চলমান সংবাদ

যুগপৎ আন্দোলনে জামায়াত নিয়ে বিএনপির অবস্থান কী?  

 আগামী জাতীয় নির্বাচনকে সামনে রেখে সরকার বিরোধী আন্দোলনে জামায়াতকে এড়িয়ে চলার রাজনৈতিক কৌশল  নিতে দেখা যাচ্ছে বিএনপিকে। যুগপৎ আন্দোলনের কর্মসূচী নিয়ে জামায়াতের সঙ্গে আনুষ্ঠানিক কোনো আলোচনা এখনো করেনি বিএনপি।  বিশ দলীয় জোট ভেঙ্গে গঠিত নতুন কোনো জোটেও নেই জামায়াত।

যদিও দুই দলেরই আন্দোলনের প্রধান লক্ষ্য বর্তমান ক্ষমতাসীন সরকারের পতন ঘটানো।

রাজনৈতিক এ পরিস্থিতিতে জামায়াত-বিএনপির মধ্যে দূরত্ব সৃষ্টি হয়েছে কিনা এ প্রশ্নে পরস্পরবিরোধী বক্তব্য দিচ্ছে দুই দল।

জামায়াতে ইসলামীর পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে আলাপ আলোচনার ভিত্তিতেই ২০ দলীয় জোট ভেঙ্গে দিয়ে আলাদাভাবে আন্দোলনের মাঠে থাকার সিদ্ধান্ত হয়েছে।

অন্যদিকে বিএনপি দাবি করছে বিএনপি জামায়াত এখন সম্পূর্ণ আলাদা এবং যে যার মতো আন্দোলন করছে।

নির্বাচনকে সামনে রেখে বিএনপির ১০ দফা দাবির সমর্থনে যুগপৎ আন্দোলনে যে কেউ যোগ দিতে পারে।

জামায়াতের পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে তারা বিএনপির দাবির সমর্থনে যুগপৎ আন্দোলনে সক্রিয় আছে এবং ভবিষ্যতেও কর্মসূচী নিয়ে মাঠে থাকবে।

জামায়াতে ইসলামীর প্রচার সম্পাদক মতিউর রহমান আকন্দ,
জামায়াতে ইসলামীর প্রচার সম্পাদক মতিউর রহমান আকন্দ

জামায়াতে ইসলামী কী বলছে?

বিএনপির সাথে ১০ দফার সমর্থনে রাজপথে অন্তত চারটি জোট সরকার বিরোধী আন্দোলন করছে।

এই জোটগুলোর কোনোটিতেই জামায়াত নেই।

বিএনপির দিক থেকে স্পষ্টতই জামায়াতকে এড়িয়ে চলারও একটা নীতিগত অবস্থান দেখা যাচ্ছে।

জামায়াতে ইসলামীর প্রচার সম্পাকদ মতিউর রহমান আকন্দ বিবিসিকে বলেন, জামায়াতের ভূমিকা হলো আন্দোলনের সঙ্গে থাকা।

তিনি বলেন, “যুগপৎ আন্দোলনে আমরা আছি। আমরাতো সবাই একমত হয়েছি যে আমরা যুগপৎ আন্দোলন করবো, জোট আর থাকবে না।

চব্বিশ তারিখে সারাদেশে আমরা অংশগ্রহণ করেছি। বিএনপিও করেছে আমরাও করেছি। ত্রিশ তারিখে ঢাকায় বিএনপিও করেছে আমরাও করেছি। এরপর ১১ই জানুয়ারি সেটা একটু ভিন্ন প্রেক্ষিতে আমরা করেছি।”

মি. রহমান বলেন, বিএনপি করেছে গণঅবস্থান আর আমরা সেইদিন যেহেতু এগারোই জানুয়ারি ওয়ান ইলেভেনের মাধ্যমে বাংলাদেশে গণতন্ত্র হত্যা করা হয়েছিল, এই দিবসটি আমরা আলোচনার মাধ্যমে পালন করেছি।

সরকার বিরোধী আন্দোলনে এককভাবে কর্মসূচী পালন করছে বিএনপি
বিএনপির কর্মসূচী

জামায়াতকে নিয়ে বিএনপি কী বলছে?

রাজপথে সরকার বিরোধী আন্দোলনে নেতৃত্ব দিচ্ছে বিএনপি।

সরকার বিরোধী আন্দোলনে জামায়াতকে পাশে রাখা নিয়ে বিএনপির সতর্ক অবস্থান দেখা যাচ্ছে।

বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকু বিবিসিকে বলেছেন, বিএনপি এককভাবেই আন্দোলন করছে।

তিনি বলেন, “ফরমাল ইনফরমাল কোনো ডিসকাশনই (আলোচনা) আমাদের জামায়াতের সাথে নাই। আমরা যে লিয়াজো কমিটি করেছি, লিয়াজো কমিটি সরাসরি যেসব রাজনৈতিক দলের সাথে আলোচনা করছে, তারাই আমাদের সাথে আছে যুগপৎ আন্দোলনে আছে।

তিনি আরো বলেন, “যুগপৎ করার অর্থই হচ্ছে যার যার মতো সে সে করো। সেখানে যদি কোনো দল নিজের ইচ্ছায় করে, আমরাতো না করতে পারবো না।”

বিএনপি স্থায়ী কমিটির সদস্য ইকবাল হাসান মাহমুদ
বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকু

বিএনপির সাথে দূরত্ব, জোটে জামায়াতের থাকা-না-থাকা

আনুষ্ঠানিক আলোচনায় জামায়াতকে না রাখা হলেও জামায়াত নেতা মতিউর রহমান আকন্দ মনে করেন বিএনপির সঙ্গে তাদের দূরত্ব বাড়েনি।

তিনি বলেন, “আমি মনে করি না যে বিএনপির সাথে জামায়াতের দূরত্ব বেড়েছে। কর্মসূচী বাস্তবায়ন করার ক্ষেত্রে, যোগাযোগের ক্ষেত্রে বিএনপি হয়তো যেভাবে ভূমিকা রাখার দরকার সেভাবে রাখে নাই। এটা দূরত্ব বাড়া বা কমার কোনো বিষয় না।”

তিনি বলছেন, জামায়াত একটা রাজনৈতিক দল, বিএনপি একটা রাজনৈতিক দল।

“সুতরাং যার যার অবস্থান থেকে প্রত্যেকে নিজ নিজ ভূমিকা পালন করে যাচ্ছে। দূরত্ব আমাদের বাড়েও নাই কমেও নাই”।

মুক্তিযুদ্ধে দল হিসেবে জামায়াতের বিতর্কিত ভূমিকা এবং আদর্শিক কারণে বিএনপির ভেতর একটি অংশের মধ্যেও জামায়াত প্রশ্নে একটা অস্বস্তি রয়েছে।

জামায়াতে ইসলামীর শীর্ষ নেতাদের বেশকয়েকজন ৭১ এ মানবতাবিরোধী অপরাধের দায়ে সাজাপ্রাপ্ত।

আবার আন্দোলন সফল করার স্বার্থে জামায়াতকে সহায়ক শক্তি হিসেবেও মনে করেন বিএনপির কেউ কেউ।

জামায়াত নেতা মতিউর রহমান আকন্দ বলছেন, আন্দোলনের নেচার (চরিত্র) যেমনই হোক আন্দোলনের পার্ট হিসেবেই জামায়াত এখনকার কর্মসূচীগুলো বাস্তবায়ন করছে।

তিনি বিষয়টি ব্যাখ্যা করেন এভাবে, “যুগপৎ আন্দোলন মানে লিয়াজো কমিটির মাধ্যমে পরস্পরের আলোচনার মাধ্যমে ঠিক করা হবে। একটা আন্দোলনে কাউকে না কাউকে তো নেতৃত্ব দিতে হয়।”

মি. আকন্দ বলেন, “সঙ্গত কারণেই বিএনপি আন্দোলনে নেতৃত্ব দেবে। তবে বিএনপি জামায়াতের সাথে অফিসিয়ালি আলোচনা করেনি। এটা আমরা দৃষ্টি আকর্ষণ করেছি। এভাবে তো যুগপৎ হয় না।”

তবে, এসবের পরেও জামায়াতে ইসলামী যুগপৎ আন্দোলেনে আছে এবং যুগপৎ কর্মসূচী বাস্তবায়নের জন্য দলটি চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে বলে তিনি জানিয়েছেন।

 জামায়াত ইসলামীর নিবন্ধন বাতিল করেছে নির্বাচন কমিশন

জামায়াতকে নিয়ে বিএনপির তৃণমূল যা ভাবছে

জামায়াতে ইসলামীকে নিয়ে বিএনপির তৃণমূলেও আছে মিশ্র প্রতিক্রিয়া।

জাতীয়তাবাদী মহিলা দলের সভানেত্রী আফরোজা আব্বাস মনে করেন, কেউ যদি বিএনপির সঙ্গে বিএনপির ব্যানারে আসতে চায়, তাহলে তাদের স্বাগত জানানো হবে।

তিনি বলেন, “আমরা অন্যায়ের প্রতিবাদের জন্য আছি, আমরা ভোটের অধিকার-ভাতের অধিকারের জন্য আছি, আমরা আইনের শাসন চাই, আমরা আমাদের মাতৃভূমিকে রক্ষা করতে চাই-যদি আমাদের এই নীতিতে কেউ একমত হন, তাহলে আমাদের ব্যানের আসতেই পারেন, আসবেন। আমরা মোস্ট ওয়েলকাম জানাবো।”

তবে ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধে জামায়াতে ইসলামীর বিতর্কিত ভূমিকা নিয়ে এক ধরণের অস্বস্তি থাকলেও, তৃণমূলের অনেক নেতাকর্মী এখন আর অতীতের সে ভূমিকাকে ভুলে সামনে এগোতে চান।

নারায়নগঞ্জের একজন বিএনপি কর্মী বলছিলেন, “মানুষ যুগে যুগে ভুল করে। আমরা আর ওইপথে হাটতে চাই না। আমরা বিএনপিরাই শক্তিশালী।”

২০১৩-১৪ সালে জামায়াতের আন্দোলনে ব্যাপক সংঘর্ষ হয়েছে।

দুই হাজার চৌদ্দ নির্বাচন পরবর্তী বিএনপির টানা হরতাল অবরোধে সহিংসতার কারণেও জামায়াতের সঙ্গে বিএনপির সমালোচনা হয়ে থাকে।

এবার যুগপৎ আন্দোলনের প্রথম কর্মসূচীতেও পুলিশের সাথে সংঘর্ষের জড়িয়েছে জামায়াত কর্মীরা।

তবে জামায়াতের ওপর বিএনপির এক ধরণের নির্ভরতা রয়েছে বলে মনে করা হয়।

বিএনপি তাদের আন্দোলনে জামায়াত নির্ভরতা প্রশ্নে ইকবাল হাসান মাহমুদ বলেন, অনেকদিন ধরেই জামায়াতের সাথে বিএনপি আন্দোলন সংগ্রাম কিছুই করছি না।

“দুই নম্বর হচ্ছে যে, বিএনপি তার নিজের শক্তিতে অনেক বলীয়ান এবং বিএনপির সংগঠন তৃণমূল থেকে এখন ভিত অনেক মজবুত। আমরা একটা ইলেকশন অ্যালায়েন্স করেছিলাম, তো ইলেকশন নাই অ্যালায়েন্সও নাই। সুতরাং জামায়াতের ওপর ভিত্তি করে বিএনপি কোনোকালে চলছে বলে আমি মনে করি না,” বলেন মি. মাহমুদ।

# আবুল কালাম আজাদ, বিবিসি বাংলা, ঢাকা