চলমান সংবাদ

সীতাকুন্ডে কনটেইনার ডিপো বিস্ফোরণ তদন্ত শেষ না হওয়ায় ৬ কমিটির কোনটিই প্রতিবেদন জমা দেয়নি

চট্টগ্রামের সীতাকুন্ডের বিএম কনটেইনার ডিপোর ভয়াবহ আগুন-বিস্ফোরণে ব্যাপক হতাহতের ঘটনার ১৮ দিন পার হলেও তদন্ত প্রতিবেদন দাখিল করেনি কোন সংস্থা। এই ঘটনায় ৪৯ জনের প্রাণহানি হলেও একটি মামলা করা ছাড়া দৃশ্যত কোনো আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি। বেসরকারি এই ডিপো পরিচালনায় পদে পদে অনিয়ম থাকলেও মালিক পক্ষের বিরুদ্ধেও এখনো কোন ব্যবস্থা নেয়নি প্রশাসন।

আগুন-বিস্ফোরণের ঘটনা তদন্তে চট্টগ্রাম বিভাগীয় কমিশনার কার্যালয়, জেলা প্রশাসন, চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষ, কলকারখানা ও প্রতিষ্ঠান পরিদর্শন অধিদপ্তর, চট্টগ্রাম কাস্টমস কর্তৃপক্ষ এবং ফায়ার সার্ভিস পৃথক কমিটি গঠন করে। তবে ঘটনার ১৮ দিন পার হলেও কোন কমিটি তদন্ত প্রতিবেদন জমা দেয়নি । দফায় দফায় সময় বাড়াচ্ছে কমিটিগুলো।

অতিরিক্ত বিভাগীয় কমিশনার (উন্নয়ন) মো. মিজানুর রহমানকে প্রধান করে গঠিত ১২ সদস্যের কমিটিকে ৫ কার্য দিবস সময় দেওয়া হয়েছিল। পরে আরো ৫ কার্য দিবস সময় বাড়ানো হয়। বর্ধিত সময়েও শেষ হয়নি তদন্তের কাজ। গত মঙ্গলবার ২১ জুন এই কমিটির সদস্যরা বিএম ডিপোর ব্যবস্থাপনা পরিচালক মুজিবুর রহমানের সঙ্গে কথা বলেন। তিনি আবারো ঘটনাটি নাশকতা বলে দাবি করে বলেন, পদ্মা সেতু উদ্বোধনের আগে দেশের বিভিন্ন স্থানে যেসব নাশকতার ঘটনা ঘটছে বিএম ডিপোর ঘটনার সঙ্গেও এর যোগসূত্র থাকতে পারে।

তদন্ত কমিটির প্রধান অতিরিক্ত বিভাগীয় কমিশনার মো. মিজানুর রহমান বলেন, তদন্তের সুবিধার্থে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের রসায়ন বিভাগের সভাপতিকে, সিআইডির প্রতিনিধিকে এবং চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশ-সিএমপি’র পোস্ট ব্লাস্ট ইভেস্টিগেশন টিম থেকে প্রতিনিধি যুক্ত করা হয় তদন্ত কমিটিতে। বিএম ডিপো কর্তৃপক্ষের বক্তব্যও নেয়া হয়েছে। নির্দিষ্ট কর্মদিবসে তদন্ত শেষ করতে না পারায় সময় বাড়ানোর আবেদন করা হয়। আগামী ৪-৫ দিনের মধ্যে প্রতিবেদন জমা দিতে পারবো বলে আশাকরি।

চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসনের ৯ সদস্যের তদন্ত কমিটিতে প্রধান করা হয় স্থানীয় সরকার বিভাগের উপ-পরিচালক বদিউল আলমকে। প্রথমে সাত কর্মদিবসের সময় দেওয়া হলেও পরে আরো সাত কর্মদিবস সময় বাড়িয়ে নেয় কমিটি। তদন্ত কমিটির প্রধান বদিউল আলম বলেন, কমিটির সদস্যরা দুর্ঘটনাস্থল, হাইড্রোজেন পারঅক্সাইড উৎপাদনকারী কারখানা পরির্দশন করেছে। স্টেকহোল্ডারদের সঙ্গেও কথা বলেছি। নির্ধারিত সময়ের মধ্যে প্রতিবেদন দাখিল করা হবে।

কলকারখানা ও প্রতিষ্ঠান পরিদর্শন অধিদপ্তরের সহকারী মহাপরিদর্শক শিপন চৌধুরীকে প্রধান করে গঠিত কমিটিকে তিন কার্যদিবস সময় দেওয়া হয়েছিল। আরো ৫ কার্যদিবস সময় বাড়িয়ে নিলেও এখনো তদন্ত প্রতিবেদন জমা দিতে পারেনি সংস্থাটি। কমিটির প্রধান শিপন চৌধুরী বলেন, শ্রমিক কল্যাণ ফাউন্ডেশনের চেক বিতরণের কারণে প্রথম দিকে আমরা কাজ করতে পারিনি। হাতপাতালে চিকিৎসাধীন শ্রমিকদেরও বক্তব্য নেওয়া হচ্ছে। প্রতিবেদন দাখিল করতে আরো সময় লাগবে। ২য় দফায় সময়ের আবেদন করবো।

চট্টগ্রাম কাস্টমস হাউসের অতিরিক্ত কমিশনার মোহাম্মদ শফি উদ্দিন বাবুলকে প্রধান করে তিন সদস্যের কমিটিকে ৫ দিনের সময় দেওয়া হয়েছিল। পরে আরো ১৫ কার্যদিবসের সময় বাড়িয়ে নেওয়া হয়েছে। তদন্ত কমিটির প্রধান মোহাম্মদ শফি উদ্দিন বলেন, আমরা স্টেকহোল্ডারদের সঙ্গে কথা বলছি। তদন্তের কাজ চলছে। প্রতিবেদন জমা দিতে আরো কিছু সময় লাগতে পারে।

চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষ টার্মিনাল ম্যানেজারকে প্রধান করে তিন সদস্যের কমিটি গঠন করেছিল। প্রতিবেদন জমা দিতে ৫ কর্মদিবসের সময় দেয়া হয়। এছাড়া ফায়ার সার্ভিসের পরিচালক (প্রশিক্ষণ,পরিকল্পনা ও উন্নয়ন) লেফটেন্যান্ট কর্নেল মো. রেজাউল করিমকে প্রধান সাত সদস্যের তদন্ত কমিটি করা হয়। কমিটিকে পাঁচদিনের মধ্যে প্রতিবেদন দিতে বলা হলেও এখনো তা দেয়া হয়নি। তদন্তের কাজ এখনো শেষ না হওয়ায় এই কমিটিও সময় বাড়ানোর জন্য আবেদন করেছে।

মালিকপক্ষের বিরুদ্ধে নেয়া হয়নি কোন ব্যবস্থা :

গত ৪ জুন রাতে বেসরকারি ডিপোটিতে ভয়াবহ আগুন এবং বিস্ফোরণের ঘটনায় ফায়ার সার্ভিস কর্মীসহ ৪৯ জন নিহত হন। এছাড়া আড়াই শতাধিক মানুষ আহত হয়েছেন। আশপাশের এলাকার স্থাপনাও ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। নিয়ম না মেনে ডিপোতে হাইড্রোজেন পারঅক্সাইড রাখায় ভয়াবহতায় রূপ নেয় বলে প্রাথমিকভাবে চিহ্নিত করেছে সংস্থাগুলো। বেসরকারি কনটেইনার ডিপোতে বিপজ্জনক পণ্য সংরক্ষণের জন্য দেশীয়-আন্তর্জাতিক নীতিমালা এবং পৃথক স্থানে কনটেইনার সংরক্ষণের নিয়ম থাকলেও বিএম ডিপো কর্তৃপক্ষ তা মানেনি বলে প্রাথমিকভাবে বিভিন্ন সংস্থা চিহ্নিত করে।

এছাড়া বিএম ডিপো কর্তৃপক্ষের কাছে পরিবেশ অধিদপ্তরের যথাযথ অনুমোদন ছিল না এবং ডিপোর ভেতরে ফায়ার হাইড্রেন্ট, স্মোক, হিট, মাল্টি ডিটেকটর, সেইফটি কমিটিসহ অগ্নিনির্বাপণের কোন ব্যবস্থা ছিল না। বেসরকারি ডিপোটি পরিচালনায় এতো অনিয়মের পরও মালিকপক্ষের বিরুদ্ধে কোন ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি। উল্টো বিস্ফোরণের ঘটনায় আহত কর্মকর্তা-কর্মচারীসহ আটজনের বিরুদ্ধে দায়িত্ব অবহেলার অভিযোগ এনে মামলা করেছে পুলিশ। ঘটনার ১২ দিন পার হলেও এখনো কোন আসামিকে গ্রেপ্তার করেনি পুলিশ। সীতাকুন্ড মডেল থানার ওসি আবুল কালাম আজাদ বলেন, মামলার তদন্ত কাজ চলছে। তদন্ত শেষ হলে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

# ২২.০৬.২০২২ চট্টগ্রাম #