চলমান সংবাদ

রেশনিংয়ে যাচ্ছে কর্ণফুলী গ্যাস, একদিন করে সরবরাহ বন্ধ থাকবে

চট্টগ্রামের শিল্পখাতে চাহিদার বিপরীতে গ্যাসের সরবরাহ কমে যাওয়ায় বিপাকে পড়েছে বিতরণকারী প্রতিষ্ঠান কর্ণফুলী গ্যাস ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি লিমিটেড (কেজিডিসিএল)। এ কারণে শিগগিরই গ্যাস রেশনিংয়ের মাধ্যমে শিল্প খাতে একদিন সরবরাহ বন্ধ রাখা হবে। এ-সংক্রান্ত একটি প্রস্তাব পেট্রোবাংলায় পাঠিয়েছে কেজিডিসিএল। অনুমোদন পেলে আগামী সপ্তাহ কিংবা আগামী মাসের শুরুতে শিল্প খাতে গ্যাস রেশনিং শুরু করবে পেট্রোবাংলার বিতরণ কোম্পানিটি। কেজিডিসিএল সূত্রে জানা গিয়েছে, স্পট থেকে এলএনজি আমদানি বন্ধ হয়ে যাওয়ায় শুধু ৫৫০ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস আসছে দেশে। এর মধ্যে পেট্রোবাংলার ঘোষণা অনুযায়ী চট্টগ্রামের জন্য দৈনিক বরাদ্দ ৩২০ মিলিয়ন ঘনফুট থেকে কমিয়ে ২৭১ করা হয়েছে। যার কারণে চট্টগ্রামের শিল্প খাতে গ্যাস সরবরাহ কমিয়ে দেয়া ছাড়া উপায় নেই বলে জানিয়েছেন কেজিডিসিএল’র কর্মকর্তারা। এরই মধ্যে গ্যাস সরবরাহ রেশনিংয়ের আওতায় নিয়ে আসতে পেট্রোবাংলার অনুমোদন চেয়েছে সংস্থাটি। প্রতিষ্ঠানটির কর্মকর্তারা বলছেন, পেট্রোবাংলা চট্টগ্রামের জন্য ২৭১ মিলিয়ন ঘনফুট এলএনজি নির্ধারণ করলেও এখন ৩১৫ থেকে ৩২০ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস পাচ্ছে। আগামী মাসের প্রথম সপ্তাহ থেকে ২৭১ মিলিয়ন ঘনফুটে গ্যাস সরবরাহ কমিয়ে আনা হলে রেশনিং ছাড়া উপায় থাকবে না। এরই মধ্যে চট্টগ্রামের ছয়টি বিতরণ অঞ্চলে সপ্তাহে একদিন গ্যাস সরবরাহ বন্ধ রাখতে প্রস্তাব পাঠানো হয়েছে পেট্রোবাংলায়। অনুমোদন পেলে সেপ্টেম্বরের প্রথম সপ্তাহ থেকে রেশনিং কার্যক্রম শুরু করবে কেজিডিসিএল কর্তৃপক্ষ। জানা গিয়েছে, ১৯ জুলাই রাত থেকে গ্যাস সংকটের কারণে রাষ্ট্রায়ত্ত সার কারখানা চিটাগং ইউরিয়া ফার্টিলাইজার লিমিটেডের (সিইউএফএল) উৎপাদন বন্ধ করে দেয়া হয়। প্রতিষ্ঠানটিতে দৈনিক ৪১ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস সরবরাহ করত কেজিডিসিএল। তবে সরকারিভাবে সার উৎপাদনে অগ্রাধিকার দেয়ায় আগস্টের প্রথম সপ্তাহে এটি ফের চালু করা হয়। তাছাড়া চলতি বছরের ৩০ জুন বহুজাতিক কর্ণফুলী ফার্টিলাইজার কোম্পানির (কাফকো) সঙ্গে প্রতিযোগিতামূলক দামে নতুন চুক্তি হওয়ায় আপাতত এ কারখানায় গ্যাস সরবরাহ বন্ধ রাখা যাচ্ছে না। বিশ্বব্যাপী সারের দাম বেড়ে যাওয়ায় সরকারি সিইউএফএল বন্ধ করার বিষয়ে সরকারের অনীহার কারণে বেসরকারি শিল্প খাতের গ্যাস সরবরাহ কমিয়ে দেয়া ছাড়া উপায় দেখছে না বিতরণ কোম্পানিটি। কেজিডিসিএলের মহাব্যবস্থাপক (অপারেশন) মো. আমিনুর রহমান বলেন, দেশে এলএনজির আমদানি আগের তুলনায় কমেছে। বিশ্ববাজারে দাম বেড়ে যাওয়ায় দেশে গ্যাস সরবরাহে আগের চেয়েও অনেক সতর্ক হতে হচ্ছে। তবে চট্টগ্রাম অঞ্চলে এখনো গ্যাসের সংকট দেখা দেয়নি। তবে গ্যাস সরবরাহ রেশনিংয়ের আওতায় আনতে এখনো কোনো সিদ্ধান্ত হয়নি। প্রয়োজন হলে পেট্রোবাংলার অনুমোদন দিয়ে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হবে। তবে কেজিডিসিএলের সংশ্লিষ্ট ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করে বলেন, এরই মধ্যে গ্যাসের সংকটের মধ্যে পড়েছে বাংলাদেশ। চাহিদার তুলনায় কম আমদানি হওয়ায় চট্টগ্রামের নিজস্ব চাহিদার চেয়েও কম গ্যাস সরবরাহের নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। আগামী মাসের শুরুতে এটি কার্যকর হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। যার কারণে চট্টগ্রামের জোনভিত্তিক শিল্প খাতে গ্যাস সরবরাহ রেশনিংয়ের আওতায় আনতে পেট্রোবাংলায় অনুমোদন চাওয়া হয়েছে। অনুমোদন পেলে আগামী মাসের শুরুতে রেশনিং কার্যক্রম শুরু করা হবে বলে জানিয়েছেন তিনি। কেজিডিসিএলের বিতরণ বিভাগ সূত্রে জানা গিয়েছে, রেশনিং শুরু না হলেও বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের গ্যাসের সরবরাহ আগের তুলনায় কমিয়ে দেয়া হয়েছে। কাফকোর দৈনিক চাহিদা ৫১ মিলিয়ন ঘনফুট হলেও বর্তমানে দেয়া হচ্ছে ৪১ মিলিয়ন ঘনফুট। এছাড়া সিইউএফএলকে ৪০ থেকে ৪১ মিলিয়ন ঘনফুট, বেসরকারি আবুল খায়ের গ্রুপকে দুই মিলিয়ন ঘনফুট কমিয়ে ১০ মিলিয়ন ঘনফুট, কেএসআরএমকে এক মিলিয়ন ঘনফুট কমিয়ে সাড়ে ৫ মিলিয়ন, রিজেন্টকে এক মিলিয়ন কমিয়ে দৈনিক চার মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস দেয়া হচ্ছে। অন্যদিকে চট্টগ্রামের সরকারি চারটি গ্যাসভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের মধ্যে শুধু রাউজান বিদ্যুৎকেন্দ্রের ১ নম্বর ইউনিটের জন্য ৩২ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস সরবরাহ দেয়া হচ্ছে। এ বিষয়ে জানতে যোগাযোগ করা হলে দি চিটাগাং চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির সভাপতি মাহবুবুল আলম বলেন, বিশ্বব্যাপী সংকটের কারণে দেশেও জ্বালানির সংকট রয়েছে। তবে সারা দেশের মধ্যে চট্টগ্রামের শিল্প খাতের উৎপাদন ধারাবাহিকতা ধরে রাখতে গ্যাস সরবরাহ স্বাভাবিক রাখতে হবে। এখনো কেজিডিসিএলসহ সরকারি কোনো সংস্থার সঙ্গে ব্যবসায়ী সংগঠনগুলোর কোনো আলোচনা হয়নি। দেশের অর্থনীতি ও রফতানি বাণিজ্যের প্রবাহ ধরে রাখতে যেকোনোভাবে চট্টগ্রামের গ্যাসের সরবরাহ পর্যাপ্ত রাখা জরুরি বলে মনে করেন তিনি। কেজিডিসিএলের বিতরণ বিভাগ সূত্র বলছে, গ্যাসের ব্যবহার যথাসম্ভব কমিয়ে আনতে এরই মধ্যে বেসরকারি কোম্পানিগুলোকে জানানো হলেও কেউই সেটি মানছে না। যার কারণে চাহিদা অনুযায়ী সবাইকে গ্যাস সরবরাহ দিতে ব্যবসায়ীদের সঙ্গে বৈঠকের চিন্তাভাবনা করছে কেজিডিসিএল। সরকারিভাবে অঞ্চলভিত্তিক শিল্প-কারখানায় একদিন বিদ্যুৎ বন্ধ রাখার প্রস্তাবের কারণে গ্যাসের সরবরাহও একই দিন বন্ধ রাখার চিন্তাভাবনা করা হচ্ছে। এতে চট্টগ্রামের জন্য দৈনিক বরাদ্দ ২৭১ মিলিয়ন ঘনফুটে সমন্বয় করা সম্ভব হবে বলে মনে করছে কেজিডিসিএল কর্তৃপক্ষ।
# ২৬/০৮/২০২২, চট্টগ্রাম #