চলমান সংবাদ

মুসল্লিদের সংঘবদ্ধ করে চট্টগ্রামে পূজামন্ডপে হামলা আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি

সাধারণ মুসল্লিদের সংঘবদ্ধ করে জেমসেন হলে পূজামন্ডপে হামলার চালানো হয় বলে আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন হাবিবুল্লাহ মিজান নামে গ্রেপ্তার এক ব্যক্তি। শনিবার (২৩ অক্টোবর) বিকেলে চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট শফি উদ্দিনের আদালতে ১৬৪ ধারায় এই জবানবন্দি দেন মিজান। ডাকসুর সাবেক ভিপি নুরুল হক নূরের নেতৃত্বাধীন যুব অধিকার পরিষদের নেতাদের পরিকল্পনা আর নেতৃত্বেই চট্টগ্রামের জেএম সেন হল পূজা মন্ডপে হামলা হয়েছিল বলে হাবিবুল্লাহ মিজানের জবানবন্দিতে উঠে এসেছে। হাবিবুল্লাহ মিজান ভিপি নূরের নেতৃত্বধীন বন্দর থানার ছাত্র অধিকার পরিষদের সাবেক আহ্বায়ক ও বর্তমান যুব অধিকার পরিষদের সদস্য। শনিবার আদালতে দেওয়া জবানবন্দিতে হাবিবুল্লাহ বলেছেন, শ্রমিক অধিকার পরিষদের নেতা মোক্তারের বাসায় ঘটনার আগের দিন বৈঠক করেন যুব অধিকার পরিষদের নেতারা। সেখানে বিজয়া দশমীর দিনে তারা আন্দরকিল্লা শাহী জামে মসজিদ থেকে মিছিল করার পরিকল্পনা করেন। যুব অধিকার পরিষদ চট্টগ্রাম মহানগরের সদস্য সচিব মিজানুর রহমানের নেতৃত্বে মিছিল থেকে মন্ডপে হামলা হয়। তাদের মিছিল থেকে একটি অংশ যুব অধিকার পরিষদের সদস্য সচিব মিজানুর রহমানের নেতৃত্বে জেএমসেন হলের দিকে চলে যায়। সেখান থেকে তারা পূজা মন্ডপে হামলার চেষ্টা করে। পুলিশ গুলি ছোড়া শুরু করলে তারা পালিয়ে যায়। কোতোয়ালী থানার ওসি নেজাম উদ্দিন বলেন, জেএমসেন হলে পূজামন্ডপে হামলা মামলায় রিমান্ডে থাকা সাতজনকে আদালতে হাজির করা হয়। তাদের মধ্যে হাবিবুল্লাহ মিজান নামে একজন আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক ১৬৪ ধারায় জবানবন্দি দিয়েছেন। জবানবন্দি শেষে সাতজনকে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেন আদালত। এর আগে শুক্রবার দুপুরে চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট শফি উদ্দিনের আদালত ৭ জনকে একদিন করে রিমান্ড মঞ্জুর করেন। কারাগারে যাওয়া আসামিরা হলেন- যুব অধিকার পরিষদের চট্টগ্রাম মহানগর শাখার আহ্বায়ক মো. নাছির, সদস্য সচিব মিজানুর রহমান, বায়েজিদ থানার আহ্বায়ক মো. রাসেল, কর্মী ইয়াসিন আরাফাত, হাবিবুল্লাহ মিজান, ইমন ও ইমরান হোসেন। পুলিশ জানায়, জেএম সেন হল পূজা মন্ডপে হামলার পরিকল্পনায় ডাকসুর সাবেক ভিপি নুরুল হক নূরের নেতৃত্বাধীন সংগঠন যুব অধিকার পরিষদের নেতারা জড়িত। তাদের ‘পরিকল্পনাতেই’ গত ১৫ অক্ট্বোর বিজয়া দশমীর দিনে পূজা মন্ডপে হামলা হয়েছিল। পূজামন্ডপে হামলার ছক তৈরি করে মিছিল নিয়ে সাধারণ মুসল্লিদের উত্তেজিত করে হামলার ঘটনা ঘটান। হামলা পরিকল্পনাকারীদের মধ্যে কয়েকজন জামায়াত ও ইসলামী ছাত্রশিবিরের সাথে সম্পৃক্ত ছিলেন। একজন জামায়াতের ফেইসবুক গ্রুপ বাঁশের কেল্লার অ্যাডমিন প্যানেলেরও সদস্য ছিলেন। সিসি ক্যামেরার ফুটেজ, ভিডিও ফুটেজ, ঘটনাস্থলের ছবি ও আগে গ্রেপ্তার আসামিদের ১৬৪ ধারায় জবানবন্দিতে আমরা নুরুল হক নুরের সংগঠনের কয়েকজন নেতার জড়িত থাকার তথ্যপ্রমাণ পাওয়া গেছে। হামলার ঘটনায় সব মিলিয়ে মোট ১০০ জনকে এ পর্যন্ত গ্রেপ্তার করা হয়েছে। প্রসঙ্গত কুমিল্লার একটি মন্দিরে কুরআন অবমাননার কথিত অভিযোগ তুলে ১৩ অক্টোবর কয়েকটি মন্দিরে হামলা ও ভাংচুর চালানো হয়। এর পর দেশের বিভিন্ন জেলায় মন্দিরে ও পূজা মন্ডপে হামলা হয়। তা ঠেকাতে গেলে পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষও বাঁধে, বিভিন্ন স্থানে প্রাণহানিও ঘটে। কুমিল্লার ঘটনার জেরে ১৫ অক্টোবর বিজয়া দশমীতে প্রতিমা বিসর্জনের আগে চট্টগ্রাম নগরীর জেএম সেন হল পূজা মন্ডপে হামলা হয়। আন্দরকিল্লা শাহী জামে মসজিদ থেকে জুমার নামাজের পর মিছিল নিয়ে এসে জেএম সেন হল পূজা মন্ডপের গেইট ভেঙে ভেতরে প্রবেশের চেষ্টা চালায় হামলাকারীরা। পুলিশ ফাঁকা গুলি ও টিয়ারশেল ছুঁড়ে তাদের ছত্রভঙ্গ করে দেয়। ওই ঘটনায় পুলিশ বাদী হয়ে কোতোয়ালি থানায় একটি মামলা করে। সেখানে ৮৩ জনের নাম উল্লেখ করে অজ্ঞাতপরিচয় আরও কয়েকশ ব্যক্তিকে আসামি করা হয়।
# ২৩.১০.২০২১ চট্টগ্রাম #