চলমান সংবাদ

খালি বোতল ফেরত দিয়ে জার্মানিতে সবাই লাভবান!

জার্মানরা পানীয়র খালি বোতল একেবারে নিয়ম মেনে ফেরতে দেন৷ কারণ পানীয় কেনার সময় কিছু টাকা আমানত হিসেবে কেটে রাখা হয়৷ খালি বোতল ফেরত দিলে সেটা পাওয়া যায়৷ প্রশ্ন হচ্ছে, এই ব্যবস্থা কতটা নিখুঁত?

জার্মানরা পানীয়র খালি বোতল একেবারে নিয়ম মেনে ফেরতে দেন৷ কারণ পানীয় কেনার সময় কিছু টাকা আমানত হিসেবে কেটে রাখা হয়৷ খালি বোতল ফেরত দিলে সেটা পাওয়া যায়৷ প্রশ্ন হচ্ছে, এই ব্যবস্থা কতটা নিখুঁত?       

জার্মানির ডিসকাউন্টার এবং সুপারমার্কেটগুলোতে থাকা একটি মেশিনের সামনে প্রায়ই ভিড় দেখা যায়৷ স্বয়ংক্রিয় সেসব মেশিনে সবাই খালি কাচের বা প্লাস্টিকের বোতল ফেরত দেন৷ কেউ গাড়িতে করে, কেউ বা বড় ব্যাগে করে নিয়ে আসেন সেসব বোতল৷ এরপর ফেরত দিয়ে মেশিন থেকে পাওয়া রিসিটটি নিয়ে হাসিমুখে চলে যান মার্কেটের কাউন্টারে৷

প্রক্রিয়াটি সহজ৷ আপনি যখন কোনো পানীয় কিনছেন তখন সেটির বোতলের জন্য একটি টাকা আমানত হিসেবে রেখে দিচ্ছে বিক্রেতা৷ খালি বোতলটি ফেরত দেয়ার পর সেই আমানত আপনাকে আবার ফিরিয়ে দেয়া হয়৷ আর গোটা জার্মানিতে বিষয়টি এমনভাবে করা হয়েছে যাতে আপনি যেকোনো জায়গায় বোতল ফেরত দিতে পারেন৷ অর্থাৎ যেখান থেকে কিনেছেন সেখানেই ফেরত দিতে হবে না৷

এভাবে খালি বোতল ফেরত দিয়ে আপনি কার্যত আপনার নিজের টাকাই ফেরত পাচ্ছেন৷ কিন্তু তারপরও বিষয়টি জার্মানিতে বেশ ইতিবাচক পরিবর্তন এনেছে৷ অনেকেই এভাবে টাকা ফেরত পেয়ে আনন্দিত হন৷

‘‘২০০৩ সালের আগ অবধি জার্মানিতে প্রতিবছর তিনশ কোটির মতো ফেরত দেয়ার উপযুক্ত বোতল এখানে সেখানে ফেলে দেয়া হতো,’’ বলেন বেসরকারি উন্নয়নসংস্থা এনভায়রোমেন্টাল অ্যাকশন জার্মানির (ডিইউএইচ) প্রধান থমাস ফিশার৷

‘‘বর্তমানে খালি বোতল যথাস্থানে ফেরত দেয়ার হার ৯৮ শতাংশের বেশি৷ এরচেয়ে বেশি সাফল্য অর্জন সম্ভব নয়,’’ বলেন ফিশার৷

জার্মানিতে মূলত দুই ধরনের খালি বোতল এভাবে ফেরত নেয়া হয়৷ প্রথমটি পুনরায় বেশ কয়েকবার ব্যবহারের উপযোগী গ্লাস বা নিরাপদ প্লাস্টিক হিসেবে বিবেচিত পিইটি প্লাস্টিকের তৈরি৷ এরকম প্রতিটি বোতল ফেরত দিলে আট সেন্ট থেকে ২৫ সেন্ট অবধি ফেরত পাওয়া যায়৷ আর দ্বিতীয়টি হচ্ছে শুধুমাত্র একবার ব্যবহারের উপযুক্ত বোতল, যেগুলো শুধুমাত্র রিসাইকেল করে পুনরায় ব্যবহার করা যায়৷ এধরনের প্রতিটি খালি বোতল ফেরত দিলে ২৫ সেন্ট ফেরত পাওয়া যায়৷

ভোক্তাদের পক্ষে মেশিনে খালি বোতল ফেরত দেয়ার প্রক্রিয়া বেশ সহজ হলেও এটির পেছনে বেশ লম্বা এবং জটিল এক প্রক্রিয়া কাজ করে৷

যেমনে কেউ যদি কোকাকোলার একটি বোতল ফেরত দেন তাহলে সেটি সুপারমার্কেটের মেশিন থেকে ট্রাকভর্তি হয়ে চলে যাবে কোনো সেন্টারে যেখানে একইরকমের বোতলগুলো আলাদা করা হবে৷ এভাবে গ্লাস এবং পিইটি প্লাস্টিকের বোতলগুলো রিসাইকেল না করেই ৫০ বার পর্যন্ত ব্যবহার করা যায়৷ কেননা সেগুলোর মান সহজে নষ্ট হয় না৷

বিপত্তি বাধে শুধু একবার ব্যবহারের উপযোগী বোতলগুলো নিয়ে৷ কেননা সেগুলো প্রতিবার রিসাইকেল করতে হয়৷ আর প্রতিবার রিসাইকেলে প্লাস্টিকের পরিমাণ এবং অন্যান্য উপাদান কমতে থাকে৷

পরিবেশের জন্য কোনটা ভালো?

‘‘পুর্নব্যবহারযোগ্য বা শুধু একবার ব্যবহারযোগ্য বোতল – জার্মানির আমানত ব্যবস্থা উভয়ক্ষেত্রেই কাঁচামাল, জ্বালানি এবং কার্বণ দূষণ কমাচ্ছে৷ কেননা এতে করে নতুন বোতল তৈরির জন্য জীবাশ্ম জ্বালানীর ব্যবহার কমেছে,’’ বলেন জার্মানির রাষ্ট্রীয় পরিবেশ বিষয়ক সংস্থা ইউবিএ’র প্যাকেজিং এক্সপার্ট গেরহার্ড কোটশ্যেক৷

তবে একবার ব্যবহারের উপযোগী বোতল রিসাইকেল করে পুনরায় ব্যবহার করলে সেটা ‘ফুড গ্রেড ম্যাটেরিয়ালের’ বিবেচনায় পুর্নব্যবহারযোগ্য বোতলের চেয়ে ভালো বলে আলডি এবং লিডেলের মত বড় দোকানগুলো মনে করে৷

ইউরোপে সুপারমার্কেটের তুলনায় সস্তায় ভালো পণ্য বিক্রি করে জনপ্রিয় হয়ে ওঠা এসব প্রতিষ্ঠানের দাবি, তাদের রিসাইক্লিং প্রক্রিয়া পরিবেশের জন্য উপকারী৷

‘‘গত কয়েকবছরের তুলনায় আমরা সত্তর শতাংশ কম ভার্জিন পিইটি সামগ্রী ব্যবহার করছি,’’ বলেন লিডেলের এক মুখপাত্র৷

ডিসকাউন্টারগুলোর এই অবস্থান জার্মানিতে একবার ব্যবহার উপযোগী প্লাস্টিককে জনপ্রিয় করে রেখেছে৷ তবে, পরিবেশবিদেরা মনে করেন পুর্নব্যবহারযোগ্য বোতল একবার ব্যবহারযোগ্য বোতলের তুলনায় বেশি পরিবেশবান্ধব৷

‘‘আমরা ভোক্তাদের সবসময় পুর্নব্যবহারযোগ্য বোতল কিনতে উৎসাহিত করি,’’ ডয়চে ভেলেকে বলেন কোটশ্যেক৷

জার্মানির বোতল ফেরত নেয়ার এই ব্যবস্থা বিশ্বের অন্যান্য দেশেও একইভাবে সফল হবে কিনা তা নিশ্চিত নন বিশেষজ্ঞরা৷ কেননা এধরনের ব্যবস্থার সফলতা অন্য অনেক বিষয়ের উপর নির্ভরশীল৷ তবে, পরিবেশের উপর প্লাস্টিকের প্রভাব কমানোর অন্য কোনো ভালো পন্থা না বের হওয়া অবধি ইউরোপের সব দেশে এমন ব্যবস্থা চালুর পক্ষে তারা৷

এআই/কেএম