চলমান সংবাদ

চট্টগ্রাম ইতিহাস সংস্কৃতি গবেষণা কেন্দ্রের সংবাদ সম্মেলন

-সাতশত বছরের ইতিহাস সমৃদ্ধ পরীর পাহাড় থেকে অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদের বিকল্প নাই

চট্টগ্রাম পরীর পাহাড়কে প্রত্নসম্পদ হিসাবে সংরক্ষণের দাবীতে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে বক্তারা বলেন, সাতশত বছরের ইতিহাস সমৃদ্ধ পরীর পাহাড়। এই সমৃদ্ধ ইতিহাস ও প্রত্নসম্পদ দেশের এবং চট্টগ্রাম তথা দেশের ঐতিহ্য সমৃদ্ধ করতে সংরক্ষণ করতে হবে এর বিকল্প নাই। পরীর পাহাড়কে প্রত্ন সম্পদ করার সরকারি উদ্যোগকে আমরা অভিনন্দন জানাই। মঙ্গলবার (৯ নভেম্বর) চট্টগ্রাম প্রেসক্লাবে এই সাংবাদ সম্মেলন করেছে চট্টগ্রাম ইতিহাস সংস্কৃতি গবেষণা কেন্দ্র। এতে সংগঠনের প্রতিঠাতা সভাপতি কক্সবাজার বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাক্তন ভিসি প্রফেসর ড. আবুল কাসেম টেলিকনফারেন্সে যুক্ত হন। সংবাদ সম্মেলন লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন, সংগঠনের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক মনোজ কুমার দেব। প্রধান বক্তা ছিলেন বিএফইউজে যুগ্ম মহাসচিব মহসীন কাজী। বক্তব্য রাখেন. চট্টগ্রাম ইতিহাস সংস্কৃতি গবেষণা কেন্দ্রের সভাপতি সাংবাদিক আলীউর রহমান, সংগঠক কায়সার আলী চৌধুরী, সংগঠনের নির্বাহী সদস্য শ্যামল বিশ্বাস প্রমুখ। মহসীন কাজী বলে, শত শত বছরের ইতিহাস পরিবর্তনের অধিকার কারো নাই। পরীর পাহাড় সংরক্ষণে তিন শতাধিক অবৈধ স্থাপনার সরানো জরুরী। পাহাড়ের কিনারায় স্থাপিত বহুতল ভবনগুলোর ভূতাত্ত্বিক জরিপ জরুরি। এই ভবনের যে কোন একটি ধ্বসে পড়লে বাংলাদেশ ব্যাংক, সিডিএ ভবন ধ্বংস স্তুপে পরিনত হবে। পরীর পাহাড়কে প্রত্ন সম্পদ হিসাবে সংরক্ষণ করা না হলে ২০০১ সালের মতো সর্বস্তরের জনগণকে নিয়ে আমরা আন্দোলনে নামব। সংগঠনের সভাপতি আলীউর রহমান বলেন, ২০০০ সালে পরীর পাহাড়ের আদালত ভবনকে প্রত্নসম্পদ হিসেবে ঘোষণা করা হয়েছে। ২১ বছর পরে এসে পরীর পাহাড় নিয়ে বিতর্কের সুযোগ নাই। সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্যে বলা হয়, ১২০ বছর আগে চৌধুরী পূর্ণচন্দ্র তত্ত্বনিধি রচিত চট্টগ্রামের ইতিহাস গ্রন্থ পরীর পাহাড়ের নামকরণ ও কাচারি ভবন স্থাপনের ইতিবৃত্ত লিখে গেছেন। পরবর্তীতে সুনীতিভূষন কানুনগো, আবদুল হক চৌধুরী পরীর পাহাড় নিয়ে বিস্তারিত লিখে গেছেন। চট্টগ্রামের ইতিহাস গ্রন্থে চৌধুরী পূর্ণচন্দ্র লিখেছেন, বর্ত্তমান (ঋধরৎু ঐরষষ) ফেয়ারিহিলের পাদদেশ ধৌত করিয়া সমুদ্রের লবণাম্বুরাশি আনোয়ারা পাহাড়ের পাদদেশে উছলিয়া পড়িত। তিনি উল্লেখ করেন, চট্টগ্রাম যখন মগরাজগণের শাসনাধীনে ছিল তখনও ফেয়ারি হিল ও টেম্পেষ্ট হিল এই দুইটা পাহাড় পর্তুর্গীজ ফিরিঙ্গী গণের দখলে ছিল। গবেষক আবদুল হক চৌধুরী বন্দর শহর চট্টগ্রাম গ্রন্থে উল্লেখ করেন, ১৮৯৩ সালে কাছারি স্থাপনের পরও ইংরেজরা পরীর পাহাড়ের নাম পরিবর্তন না করে ইংলিশ অনুবাদে ‘ফেয়ারী হিল’ বলে অভিহিত করতো। লিখিত বক্তব্যে পরীর পাহাড় সংরক্ষণে পাঁচ দফা সুপারিশ করা হয়, সেগুলো হচ্ছেঃ

১। পরীর পাহাড়ের ১৩০ বছরের ঐতিহাসিক স্থাপনা প্রত্নসম্পদ হিসাবে সংরক্ষণ করা। পাহাড়ের চার পাশের স্থাপনা সরিয়ে পুরো শহর থেকে দেখা যায় এমন দর্শনীয় স্থান করে চট্টগ্রামের লাইট হাউজ ঘোষণা করা।

২। বর্তমান জেলা প্রশাসন থেকে প্রশাসনিক কার্যক্রম বাকলিয়া কর্ণফুলী তীরবর্তী এলাকায় নিয়ে যাওয়ার প্রস্তাব করা হয়েছে। আমাদের দাবী হচ্ছে শুধু প্রশাসনিক কার্যক্রম নয় বিচারিক কার্যক্রমের জন্য ঐ এলাকায় প্রয়োজনীয় অবকাঠামো তৈরি করে পরীর পাহাড়কে ঐতিহাসিক স্থান হিসাবে স্বীকৃতি দিয়ে তা সংরক্ষণ করা হোক।

৩। পাহাড়ের ঢালে নির্মিত আগুন ও ভূমিকম্প ঝুঁকিপূর্ন ভবন ভেঙ্গে ফেলা

৪। ভূতাত্ত্বিক জরিপ করে পুরো এলাকাটির অবৈধ সরকারী বেসরকারী সকল স্থাপনা সরিয়ে লাল ভবনটি সংরক্ষণের ব্যবস্থা গ্রহন করতে হবে।

৫। সর্বোপরি পুরো পরীর পাহাড়কে প্রত্নসম্পদ আইনে সংরক্ষণ করে বাংলাদেশের যে সমৃদ্ধ ইতিহাস-ঐতিহ্য রয়েছে, সেই আলোকে প্রত্নতত্ত্ব আইনে পরীর পাহাড়ের লাল দালান হেরিটেজ ঘোষিত করতে হবে। তাহলে ভবিষ্যৎ প্রজন্ম ইতিহাস জানতে পারবে।

# ০৯.১১.২০২১ চট্টগ্রাম #