চলমান সংবাদ

পাহাড়ধসে প্রাণহানির পর প্রশাসনের উচ্ছেদ অভিযান শুরু

উচ্ছেদকৃতদের পুনর্বাসন নিয়ে দুশ্চিন্তায় প্রশাসন পাহাড়ধসে প্রাণহানির পর পাহাড়ে ঝুঁকিপূর্ণ বসবাসকারীদের উচ্ছেদ কার্যক্রম শুরু করেছে চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসন। রবিবার (১৯ জুন) সকাল থেকে পাহাড়ের পাদদেশে বসবাসকারীদের উচ্ছেদে অভিযান শুরু করে প্রশাসন। এর আগে শুক্রবার (১৭ জুন) দিবাগত রাতে নগরের আকবরশাহ থানাধীন বরিশাল ঘোনা ও ফয়’স লেকের বিজয় নগর এলাকায় পৃথক পাহাড়ধসে ৪ জন নিহত হন ও আরও ১১জন আহত হন। গত কয়েকদিন ধরে চট্টগ্রামে টানা বর্ষণ হচ্ছে। চলতি মৌসুমে আবহাওয়া অফিসের পক্ষ থেকে পাহাড় ধসের শঙ্কার কথা বলা হলেও এ নিয়ে আগে থেকে কোনো উদ্যোগ ছিল না জেলা প্রশাসনের। শুক্রবার দিবাগত রাতে পাহাড় ধসে প্রাণহানির পর রবিবার (১৯ জুন) সকাল থেকে বিকেল পর্যন্ত নগরীর আকবর শাহ থানার এক নম্বর ঝিলের বরিশাল ঘোনা এলাকায় উচ্ছেদ অভিযান চালিয়ে অতি ঝুঁকিপূর্ণ ১৪৫টি স্থাপনা উচ্ছেদ করে প্রশাসন। কিন্তু উচ্ছেদকৃতদের পুনর্বাসন নিয়ে দুশ্চিন্তায় রয়েছে প্রশাসন। উচ্ছেদ অভিযান পরিদর্শনের সময় জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ মমিনুর রহমান বলেন, পাহাড়ে অবৈধ ও ঝুঁকিপূর্ণ যেসব স্থাপনা উচ্ছেদ করা হচ্ছে সেখানে পুনরায় কেউ দখলে নিয়ে যেন স্থাপনা নির্মাণ করতে না পারে সেজন্য কাঁটা তারের বেড়া দিয়ে সীমানা নির্ধারণ করে গাছ লাগানো হবে। যদি কেউ এ সীমানা ভেঙে বসতি গড়ে তুলে তার বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে। তিনি বলেন, আমরা চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশন এবং রেলওয়ে কর্তৃপক্ষকেও বলেছি তাদের আওতাধীন পাহাড়ি জায়গায় নির্মিত অবৈধ স্থাপনাগুলো উচ্ছেদ করে সেখানে কাঁটাতারের বেড়া ও গাছ লাগিয়ে সংরক্ষণ করতে। পাহাড়ে অবৈধ ও ঝুঁকিপূর্ণভাবে বসবাসকারীদের বিরুদ্ধে আমাদের এ অভিযান অব্যাহত থাকবে। চট্টগ্রামের অন্যান্য পাহাড়েও ঝুঁকিপূর্ণভাবে বসবাসকারীদের সরানো হবে কিনা এমন প্রশ্নের জবাবে মমিনুর রহমান বলেন, পাহাড় থেকে অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ কার্যক্রম একটি চলমান প্রক্রিয়া। গতবছর আমরা ৪৬৫টি কাঁচা, সেমি-পাকা ঘর উচ্ছেদ করেছি। যারাই পাহাড়ের ঢালুতে অবৈধভাবে ঝুঁকিপূর্ণ বসতি স্থাপন করবে, তাদের উচ্ছেদ করা হবে। তিনি জানান, হাটহাজারী ও সীতাকুন্ড এলাকায় ঝুঁকিপূর্ণভাবে পাহাড়ে বসবাস করা ২৩৫টি পরিবারকে আশ্রয়ণ প্রকল্পে স্থানান্তর করা হয়েছে। আরও ৮৫টি পরিবার স্থানান্তর বাকি। আগামী জুলাই ও অগাস্টের মধ্যে তাদের জন্য বরাদ্দ করা ঘরগুলো নির্মাণ হয়ে যাবে। তারপর যারা ঝুঁকিপূর্ণভাবে বসবাস করছে তাদের আশ্রয়কেন্দ্রে পুনর্বাসন করতে পারব। কিন্তু বড় চ্যালেঞ্জ হচ্ছে সিটি কর্পোরেশন এলাকায় যারা পাহাড়ে বসবাস করছেন, তাদের পুনর্বাসন করা। তাদের বিষয়েও আমরা চিন্তা-ভাবনা করছি। আমরা জঙ্গল সলিমপুর এলাকায় একটি প্রকল্প নেওয়ার চেষ্টা করছি। সেটি করতে পারলে শহর এলাকার ভূমিহীন মানুষদের জঙ্গল সলিমপুর এলাকায় পুনর্বাসন করতে পারব। চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশন, চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশ, র‌্যাব, আনসার, ফায়ার সার্ভিস, স্থানীয় ওয়ার্ড কাউন্সিলর এবং সেচ্ছাসেবকদের সহযোগিতায় চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসনের সিনিয়র সহকারী কমিশনার ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট মো. তৌহিদুল ইসলামের সমন্বয়ে আগ্রাবাদ সার্কেলের সহকারী কমিশনার ভূমি মোহাম্মদ আল আমিন সরকার, চান্দগাঁও সার্কেলের সহকারী কমিশনার (ভূমি) মাসুদ রানা, ও কাট্টলী সার্কেলের সহকারী কমিশনার (ভূমি) মো. ওমর ফারুকের নেতৃত্বে এ উচ্ছেদ অভিযান পরিচালিত হয়। এর আগে, শনিবার (১৮ জুন) চট্টগ্রামের জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ মমিনুর রহমান ঝিলের বরিশাল ঘোনা এলাকায় অতি ঝুঁকিপূর্ণ ১২০টি স্থাপনা উচ্ছেদের ঘোষণা দেন। এরই পরিপ্রেক্ষিতে গতকাল রোববার অভিযান পরিচালনা করা হয়। অভিযানে অংশ নেয়া নগরের কাট্টলী সার্কেলের সহকারী কমিশনার (ভূমি) মো. ওমর ফারুক বলেন, উচ্ছেদ অভিযানের পর আবারও কেউ যদি পাহাড়ের পাদদেশে ঘর-বাড়ি তৈরি করে তাদের বিরুদ্ধে মামলাসহ কঠোর শাস্তির ব্যবস্থা নেওয়া হবে। তিনি বলেন, এ জায়গাটা রেলওয়ের জায়গা। পাহাড়গুলো রেলওয়ের পাহাড়। এখানে থাকা স্থাপনা উচ্ছেদ করে আমরা রেলওয়েকে বুঝিয়ে দিই। এরপরও দেখা যায়, কিছু লোক আবারও অবস্থান করতে চলে আসে। আমরা এখন কঠোর অবস্থানে রয়েছি। এখানে যতগুলো অবৈধ স্থাপনা রয়েছে সবগুলোর বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে দেওয়া হয়েছে। তারা নিজ দায়িত্বে সরে না যাওয়াতেই আমাদের বাধ্য হয়েই তাদের স্থাপনাগুলো ভাঙতে হচ্ছে। এখান থেকে তাদের সরিয়ে আশ্রয়কেন্দ্রে নেয়া হচ্ছে। সেখানে সবার জন্য খাবার ও অবস্থানের ব্যবস্থাও করা হয়েছে। এর পরবর্তীতে যদি দেখা যায় যে, কেউ এখানে অবস্থান করার জন্য বা পাহাড়ের পাদদেশে ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায় ঘর-বাড়ি তৈরি করে তাহলে তাদের বিরুদ্ধে নিয়মিত মামলাসহ কঠোর শাস্তির ব্যবস্থা করা হবে। # ১৯.০৬.২০২২ চট্টগ্রাম #