চলমান সংবাদ

জঙ্গল সলিমপুরে জেলা প্রশাসনের উচ্ছেদের বিরুদ্ধে অবৈধ বাসিন্দারা বিক্ষোভ করতে ঢাকায় যাওয়ার পথে আটক ৬৩ জনের মধ্যে ২২ জন কারাগারে

কিছুদিন আগেও সন্ত্রাসী-ভূমিদস্যুদের অভয়ারণ্য হিসেবে পরিচিত চট্টগ্রামের জঙ্গল সলিমপুরে জেলা প্রশাসনের উচ্ছেদের প্রতিবাদে বিক্ষোভ-সংঘর্ষের ঘটনা চালিয়ে যাচ্ছে সেখানকার অবৈধ বাসিন্দারা। এনিয়ে দফায় দফায় প্রশাসনের সঙ্গে সংর্ঘষেও জড়িয়েছে তারা। মামলার আসামিও হতে হয়েছে।

প্রশাসনের বাধার মুখে কোণঠাসা হয়ে পড়া অবৈধ বসতি গড়া এসব বাসিন্দারা এবার ঢাকায় যাচ্ছিলেন প্রতিবাদী মানববন্ধন করতে। তবে প্রশাসনের চোখ ফাঁকি দিয়ে বেশি দূর এগুতে পারেনি তারা। সীতাকুণ্ড থানা এলাকা পার হতেই পুলিশের হাতে আটক হতে হয়েছে মানববন্ধনের উদ্দেশ্যে ঢাকার পথে রওনাকারী ৬৩ বাসিন্দা।

শনিবার (১০ সেপ্টেম্বর) দিবাগত রাত দেড়টার দিকে দুটি বাস ভাড়া করে ঢাকা যাওয়ার পথে ৬৩ বাসিন্দাকে সীতাকুন্ড থানা এলাকা থেকে আটক করে পুলিশ। এর মধ্যে ২২ জনকে ‘অপরাধী’ হিসেবে শনাক্ত করেছে পুলিশ। জঙ্গল সলিমপুরের বিভিন্ন ঘটনার তিনটি মামলায় তাদের গ্রেপ্তার দেখিয়ে রবিবার (১১ সেপ্টেম্বর) দুপুরে তাদের আদালতে পাঠানো হয়েছে। বাকি ৪২ জনকে কোন ধরনের অপরাধ কর্মকাণ্ডের সম্পৃক্ততা পাওয়া না যাওয়ায় ছেড়ে দিয়েছে।

সীতাকুন্ড থানার ওসি আবুল কালাম আজাদ বলেন, জঙ্গল সলিমপুর থেকে কিছু সন্ত্রাসী দুটি বাসে করে ঢাকা যাচ্ছে এমন খবরের ভিত্তিতে রাত দেড়টার দিকে অভিযান চালিয়ে শান্তি পরিবহন ও পাহাড়িকা পরিবহনের দুটি বাস থেকে সর্বমোট ৬৩ জনকে আটক করা হয়। প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে তারা সাম্প্রতিক সময়ে উচ্ছেদের বিরুদ্ধে মানববন্ধন করার উদ্দেশ্যে ঢাকা যাচ্ছিল বলে জানায়।

সম্প্রতি সরকারের উচ্ছেদ অভিযানকে কেন্দ্র করে স্থানীয়দের বিক্ষোভ, মহাসড়ক অবরোধ ও প্রশাসনের উপর হামলার ঘটনায় কয়েকটি মামলা হয়েছে। আটককৃতদের মধ্য থেকে যাচাই-বাছাই শেষে ২২ জন অপরাধী হিসাবে শনাক্ত হয়েছে। অপরাধের সাথে জড়িত না থাকায় বাকিদের ছেড়ে দেওয়া হয়েছে। যাদের ছেড়ে দেওয়া হয়েছে তাদের বেশিরভাগ বয়ষ্ক মানুষ। মূল অপরাধীরা এদের নিয়ে যাচ্ছিল মানুষের সহানুভূতি আদায়ের উদ্দেশ্যে।

এদিকে রবিবার (১১ সেপ্টেম্বর) সন্ধ্যায় জঙ্গল সলিমপুরের বাসিন্দারা চট্টগ্রাম প্রেস ক্লাবে সংবাদ সম্মেলন করতে গেলে পুলিশ সেখান থেকেও ১২ জনকে আটক করে।

গত ৮ সেপ্টেম্বর পূর্ব ঘোষণা অনুযায়ী জঙ্গল সলিমপুরে আটকে রাখা বাসিন্দাদের নিরাপদে বের করে আনতে গেলে ক্ষিপ্ত হয়ে প্রশাসনের সঙ্গে সংঘর্ষে জড়ায় সেখানকার বাসিন্দা সন্ত্রাসীরা। এসময় প্রশাসনের উপর তারা ককটেল ও ইট-পাটকেল নিক্ষেপ করলে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীও আত্মরক্ষার্থে ফাঁকা গুলি ছুঁড়ে। এর আগে, গত ৩০ আগস্ট জঙ্গল সলিমপুরে অবৈধ বসবাসকারীদের সরে যেতে মাইকিং করা হয়। একইসঙ্গে নিজ দায়িত্বে মালামাল সরিয়ে জায়গা খালি না করলে আইন অনুযায়ী উচ্ছেদ করা হবে বলে আল্টিমেটাম দেয় জেলা প্রশাসন।

প্রসঙ্গত গত ৭ আগস্ট সীতাকুণ্ডের জঙ্গল সলিমপুরের আলীনগরের পাহাড়, টিলা, বনভূমি এবং এখানকার পরিবেশ, প্রতিবেশ ও জীববৈচিত্র রক্ষাকল্পে হাইকোর্ট এক নির্দেশনা দেন। এতে সেখানে পাহাড়-টিলা দখল করে অবৈধভাবে বসবাসকারীদের সব স্থাপনা উচ্ছেদ এবং বৈধ জমির মালিকদের মালিকানা নিশ্চিত করতে বলা হয়। এর অংশ হিসেবে ইতোমধ্যে সেখানে খাসজমি চিহ্নিত করার কাজ শুরু হয়েছে এবং বৈধ ভূমির মালিকদের ২০ আগস্টের মধ্যে সীতাকুণ্ডের সহকারী কমিশনার (ভূমি) কার্যালয়ে প্রয়োজনীয় কাগজপত্র নিয়ে উপস্থিত হতে বলা হয়েছে।
পাশাপাশি যারা অবৈধ উপায়ে সেখানে পাহাড়-টিলা দখল করে কেটে বসত ঘর বা স্থাপনা নির্মাণ করে বসবাস করছেন তাদেরকে বেধে দেওয়া সময়ের মধ্যে অবশ্যই এলাকা ছেড়ে যেতে হবে। অন্যথায় তাদের বিরুদ্ধে কঠোর আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে বলে জানায় প্রশাসন।

উল্লেখ্য, সীতাকুণ্ডের জঙ্গল সলিমপুরের আলীনগর পাহাড়ে ৩ হাজার এক’শ একর সরকারি পাহাড় অবৈধ দখলমুক্ত করার লক্ষ্যে রবিবার (১২ সেপ্টেম্বর) সরকারের উচ্চপর্যায়ে বৈঠক হওয়ার কথা রয়েছে। সম্প্রতি জেলা প্রশাসন ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর অভিযানে ওই এলাকায় প্রথম দফায় ২ শতাধিক অবৈধ স্থাপনা ভেঙে গুঁড়িয়ে দেওয়া হয়।

৪০০ পরিবারের বিদ্যুৎ-সংযোগ বিচ্ছিন্ন করা হয়। ইতোমধ্যে সেখানে অবৈধ দখলদারদের কবলে থাকা ৭’শ একর খাসজমি উদ্ধার করা হয়েছে। বিদ্যুৎ-সংযোগ বিচ্ছিন্ন করার পর আলীনগরের ৩ হাজারের বেশি বিক্ষুব্ধ নারী-পুরুষ মহাসড়কের ফৌজদারহাট এলাকায় অবস্থান নিয়ে বিক্ষোভ মিছিল ও ভাঙচুর করেন। এ ঘটনায় উপজেলা প্রশাসন ও পুলিশ ৭টি মামলা করে।

# ১১.০৯.২০২২ চট্টগ্রাম #