চলমান সংবাদ

দুদক’র মামলায় বিএনপি নেতা আসলামসহ চারজনের বিচার শুরু

বিএনপির কেন্দ্রীয় যুগ্ম মহাসচিব আসলাম চৌধুরীসহ পরিবারের চার সদস্যের বিরুদ্ধে দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) করা একটি মামলায় আদালতে অভিযোগ গঠন করা হয়েছে। বৃহস্পতিবার (৬ জানুয়ারি) চট্টগ্রামের বিভাগীয় বিশেষ জজ মুনসি আবদুল মজিদের আদালত এই অভিযোগ গঠনের মাধ্যমে বিচার শুরুর আদেশ দিয়েছেন। চট্টগ্রামে একটি বেসরকারি ব্যাংকের সোয়া তিনশ কোটি টাকা আত্মসাতের অভিযোগে ওই মামলায় ২ মার্চ থেকে সাক্ষ্যগ্রহণের সময় নির্ধারণ করেছেন আদালত। বিএনপি নেতা আসলাম চৌধুরী রাষ্ট্র ও সরকারবিরোধী চক্রান্তের অভিযোগে গ্রেপ্তার হয়ে ছয় বছর ধরে কারাবন্দি রয়েছেন। দুদক’র আইনজীবী কাজী সানোয়ার আহমেদ লাভলু বলেন, আসলাম চৌধুরীসহ চারজনের বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠনের জন্য রাষ্ট্রপক্ষ থেকে আবেদন করা হয়। এ সময় আসলামের আইনজীবী মামলা থেকে অব্যাহতির আবেদন করেন। রাষ্ট্রপক্ষ থেকে এ আবেদনের বিরোধিতা করা হয়। আসামি আসলাম চৌধুরীর উপস্থিতিতে উভয় পক্ষের শুনানি শেষে আদালত অভিযোগ গঠন করে বিচার শুরুর আদেশ দেন। তার স্ত্রী জামিনে ছিলেন। জামিন বাতিল করে তার বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করা হয়েছে। অন্য দুই আসামি পলাতক ছিলেন। তাদের বিরুদ্ধেও গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করেছেন আদালত। মামলার সাক্ষ্য গ্রহণের জন্য আদালত আগামী ২ মার্চ দিন ধার্য করেছেন। দুদক সূত্র জানায়, বেসরকারি এবি ব্যাংক চট্টগ্রামের আগ্রাবাদ শাখার ৩২৫ কোটি ৭৬ লাখ টাকা আত্মসাতের অভিযোগে ২০১৬ সালের ১৭ জুলাই দুদক’র উপ-সহকারী পরিচালক মানিকলাল দাশ বাদি হয়ে মামলাটি করেছিলেন। মামলার বাকি তিন আসামি হলেন, আসলাম চৌধুরীর স্ত্রী জামিলা নাজনীন মাওলা, আসলামের দুই ভাই জসিম উদ্দিন চৌধুরী ও আমজাদ হোসেন চৌধুরী। মামলার এজাহারে বলা হয়, আসলাম চৌধুরীর পারিবারিক মালিকানাধীন রাইজিং স্টিল লিমিটেড পুরাতন জাহাজ ক্রয়ের জন্য ২০১১ থেকে ২০১৩ সাল পর্যন্ত বিভিন্ন সময়ে তিনটি ঋণপত্রের (এলসি) বিপরীতে এবি ব্যাংক চট্টগ্রামের আগ্রাবাদ শাখা থেকে ৩২৫ কোটি ৭৬ লাখ ৩০ হাজার ৯৫৫ টাকা ঋণ নিয়ে তা পরিশোধ করেননি। রাইজিং স্টার লিমিটেড ওই শাখায় প্রথম এলসি খোলে ২০০৮ সালে। দুই বছর পর প্রতিষ্ঠানটি ৪০ কোটি ৯৫ লাখ ৬৩ হাজার টাকা দামে পুরনো জাহাজ আমদানি করে তা বিক্রি করলেও ব্যাংকের ঋণ পুরোটা পরিশোধ করেনি। প্রতিষ্ঠানটির কাছে ব্যাংক ২০ কোটি ৮২ লাখ ৯৩ হাজার টাকা পাওনা থাকার পরেও ২০১১ সালে আরও একটি এলসির মাধ্যমে একটি জাহাজ আমদানির সুযোগ দেওয়া হয়। এই এলসির বিপরীতেও প্রতিষ্ঠানটি ২৬ কোটি ৪৫ লাখ ৯৮ হাজার টাকার ঋণ পরিশোধ করেনি। এছাড়া প্রতিষ্ঠানটি ২০১২ সালে ১৬৫ কোটি ৫২ লাখ ৬০ হাজার ৬০০ টাকা ও ২০১৩ সালে ১৩৪ কোটি ৩৪ লাখ ১৬ হাজার টাকার দুটি এলসির বিপরীতে আরও দুটি জাহাজ আমদানি করে তা বাজারে বিক্রি করলেও কোনো টাকা পরিশোধ করেনি। বিপুল পরিমাণ ঋণের বিপরীতে প্রতিষ্ঠানটি ১৭ কোটি ৪০ লাখ ৮৮ হাজার টাকা মূল্যের সম্পত্তির দুটি দলিল ও তিনটি চেক জামানত হিসেবে দেয়। জামিনদার ছিলেন আসলাম চৌধুরী নিজেই। আসামিরা পরস্পর যোগসাজশে ও ক্ষমতার অপব্যবহার করে আর্থিকভাবে লাভবান হওয়ায় দন্ডবিধির ৪০৯, ৪২০, ১০৯ এবং ১৯৪৭ সালের দুর্নীতি প্রতিরোধ আইনের ৫ (২) ধারায় মামলাটি করা হয়। ২০১৭ সালের ৮ অগাস্ট তদন্ত শেষে দুদক এই মামলায় অভিযোগপত্র জমা দেয়। ২০১৬ সালের ১৫ মে রাজধানীর কুড়িল বিশ্বরোড থেকে গ্রেপ্তার হয়েছিলেন আসলাম চৌধুরী। ইসরায়েলের ক্ষমতাসীন লিকুদ পার্টির সদস্য মেন্দি এন সাফাদির সঙ্গে একটি ছবি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ও গণমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ার পর তার বিরুদ্ধে ‘বাংলাদেশের সরকার উৎখাতের ষড়যন্ত্র করার’ অভিযোগ আনা হয়। রাষ্ট্রদ্রোহ-নাশকতাসহ আসলাম চৌধুরীর বিরুদ্ধে দেশের বিভিন্ন থানায় মোট ২৬টি মামলা আছে।

# ০৬.০১.২০২২ চট্টগ্রাম #