চলমান সংবাদ

দেশব্যাপী  সাম্প্রদায়িক হামলার বিরুদ্ধে ঐক্যবদ্ধ গণপ্রতিরোধ গড়ে তোলার দাবিতে সিপিবি চট্টগ্রামের সমাবেশ ও মিছিল।

সারা দেশে অব্যাহত সাম্প্রদায়িক হামলা, খুন-ধর্ষণ ও অগ্নিসংযোগের প্রতিবাদে এবং হামলাকারী ও মদদদাতাদের গ্রেপ্তার-বিচার ও দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবিতে  আজ ২৩ অক্টোবর শনিবার বিকাল ৪.০০ টায় সিনেমা প্যালেস চত্ত্বরে  বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টি, চট্টগ্রাম জেলার  উদ্যোগে বিক্ষোভ সমাবেশ ও মিছিল অনুষ্ঠিত হয়।
বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টি চট্টগ্রাম জেলার ভারপ্রাপ্ত সভাপতি আবদুল নবীর সভাপতিত্বে বক্তব্য রাখেন সিপিবি কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য মৃণাল চৌধুরী, সিপিবি চট্টগ্রাম জেলার সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক অশোক সাহা, সহকারী সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক মোঃ জাহাঙ্গীর, সম্পাদক মন্ডলীর সদস্য অধ্যাপক উত্তম চৌধুরী,  মছি উদ দৌলা, কানাই লাল দাশ, নুরুচ্ছাফা ভূঁইয়া, অমৃত বড়ুয়া, বোয়ালখালী থানার সাধারণ সম্পাদক সেহাব উদ্দিন সাইফু, সিতারা শামিম, সীতাকুণ্ড থানার সহ সম্পাদক জামাল উদ্দিন, স্বপন দত্ত প্রমুখ।

সমাবেশে নেতৃবৃন্দ বলেন, গত ১৩ অক্টোবর ২০২১ থেকে কুমিল্লায় হিন্দু সম্প্রদায়ের দূর্গাপূজা মন্ডপে কোরান রাখাকে কেন্দ্র করে চাঁদপুর, নোয়াখালী, লক্ষ্মীপুর, চট্টগ্রাম, সিলেট, খুলনা, নাটোর, রংপুরসহ সারা দেশে অব্যাহত সাম্প্রদায়িক হামলার ঘটনা ঘটেছে। এতে হিন্দু সম্প্রদায়ের অন্তত ৪ জন এবং পুুলিশের গুলিতে হামলাকারী মুসলিম সম্প্রদায়ের অন্তত ৪ জন নিহত হয়েছে। ৭০/৮০টি মন্দির, বেশ কিছু দোকানপাট, বাড়ীঘর ভাংচুর-অগ্নিসংযোগ, লুটপাটের ঘটনা ঘটেছে। প্রায় সবক্ষেত্রেই প্রশাসন ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর রহস্যজনক নিরবতা, নিষ্ক্রিয়তা ও দায়িত্ব পালনে ব্যর্থতার প্রমাণ রয়েছে। যা সরকারের প্রচ্ছন্ন ইঙ্গিত ছাড়া সম্ভব না।

নেতৃবৃন্দ বলেন, কুমিল্লার ঘটনায় পূজা মন্ডপে কোরান রাখার ব্যক্তিকে সিসিটি টিভি ফুটেজ থেকে সনাক্ত করে  অভিযুুক্তকারী ইকবালকে গ্রেপ্তারের আগেই নেশাগ্রস্ত, পাগল ইত্যাদি অভিধায় ভূষিত করে ঘটনাকে লঘু করার চক্রান্ত চলছে বলে নেতৃবৃন্দ উল্লেখ করেন।

নেতৃবৃন্দ আরো বলেন বংলাদেশ সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির দেশ এখানে হিন্দু-মুসলিম-বৌদ্ধ-খৃষ্টান সব ধর্মের ও জাতির মানুষ কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে যুদ্ধ করে দেশ স্বাধীন করেছে। ধর্মভিত্তিক পাকিস্তান রাষ্ট্রের সাথে ছেদ ঘটিয়ে স্বাধীন সার্বভৌম ধর্মনিরপেক্ষ গণতান্ত্রিক বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠা করেছে। কিন্তু বর্তমান সরকারসহ স্বাধীনতা উত্তর গত ৫০ বছরে রাষ্ট্র ক্ষমতায় আসীন সকল সরকারই ধর্মান্ধ সাম্প্রদায়িক শক্তির সাথে আপোষ আঁতাত করে ক্ষমতায় থাকা বা ক্ষমতায় যাওয়ার নির্লজ্জ প্রতিযোগিতায় লিপ্ত হয়ে মুক্তিযুদ্ধের প্রকৃত চেতনাকে বিসর্জন দিয়েছে। মূলনীতিকে লংঘন করে সংবিধানের মাথায় বিসমিল্লাহ বসিয়েছে, ইসলামকে রাষ্ট্রধর্ম করেছে, ৩২ অনুচ্ছেদ উপড়ে ফেলে ধর্মভিত্তিক রাজনৈতিক দল করার সুযোগ করে দিয়েছে, হেফাজতের দাবি মেনে দাওয়ারে হাদিসকে মাস্টার্স এর সমমর্যাদা প্রদান করেছে, পাঠ্যপুস্তকে প্রগতিশীল লেখকদের লেখা গল্প, কবিতা, প্রবন্ধ বাদ দিয়ে সাম্প্রদায়িক বিষয় অন্তর্ভুক্ত করেছে। এভাবে একের পর এক মুক্তিযুদ্ধের চেতনার বিপরীতে দেশ শাসন করে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির বাংলাদেশকে সাম্প্রদায়িক হানাহানির দেশে পরিণত করেছে।

নেতৃবৃন্দ বলেন, অতীতে রামু, নাসিরনগর, পাবনার সাথিয়া, বাঁশখালী, গোবিন্দগঞ্জ, রংপুর, সুনামগঞ্জের শাল্লাসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে বিভিন্ন সময়ে ফেসবুকে ও নানা মাধ্যমে গুজব ছড়িয়ে ধর্মীয় ও জাতিগত নিপীড়ন ও হামলার ঘটনা ঘটিয়েছে। যখন যে সরকার ক্ষমতায় থাকে তাদের দলীয় লোকজনই প্রধানত এসব সাম্প্রদায়িক হামলায় জড়িত ও নেতৃত্ব দিয়ে থাকে। বর্তমানেও বিভিন্ন স্থানে আওয়ামী লীগের নেতৃবৃন্দ জড়িত থাকার অভিযোগ রয়েছে যার কোনটিরই বিচার হয়নি। ফলে শাসকদের আশ্রয়ে প্রশ্রয়েই দেশে সাম্প্রদায়িক হামলার ঘটনা ঘটছে। বর্তমান সরকার সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের মানুষের জান-মাল রক্ষা ও ধর্ম পালনের স্বাধীনতা নিশ্চিত করতে সম্পূর্ণ ব্যর্থ হয়েছে। কুমিল্লা-হাজীগঞ্জের ঘটনা তার সর্বশেষ প্রমাণ।

নেতৃবৃন্দ আরো বলেন, বাংলাদেশে সাম্প্রদায়িক সন্ত্রাসের ঘটনাকে পূঁজি করে ভারতে হিন্দুত্ববাদী বিজেপি, আরএসএস সে দেশের সংখ্যালঘু মুসলিম সম্প্রদায়ের উপর আক্রমণের পাঁয়তারা করছে এবং ভোটের রাজনীতিতে ফায়দা লুটতে চাইছে। ত্রিপুরারে ইতোমধ্যে মসজিদে হামলাও হয়েছে। । ফলে বাংলাদেশ ও ভারতের সকল শুভবুদ্ধিসম্পন্ন বাম প্রগতিশীল গণতান্ত্রিক রাজনৈতিক দল, সংগঠন, ব্যক্তিকে উভয় দেশের সাম্প্রদায়িক অশুভ শক্তির অপতৎপরতার বিরুদ্ধে সোচ্চার প্রতিবাদ-প্রতিরোধ গড়ে তোলার জন্য নেতৃবৃন্দ আহ্বান জানিয়ে বলেন, ভারত ও বাংলাদেশের বামপন্থি শক্তি ও শান্তিপ্রিয় জনগণের ঐক্যবদ্ধ হওয়া এখন সময়ের দাবি। আর এ ঐক্যবদ্ধ প্রতিবাদ-প্রতিরোধের শক্তিই সাম্প্রদায়িকতাকে উপমহাদেশ থেকে নির্মূল করতে পারে।

নেতৃবৃন্দ গত এক সপ্তাহে সারা দেশে সাম্প্রদায়িক হামলায় ক্ষতিগ্রস্তদের উপযুক্ত ক্ষতিপূরণ-পুনর্বাসন, জান-মালের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা; হামলাকারী ও মদদদাতাদের চিহ্নিত করে দ্রুত গ্রেপ্তার-বিচার ও দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি প্রদান এবং ধর্মভিত্তিক রাজনীতি ও রাজনীতিতে ধর্মের ব্যবহার নিষিদ্ধ করার দাবি জানান।

# ২৩/১০/২০২১, প্রেস বিজ্ঞপ্তি #