চলমান সংবাদ

চমেক হাসপাতালে দুদক’র অভিযান নানা অনিয়মের প্রমান মিলেছে

ওষুধ থাকা সত্বেও রোগীকে বলা হয় ‘ওষুধ নাই’ স্বাস্থ্যসেবা নিয়ে নানা অনিয়মের অভিযোগের প্রেক্ষিতে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ (চমেক) হাসপাতালে অভিযান চালিয়েছে দুদক। অভিযানে নানা অনিয়মের প্রমাণও মিলেছে। বৃহস্পতিবার (১০ মার্চ) দুদক’র ৪ সদস্যের তদন্ত টিম অভিযানে এসে এ প্রমাণ পায়। অভিযানে যাওয়া দুদক’র একটি সূত্র জানায়, চমেক হাসপাতালের সরকারি ফার্মেসির দায়িত্বে থাকা কর্মচারীরা ক্যালসিয়ামসহ কিছু ওষুধের সরবরাহ নেই জানিয়ে রোগীকে বিদায় করলেও অভিযানে সেই ওষুধই পাওয়া গেছে ফার্মেসিটির ভেতরের একটি টেবিলের ড্রয়ারে। এছাড়া দৈনিক চাহিদার প্রেক্ষিতে হাসপাতালের কেন্দ্রীয় ওষুধাগার থেকে ওষুধ বুঝে নেয়ার পর রোগীদের অতিরিক্ত চাহিদার অযুহাত দেখিয়ে কোন ধরনের কাগজ কিংবা চাহিদাপত্র ছাড়াই নিয়ে আনা হয় আরো অতিরিক্ত ওষুধ। কিন্তু এসবের একটি ওষুধও রোগীর কাছে যায়না বলে অভিযানে জানা যায়। দুর্নীতি দমন কমিশনের টানা চার ঘণ্টার অভিযানে এসব চাঞ্চল্যকর এসব তথ্য বেরিয়ে এসেছে। দুদক কর্মকর্তারা বলছেন, যতজনকে ওষুধ দেয়া হচ্ছে, তার চেছের বেশি ওষুধ নিয়ে আসা হয় স্টোর থেকে। কিন্তু রোগী ওষুধগুলো সঠিকভাবে পায়না। এছাড়া ওষুধের স্টোরের হিসেবের সঙ্গে ফার্মেসিতে নিয়ে আসা হিসাবের মিল না থাকা, হিসাব সঠিকভাবে রেজিস্ট্রার খাতায় না লেখার বিষয়টিও উঠে আসে অভিযানে। এনিয়ে ফার্মেসিতে দায়িত্বরতদের জিজ্ঞাসাবাদ করলে, কোনো সদুত্তরও পাওয়া যায়নি। এসব বিষয়ে আরও অধিকতর অনুসন্ধান করে ব্যবস্থা নিতে চান দুদক’র কর্মকর্তারা। তবে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ বলছে, সঠিকভাবেই রেজিস্ট্রার মেনটেইন করে কেন্দ্রীয় স্টোর থেকে ওষুধগুলো ফার্মেসি ও ওয়ার্ডগুলোতে সরবরাহ করা হয়ে থাকে। যেহেতু প্রশ্ন ওঠেছে, তাই এ নিয়ে আরও স্বচ্ছ থাকতে দুদক পরামর্শ দিয়েছে। দুদক সূত্রে জানা যায়, হাসপাতালের জন্য সরকারিভাবে যে ওষুধ সরবরাহ থাকা সত্ত্বেও সাধারণ রোগীরা না পাওয়ার বিষয়ে দুদক’র হটলাইন নম্বর ১০৬-এ অভিযোগ পায় দুদক। এরই প্রেক্ষিতে চমেক হাসপাতালে অভিযান চালানো হয়। এরমধ্যে হাসপাতালের প্রধান ওষুধ স্টোর ও যন্ত্রপাতি স্টোর এবং ২৬ নম্বর ওয়ার্ডে গিয়ে ওষুধ সরবরাহের বিভিন্ন তথ্য-উপাত্ত সংগ্রহ করে দুদক টিম। দুদক সমন্বিত জেলা কার্যালয়, চট্টগ্রাম-১’র উপ-পরিচালক মো. নাজমুচ্ছায়াদাতের নেতৃত্বে এ অভিযান পরিচালনা করা হয়। অভিযানে একই কার্যালয়ের উপ-পরিচালক মো. আবু সাঈদ, সহকারী পরিচালক মো. এনামুল হক ও কনস্টেবেল মো. ইমরান হোসাইন উপস্থিত ছিলেন। অভিযান শেষে দুদক চট্টগ্রাম-১’র উপ-পরিচালক মো. নাজমুচ্ছায়াদাত সাংবাদিকদের বলেন, দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) হটলাইন ১০৬ নাম্বারে অভিযোগের প্রেক্ষিতে প্রধান কার্যালয়ের নির্দেশনায় এ অভিযান পরিচালনা করা হয়েছে। অভিযানে বেশ কিছু ক্ষেত্রে অনিয়ম পাওয়া গেছে। রোগীরা তাদের ওষুধ যথাযথভাবে পায় না। এছাড়া স্টোর থেকে দৈনিক চাহিদার বাইরে আরও অতিরিক্ত ওষুধ নিয়ে আসলেও তা তাদের খাতায় এন্ট্রি হয় না। ওষুধের স্টোরের হিসেবের সঙ্গে ফার্মেসিতে নিয়ে আসা হিসাবের মিল নেই। অনিয়মের বিষয়ে ফার্মেসিতে দায়িত্বরতকে জিজ্ঞাসাবাদ করলে, কোনো সদুত্তরও পাওয়া যায়নি। তিনি বলেন, এটি একটি বড় হাসপাতাল, তাই এত অল্প সময়ে সবকিছু পরীক্ষা-নিরীক্ষা করা সম্ভব হয়নি। অল্প সময়ের মধ্যে এসব বিষয় যথাযথভাবে জানা কঠিন। এ নিয়ে আরও অধিকতর অনুসন্ধান প্রয়োজন আছে। দুদক প্রধান কার্যালয়ের নির্দেশনা পেলে পরবর্তীতে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।’ দুদক’র অভিযান প্রসঙ্গে চমেক হাসপাতালের সিনিয়র স্টোর অফিসার ডা. হুমায়ুন কবীর সাংবাদিকদের বলেন, দুদক’র একটি টিম এসেছিল। রোগীরা যে ওষুধ পান না, তার কোথায় গড়মিল, স্টোরে নাকি ওয়ার্ডে, সে বিষয়ে দুদদক টিম জানতে চেয়েছেন, আমি নিজেই উনাদের সর্বাত্মক সহযোগিতা করেছি। সব কিছু ঠিকঠাক আছে। উনারা ওয়ার্ডে গেছেন, রোগীদের সঙ্গে কথা বলেছেন। তবে কিছু প্রক্রিয়ার বিষয়ে আরও সতর্ক থাকতে বলেছেন তারা। আমরা ফার্মেসি এবং ওয়ার্ডে ওষুধ সরবরাহ দেওয়ার ক্ষেত্রে সতর্কতা অবলম্বন করে থাকি। ওয়ার্ডের ইনচার্জ ছাড়া কাউকে ওষুধ সরবরাহ করা হয় না। প্রসঙ্গত, গত ৭ ফেব্রুয়ারি হাসপাতাল থেকে সাড়ে তিন লাখ টাকার সরকারি ওষুধ চুরির ঘটনায় ২৬ নম্বর ওয়ার্ডের সরকারি স্টাফ আশু চক্রবর্তী ও আউটসোর্সিং কর্মচারী মো. সৈয়দকে গ্রেপ্তার করা হয়। ওষুধ চুরির ঘটনায় চমেকের স্টোর অফিসার ডা. মো. হুমায়ুন কবির বাদী হয়ে নগরের পাঁচলাইশ থানায় একটি মামলা দায়ের করেন। এ ঘটনায় একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়। পুলিশও ঘটনাটি তদন্ত করছে।
# ১০.০৩.২০২২ চট্টগ্রাম #