চলমান সংবাদ

শাসন করতে গিয়ে ছেলেকে খুন করলেন ক্ষুব্ধ মা, লাশ ঝুলিয়ে ‘সাজালেন’ আত্মহত্যার গল্প

 চুরির অভিযোগ পেয়ে ছেলেকে শাসন করতে গিয়ে বেদম পিটুনি দেন প্রচণ্ড ক্ষুব্ধ মা। সেই পিটুনিতে প্রাণ হারায় ১৪ বছর বয়সী ছেলে। পরে সেই খুনের অভিযোগ থেকে রক্ষা পেতে ছেলের মৃত্যুকে আত্মহত্যায় রূপ দেয়ার পরিকল্পনা করেন। খুনের ঘটনা আড়াল করতে ছেলের লাশ ঝুলিয়ে রাখেন বাসার চালের লোহার রডের সঙ্গে। ছেলের মৃত্যুকে আত্মহত্যায় রূপ দেয়ার কাজে মাকে সহযোগিতা করেছে ওই ছেলের মামা। এরপর প্রতিবেশি ও পুলিশকে জানান, তার ছেলে আত্মহত্যা করেছে। নির্মম এই ঘটনা ঘটেছে চট্টগ্রামের আকবর শাহ থানার বিশ্ব কলোনী এলাকায়। পুলিশ মরদেহ উদ্ধার করতে গিয়ে হত্যাকাণ্ড নিশ্চিত হয়ে মা ও মামাকে গ্রেপ্তার করে। এরপরই ঘটনার নেপথ্যের রহস্য উদঘাটন হয়। হত্যাকাণ্ডের দায় স্বীকার করে ওই মা মঙ্গলবার (৯ আগস্ট) আদালতে জবানবন্দি দিয়েছেন। এর আগে গত সোমবার (৮ আগস্ট) রাতে নগরের আকবর শাহ থানার বিশ্ব কলোনিতে এ ঘটনা ঘটে। নিহত কিশোরের নাম মো. হাছান (১৪)। হাছান নগরের পাহাড়তলী থানার ওয়ার্লেস কলোনি এলাকার বাসিন্দা বেলাল হোসেনের (৪২) ছেলে। তাদের বাড়ি মাগুরা জেলায়। হাসানের মায়ের নাম কুলসুম বেগম (৩৮) ও মামা ফারুক ইসলাম (২৪)। পুলিশ জানায়, হাছানের বাবা বেলালের দুই স্ত্রী। প্রথম স্ত্রী কুলসুম বেগম নগরের আকবর শাহ থানার বিশ্বকলোনি আল হেরা মসজিদ গলিতে আলাদা বাসায় বসবাস করেন। ভাই ফারুকও পাশাপাশি আরেক বাসায় থাকেন। মঙ্গলবার (৯ আগস্ট) ভোর ৬টার দিকে কুলসুমের ভাই ফারুক হাছানের বাবা বেলালকে বাসায় গিয়ে জানায়, ছেলে হাছান গলায় ফাঁস লাগিয়ে আত্মহত্যা করেছে। খবর পেয়ে বেলাল দ্রুত কুলসুমের বাসায় যান। সেখানে গিয়ে জানতে পারেন, লাশ চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের মর্গে আছে। এর আগেই স্থানীয় লোকজন বিষয়টি পুলিশকে অবহিত করে। আকবর শাহ থানা পুলিশ ঘটনা তদন্তে নামে। আকবর শাহ থানার ওসি মোহাম্মদ ওয়ালী উদ্দিন আকবর বলেন, ‘ঘটনাস্থলে গিয়ে আমরা তথ্য পাই, হাছান বাসার চালের ভেন্টিলেটরে লোহার রডের সঙ্গে ওড়না পেঁচিয়ে গলায় ফাঁস লাগিয়ে আত্মহত্যা করেছে। কিন্তু আলামত দেখে আমাদের সন্দেহ হয়। তখন আমরা কুলসুমকে জিজ্ঞাসাবাদ করি। জিজ্ঞাসাবাদের একপর্যায়ে কুলসুম হত্যাকাণ্ডের কথা স্বীকার করেন।’ পুলিশ জানায়, হাছান আগে নগরীর চার নম্বর রুটের বাসের চালকের সহকারী হিসেবে একসময় চাকরি করত। কিন্তু বিভিন্নজনের কাছ থেকে টাকা চুরির অভিযোগে তাকে বের করে দেওয়া হয়। এরপর কুলসুম তাকে দৈনিক ১৫০ টাকা বেতনে হাটহাজারী উপজেলায় একটি কুলিং কর্নারে চাকরি নিয়ে দেন। ওই কুলিং কর্নারটি কুলসুমের বাবার। গত রোববার হাছান কুলিং কর্নারে তার মামা নুরনবী ইসলাম সোহেলের মানিব্যাগ থেকে এক হাজার টাকা চুরি করে পালিয়ে শহরে মায়ের বাসায় চলে আসে। সোহেল বিষয়টি কুলসুমকে জানানোর পর তিনি ক্ষুব্ধ হন। সোমবার রাত ১১টার দিকে ছেলেকে শাসন করতে গিয়ে বেদমভাবে মারধর করেন। মারধরের একপর্যায়ে ছেলেকে ধাক্কা দেন। এতে হাছান ছিটকে পড়ে খাটের লোহার অ্যাঙ্গেলের সঙ্গে লেগে মাথার পেছনে গুরুতর আঘাত পায়। এতে রক্তক্ষরণ হয়ে নিস্তেজ হয়ে পড়ে হাছান। ছেলের সাড়াশব্দ না পেয়ে কুলসুম ভয় পেয়ে যান। ভয়ে কুলসুম তার ভাই ফারুককে ডেকে আনেন। তখন দু’জনে খুনের বিষয়টি ধামাচাপা দিয়ে আত্মহত্যা হিসেবে সেটাকে প্রচারের পরিকল্পনা করেন। দু’জন মিলে হাছানের মৃতদেহ বাসার ভেন্টিলেটরের লোহার রডের সঙ্গে ঝুলিয়ে রাখেন। রাত পৌনে ২টার দিকে হঠাৎ তারা বাসার বাইরে এসে চিৎকার করে কান্না শুরু করেন। প্রতিবেশি আসমা আক্তার এলে তাকে বাসার বাইরে রেখে দরজার ফাঁক দিয়ে ওড়না কেটে লাশ নিচে নামায়। একজন চিকিৎসককেও ডেকে আনা হয়। তিনি এসে হাছানকে মৃত বলে ঘোষণা করেন। ওসি ওয়ালী উদ্দিন আকবর বলেন, এ ঘটনায় বেলাল হোসেন বাদী হয়ে কুলসুম ও ফারুককে আসামি করে আকবর শাহ থানায় মামলা দায়ের করেন। পুলিশ কুলসুম ও ফারুককে তাদের বাসা থেকে গ্রেপ্তার করে। মঙ্গলবার কুলসুম ও ফারুককে চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট কাজী শরীফুল ইসলামের আদালতে হাজির করা হয়। কুলসুম হত্যাকাণ্ড এবং পরবর্তী ঘটনার বিস্তারিত বর্ণনা দিয়ে আদালতে জবানবন্দি দিয়েছেন। আদালত দু’জনকে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেন। ওসি বলেন, প্রাথমিক তদন্তে আমরা এটা নিশ্চিত হয়েছি যে, এটা কোনো পূর্বপরিকল্পিত হত্যাকাণ্ড নয়। শাসন করতে গিয়ে প্রচণ্ড ক্রোধে হিতাহিত জ্ঞান হারিয়ে মারধর করতে গিয়ে মা ছেলেকে অনাকাঙ্খিত ও অনিচ্ছকৃতভাবে মৃত্যুর দিকে ঠেলে দিয়েছেন। মায়ের আঘাতেই ছেলের মৃত্যু হয়েছে এবং পরবর্তীতে সেটাকে আত্মহত্যা বলে আড়াল করার চেষ্টা করে আরও অপরাধ সংঘটিত করেছেন। একজন মায়ের হাতে ছেলের মৃত্যুর ঘটনা খুবই মর্মান্তিক। # ১০.০৮.২০২২ চট্টগ্রাম #