শিল্প সাহিত্য

গ্রাফিক নভেল ‘মুজিব’, ১০ পর্বের অনবদ্য এক জার্নি

-কাউসার রুশো

 বঙ্গবন্ধুর জীবনের অসামান্য দলিল ‘অসমাপ্ত আত্মজীবনী’। ১৯৬৬ থেকে ১৯৬৯ সাল পর্যন্ত কেন্দ্রীয় কারাগারে রাজবন্দী থাকার সময়ে আত্মজীবনী লিখেছেন তিনি। তবে তাঁর লেখা চারটি খাতা হারিয়ে গিয়েছিল। দীর্ঘ সময় পর ২০০৪ সালে এগুলো শেখ হাসিনার হাতে আসে। এই ‘অসমাপ্ত আত্মজীবনী’ অবলম্বনে গ্রাফিক নভেলটি আঁকা আর লেখা হয়েছে। বঙ্গবন্ধু মানে আমাদের কাছে ছয় দফা, ঊনসত্তরের গণঅভ্যুত্থান, মুক্তিযুদ্ধ, স্বাধীন বাংলাদেশের রূপকার আর শোকাবহ অগাস্ট। কিন্তু এই সিরিজের প্রোটাগনিস্ট বঙ্গবন্ধু নন বরং গোপালঞ্জের দুরন্ত কিশোর মুজিব কিংবা কলকাতা ইসলামিয়া কলেজের সবার প্রিয় মুজিব ভাই। শেখ মুজিব তখনও বঙ্গবন্ধু হয়ে উঠেননি কিন্তু সগৌরবে জানান দিচ্ছেন তাঁর উপস্থিতি। বঙ্গবন্ধু আমার কাছে অত্যন্ত শ্রদ্ধাস্পদ একজন অতিমানব। কিন্তু আমি ভালোবেসে ফেলি দুরন্ত কিশোর ফুটবলার মুজিবকে। তাজমহল দেখার জন্য তরুণ মুজিবের মনের মধ্যে যে আলোড়ন দেখি তা আমাকেও তাড়িত করে। মনে করিয়ে দেয় নিজের তাজমহল দর্শনের অভূতপূর্ব অভিজ্ঞতার কথা। মুজিবকে ভালো লাগে দোষ-গুণে একজন মানুষ হিসেবেই দেখতে। একগুয়ে মুজিব রাগ নিয়ন্ত্রণ করতে না পেরে মারপিট করে বসেন কিন্তু মাথা ঠান্ডা হলে অনুশোচনা গ্রাস করে। এডভেঞ্চারপ্রিয় মুজিব দিল্লি ঘুরে টাকা-পয়সা হারিয়ে, উপায়ন্তর না দেখে, বিনা টিকেটে যখন বাড়ি ফেরার জন্য রেলে চেপে বসেছেন, সেই টানটান উত্তেজনাপূর্ণ সময়টা দারুন উপভোগ করি। ফুটবল নিয়ে পিতা-পুত্রের দ্বৈরথ দেখে ভাবি মাঠের বাইরেও কি এই সংকট টিকে থাকবে!? ভুল ভাংগে। বুঝতে পারি মুজিব তাঁর এই পর্বতসম ব্যক্তিত্ব কিভাবে পেয়েছেন। আরো পরিষ্কার হয় এই গল্পের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ চরিত্র আসলে শেখ লুৎফর রহমান। মুগ্ধ হয়ে যাই জাতির পিতার পিতাকে আবিষ্কার করে যিনি ‘মুজিব’-এর ‘বঙ্গবন্ধু’ হয়ে ওঠার পথে একজন নেপথ্য কারিগর । তরুণ মুজিব ততকালীন অনেক জাঁদরেল রাজনীতিবিদদের সংস্পর্শে এসেছিলেন। তাঁদের প্রতি সম্মান দেখাতে কখনও কার্পণ্য করেননি কিন্তু কোন বিষয় সঠিক মনে না করলে প্রতিবাদ করতেও ছাড়েননি। হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দী আর মাওলানা আবদুল হামিদ খান ভাসানী’র প্রতি বঙ্গবন্ধুর অসামান্য শ্রদ্ধা আর মুগ্ধতা খুঁজে পাওয়া যায় তাঁর জবানীতে। তাঁরাও উনাকে অসম্ভব স্নেহ করতেন, আজীবন বুকে টেনে নিয়েছিলেন। গ্রাফিক নভেলটি প্রকাশ করেছে আওয়ামী লীগের গবেষণা প্রতিষ্ঠান সেন্টার ফর রিসার্চ অ্যান্ড ইনফরমেশন (সিআরআই)। মুজিব গ্রাফিক নভেলের সম্পাদনা করেছেন শিবু কুমার শীল। ছবি এঁকেছেন সৈয়দ রাশাদ ইমাম তন্ময়। কাহিনী বিন্যাস আর সংলাপের কাজ করেছেন সিদ্দিক আহমেদ। আমার কাছে দুর্দান্ত লেগেছে সিরিজটি। বিশেষ ধন্যবাদ আঁকিয়ে তন্ময় ভাইকে। গল্পগুলো অসাধারণ দৃশ্যকল্প দিয়ে সাজানোর জন্য! সব বয়সীদের জন্য ‘মুজিব’ হাইলি রেকমেন্ডড।

কাউসার রুশো, ভ্রমণপিয়াসী ও চলচ্চিত্রপ্রেমী