈরির সম্ভাবনা খতিয়ে দেখেন যা বদাইবো নদীর আশেপাশের অঞ্চল ট্রান্স সাইবেরিয়ান রেলপথের সাথে সংযুক্ত করবে।   প্রশান্ত মহাসাগরীয় এই রেলপথের প্রকল্পটির আলোচনা উনিশ শতকের শেষের দিকে শুরু হলেও ভূ-সংস্থান বিষয়ক অনুসন্ধান শুরু হয় ১৯২৬ সালে। ১৯২৬ সালে সোভিয়েত আর্মির রেলপথ শাখা বামের ভবিষ্যৎ রাস্তার অনুসন্ধান কাজ শুরু করে। কাজের শুরুতে বামকে গ্রেট নর্থান রেলওয়ের পূর্বাঞ্চলীয় অংশ হিসেবে দেখা হয়।  গ্রেট নর্থান রেলওয়ে ছিল ১৯২৮ সালের সোভিয়েত প্রজেক্ট। ১৯৩২ সালের ১৩ এপ্রিল বাইকাল-আমুর রেলওয়ে সংক্রান্ত সরকারি রেজুলেশন প্রকাশিত হয়। শুরু হয় নির্মাণ কর্ম। তবে সে বছর হেমন্তে সবার কাছে এ বিষয়টি পরিস্কার হয়ে যায় যে এই নির্মাণ কাজে সব চেয়ে বড় সমস্যা হবে শ্রমজীবী মানুষের অভাব। সরকারি ভাবে ২৫ হাজার শ্রমিকের কথা উল্লেখ থাকলেও এই সময়ের মধ্যে মাত্র আড়াই হাজার শ্রমিক সংগ্রহ করা সম্ভব হয়। ফলে ১৯৩২ সালের ২৫ অক্টোবর নতুন রেজুলেশন পাশ হয়। এর ভিত্তিতে গুলাগ নামে পরিচিত বন্দীশিবির থেকে ভিন্ন মতাবলম্বীদের বাম নির্মাণের জন্য পাঠানো হয়। সে সময় বাইকাল-আমুর মাগিস্ত্রাল লাগের (ক্যাম্প) বা সংক্ষেপে বাম লাগ নির্মিত হয়। পরবর্তীতে এসব ক্যাম্প ছয়টি শ্রম শিবির হিসেবে পুনর্গঠন করা হয়েছিল যেখানে বিভিন্ন কারণে যারা বন্দী ছিল তাদের জোরপূর্বক কাজ করানো হত। অচিরেই বোঝা যায় যে  দুর্গম তাইগায় অনুসন্ধান কাজ খুবই রিস্কি। ফলে এরোপ্লেনের সাহায্য নেয়া হয়। সেই কাজ পরিচালনা করেন মিখাইল কিরিলভ যিনি পরবর্তীতে সোভিয়েত ইউনিয়নের বীর পদকে ভূষিত হন। এয়ারোফটোর সাহায্যে ১৯৩৭ সালে শেষ পর্যন্ত বামের ট্র্যাক নির্ধারণ করা সম্ভব হয় – তাইশেত – ব্রাতস্ক –বাইকাল হ্রদের উত্তর প্রান্ত – তীন্দিনস্কি – উস্ত-নিমান – কমসোমলস্কক-না আমুর – সোভিয়েতস্কায়া গাভান বা পোর্ট।

পড়ুন:  বিজ্ঞান ভাবনা (১৪৫): যুদ্ধ –বিজন সাহা

১৯৩৭ সালের ০১ সেপ্টেম্বর বাইকাল-আমুর রেলপথ নির্মাণের উপর সোভিয়েত সরকারের বিজ্ঞপ্তি প্রকাশিত হয়। ১৯৩৮ সালে তাইশেত থেকে ব্রাতস্ক পর্যন্ত বামের পশ্চিম অংশ নির্মাণের কাজ শুরু হয়। বাম লাগ পুনর্গঠন করে   সেখানে ছয়টি রেলওয়ে সংশোধন শিবির গঠন করা হয়। ১৯৩৮ সালে এই নির্মাণ কর্মে ১৫০ হাজার বন্দী কাজ করে। ১৯৩৯ সালে শুরু হয় কমসোমলস্ক-না-আমুর থেকে সোভিয়েতস্কায়া গাভান বা পোর্ট পর্যন্ত পূর্বাঞ্চলীয় অংশের নির্মাণ কাজের প্রস্তুতি। ইতিমধ্যে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ শুরু হলে রাষ্ট্রীয় প্রতিরক্ষা কমিটির সিদ্ধান্তে ১৯৪২ সালে রেলপথের কিছু অংশ তুলে সেই মেটাল ভোলগা রেলওয়ে নির্মাণে পাঠানো হয় যা দিয়ে স্তালিনগ্রাদ – সারাতভ – সীজরান – উলিয়ানভস্ক রেলপথে নতুন লাইন বসানো হয়। কমসোমলস্ক-না-আমুর থেকে সোভিয়েতস্কায়া গাভান পর্যন্ত অংশের নির্মাণ সম্পন্ন হয় ১৯৪৫ সালে। ১৯৪৭ সালের জুনে মূলত আমুর লাগের বন্দীদের দ্বারা কমসোমলস্ক-না-আমুর থেকে উগ্রাল পর্যন্ত পূর্বাঞ্চলীয় অংশের কাজ চলতে থাকে। ১৯৫১ সালের জুলাই মাসে তাইশেত – ব্রাতস্ক – উতস্কুত লাইনে প্রথম ট্রেন চলে আর ১৯৫৮ সালে এই অংশ স্থায়ী ভাবে চালু হয়। এই সময় ব্রাতস্ক জলবিদ্যুৎ কেন্দ্র নির্মাণের জন্য আঙ্গারা নদীর উপর ব্রীজ সহ ১৪০ কিলোমিটার রেললাইন উঠিয়ে ফেলা হয়, এই অংশ ব্রাতস্ক রিজারভয়ার বা জলাশয়ে ডুবে যায়। এই অংশ প্রতিস্থাপনের জন্য নতুন পথ নির্মাণ করা হয়। ১৯৫৩ সালের এপ্রিলে আমুর লাগ বন্ধ করার আগে পর্যন্ত সমস্ত অংশে মাটি ফেলা, রেলপথ তৈরি এবং কমসোমলস্ক–২ – বেরেজোভি অংশে সেতু তৈরি কাজ সম্পন্ন হয়। ১৯৫৮ সালে তাইশেত-ব্রাতস্ক-উতস্কুত রেলওয়ে কাজ শুরু করে। এর পরে প্রায় দশ বছরের জন্য নির্মাণ কাজ স্থগিত রাখা হয়।

১৯৬৭ সালের ২৪ মার্চ সোভিয়েত ইউনিয়নের কমিউনিস্ট পার্টির কেন্দ্রীয় কমিটি ও সোভিয়েত ইউনিয়নের মন্ত্রী সভা বামের কাজ পুনরায় শুরু করার নির্দেশ জারি করে। ফলে ফাইনাল ট্র্যাক নির্বাচন করা হয়। ১৯৭২ সালে বামের তীন্দা এলাকায়, যা লিটল বাম নামে পরিচিত, রেললাইন বসানো শুরু হয়। ১৯৭৪ সালের মার্চে অহল্যা ভূমি বা ৎসেলিনার আবাদীকরণের ২০ বছর পূর্তি উপলক্ষ্যে আলমা-আতায় বক্তব্য রাখার সময় লিওনিদ ব্রেঝনেভ বামকে প্রথম বারের মত নবম পঞ্চবার্ষিকী পরিকল্পনার গুরুত্বপূর্ণ নির্মাণ কাজ হিসেবে উল্লেখ করেন। নির্মাণ কর্মে লোক সংগ্রহে ১৯৭৪ সালে বামকে কমসোমলের পক্ষ থেকে অল সোভিয়েত কমসোমল নির্মাণ কর্মের মর্যাদা দেয়া হয়। গঠন হয় নির্মাণ কর্মী দল বা আত্রিয়াদ। সারা দেশ থেকে হাজার হাজার তরুণ তরুণী নতুন দেশ গড়ার স্বপ্ন নিয়ে সাইবেরিয়ার উদ্দেশ্যে রওনা হয়। ঐতিহাসিক ওয়াগন ১৯৭৯ সালের জুলাই মাসে মস্কো থেকে বামের নির্মাণ কর্মীদের প্রথম দল নিয়ে তীন্দা আসে। ১৯৭৪ সালে সোভিয়েত ইউনিয়নের কমিউনিস্ট পার্টির কেন্দ্রীয় কমিটি ও সোভিয়েত ইউনিয়নের মন্ত্রী সভার নির্দেশে উতস্কুত থেকে কমসোমল-না-আমুরস্ক পর্যন্ত ৩১৪৫ কিলোমিটার, তাইশেত থেকে উতস্কুত পর্যন্ত ৬৮০ কিলোমিটার ও বাম – তীন্দা – তীন্দা – বেরকাকিত ৩৯৭ কিলোমিটার  রাস্তার জন্য অর্থ বরাদ্দ করা হয়।

১৯৭৭ সালে বাম – তীন্দা, ১৯৭৯ সালে তীন্দা – বেরকাকিত লাইন স্থায়ী ভাবে চালু হয়। রাস্তার মূল অংশ তৈরি করতে ১২ বছরেরও বেশি সময় লাগে – ১৯৭২ সালের ৫ এপ্রিল থেকে ১৯৮৪ সালের ০১ অক্টোবর। ১৯৮৯ সালের ০১ নভেম্বর শেষ ৫৪ কিলোমিটার রাস্তা স্থায়ী ভাবে চালু হয়। বামের পূর্বাঞ্চলীয় অংশ মানে কমসোমলস্ক-না-আমুর থেকে তীন্দা পর্যন্ত অংশ তৈরি করে রেল সেনাবাহিনী। ১৫৫৪৩ মিটার লম্বা রাশিয়ার দীর্ঘতম টানেল তৈরির কাজ শুরু হয় ১৯৭৭ সালের মে মাসে আর খনন কার্য শেষ হয় ২০০১ সালে। এই অংশ স্থায়ী ভাবে কাজ শুরু করে ২০০৩ সালে।

বিগত শতাব্দীর অন্যতম প্রধান নির্মাণ কাজের একটি এই বাম-এর দায়িত্বে ছিলেন গাইদার আলিয়েভ, পরবর্তীতে স্বাধীন আজারবাইজানের প্রেসিডেন্ট ও সে দেশের বর্তমান প্রেসিডেন্ট ইলহাম আলিয়েভের পিতা। বামের ৫০ বছর পূর্তি উপলক্ষ্যে ইলহাম আলিয়েভ পুতিনের আমন্ত্রণে মস্কো আসেন এবং দূই প্রেসিডেন্ট বাল্টিক সাগর থেকে আজারবাইন – ইরান হয়ে আরব সাগর পর্যন্ত রেলপথ তৈরির ঘোষণা দেন। আশির দশকে আমাদের অনেকেই বামে কাজ করেছে। প্রতি বছর প্যাট্রিস লুমুম্বা গণ মৈত্রী বিশ্ববিদ্যালয় থেকে কয়েকটি নির্মাণ দল সাইবেরিয়া কাজ করতে যেত। এসব নির্মাণ দল বা আত্রিয়াদ (ইন্তারনাৎসিওনালনি স্তুদেনচেস্কি স্ত্রইতেলনি আত্রিয়াদ – ইন্টারন্যাশনাল স্টুডেন্ট কনস্ট্রাকশন ব্রিগেড – আন্তর্জাতিক ছাত্র নির্মাণকর্মী দল) সাইবেরিয়ার বিভিন্ন এলাকা সহ বামেও কাজ করতে। শুধু তাই নয় আমরা কাজাখস্থান, কিশিনিয়েভ, মস্কো সহ বিভিন্ন এলাকাতেই কাজ করতে যেতাম। আমি নিজে উতস্কুতের ৭০ কিলোমিটার আগে ব্রাতস্ক – উতস্কুত রেল লাইনে কাজ করেছি যা বামের পশ্চিমাংশে অবস্থিত। গণ মৈত্রী বিশ্ববিদ্যালয়ের ফিজিক্স- মাথেম্যাটিক্স ও ন্যাচারাল সায়েন্স ফ্যাকাল্টির আমাদের নির্মাণ দলের নাম ছিল রভেসনিক বা সমবয়সী। আমি সে সময়ে তিন বার নির্মাণ দলে কাজ করেছি। কিছু পয়সার বাইরেও সমাজতন্ত্র নির্মাণে অবদান রাখতে পারছি ভেবে তখন বেশ গর্ব বোধ করতাম। অর্থ বা সমাজতন্ত্র – এ দুটো বিষয়ে সফল না হলেও সেই অভিজ্ঞতা ছিল অমূল্য। সত্যি কথা বলতে আত্রিয়াদে কাজ করার অভিজ্ঞতা আমার জীবনে বেশ গভীর ছাপ রেখেছে। যদি আবার কখনও সুযোগ হত সাইবেরিয়ায় কাজ করার, নিশ্চয়ই যেতাম, বিশেষ করে ছবি তুলতে। এখন গর্ব করার মত তেমন কিছু নেই। তবুও যখন শুনলাম বাম ৫০ বছরে পা দিয়েছে সাইবেরিয়ার সেই সব দিনের কথা নতুন করে মনে পড়ল, মনে পড়ল বন্ধুদের মুখ।

গবেষক, জয়েন্ট ইনস্টিটিউট ফর নিউক্লিয়ার রিসার্চ
শিক্ষক, রাশিয়ান পিপলস ফ্রেন্ডশিপ ইউনিভার্সিটি, মস্কো