হাইকোর্টের এই রায়ের ফলে মায়ের পরিচয়েও যেকোনো সন্তান শিক্ষার অধিকার পাবেন।
হাইকোর্টের এই রায়ের ফলে মায়ের পরিচয়েও যেকোনো সন্তান শিক্ষার অধিকার পাবেন।

বাংলাদেশে শিক্ষা ক্ষেত্রে সব ফরমে এখন থেকে অভিভাবকের ঘরে মা, বাবা অথবা আইনগত অভিভাবকের নাম লেখা যাবে বলে হাইকোর্ট রায় দিয়েছে।

সব ফরমে এই তিনটি বিকল্প বাধ্যতামূলকভাবে সংযুক্ত করার জন্য নির্দেশনা দিয়েছে হাইকোর্ট।

বাংলাদেশে ১৪ বছর আগে করা একটি রিটের চূড়ান্ত শুনাটি শেষে হাইকোর্ট এই রায় দিয়েছে।

আগে শিক্ষা ফরমে শুধু পিতার নাম থাকলেও ২০০০ সালে সেখানে মায়ের নাম লেখাও বাধ্যতামূলক করা হয়। কিন্তু হাইকোর্টের এই রায়ের ফলে এখন থেকে শুধুমাত্র মায়ের পরিচয়েও যেকোনো সন্তান শিক্ষার অধিকার পাবেন।

রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল অমিত দাস গুপ্ত বিবিসি বাংলাকে বলেছেন, ‘’অনেক ক্ষেত্রে দেখা যায় যে, আমাদের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানসমুহের যে ফর্মগুলো আমাদের পূরণ করতে হয়, সেখানে আগে শুধু পিতার নাম লিখতে হতো।”

“কিন্তু অনেক সন্তান আছে, যাদের ক্ষেত্রে শুধু পিতার নাম লেখা সম্ভব না। যেমন কেউ যদি রেপ ভিকটিমের সন্তান হয়- যেমন আমাদের স্বাধীনতা যুদ্ধের সময়েও তো এমন ঘটনা ঘটেছিল।”

মি. দাশগুপ্ত বলেন, এখন থেকে অভিভাবক হিসাবে যার নাম লিখতে চাইবেন, তার নামই লেখা যাবে। সেটা পিতার নাম হতে পারে,মাতার নাম হতে পারে অথবা আইনগত অভিভাবকের নাম হতে পারে।

তিনি জানান, এখন থেকে ফরমে এই তিনজনের যে কোনো একজনের নাম ব্যবহার করা যাবে। সব শিক্ষা বোর্ডকে এজন্য ব্যবস্থা নিতে নির্দেশ দিয়েছেন হাইকোর্ট।‘’

একটি রিট আবেদনের চূড়ান্ত শুনানি থেকে বিচারপতি নাইমা হায়দার ও বিচারপতি খায়রুল আলমের বেঞ্চ এই রায় দিয়েছেন।

যে ঘটনার প্রেক্ষিতে এই রায় এলো

পিতার স্বীকৃতি না পাওয়ায় ঠাকুরগাঁয়ের একজন শিক্ষার্থী বিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রেশন ফরমে বাবার নাম লিখতে পারেননি। এরপর তাকে রেজিস্ট্রেশন কার্ড দেয়নি রাজশাহী শিক্ষা বোর্ড।  সেই সময় শিক্ষার্থীর অভিভাবক হিসাবে বাবা ও মায়ের নাম লেখা বাধ্যতামূলক ছিল।

২০০৭ সালের ২৮শে মার্চ এই ঘটনা নিয়ে বাংলাদেশের দৈনিক প্রথম আলোয় ‘বাবার পরিচয় নেই, বন্ধ হলো মেয়ের লেখাপড়া’ শিরোনামে একটি প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়।

সেখানে সেই কিশোরীকে উদ্ধৃত করে বলা হয়, ‘’আমি বাবার নামটি রেজিস্ট্রেশন ফরমে লিখতে পারিনি। কারণ ওই লোকটি আমাদের স্বীকৃতি দেয়নি। তার নাম না লেখায় আমার রেজিস্ট্রেশন কার্ডও আসেনি। আমি এসএসসি পরীক্ষা দিতে পারলাম না।‘’

এরপর ওই প্রতিবেদন যুক্ত করে ২০০৯ সালে হাইকোর্টে রিট করে বাংলাদেশ মহিলা পরিষদ, নারীপক্ষ ও বাংলাদেশ লিগ্যাল এইড অ্যান্ড সার্ভিসেস ট্রাস্ট। এর প্রেক্ষিতে হাইকোর্ট রুল জারি করে হাইকোর্ট।

সেই রুলের শুনানি শেষে মঙ্গলবার হাইকোর্ট এই রায় দিয়েছেন।

রায়ের পর রিট আবেদনকারীদের আইনজীবী আইনুন নাহার সিদ্দিকা বলেছেন, ‘’এই রায়ের মাধ্যমে পিতা-মাতার পরিচয়হীন যেকোনো শিশুর শিক্ষা পাওয়ার অধিকার নিশ্চিত হলো।‘’