চলমান সংবাদ

মাদ্রাসার সিনিয়র ২ ছাত্র জবাই করে হত্যা করে মাশফিকে

চট্টগ্রামের বোয়ালখালীতে মাদ্রাসা ছাত্র ইফতেখার মালিকুল মাশফিকে (৭) জবাই করে হত্যা করেছিল তারই মাদ্রাসার দুই শিক্ষার্থী। মাশফি হত্যার তিন মাস পর এই হত্যাকান্ডের রহস্য উদঘাটন করেছে পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই)। খুনের সঙ্গে জড়িত ওই মাদ্রাসার কিশোর বয়সী দুই ছাত্রকেও গ্রেপ্তার করা হয়েছে। পিবিআই জানিয়েছে, তুচ্ছ বিষয়ে ক্ষোভ থেকে মাদ্রাসার ভেতরে ওই ছাত্রকে নৃশংসভাবে খুন করা হয়। খুনের দায় স্বীকার করে রোববার (১৯ জুন) বিকেলে চট্টগ্রামের একটি আদালতে ১৬৪ ধারায় জবানবন্দি দিয়েছে হত্যাকান্ডে জড়িত দুই দুই শিক্ষার্থী। এছাড়া খুনের বর্ণনা দিয়ে প্রত্যক্ষদর্শী আরও দুই শিক্ষার্থী চট্টগ্রাম আদালতে জবানবন্দি দেয়। গত ৫ মার্চ সকালে চট্টগ্রামের বোয়ালখালী উপজেলার চরণদ্বীপ ইউনিয়নে চরণদ্বীপ দরবার শরীফ পরিচালিত আল্লামা শাহসূফী অছিয়র রহমান মাদ্রাসার দোতলায় স্টোররুম থেকে মাশফির গলাকাটা মরদেহ উদ্ধার করে পুলিশ। নিহত মাশফি ওই ইউনিয়নের ফকিরাখালী গ্রামের প্রবাসী আব্দুল মালেকের ছেলে। সে ওই মাদ্রাসার হেফজখানা বিভাগের কায়দা শাখার ছাত্র ছিল। এ ঘটনায় মাশফির মামা মাসুদ খান বাদী হয়ে বোয়ালখালী থানায় হত্যা মামলা দায়ের করেন। ওই মামলায় বোয়ালখালী থানা পুলিশ তিন শিক্ষককে গ্রেপ্তার করেছিলেন। তবে পুলিশ খুনের রহস্য উদঘাটন করতে না পারায় গত ১০ এপ্রিল পুলিশ সদর দফতরের নির্দেশে মামলার তদন্তভার পায় পিবিআই। পিবিআই’র পুলিশ সুপার নাজমুল হাসান বলেন, প্রত্যক্ষদর্শী মাদ্রাসার দুই ছাত্রকে অভিভাবকের মাধ্যমে পিবিআই কার্যালয়ে এনে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়। দু’জনের বর্ণনা অভিন্ন হওয়ার পর তাদের তথ্য অনুযায়ী ঘটনায় জড়িত দুই ছাত্রকে শনিবার আটক করে পিবিআই কার্যালয়ে আনা হয়। দু’জনের বয়স ১৫ বছর। তারা ওই মাদ্রাসার সবচেয়ে সিনিয়র তিন ছাত্রের মধ্যে দু’জন এবং দুরুদ বিভাগের ছাত্র। জিজ্ঞাসাবাদে দু’জন হত্যাকান্ডের কথা স্বীকার করে। জিজ্ঞাসাবাদে ওই দুই ছাত্র জানায়, নিহত মাশফি এবং তাদের বাড়ি একই এলাকায়। মাশফির জন্য তার বাসা থেকে মাঝে মাঝে রান্না করা খাবার পাঠাত। এই দু’জন সেই খাবার জোরপূর্বক খেয়ে ফেলত। মাশফি তার বড় ভাইকে বিষয়টি জানায়। তখন বড় ভাই ক্ষুব্ধ হয়ে মাদ্ররাসায় এসে দু’জনকে বকাঝকা করে এবং তিনি বিষয়টি শিক্ষক জাফরকেও জানিয়ে দেন। জাফরও তাদের ধমক দেয়। এতে দু’জনের ক্ষোভ জমে মাশফির ওপর। সেই ক্ষোভ থেকেই হত্যাকান্ড। পুলিশ সুপার নাজমুল হাসান বলেন, ‘ঘটনার দিন মাদ্রাসায় ক্লাস চলছিল। কিন্তু গ্রেপ্তার দু’জনের একজন মাশফিকে নিয়ে দোতলায় স্টোররুমে যায়। পরে আরেকজন যুক্ত হয়। প্রথমজন মাশফিকে ধাক্কা দেয়। মাশফি দেয়ালের সঙ্গে আছড়ে পড়ে। সে মাশফির মাথা ধরে সজোরে দেয়ালের সঙ্গে আঘাত করে। মাশফি লুটিয়ে পড়লে দ্বিতীয়জন হাত-পা চেপে ধরে এবং প্রথমজন জবাই করে হত্যা করে। মাশফিকে জবাইয়ে ব্যবহৃত ছোরাটি গ্রেপ্তার একজনের পোশাকের বাক্স থেকে উদ্ধার করা হয়েছে। পিবিআই পরিদর্শক মোহাম্মদ নেজাম উদ্দীন জানিয়েছেন, মাশফিকে খুনের পর মাদ্রাসার তিন শিক্ষককে গ্রেপ্তার করা হলেও তারা ঘটনার সঙ্গে জড়িত নন। গ্রেপ্তার দুই ছাত্র ঘটনার বিস্তারিত বর্ণনা দিয়ে আদালতে জবানবন্দি দিয়েছেন। প্রত্যক্ষদর্শী দুই সাক্ষীও জবানবন্দি দিয়েছেন। # ১৯.০৬.২০২২ চট্টগ্রাম #