চলমান সংবাদ

পতেঙ্গা সি বিচ বেসরকারি কোম্পানিকে ইজারা দেয়ার প্রক্রিয়া বন্ধের দাবি নাগরিক সমাজের

চট্টগ্রামের পতেঙ্গা সমুদ্র সৈকতের একটি অংশ বেসরকারি কোম্পানির কাছে ইজারা দেয়ার প্রক্রিয়া চলছে। সমুদ্র সৈকতের জায়গাটি চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ-চউক’র না হলেও ইতিমধ্যে সৈকতের একাংশ বেসরকারি খাতে ছেড়ে দেয়ার জন্য টেন্ডার আহ্বান করেছে প্রতিষ্ঠানটি। এদিকে প্রাকৃতিক উন্মুক্ত বিনোদন কেন্দ্র পতেঙ্গা সমুদ্র সৈকত বেসরকারি খাতে ইজারা দেয়ার প্রতিবাদ জানিয়েছে চট্টগ্রামের সচেতন নাগরিকবৃন্দ। তারা বলছেন, এটি হলে সেখানে সর্বসাধারণের অবাধ যাতায়াতের অধিকার খর্ব হবে। জনগণের সম্পদ থেকে জনগণকে বঞ্চিত করে বাণিজ্যিকভাবে ইজারা দেওয়া আইন বিরোধী। পতেঙ্গা সমুদ্র সৈকতের ভূমির মালিক চউক না হওয়া সত্বেও ইজারা দিতে টেন্ডার আহবান প্রসঙ্গে চউক’র প্রধান প্রকৌশলী কাজী হাসান বিন শামস বলেন, পতেঙ্গায় বিপুল পরিমাণ জায়গা আমরা রিক্লেইম করেছি। পানি উন্নয়ন বোর্ডের কাছ থেকে এই জায়গা আমাদের নিকট হস্তান্তরের প্রক্রিয়া চলছে। ভূমি মন্ত্রণালয় থেকেও বিষয়টি নিয়ে কাজ করা হচ্ছে। ভূমির মালিকানার ব্যাপারটি সুরাহা করা হবে। এটি নিয়ে পরে কোনো জটিলতা তৈরি হবে না। তিনি জানান, পতেঙ্গা এলাকায় চউক নির্মিত ছয় কিলোমিটার বিচের মধ্যে এক কিলোমিটার এলাকা বেসরকারি ব্যবস্থাপনায় দেয়া হচ্ছে। বাকি অংশ সর্বসাধারণের জন্য উন্মুক্ত থাকবে। বেসরকারি কোম্পানি ওই অংশ ঘিরে নিজেদের মতো করে বিভিন্ন সুযোগ-সুবিধা তৈরি করবে। পর্যটকদের জন্য ওয়াশরুম থেকে শুরু করে ফুড কর্নারসহ সবকিছু তারা নির্মাণ এবং পরিচালনা করবে। ওই অংশে প্রবেশ করতে হলে টিকেট কাটতে হবে। নগর পরিকল্পনাবিদ প্রকৌশলী দেলোয়ার হোসেন মজুমদার বলেন, পতেঙ্গা সি বিচ একটি পাবলিক বিচ ও প্রাকৃতিক সম্পদ। এর উপর সবার সমান ও অবাধ অধিকার প্রাকৃতিক, এ অধিকার থেকে কাউকে বঞ্চিত করা যায় না। সম্প্রতি চউক পতেঙ্গা সি বিচ বেসরকারি কোম্পানিকে ইজারা দেওয়ার জন্য টেন্ডার আহবান করেছে। সি বিচের মতো প্রাকৃতিক উন্মুক্ত স্থান বাণিজ্যিকীকরণের তৎপরতা, এক্সক্লুসিভ জোন করে টিকেট বসানো এবং এর মাধ্যমে শুধু সামর্থ্যবানদের প্রবেশ করতে দেওয়া মানুষের অধিকারকে খর্ব করার শামিল। এদিকে প্রাকৃতিক উন্মুক্ত বিনোদন কেন্দ্র পতেঙ্গা সমুদ্র সৈকত বেসরকারি খাতে ইজারা দেয়ার চক্রান্ত বন্ধের দাবি জানিয়েছে বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টি (সিপিবি) চট্টগ্রাম জেলা কমিটি। বুধবার (১১ মে) বিকেলে গণমাধ্যমে পাঠানো এক বিবৃতিতে সিপিবি জেলার সভাপতি অধ্যাপক অশোক সাহা ও সাধারণ সম্পাদক মোহাম্মদ জাহাঙ্গীর পতেঙ্গা সমুদ্র সৈকত নিয়ে ছিনিমিনি খেলা বন্ধের আহবান জানিয়ে বলেন, রক্ষণাবেক্ষণ ব্যয়ের অজুহাত দেখিয়ে পতেঙ্গা সমুদ্র সৈকতের একাংশকে প্রাইভেট জোন ঘোষণা করে বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের হাতে তুলে দেয়ার প্রক্রিয়া গণবিরোধী প্রক্রিয়া। নেতৃবৃন্দ বলেন, পতেঙ্গা সমুদ্র সৈকত প্রকৃতির দানে গড়ে ওঠা সম্পদ, কোনো ব্যক্তিবিশেষের তৈরি নয়। জনগণের সম্পদ। বেসরকারি খাতে সৈকত দিয়ে দিলে সেখানে সর্বসাধারণের অবাধ যাতায়াতের অধিকার খর্ব হবে। শুধুমাত্র বিত্তবানদের জন্য সুযোগ তৈরি হবে, বঞ্চিত হবেন আপামর জনসাধারণ। নাগরিকের অধিকার খর্ব করে জনগণের সম্পদ শুধুমাত্র বিত্তবানদের হাতে তুলে দেয়ার এখতিয়ার কারো নেই। অবিলম্বে চউক’র বেআইনি ও জনস্বার্থবিরোধী অপতৎপরতা বন্ধ না করলে চট্টগ্রামবাসী তা কঠোর আন্দোলনের মাধ্যমে তা প্রতিহত করবে। পতেঙ্গা সমুদ্র সৈকত বেসরকারি কোম্পানিকে ইজারা দেয়ার প্রক্রিয়া বন্ধের দাবিতে বিক্ষোভ সমাবেশ করেছে বাসদ। পাশপাশি এই প্রক্রিয়া বন্ধে চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসককে স্মারকলিপি প্রদান করেছে সংগঠনিটি। স্মারকলিপি গ্রহণ করে চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসক ও পতেঙ্গা বিচ ম্যানেজমেন্ট কমিটির সভাপতি মো. মমিনুর রহমান চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ-চউক কর্তৃক পতেঙ্গা বিচ ইজারা প্রদানে টেন্ডার আহবানের সংবাদে বিস্ময় প্রকাশ করেন এবং তিনি এবিষয়ে অবগত নন বলে জানান। চউক’র এধরণের কোন এক্তিয়ার নেই এবং এজন্য চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসনের পক্ষ হতে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করা হবে বলে জেলা প্রশাসক মমিনুর রহমান নেতৃবৃন্দকে জানান। স্মারকলিপি প্রদানের পূর্বে বুধবার (১১ মে) সকালে কোর্ট বিল্ডিংস্থ শহীদ মিনার চত্বরে এক বিক্ষোভ সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়। বাসদ(মার্কসবাদী) চট্টগ্রাম জেলার আহবায়ক মানস নন্দীর সভাপতিত্বে ও সদস্য জাহেদুন্নবী কনকের পরিচালনায় সমাবেশে বক্তব্য রাখেন জেলা কমিটির সদস্য সচিব শফিউদ্দিন কবির আবিদ, সদস্য ইন্দ্রানী ভট্টাচার্য সোমা, আসমা আক্তার, দীপা মজুমদার। বক্তারা বলেন, পতেঙ্গা বিচের জমির মালিকানা চউক’র নয়। এর মালিকানা জনগণের, রাষ্ট্র এখানে জনগণের নিমিত্তে ট্রাস্টি হিসেবে তা সংরক্ষণ করবে। ২০১৯ সালের জানুয়ারিতে হাইকোর্টের প্রদত্ত ঐতিহাসিক রায়ে বাংলাদেশের সংবিধানের ১৮’র ক, ২১, ৩১, ৩২ অনুচ্ছেদ উদ্ধৃত করে বলা হয়, পরিবেশ, প্রাকৃতিক সম্পদ, জীববৈচিত্র্য, সকল উন্মুক্ত জলাভূমি, সমুদ্র, সমুদ্র সৈকত, নদ-নদী, খাল-বিল, হাওর-বাওর, ঝিল, নদীর পাড়, পাহাড়-পর্বত, টিলা, বন এবং বাতাস ইত্যাদি সবকিছুকে পাবলিক ট্রাস্ট সম্পত্তি বা জনগণের সম্পত্তি। এগুলোর কোন একটির অধিকার থেকে নাগরিকদেরকে বঞ্চিত করা সংবিধান পরিপন্থী বলে উল্লেখ করা হয়েছে। বলা হয়েছে, এসব সম্পত্তি সব নাগরিকের, কোনো একক ব্যক্তি বা গোষ্ঠী বা প্রতিষ্ঠানের জন্য নয়। এসব পাবলিক ট্রাস্ট সম্পত্তিতে সাধারণ জনগণের মুক্ত এবং বাধাহীন ব্যবহারের জন্য সংরক্ষণ বা ব্যবস্থাপনার দায়িত্বে থাকবে রাষ্ট্র। এসব পাবলিক ট্রাস্ট সম্পত্তি কোন ব্যক্তি বা কোম্পানিকে বাণিজ্যিকভাবে ইজারা দেওয়া যাবে না। ফলে চউক’র এ সিদ্ধান্ত স্পষ্টত বাংলাদেশের সংবিধান, আইন ও উল্লেখিত রায়ের পরিপন্থী।

# ১১.০৫.২০২২ চট্টগ্রাম #