মতামত

সন্দ্বীপনদা আমাদেরকে খুব বেশী সময় দিলেননা

– ডা. আরিফ বাচ্চু

এত এত মানুষের অসুস্থতায় পাশে থাকা আপনাকে দুইদিনও রাখতে পারলামনা, এই অপারগতায় হৃদয়ের রক্তক্ষরণ নিয়েই আপনাকে বিদায়। বিদায় অবিশ্বাস্য রোগী অন্তপ্রান বিশাল হৃদয়ের মানুষ, আমাদের সবার প্রিয় ডা. সন্দ্বীপন দাশ।
সম্প্রতি তিনি কোভিডে আক্রান্ত হয়েছিলেন এবং সুস্থ হয়ে তার কর্মক্ষেত্রেও ফিরে এসেছিলেন। কিন্তু দুর্ভাগ্যজনক ভাবে গতকাল (১৫/০৮/২০২১) সকালে হঠাৎ পেটের ব্যাথা নিয়ে ম্যাক্স হাসপাতালে ভর্তী হন। সেখানে পরীক্ষা নিরীক্ষা করে তার ডায়াবেটিক কিটো এসিডোসিস, একিউট প্যানক্রিয়াটাইটিস, একিউট কিডনী ফেইলিউর, হাইপোনেট্রিমিয়া, সেপ্টিসেমিয়া, সার্কুলেটরি শক, সেমিআনকন্সাসনেস রোগ ধরা পরে, তিনি পূর্ব থেকে ক্রনিক কিডনী রোগে ভুগছিলেন। এই অবস্থায় তাকে স্লেড ডায়ালাইসিস ও নিবিড় পরিচর্যায় চিকিৎসা দেয়ার প্রয়োজনে ইমপেরিয়াল হাসপাতালে স্থানান্তর করা হয় গতকাল (১৫/০৮/২০২১) রাত আনুমানিক ১০টায়।
আজ সকালে তার অবস্থার কিছুটা উন্নতি হলে তাকে সফল ভাবে স্লেড ডায়ালাইসিসও দেয়া হয় এবং বিকাল ৩টার দিকে ডায়ালাইসিস পরবর্তী তিনি চিকিৎসকের সাথে কথাও বলেন।
কিন্তু আনুমানিক সন্ধ্যা ৬ টার দিকে হঠাৎ তার কার্ডিয়াক এরেস্ট হয় ও চিকিৎসকদের সকল চেষ্টা ব্যর্থ করে দিয়ে সন্ধ্যা সাড়ে ৬ টার দিকে তিনি না ফেরার দেশে চলে যান।
আমরা তার বিদেহী আত্মার শান্তি কামনা করছি ও তার শোকসন্তপ্ত পরিবারের প্রতি সমবেদনা জানাচ্ছি। মৃত্যুকালে তার বয়স হয়েছিল ৫২ বছর, তিনি তাঁর মা-বাবা, চিকিৎসক স্ত্রী, এক ছেলে, এক মেয়ে, ও অসংখ্য ভক্ত রেখে গেছেন।
প্রয়াত ডা. সন্দ্বীপন দাশ ছিলেন জনদরদী চিকিৎসক, তিনি ছিলেন চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের হৃদরোগ বিভাগের সহকারী অধ্যাপক ও হৃদরোগ বিশেষজ্ঞ। তিনি অধিকাংশ সময় গরীব-অসহায় রোগীর কাছ থেকে কোন ফি নিতেন না। শত প্রতিকূল পরিস্থিতিতেও তিনি চিকিৎসা প্রত্যাশী কোন রোগীকে ফেরাতেন না। তিনি চিকিৎসা করতেন খুব নিবীড়ভাবে। তাঁর কাছে চিকিৎসা নিতে আসা রোগীকে তিনি রোগী নয়, নিজের পরিবারের সদস্যের মতো আপন করে দেখতেন। পথে পড়ে থাকা অপরিচিত অসুস্থ রোগীকে তিনি অসংখ্যবার নিজের গাড়িতে করে হাসপাতালে পাঠিয়েছেন, চিকিৎসা করেছেন। ছাত্র জীবনে ছাত্র ইউনিয়নের সঙ্গে যুক্ত থাকা ডা. সন্দ্বীপন চট্টগ্রামের সকল সময় প্রগতিশীল-গণতান্ত্রিক আন্দোলনে সরব ছিলেন। তিনি খুব ভালো ভায়োলিন বাজাতেন। ডা. সন্দ্বীপনের মৃত্যুতে চট্টগ্রামের সকল মহলে শোকের ছায়া নেমে এসেছে।
ডাঃ এ,কে,এম,আরিফ উদ্দিন আহমেদ (আরিফবাচ্চু)
ফোকাল পার্সন অফ কোভিড ইউনিট ও একাডেমিক কো-অর্ডিনেটর, ইম্পেরিয়াল হাসপাতাল,চট্টগ্রাম।
প্রাক্তন সহকারী অধ্যাপক, ক্লিনিক্যাল মেডিসিন।
মেডিকেল কলেজ অফ সিয়ামেন ইউনিভার্সিটি, চায়না।