চলমান সংবাদ

কমিটি নিয়ে বিরোধে ছাত্রলীগের অবরোধে চবি অচল, ভোগান্তিতে শিক্ষার্থীরা

য়

পূর্ণাঙ্গ কমিটি নিয়ে বিরোধের জেরে ছাত্রলীগের অবরোধে ফের অচল রয়েছে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় (চবি)। সোমবার (১৯ সেপ্টেম্বর) ভোর থেকে শুরু হওয়া ছাত্রলীগের অবরোধের কারণে বন্ধ ছিল শিক্ষার্থীদের বহনকারী শাটল ট্রেন ও শিক্ষক বাস। স্থগিত হয় কয়েকটি বিভাগের ক্লাস ও কমপক্ষে ১৪টি বিভাগে পূর্বনির্ধারিত পরীক্ষা।

বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান ফটকে তালা লাগিয়ে টায়ারে আগুন জ্বালিয়ে আটকে দেয় অবরোধকারীরা। দুপুর ২টার দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের মূল ফটক অভ্যন্তরীণ চলাচলের জন্য সাময়িকভাবে খুলে দেওয়া হলেও অনির্দিষ্টকালের ডাকা অবরোধ চলমান রয়েছে। ছাত্রলীগের অবরোধের কারণে ভোগান্তিতে পড়েছেন চবি’র সাধারণ শিক্ষার্থীরা।

চবি ছাত্রলীগের পূর্ণাঙ্গ কমিটিতে পদবঞ্চিতদের অন্তর্ভুক্ত করা, কমিটি থেকে বিতর্কিত, বিবাহিত-নিষ্ক্রিয় ও অছাত্রদের বাদ দেওয়াসহ তিন দফা দাবিতে শাখা ছাত্রলীগের ৬ গ্রুপের নেতাকর্মীরা অবরোধ করে। গ্রুপগুলো হল- ভার্সিটি এক্সপ্রেস, কনকর্ড, রেড সিগনাল, বাংলার মুখ, এপিটাফ ও উল্কা। সকল গ্রুপই নগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আ জ ম নাছির উদ্দীনের অনুসারী হিসেবে ক্যাম্পাসে পরিচিত।

বিশ্ববিদ্যালয়ের পরীক্ষা নিয়ন্ত্রণ দপ্তর সূত্রে জানা গেছে, ফিশারিজ, কম্পিউটার সায়েন্স অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিং, যোগাযোগ ও সাংবাদিকতা, মাইক্রোবায়োলোজি, পালি, আরবি, জেনেটিক ইঞ্জিনিয়ারিং ও বায়োটেকনোলজি বিভাগের পরীক্ষা স্থগিত করা হয়েছে। ভুক্তভোগী শিক্ষার্থীরা বলেন, পরীক্ষার সময়ে বিশ্ববিদ্যালয়ে অবরোধ হলে ক্ষতি হয় সাধারণ শিক্ষার্থীদের। ঝামেলা ছাত্রলীগের, তাহলে ভোগান্তি কেন সকল শিক্ষার্থীদের পোহাতে হবে? পদ নিয়ে যদি ঝামেলা হয় তাহলে যেসব নেতারা পদ বা কমিটি দেয় তাদের বাসায় তালা ঝুলান।

শাটল ট্রেন অবরোধের বিষয়টি নিশ্চিত করে ষোলশহর স্টেশন মাস্টার ফখরুল পারভেজ বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রলীগ কর্মীরা বিশ্ববিদ্যালয়গামী সকাল সাড়ে ৭টার শাটল ট্রেনটি ষোলশহর আসলে ও ৮টার ট্রেনটি ঝাউতলা স্টেশন আসলে আটকে দেয়। এরপর থেকে ট্রেন চলাচল বন্ধ ছিল। বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিবহন দপ্তরের সহকারী রেজিস্ট্রার মোহাম্মদ নূরুল আবছার বলেন, ভোরবেলা কয়েকজন যুবক পরিবহন দপ্তরে তালা মেরে দেয়। এজন্য এরপর থেকে কোন শিক্ষক বাস বের হতে পারেনি।

অবরোধের বিষয়ে আরএস গ্রুপের নেতা ও শাখা ছাত্রলীগের সহ-সভাপতি রকিবুল হাসান দিনার বলেন, শান্তিপূর্ণ কর্মসূচির মাধ্যমে আমরা অনেকদিন ধরে আমাদের দাবিগুলো জানিয়ে আসছি। শাখা ছাত্রলীগের শীর্ষ দুই নেতা আমাদের জানিয়েছিল মূল কমিটি বর্ধিত করে পদবঞ্চিত সিনিয়র কর্মীদের পদায়ন করা হবে। কিন্তু তা না করে এখন হল ও অনুষদ কমিটির নামে প্রতারণার আশ্রয় নিয়েছে। তাই আমরা অবরোধের -ডাক দিয়েছি।

এদিকে ফটক খুলে দেয়ার পর দুপুর আড়াই টার দিকে ফের ফটক আটকে দেয় শাখা ছাত্রলীগের আরেক গ্রুপ বিজয়। বিজয় গ্রুপ শিক্ষা উপমন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেলের অনুসারী। বিজয়ের নেতা দেলোয়ার হোসেন বলেন, প্রথম থেকে আমরা কমিটি বর্ধিত করার দাবি জানিয়ে আসছি। কিন্তু শাখা ছাত্রলীগের দুই নেতা প্রহসনমূলক হল-ফ্যাকাল্টি কমিটি গঠনের প্রেস বিজ্ঞপ্তি দিয়ে ছলচাতুরি ও প্রতারণা করছেন। সবকিছু মিলিয়েই আন্দোলনের ডাক দিয়েছেন পদবঞ্চিতরা।

অবরোধে অংশ নেওয়া বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের সহ-সভাপতি প্রদীপ চক্রবর্তী দুর্জয় বলেন, ‘প্রশাসনের সঙ্গে কথা বলে বিশ্ববিদ্যালয় অভ্যন্তরীণ চলাচলের জন্য ফটক খুলে দেওয়া হয়েছে। তবে আমাদের আন্দোলন চলমান আছে। দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত আন্দোলন চলবে।’

বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর অধ্যাপক ড. রবিউল হাসান ভূঁইয়া বলেন, ‘আমরা আন্দোলনকারীদের বোঝাতে সক্ষম হয়েছি, তারা মূল ফটক খুলে দিয়েছে। যদি ঝামেলা করার চেষ্টা করে তাহলে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। বাস ও শাটল ট্রেন চলাচল শিগগিরই স্বাভাবিক হবে।’

উল্লেখ্য, গত ৩১ জুলাই শাখা ছাত্রলীগের পূর্ণাঙ্গ কমিটি ঘোষণা করা হয়। এরপর গত ১০ আগস্ট সংবাদ সম্মেলনের মাধ্যমে শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি রেজাউল হক রুবেল ও সাধারণ সম্পাদক ইকবাল হোসেন টিপুর প্রতি অনাস্থা জানান ৯৪ জন পদধারী নেতা। এসময় আগস্টের পর থেকে আন্দোলনের ঘোষণা দেন তারা।

# ১৯.০৯.২০২২ চট্টগ্রাম ##