চলমান সংবাদ

ক্যামেরুন ফুটবল ফেডারেশনের কর্মকর্তারা ঘুষ চাওয়ায় এমবাপ্পে ক্যামেরুনের হয়ে খেলতে পারেননি

বাবার সাথে কিলিয়ান এমবাপ্পে/ ছবি- সংগৃহীত

সম্প্রতি এমবাপ্পের বাবা জানিয়েছেন ফ্রান্স নয়, বরং সবকিছু ঠিকঠাক থাকলে ক্যামেরুন জাতীয় দলের হয়েই খেলতেন পিএসজির এ তারকা। কিন্তু ঘুষ দাবি করায় ছেলেকে ক্যামেরুন জাতীয় দলে খেলাতে পারেননি অর্থাভাবে থাকা এমবাপ্পের বাবা উইলফ্রেড।

এমবাপ্পের জন্ম ফ্রান্সের প্যরিসে, ১৯৯৮ সালে। তার বাবার জন্মভূমি ক্যামেরুন ও মায়ের জন্মভূমি আলজেরিয়া। ভাগ্য বদলের আশায় এমবাপ্পের বাবা-মা নিজেদের জন্মভূমি ছেড়ে পাড়ি জমিয়েছিলেন ইউরোপে। আর তাই নিজ মাতৃভূমির প্রতি ভালোবাসা থেকেই ২০১৮ সালে ক্যারিয়ারের শুরু দিকে এমবাপ্পের বাবা উইলফ্রেড ছেলেকে ক্যামেরুন জাতীয় দলের হয়ে প্রতিনিধিত্ব করাতে চেয়েছিলেন।

সম্প্রতি ক্যামেরুনের কনকর্ড নিউজে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে এ কথা জানান তিনি। আলফ্রেড বলেন, “প্রথমদিকে আমি চেয়েছিলাম আমার ছেলে ক্যামেরুনের হয়েই খেলুক। কিন্তু ক্যামেরুন ফুটবল ফেডারেশনের এক কর্মকর্তা আমার কাছে এমবাপ্পেকে প্রাথমিক দলে অন্তর্ভুক্ত করার বিনিময়ে ঘুষ চেয়েছিল; যা পরিশোধের সামর্থ্য আমার ছিল না।”

একই সাক্ষাৎকারে তিনি জানান, ফ্রান্সের জাতীয় দলে এমবাপ্পেকে জায়গা পেতে কোনো ঘুষ দিতে হয়নি। আলফ্রেড বলেন, “ক্যামেরুন ফুটবল ফেডারেশন এমবাপ্পের মতো একজন খেলোয়াড়কে তাদের দলে নিতে ব্যর্থ হয়েছে। কেননা ক্যামেরুন ফুটবল ফেডারেশনের কর্মকর্তারা অলস ও লোভী।”

আফ্রিকান দেশগুলোতে সরকারি প্রায় সকল প্রতিষ্ঠানই চরম দুর্নীতিগ্রস্থ। আর দুর্নীতির এই চর্চা থেকে বের হতে পারেনি ক্যামেরুনের ফুটবল ফেডারেশনও। সাক্ষাৎকারে এমবাপ্পের বাবা বলেন, দেশের হয়ে মাঠে প্রতিনিধিত্ব করা সম্মানের ব্যাপার। আর তাই দেশের হয়ে প্রতিনিধিত্ব করতে ঘুষ হিসেবে কোনো অর্থ দেওয়াকে নৈতিকভাবে সমর্থনযোগ্য নয় বলে মনে করেন তিনি।

বাবার এ মন্তব্যর সাথে একমত প্রকাশ করেন এমবাপ্পে। তিনি বলেন, “আমি ক্যামেরুনে জন্মাইনি। আমি একজন ফ্রেঞ্চ। আমার ক্যারিয়ারের শুরুতে আমি যখন কেউ ছিলাম না তখন আমার বাবা ক্যামেরুনের প্রাথমিক দলে আমার সুযোগ চেয়েছিল। কিন্তু তারা দলে সুযোগ লাভের শর্ত হিসেবে বড় অঙ্কের টাকা দাবি করেন। এই ঘটনায় আমার বাবা মনঃক্ষুণ্ণ হয়ে ফ্রান্সে চলে আসেন। পরবর্তীতে ফ্রান্স ফুটবল ফেডারেশন আমাকে যোগ্যতা প্রমাণের সুযোগ করে দেয়।”

নিজের ক্যারিয়ারের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ মুহূর্তে ক্যামেরুন ফুটবল ফেডারেশনের সেই অনৈতিক আচরণকে অবশ্য এখনো ভুলতে পারেননি এমবাপ্পে। অভিমান প্রকাশ করে তারকা এ ফুটবলার বলেছেন, “ক্যামেরুন এখন আমাকে ডাকছে। আমি না চাইতেই আমাকে নাগরিকত্ব দিচ্ছে। তবে আমার ক্যামেরুনের নাগরিকত্ব দরকার নেই। কেননা আমি ফ্রান্সের নাগরিক এবং আমি ফ্রেঞ্চ হয়েই থাকতে চাই।”

বর্তমান পারফরম্যান্স বিবেচনায় মেসি রোনালদোর পর এমবাপ্পে ফুটবল বিশ্ব শাসন করবে বলে ধারণা করছেন ফুটবলপ্রেমীরা। তারকা এ ফুটবলারকে নিজেদের ক্লাবে নিতে রেকর্ড সমান টাকা নিয়ে অপেক্ষা করছে রিয়াল মাদ্রিদের মত বিশ্বের জায়ান্ট সব ক্লাবগুলো। আর সেই খেলোয়াড়কেই কি-না ক্যারিয়ারের শুরুতে এক কর্মকর্তার ঘুষের প্রলোভনের কারণে হারিয়েছে মধ্য আফ্রিকার দেশ ক্যামেরুন!

বর্তমানে ক্যামেরুন জাতীয় দল নিয়ে এমবাপ্পের আফসোস নেই; বরং ফ্রান্সের হয়ে অসাধারণ নৈপুণ্য দেখিয়ে করছেন একের পর এক রেকর্ড। কিন্তু এমবাপ্পেকে না পাওয়ার আফসোস হয়তো ক্যামেরুনের জনগণ সারাজীবন বয়ে বেড়াবে।