চলমান সংবাদ

স্ক্র্যাপ জাহাজ দেখিয়ে ব্যবসার ফাঁদে ফেলে শতকোটি টাকার প্রতারণা!

-৭ বছর পর র‌্যাবের হাতে গ্রেপ্তার মন্ত্রীর আত্মীয় পরিচয় দেয়া প্রতারক

শত কোটি টাকার পুরানো একটি জাহাজকে স্ক্রাপ হিসেবে বিক্রির জন্য সীতাকুন্ডের কুমিরার সমুদ্র উপকূলে আনা হয় ২০১৫ সালে। কয়েক মাসের মধ্যে এরকম আরও কয়েকটি জাহাজ আনার প্রলোভন দেখিয়ে বিভিন্ন ব্যক্তিকে ব্যবসার অংশীদারীত্বের প্রস্তাব দেয় প্রতারক মেজবাহ উদ্দিন চৌধুরী। এভাবে অংশীদারিত্ব ব্যবসার ফাঁদে ফেলে অনেকের কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন মেজবাহ উদ্দিন চৌধুরী।

নিজেকে বিশ্বাসযোগ্য ও ব্যবসায় আগ্রহী করতে ওই প্রতারক মাসিক বেতনে ২০ থেকে ২৫ জনের একটি দলকে সহযোগী হিসেবে নিয়োগ দেন। তাদের কাজ ছিলো ভিকটিমদের বিভিন্ন তথ্য এনে দেয়া এবং তাদের কাছে প্রতারক মেজবাহ উদ্দিনের ব্যবসার সুনাম ও সাফাই গাওয়া।

শুধু তা-ই নয়, তার সংগ্রহ করা দুই হাজার কোটি টাকা মূল্যের পাঁচটি ডায়মন্ড বিক্রির টাকা ফেরতে পেতে বিভিন্ন মন্ত্রী ও উচ্চ পর্দস্থ কর্মকর্তাদের উৎকোচ দিতে হবে বলেও প্রচার করে। এক্ষেত্রে ভুক্তভোগীদের বিশ্বাস অর্জন করাতে মন্ত্রী ও উচ্চ পর্দস্থ কর্মকর্তাদের কণ্ঠস্বর নকল করে মোবাইলের রের্কডও বানিয়ে শুনিয়েছে ওই প্রতারক। এছাড়া বিভিন্ন মন্ত্রীর আত্মীয় পরিচয় দিয়ে অনেক মানুষকে ঠকিয়েছে এই প্রতারক মেজবাহ। তিনি ১১টি মামলায় সাজাপ্রাপ্ত এবং ১১টি মামলার ওয়ারেন্টভুক্ত আসামি।

গত ৬ বছর ধরে তাকে ধরার চেষ্টা চালাচ্ছিল র‌্যাব। অবশেষে র‌্যাব তাকে গ্রেপ্তার করতে পেরেছে। সোমবার (১৯ সেপ্টেম্বর) দুপুরে র‌্যাব-৭’র চান্দগাঁও কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলনে মেজবাহ’র প্রতারণার আদ্যোপ্রান্ত তুলে ধরেন র‌্যাব-৭’র অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কর্নেল এমএ ইউসুফ।

এর আগে রবিবার (১৮ সেপ্টেম্বর) রাতে নগরের পাঁচলাইশ থানার হামজারবাগ সংলগ্ন আজাদ কমিউনিটি সেন্টারের মসিউর রহমানের ভাড়া বাসা থেকে তাকে গ্রেপ্তার করে পুলিশের কাছে হস্তান্তর করেছে সংস্থাটি। মেজবাহ হাটহাজারী উপজেলার কাটিরহাট ইউনিয়নের আবু তাহের চৌধুরীর ছেলে।

র‌্যাব জানায়, ২০১৫ সালে পুরনো জাহাজ স্ক্র্যাপ হিসেবে বিক্রির কথা বলে ভুক্তভোগী আব্দুল হাকিমের কাছ থেকে ২ কোটি ২০ লাখ টাকা, আজগর আলীর কাছ থেকে ৭০ লাখ, মো. রেজওয়ান থেকে ৪০ লাখ, ইব্রাহীম থেকে ২০ লাখ, মো. রুমনের কাছ ৬৩ লাখ টাকা, শহিদুল ইসলামের কাছ থেকে ৯০ লাখ, জাহিদুল ইসলাম, আসাদ ও বেলালের কাছ থেকে ৫০ লাখ করে দেড় কোটি টাকা এবং শাহজাহানের কাছ থেকে ২ কোটি টাকাসহ অনেকের কাছ থেকে কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে নেয়।

এমনকি অন্যের জমি নিজের নামে দাবি করে সেই জমি অনেকের কাছে বিক্রি করে আসছিল। র‌্যাব আরও জানায়, প্রতারণার পর ভুক্তভোগীদের কাছ থেকে পালিয়ে বাঁচতে নিজ এলাকায় অবস্থান না করে ঢাকার বিভিন্ন এলাকায় আত্মগোপনে থাকতো। এছাড়া যোগাযোগ এড়ানোর জন্য ঘনঘন মোবাইল ও সিম বদল করতো। বর্তমানে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর চোখ এড়ানোর কৌশল হিসেবে হেয়ার ট্রিটমেন্ট প্ল্যান্ট করেছে।

তিনি বলেন, মেজবাহর বাড়ি চট্টগ্রামের হাটহাজারী উপজেলার কাটিরহাটে। তার বাবা স্থানীয় একটি ইউনিয়নের চেয়ারম্যান ছিলেন। মেজবাহ গত কয়েকবছরে কয়েকশ কোটি টাকা প্রতারণা করে মানুষজনের কাছ থেকে হাতিয়ে নিয়েছেন। নিজে এইচএসসি পাস। ১৯৯৮ সালে জাহাজের স্ক্র্যাপের ব্যবসায় জড়িত হন। তার বিরুদ্ধে হাটহাজারী এবং কোতোয়ালী থানায় প্রতারণার ২২টি মামলা রয়েছে। যার মধ্যে ১১টি মামলায় আদালত বিভিন্ন মেয়াদে সাজা ও অর্থদণ্ড দিয়েছেন। ১১টি মামলা আদালতে বিচারাধীন রয়েছে। পরবর্তী আইনানুগ ব্যবস্থা নিতে তাকে থানায় হস্তান্তরের কার্যক্রম প্রক্রিয়াধীন রয়েছে।

তিনি জানান, মেজবাহ উদ্দিন চৌধুরী প্রতারক। বিভিন্ন সময় বিভিন্ন উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা এবং বিভিন্ন মন্ত্রীর নাম ভাঙিয়ে তার ব্যবসার শেয়ার দেওয়ার নাম করে বিভিন্ন মানুষের কাছ থেকে কোটি কোটি টাকা আত্মসাৎ করে। ভুক্তভোগীরা তার কাছে পাওনা টাকা চাইলে ভুক্তভোগীদের পূর্বে সংরক্ষিত স্বাক্ষর জালিয়াতির মাধ্যমে বিভিন্ন ভুয়া দলিল দস্তাবেজ তৈরি করে তাদেরই উল্টো মিথ্যে মামলার ভয় ও মামলা করে নাজেহাল করত। মিথ্যা মামলার ভয়ে অনেক ভুক্তভোগীই পাওনা টাকার বিষয়ে মুখ খোলার সাহস করতেন না।

র‌্যাব-৭ এর অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কর্নেল এমএ ইউসুফ জানান, গোয়েন্দা তথ্যের ভিত্তিতে রোববার রাত পৌনে ১০টার দিকে নগরের পাঁচলাইশ থানার হামজারবাগ আজাদ কমিউনিটি সেন্টারের মসিউর রহমানের ভাড়া বাসা থেকে মেজবাহকে আটক করা হয়। জিজ্ঞাসাবাদে মেজবাহ প্রতারণা কথা অকপটে স্বীকার এবং বিভিন্ন ব্যক্তির কাছ থেকে প্রতারণা করে কোটি কোটি টাকা আত্মসাৎ করেছে বলে জানান।

# ১৯.০৯.২০২২ চট্টগ্রাম #