চলমান সংবাদ

চট্টগ্রামে চাঞ্চল্যকর মিতু হত্যায় ব্যবহৃত অস্ত্র সরবরাহকারী ভোলার জবানবন্দি

সাবেক পুলিশ সুপার বাবুল আক্তারের স্ত্রী মাহমুদা খানম মিতু হত্যা মামলার আসামি এহতেশামুল হক ভোলা আদালতে ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তি মূলক জবানবন্দি দিয়েছেন। শনিবার (২৩ অক্টোবর) বিকেলে চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট শফি উদ্দীনের আদালতে এ জবানবন্দি দিয়েছেন। এর আগে শুক্রবার (২২ অক্টোবর) ভোলাকে যশোরের বেনাপোল থেকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন-পিবিআই। গ্রেপ্তারের পর শুক্রবার রাতে ভোলাকে বেনাপোল থেকে চট্টগ্রামে নেয়া হয়। মিতু হত্যা মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা পিবিআই চট্টগ্রাম মহানগরের পরিদর্শক সন্তোষ কুমার চাকমা বলেন, শুক্রবার রাতে যশোরের বেনাপোল থেকে ভোলাকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। মিতু হত্যা মামলার আসামি ভোলা বেনাপোল দিয়ে দেশ ছেড়ে ভারতে পালিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করে। গোপন সংবাদ পেয়ে সেখান থেকে তাকে গ্রেপ্তার করা হয়। ভোলার আইনজীবী কে.এম সাইফুল ইসলাম বলেন, আদালতে এহতেশামুল হক ভোলার জবানবন্দি গ্রহণ করা হয়েছে। জবানবন্দিতে মিতু হত্যা মামলার বিষয়ে কি বলেছে- তা এখনো জানা যায়নি। আদালত জবানবন্দি গ্রহণ করে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দিয়েছেন। মিতু হত্যা মামলার আসামি এহতেশামুল হক ভোলাকে হাইকোর্ট বেঞ্চ গত ১৫ সেপ্টেম্বর চার সপ্তাহের জামিন দিয়েছিলেন। একইসঙ্গে জামিনের মেয়াদ শেষ হওয়ার আগে তাকে চট্টগ্রাম মহানগর দায়রা জজ আদালতে আত্মসমর্পণের নির্দেশ দেওয়া হয়। গত ১৪ অক্টোবর চট্টগ্রাম মহানগর দায়রা জজ শেখ আশফাকুর রহমানের আদালতে জামিনের সময় বাড়ানোর আবেদন করলে আদালত তা নাকচ করে হাইকোর্টের নির্দেশনা পালন না করায় ভোলার বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করেন। প্রসঙ্গত ২০১৬ সালের ৫ জুন সকালে নগরীর পাঁচলাইশ থানার জিইসি মোড়ে ছেলেকে স্কুলবাসে তুলে দিতে যাওয়ার পথে বাসার অদূরে গুলি ও কুপিয়ে খুন করা হয় বাবুলের স্ত্রী মাহমুদা খানম মিতুকে। স্ত্রী খুনের ঘটনায় পুলিশ সদর দফতরের তৎকালীন এসপি বাবুল আক্তার বাদি হয়ে নগরীর পাঁচলাইশ থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করেছিলেন। ওই মামলায় ২০১৬ সালের ২৮ জুন নগরীর বাকলিয়া এলাকা থেকে মিতু হত্যায় ব্যবহৃত অস্ত্র-গুলিসহ এহতেশামুল হক ভোলা ও তার সহযোগী মো. মনিরকে গ্রেপ্তার করে নগর গোয়েন্দা পুলিশ। মিতু হত্যার ঘটনায় গ্রেপ্তার মোতালেব মিয়া ওরফে ওয়াসিম তার জবানবন্দিতে ‘হত্যাকান্ডে ব্যবহৃত অস্ত্রটি ভোলা সরবরাহ করেছিল’ বলে জানিয়েছিল।২০১৯ সালের ২৯ ডিসেম্বর জামিনে কারামুক্তি পান এহতেশামুল হক। এদিকে গোয়েন্দা কার্যালয়ে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদসহ নানা নাটকীয়তার পর ওই বছরের আগস্টে বাবুল আক্তারকে চাকরি থেকে অব্যাহতি দেওয়া হয়। মিতুর বাবা পুলিশের সাবেক পরিদর্শক মোশারফ হোসেন প্রথম দিকে জামাতার পক্ষে কথা বললেও পরে নিজেই সন্দেহের আঙুল তোলেন। মিতুর বাবা অভিযোগ করেন, তার মেয়েকে হত্যার পেছনে তার জামাইয়ের ‘যোগসাজশ’ রয়েছে বলে তার ধারণা। মামলা তদন্তের দায়িত্ব প্রথমে নগর গোয়েন্দা পুলিশ-ডিবি’র কাছে থাকলেও ২০২০ সালের জানুয়ারিতে তদন্তভার পড়ে পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন-পিবিআই’র ওপর। এরপর ধীরে ধীরে জট খুলতে থাকে এই মামলার। গত ১১ মে বাবুল আক্তারকে হেফাজতে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করে পিবিআই। তদন্তে বাবুল আক্তারের সম্পৃক্ততা পাওয়ায় ১২ মে ওই মামলার তার বিরুদ্ধে ৫৭৫ পৃষ্ঠার চূড়ান্ত প্রতিবেদন আদালতে জমা দেয় পিবিআই। একইদিন (১২ মে) দুপুরে মিতুর বাবা মোশাররফ হোসেন বাদি হয়ে নগরীর পাঁচলাইশ থানায় বাবুল আক্তারসহ আটজনকে আসামি করে হত্যা মামলা দায়ের করেন। মামলার বাকি সাত আসামি হলেন- মো. কামরুল ইসলাম শিকদার মুসা, এহতেশামুল হক প্রকাশ হানিফুল হক প্রকাশ ভোলাইয়া, মো. মোতালেব মিয়া ওয়াসিম, আনোয়ার হোসেন, খাইরুল ইসলাম কালু, সাইদুল ইসলাম সিকদার সাক্কু এবং শাহজাহান মিয়া। এই মামলায় ওইদিনই বাবুল আক্তারকে গ্রেপ্তার দেখিয়ে আদালতে হাজির করে রিমান্ডের আবেদন করা হলে আদালত পাঁচদিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন। রিমান্ডে জিজ্ঞাসাবাদ শেষে আদালতে জবানবন্দি দেয়ার কথা থাকলেও শেষপর্যন্ত তিনি তা দেননি। এরপর থেকে বাবুল আক্তার কারাগারে রযেছেন। গত ২৯ মে বাবুল আক্তারকে চট্টগ্রাম কেন্দ্রীয় কারাগার থেকে ফেনী কারাগারে স্থানান্তর করা হয়।

# ২৩.১০.২০২১ চট্টগ্রাম #