চলমান সংবাদ

ভারতের কৃষক আন্দোলনের কাছে পরাজয় স্বীকার করলেন নরেন্দ্র মোদী

কৃষক
বিতর্কিত কৃষি আইন প্রত্যাহারের জন্য কৃষকরা দীর্ঘদিন আন্দোলন করছেন।

ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী জাতির উদ্দেশ্যে এক ভাষণে বলেছেন, তিনটি কৃষি আইন তার সরকার প্রত্যাহার করে নেবে।

ওই বিতর্কিত তিনটি আইনের বিরুদ্ধে প্রায় এক বছর রাজধানী দিল্লির প্রবেশপথে কয়েক লক্ষ কৃষক বিক্ষোভ অবস্থান চালিয়ে যাচ্ছেন।

শিখ ধর্মগুরু গুরু নানকের জন্মদিনে জাতির উদ্দেশ্যে দেওয়া ভাষণে মি. মোদী বলেন, “আজ আমি আপনাদের, গোটা দেশকে এটাই বলতে এসেছি যে আমরা তিনটি কৃষি আইন প্রত্যাহার করে নেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছি।এ মাসের শেষের দিকে সংসদ অধিবেশনে তিনটি কৃষি আইন প্রত্যাহার করে নেওয়ার সাংবিধানিক প্রক্রিয়া সম্পন্ন করব।”

নারী কৃষক

কুষি আইন বাতিলের দাবিতে হাজার-হাজার নারীও অংশ নিয়েছিলেন।

মি. মোদী দাবি করেন, তিনটি আইন ছোট কৃষকদের সহায়তার জন্যই আনা হয়েছিল এবং কৃষি বিশেষজ্ঞ ও অর্থনীতিবিদরা আইনগুলোর পক্ষে ছিলেন।

তার কথায়, “অনেক চেষ্টা করা হয়েছে এই তিনটি আইনের উপকারিতা বোঝানোর জন্য আমরা ব্যর্থ হয়েছি।”

একবছরেরও বেশি সময় ধরে এই তিনটি আইন নিয়ে কৃষক সংগঠনগুলির সঙ্গে সরকার আলোচনা চালিয়েছে। কিন্তু আইনগুলো সম্পূর্ণভাবে প্রত্যাহার করতে কখনই রাজি হয়নি মি. মোদীর সরকার।

অন্যদিকে লক্ষ-লক্ষ কৃষক দিল্লির প্রবেশপথগুলোতে অবস্থান বিক্ষোভ চালিয়ে গেছেন। প্রবল শীত আর ভীষণ গরমের মধ্যে, অথবা করোনা মহামারির ভয়াবহ দ্বিতীয় ঢেউয়ের মধ্যেও তারা রাস্তায় তাঁবু খাটিয়ে থেকেছেন।

প্রায় ৭০০ কৃষক ওই আন্দোলন চলাকালীন মারা গেছেন।

উত্তরপ্রদেশ আর পাঞ্জাবে ভোটে জিততেই এই কৌশল?

এই বিক্ষোভে সবচেয়ে বড় সংখ্যায় অংশ নিচ্ছেন পাঞ্জাব আর উত্তরপ্রদেশের কৃষকরা – যে দুটি রাজ্যে বিধানসভা নির্বাচন আসন্ন।

ওই দুটি রাজ্যে কৃষকদের ভোট বিরুদ্ধে চলে গেলে বিজেপির জয় অনেকটাই অনিশ্চিত হয়ে পড়তো বলে রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা মনে করছেন।

সে জন্যই তিনটি বিতর্কিত আইন প্রত্যাহারের সিদ্ধান্ত নিল কেন্দ্রীয় সরকার, এমনটাই মনে করছেন তারা।

কৃষক
ভারতজুড়ে কৃষক আন্দোলন বেশ জোরালো রূপ নিয়েছিল।

এছাড়াও এক কেন্দ্রীয় মন্ত্রীর ছেলে উত্তরপ্রদেশের লখিমপুর খেরিতে চলা বিক্ষোভের ওপর দিয়েই গাড়ি চালিয়ে কয়েকজন কৃষক ও এক সাংবাদিককে হত্যা করেন বলে একটি ভিডিওতে দেখা গেছে। সেই মন্ত্রীর ছেলেকে ওই অভিযোগে গ্রেপ্তারও করা হয়েছে।

যদিও এর আগে জম্মু কাশ্মীরের বিশেষ সাংবিধানিক রক্ষাকবচ প্রত্যাহার বা সংশোধিত নাগরিকত্ব আইন প্রণয়নের মতো বিতর্কিত ইস্যুগুলি নিয়ে ব্যাপক বিক্ষোভ হলেও ওই সব সিদ্ধান্ত থেকে পিছিয়ে আসেনি নরেন্দ্র মোদীর সরকার।

কৃষক বিক্ষোভের নেতারা অবশ্য বলছেন, এখনই তাদের অবস্থান বিক্ষোভ শেষ হয়ে যাবে না। তারা অপেক্ষা করবেন সংসদে সাংবিধানিক প্রক্রিয়ার মাধ্যমে তিনটি আইন প্রত্যাহার করার জন্য।

কৃষক আন্দোলনের জয়: বলছেন বিরোধীরা

কৃষি আইন প্রত্যাহারের সিদ্ধান্তকে কৃষক আন্দোলনের জয় বলে বিরোধী রাজনৈতিক নেতা নেত্রীরা কৃষকদের অভিনন্দন জানাচ্ছেন সামাজিক মাধ্যমে।

রাহুল গান্ধী টুইট করেছেন, ‘দেশের অন্নদাতারা সত্যাগ্রহের মাধ্যমে অহংকারের মাথা ঝুঁকিয়ে দিয়েছে। অন্যায়ের বিরুদ্ধে এই জয়ের জন্য অভিনন্দন।’

পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জি লিখেছেন, ‘যে কৃষকরা অবিরাম লড়াই চালিয়ে গেছেন, আর বিজেপির নিষ্ঠুরতার সামনেও যারা ভয় পান নি, তাদের প্রত্যেককে আমার আন্তরিক অভিনন্দন।’

সূত্রঃ বিবিসি বাংলা