শিল্প সাহিত্য

অস্থির বর্তমান

– তামান্না হোসেন

দুপুরে কাজ করছি। হঠাৎ ফ্রন্ট ডেস্কে কাজ করতে থাকা ডেইজি অস্থির হয়ে উঠলো। ডেস্ক ছেড়ে লাঞ্চ রুমে ছুটে গেলো। আমি ওর ছুটে যাওয়া দেখে ভড়কে গেলাম।আমিও গেলাম ওর পিছু পিছু। লাঞ্চ রুমে গিয়ে দেখি ডেইজী ঘেমে অস্থির,তার হাত কাঁপছে। সেই কাঁপা হাতেই সে ফোনের বাটন টিপছে। আমি যে কিছু জিজ্ঞেস করবো সে সাহস আমি হারিয়ে ফেলেছিলাম সেই মুহুর্তে। ডেইজী ফোন যে কোথায় করছে তা ঠাহর করার আগেই অপর প্রান্ত থেকে ডেইজীর ফোনের উত্তর পেয়ে গেলো।সে ধাতস্থ হল। মাটিতেই সে বসে গেলো। এবার শুরু হল ডেইজির এই অস্থিরতা আমার। আমি মনে হয় জ্ঞান হারিয়েই ফেলবো।
আমার বুকের ভিতরে হাজার হাতুড়ির ঘা পরতে শুরু করলো, আমি ঘেমে গেলাম,আমার শরির, হাত কাঁপা শুরু হল। চারিদিক অন্ধকার হয়ে এলো। কিন্তু হিউস্টনে থাকে মাশা, ওকে যে আমার ফোন করতেই হবে, এক্ষুনি।মাশার
পাঁচ বছরের ছেলে আইযান কি স্কুলে গেছে আজ??মাত্রই খবরে জানাল নারকীয় তান্ডব হয়েছে বাচ্চাদের স্কুলে।অস্রহাতে হামলা। কোন স্টেট, কোন শহর আর আমি কোন শহরে সেটা তখন ভাবনাতে নেই। ভাবনা আমার বাচ্চা, আমাদের সন্তানেরা স্কুলে। না, হলে ডেইজি কেন এই রকম অস্থির হল। থাকে সে আটলান্টায় এই শুটিং হয়েছে টেক্সাস। আমি প্রচন্ড আতংক নিয়ে মাশাকে ফোন করলাম। মাশা থাকে টেক্সাসে। হিউস্টন। কিন্তু অস্রধারী অস্র দিয়ে ঝাঝরা করেছে হিউস্টন থেকে ২৪৫ মাইল দূরে নর্থ টেক্সাসের উইভেইড (UVAIDE) শহরে। ডালাস থেকে কাছে। আমার মাথায় নেই হিউস্টন আর ডালাস দুই শহর।মাশাকে একবার ফোন করেই পেয়ে গেলাম।শুধু শুনতে চাইলাম আইযান কই?।মাশা জানালো, আইযানের আজ শরিরটা ভালো ছিলনা বলে স্কুলে পাঠায়নি।

আমিও ডেইজীর মত মাটিতেই বসে পরলাম আর ইশ্বরের কাছে বললাম, দয়াময়,শান্ত করো সবাইকে,শান্তিতে রাখো
পৃথিবীর প্রতিটি মানুষকে।আমাদের সন্তানদেরকে নিরাপদে
বাড়ি ফিরতে সাহায্যে কর।

১৮ বছরের বন্দুকধারি প্রথমে নিজ দাদিকে গুলি করে ট্রাক চালিয়ে উভেইড শহরের এলিমেন্ট্রি স্কুলে প্রবেশ করে রাইফেল দিয়ে এলোপাথাড়ি গুলি করে ১৯ টি শিশু আর দুই জন শিক্ষককে হত্যা করে। এর সাথে হত্যা হয় ২১টি
পরিবার আর সমগ্র দেশকে।

গান ভায়োলেন্স এখন আমাদের সামাজিক জীবনে
জড়িয়েই গেলো। প্রতিদিনই কোথাও না কোথাও হচ্ছেই।
নর্থ ক্যারোলাইনার মলে গেছে শাহিন ভাবী। হঠাৎ প্রচন্ড তারাহুরো, হট্টগোল।উনি কিছুই বুঝতে পারলেন না। সবার সাথে দৌড়াতে লাগলেন। অসুস্থ হয়ে গেলেন। শুনতে পেলেন
গুলির শব্দ। বিরাট মলের কোন দিক দিয়ে বের হয়েছেন কিছুই বুঝতে পারলেন না। গাড়ি কোথায় পার্ক করেছেন আর উনি কোথায়।। সবেই দিকবিদিকশুন্য হয়ে ছুটছে।চারদিকে পুলিশের গাড়ি, সাইরেন, ভীত মানুষ। বহু কস্টে, কয়েক ঘন্টা অনান্য সব মানুষের সাথে খোলা এক জায়গায় অপেক্ষা করে সুস্থ ভাবেই বাড়ি ফিরেছেন। কিন্ত সেই ভয়ংকর আতংক উনাকে বিসন্নতায় আছন্ন করেছে।
ফিলাডেলফিয়াতে শুটিং হল। পশর নুতন কাজ নিয়ে গিয়েছে সেখানে। আমার বুক ধুকপুক শুরু হ্য়েই গেলো।পশর কি আর ফোন করলেই পাওয়া যায়!এখনের যুগ আবেগকে উপেক্ষা করা। তবুও মেসেঞ্জারে সবুজ বাতি দেখে অস্তির মন অল্প হলেও সুস্থির হল। কিন্তু না জানি কোন মায়ের বুক ভেংগে গেলো।

যাচ্ছিলাম আমরা টরেন্টোর দিকে। বাফেলোতে অল্পবাকি
প্রবেশ করার। হাইওয়েতে ড্রাইভিং এর মধ্যই রেডিওতে শুনতে পেলাম বাফেলো সিটির সুপার মার্কেটে ১৮ বছরের
শ্বেতাঙ্গ তরুন গুলি করে ১০ জন কৃষাংগোর জীবন প্রদীপ নিভিয়ে দিয়েছে। শ্বেতাংগ এই তরুন মোটিভেটেড বাই হেইট।

নিউইয়র্ক এ আশংকাজনক ভাবে বেড়েছে এই হেইট ক্রাইম।চূড়ান্ত অনিরাপদ সাবওয়ে স্টেশন গুলো। হেইট ক্রাইম ছাড়াও আছে যত্রযত্র মানুসিক ভারসাম্যহীন মানুষ।অপেক্ষারত যাত্রীদেরকে ধাক্কা দিয়ে ফেলে দেয় চলন্ত ট্রেনের নিচে। রাতে ক্লান্ত হয়ে বাড়ি ফিরছে হেঁটে কারো স্বামী, কারো বাবা , ট্রেন স্টেশনের সাথেই বাসা, অল্প হাঁটা, বাসায় অপেক্ষারত স্ত্রী, সন্তান। বাসায় অবস্থানরত পরিবার শুনতে পেলো ফায়ারের শব্দ। সেই শব্দে যে থেমে যাবে পরিবারের কোলাহল তাতো জানা ছিল না।

মহা আতংক নিয়ে যাচ্ছে বর্তমান।
দুর্ঘটনা তো নিয়তি।কিন্তু দুবৃত্তর হামলা, ঘৃনা,হিংসার শিকার
আমাদেরকে ভংগুর করে তুলছে।দেশ ছেড়ে আমরা প্রবাসি।দেশ,স্বজনের জল্য আমাদের আহাজারি তো আছেই।তবুও জীবন যাচ্ছিলো কেটে জীবনের নিয়মে।কিন্তু
ইদানিং অশান্ত হয়ে উঠেছে চারদিক।অনিরাপদ অনেক কিছুই। এরি মাঝেও বেঁচে থাকাও।