বিজ্ঞান প্রযুক্তি

আত্মঘাতী বৃক্ষবধ

মুরশেদুল হাকিম (শুভ্র)

সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে উদ্যমে চলছে বৃক্ষবধ ।। গাছ কাঁটার উপযুক্ত সময় বেঁছে নিয়েছেন কর্তৃপক্ষ । মানুষ যখন ঘরে বন্ধ , আর জীবন-জীবিকা নিয়ে বিপর্যস্ত । ঠিক তখন একেবারে শুইয়ে দেয়া হোল বহু বছরের সাক্ষী হয়ে দাঁড়িয়ে থাকা গাছ গুলো । এর আগে ১৯৯৯ সালে ওসমানী উদ্যানে ১১ হাজার গাছ কেটে ফেলার সিদ্ধান্তের প্রতিবাদে জনগন রাস্তায় নেমেছিলেন । তখন দাবী উঠেছিল ” ঢাকা শহরের পরিবেশের যা অবস্থা তাতে একটি গাছ কাটাও রীতিমত অপরাধের পর্যায়ে পড়ে । সেখানে শুধু অসংখ্য গাছই নয় উদ্যানটিকে ধ্বংস করা হবে শহরবাসীর নিঃশ্বাসের অধিকার কেড়ে নেয়ার চক্রান্তের শামিল ।” তখন গাছ কাঁটার বিরুদ্ধে জনমত তৈরি হয়েছিল । জনগন আন্দোলনে ছিলেন । কর্তৃপক্ষ পিছু হটতে বাধ্য হয় । এখন গাছ কাঁটা চলছে । জোরালো না হলেও  প্রতিবাদ চলছে ।

গাছের সাথে প্রানের অস্তিত্বের সম্পর্ক । গাছ রক্ষায় মানুষ  সংগ্রামে থাকবেই ।।

ভারত উপমহাদেশে গাছ বাঁচাতে এক রক্তাত্ত আন্দোলনের সূচনা হয়েছিল ১৭৩০ সালে। রাজস্থানের খেজরিলি গ্রামে খেজরি গাছ কেটে রাজার প্রাসাদ বানানোর প্রতিবাদে বিষ্ণোই সম্প্রদায়ের মানুষ গাছ আকড়ে ধরে ছিলেন । ৩৬৩ জন মানুষ গাছ সহ কাঁটা পরে রাজার সৈন্যদের হাতে । সেই থেকে শুরু চিপকো আন্দোলন । চিপকো হিন্দী শব্দ । এর অর্থ গাছকে দুই হাতে জড়িয়ে থাকা । চিপকো আন্দোলনের নেত্রী ছিলেন অমৃতা দেবী । এরপর ১৯৭৩ সালে উত্তরপ্রদেশে গাছ কাঁটার বিরুদ্ধে আন্দোলন হয় । নারীরা এই সকল সংগ্রামে নেতৃত্বের ভূমিকায় ছিলেন ।।

“১৯৯৫ সালে ঢাকার সবুজ অঞ্চল ছিল মোট আয়োতনের ১২ শতাংশ । ২০১৫ সালে আট শতাংশ । এখন ৬ থে ৭ শতাংশের বেশি হবে না ” । আবার দুষনে গাছের বেচে থাকার হার ৩০ শতাংশ কমে গেছে ।

অপরিকল্পিত গাছ কাটা, বন উজার, কৃত্রিম বনায়ন, বৃক্ষ রোপন আমাদের ট্র্যাজিক লিগেসি। সুন্দরবন, ঝরাপাতার শালবন, পার্বত্য চট্টগ্রামের বৃক্ষরাজী ব্যাপক হুমকির মধ্যে আছে ।

চকোরিয়া সুন্দরবন নামে আমাদের একটা ম্যানগ্রোভ ফরেস্ট ছিল কক্সবাজারে । প্রায় ২১ হাজার একরের এই বন চিংড়ি চাষের নামে কিছু মানুষকে ধনী বানিয়ে এখন মানচিত্র থেকে নিশ্চিহ্ন হয়ে গেছে।

আমাদের নদী , খাল, জলাভুমি , বনভূমি , পাহাড় ,বৃক্ষরাজি দখল দূষনে এভাবেই বিপন্ন হতে থাকবে ? কি ভাবে মুনাফা কেন্দ্রিক তথাকথিত পরিবেশ বিরুদ্ধ উন্নয়ন প্রকল্প আত্মঘাতী হয়ে ওঠে আমরা ৫০ বছরেও উপলব্ধি করতে পারছি না ?

ব্যাঙ আর বিচ্ছুর ( Scorpion) গল্প মনে পড়ে —, নদীর পাড়ে বসে ছিল এক ব্যাঙ।

এমন সময় বিষাক্ত এক বিচ্ছু এল, ব্যাঙকে বলল,  আমাকে নদিটা পার করে দিতে পার?

ব্যাঙ বললঃ না । তুমি আমাকে কামড় দেবে । স্কড়পিওন বলল- তোমাকে কামড়ালে তুমি এবং আমি

দুজনেই ডুবে মরব। কেন আমি তা করব?

সহজ সরল ব্যাঙ রাজি হল।

সাতার কাটছে ব্যাঞ এবং নদির মাঝামাঝি এসে ব্যাঙ এর পিঠে সে বসাল বিসাক্ত কামড়।

বিষ ছড়িয়ে পড়ছে শরীরে । মৃত্যু যন্ত্রনায় কাতর ব্যাঙ স্কড়পিওনকে সহ নদী গর্ভে ডুবে যাওয়ার আগে জিজ্ঞাস করল,  তুমি যে আমাকে কামড়ালে এখন তুমিও ডুবে যাচ্ছ আমিও ডুবে যাচ্ছি।

কেন তুমি এটা করলে?

স্কড়পিওন বলল- কামড়ান আমার স্বভাব। আমি বেঁচে থাকি বা মরে যাই, বা কে মরে গেল তাতে আমার কিছু যায় আসে না।

নদী , খাল দখল দূষিত করে , অপরিকল্পিতভাবে গাছ কেটে , একের পর এক আত্মঘাতী প্রকল্প তিলোত্তমা ঢাকাকে  পরিনত করেছে বসবাসের অনপুযুক্ত” সুরম্য অট্টালিকা বিশিষ্ট একটি দূষিত শহরে”

(লেখকঃসাংস্কৃতিক ও পরিবেশ আন্দোলনের কর্মী)