চলমান সংবাদ

করোনা নিয়ে উদ্ভট-বিতর্কিত বক্তব্য দেয়া হেফাজতের আমির বাবুনগরীও টিকা নিয়েছেন

টিকা নিচ্ছেন হেফাজতের আমির জোনায়েদ বাবুনগরী
দেশে করোনা ভাইরাসের সংক্রমণ শুরু পর থেকে বিভিন্ন বিতর্কিত বক্তব্য দিয়ে আসছিলেন হেফাজতে ইসলামের আমির জুনায়েদ বাবুনগরীসহ সংগঠনের অন্যান্য নেতৃবৃন্দ। করোনার প্রাদুর্ভাব হওয়ার পর থেকে একের পর এক উদ্ভট বক্তব্য দিয়ে জনগণকে টিকা নিতে নিরুৎসাহিত করা, মাস্ক পরতে নিষেধ করেন ধর্মীয় বক্তারা। ধীরে ধীরে নিজেদের ভুল বুঝতে পেরে  এক এক করে এখন টিকা নিতে শুরু করেছেন অনেক ধর্মীয় নেতা। ‘কওমি মাদ্রাসায় কখনো করোনা আসবে না’- এমন কথা যিনি একাধিকবার বলে আসছিলেন হেফাজতের আমির জুনায়েদ বাবুনগরী। এবার তিনিও টিকা গ্রহণ করেছেন। রোববার (৮ আগস্ট) দুপুরে চট্টগ্রামের হাটহাজারী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে এসে সিনোফার্মের টিকা গ্রহণ করেন তিনি। গাড়িতে করে টিকাকেন্দ্রে যাওয়া সত্তরোর্ধ্ব বাবুনগরী টিকা নেন গাড়িতে বসেই। হাটহাজারী উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা আবু সৈয়দ মো. ইমতিয়াজ হোসাইন বলেন, বাবুনগরীর দুপুরে স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে এসে টিকা গ্রহণ করেন। নেতাকর্মীদের ভিড় থাকায় তিনি গাড়িতে বসেই টিকা নেন। গত ১৪ জুলাই বাবুনগরী টিকার জন্য নিবন্ধন করেন। তাকে চীনের তৈরি সিনোফার্মের টিকা দেয়া হয়েছে। পরে হেফাজতে ইসলামের পক্ষ থেকে পাঠানো এক প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, আলেম সমাজের মধ্যে করোনা ভ্যাকসিন গ্রহণের বিষয়ে অমূলক ভীতি ও দ্বিধা বিদ্যমান রয়েছে। কিন্তু এটি একটি সংক্রামক ভাইরাস। বিষয়টি নিয়ে ভীত হওয়া যাবে না। এই মহামারি থেকে রক্ষায় এবং সবার ভীতি দূর করতেই হেফাজতের আমির ভ্যাকসিন গ্রহণ করেছেন। প্রসঙ্গত এর আগে বিভিন্ন আলোচনায় তিনি দাবি করেছিলেন মাদ্রাসায় করোনা আসবে না।
গত ১১ এপ্রিল চট্টগ্রামের হাটহাজারী মাদ্রাসায় এক ব্রিফিংয়ে জুনায়েদ বাবুনগরী বলেন, যেখানে কোরআন, হাদিস পাঠ করা হয়, যেখানে হেফজখানায় ছাত্ররা কোরআন পাঠ করে, সেখানে করোনা আসবে না। তার কারণ হলো আল্লাহর রহমত। এছাড়া গত ৩০ জুলাই এক বিবৃতিতে তিনি বলেন, ‘করোনা মহামারির দুর্যোগ থেকে রক্ষা পেতে সবার প্রধান কর্তব্য হচ্ছে, সকল প্রকার অন্যায়, জুলুম ও পাপাচার থেকে বিরত হয়ে ভবিষ্যতে আর কখনো এসব না করার সংকল্প নিয়ে তওবা করে আল্লাহমুখী হয়ে যাওয়া। করোনা থেকে দূরে থাকতে হলে কী করতে হবে, তার পরামর্শ দিয়ে তিনি বলেন, ‘বেশি বেশি তওবা, ইসতিগফার, নফল নামাজ, কোরআন তিলাওয়াত ও জিকিরে থাকতে হবে। একমাত্র আল্লাহর দয়া, রহমত ও ইচ্ছা ছাড়া মহামারির এই দুর্যোগ কেউ রোধ করতে পারবে না।’ কেবল বাবুনগরী নন, উদ্ভট বক্তব্য দিয়ে আলোচিত-সমালোচিত ও বিতর্কিত হয়েছেন অনেক ধর্মীয় নেতা। মুফতি কাজী ইব্রাহীম করোনাকে ‘আল্লাহর সৈনিক’, তাদের বিশ্বে পাঠানো হয়েছে অমুসলিম ও ‘ইসলামবিদ্বেষীদের শায়েস্তা করতে’, ঠিকমতো নামাজ-রোজা করলে মুসলমানদের করোনা হবে না, এ ধরনের বক্তব্য ক্রমাগত দিয়ে এসেছেন তারা। গত বছরের মার্চে মালয়েশিয়ায় বাংলাদেশিদের একটি মাহফিলে যোগ দিয়ে আজহারীও করোনা থেকে বাঁচতে একটি নির্দিষ্ট দোয়া করতে নিজের ফেসবুকে পরামর্শ দেন। তবে এক বছর পর সেই মালয়েশিয়া যখন করোনায় জর্জরিত, হাসপাতালগুলোতে রোগীর ঠাঁই হচ্ছে না, অক্সিজেনের অভাবে মানুষ মারা যাচ্ছে, তখন বাংলাদেশে টিকা নেয়ার বিষয়ে স্ট্যাটাস দেন আজহারী। জামায়াতপন্থি ধর্মীয় বক্তা তারেক মনোয়ার একাধিক ওয়াজে মাস্ক না পরার কথা বলেছেন বারবার। বলেছেন, একটি দোয়া করে ঘর থেকে বের হলেই করোনা হবে না কারও। সম্প্রতি গ্রেপ্তার হওয়া আমির হামযা আপত্তিকর বক্তব্যদিয়ে বলেন, পাঁচ ওয়াক্ত ঠিকমতো নামাজ পড়লে, রোজা রাখলে কারও করোনা হবে না। এ বিষয়ে একটি চ্যালেঞ্জও দেন। এছাড়া বিভিন্ন সময় টিকা নিয়ে উল্টা-পাল্টা কথা বলা বিএনপি নেতারাও টিকা নিয়েছেন। সবার আগে নিয়েছেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমির খসরু মাহমুদ চৌধুরী। তারপর বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর এবং দলের চেয়ারপার্সন বেগম খালেদা জিয়াও টিকা গ্রহণ করেছেন।
# ০৮.০৮.২০২১ চট্টগ্রাম #