un

চট্টগ্রামে প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর গণসমাবেশে সিপিবি সভাপতি

-লুটেরাদের সরকারকে ক্ষমতার গদি থেকে নামাতে হবে, ঐক্যবদ্ধ গণআন্দোলন-গণপ্রতিরোধ গড়ে তুলুন


বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টির (সিপিবি) সভাপতি ও বীর মুক্তিযোদ্ধা মোহাম্মদ শাহআলম বলেছেন, ‘লুটেরা-টাকা পাচারকারী, বিএমডব্লিউওয়ালাদের সিন্ডিকেট দেশের পার্লামেন্ট দখল করে ফেলেছে। এ লুটেরাদের লালন-পালন করছে অবৈধ নির্বাচনের মাধ্যমে ক্ষমতা দখলকারী সরকার। লুটেরাদের রাজনীতি থেকে হটাতে হবে। লুটেরাদের সরকারকে ক্ষমতার গদি থেকে টেনে নামাতে হবে। এজন্য সর্বস্তরের মানুষকে রাস্তায় নেমে এসে ঐক্যবদ্ধ গণআন্দোলন ও গণপ্রতিরোধ গড়ে তুলতে হবে।’
সিপিবির ৭৬ তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে গত শনিবার (৯ মার্চ) বিকেলে চট্টগ্রাম নগরীর পুরাতন রেলস্টেশন চত্বরে আয়োজিত গণসমাবেশে তিনি এসব কথা বলেন। চট্টগ্রাম জেলা সিপিবি এ গণসমাবেশের আয়োজন করে।
প্রধান অতিথির বক্তব্যে শাহআলম বলেন, ‘গত ৭ জানুয়ারি এদেশে একটি তথাকথিত নির্বাচন হয়েছে। ক্ষমতায় থাকা সরকারই আবার সরকার গঠন করেছে। আমরা ২০১৪ সালে একতরফা নির্বাচন দেখেছি। ২০১৮ সালের নৈশভোটের নির্বাচন দেখেছি, রাতের আঁধারে ভোটচুরি করে ক্ষমতায় এসেছিল আওয়ামী লীগ। ২০২৪ সালে দেশের জনগণের মতামত উপেক্ষা করে অবৈধ নির্বাচন করে আওয়ামী লীগ আবার ক্ষমতা দখল করেছে।’
তিনি বলেন, ‘১৯৭৩ সালের নির্বাচনে ২২ টি আসনে কারচুপি হয়েছিল। জিয়াউর রহমান আমলে হ্যাঁ-না ভোট দেখেছি, মানুষ ভোট দিতে পারেনি। এরশাদের আমলে গুণ্ডারা ভোট দিয়েছে। মানুষ ভোট দিতে পারেনি। আমরা স্লোগান দিয়েছিলাম- আমার ভোট আমি দেব, যাকে খুশি তাকে দেব। মানুষ সেটা লুফে নিয়েছিল। স্বৈরাচার এরশাদের বিরুদ্ধে লড়াই করতে গিয়ে নূর হোসেন রক্ত দিয়েছিল, তাজুল রক্ত দিয়েছিল। এদেশের মানুষ বুকের রক্ত দিয়ে স্বৈরাচার হটিয়েছিল। এখন আবার স্বৈরাচারদের নিয়ে আওয়ামী লীগ দেশের গণতন্ত্রের পতাকা খামচে ধরেছে। তাদের হটাতে হবে।’
দেশের মানুষ উত্তরাধিকারের রাজনীতির কাছে বন্দি হয়ে গেছে মন্তব্য করে তিনি বলেন, ‘একদিকে সজীব ওয়াজেদ জয়, আরেকদিকে তারেক রহমান। এ উত্তরাধিকারের রাজনীতি ভেঙ্গে দিতে হবে। বংশের রাজনীতি ভেঙ্গে দিতে হবে। রাজনীতিকে উত্তরাধিকারের হাত থেকে মুক্ত করতে হবে।’
দেশের সামগ্রিক চিত্র তুলে ধরে শাহআলম বলেন, ‘দেশে আজ কী চলছে, আমাদের চেয়ে মানুষ ভালো জানে। মানুষকে আজ বোঝাতে হয় না, তারাই উল্টো আমাদের বোঝাচ্ছে। মানুষ আজ হাড়ে হাড়ে টের পাচ্ছে। বাজারে গিয়ে জিনিসপত্রে হাত দেয়া যাচ্ছে না, হাত পুড়ে যাচ্ছে। কয়েকদিন পর রমজান, মানুষ চিন্তায় আছে। দেশের ব্যাংকে টাকা নেই। ডলার সংকট চলছে। হাজার-হাজার কোটি টাকা বিদেশে পাচার হয়ে গেছে। পাচারকারীদের সরকার লালন-পালন করছে।’
টাকা পাচারকারীদের তালিকা প্রকাশের দাবি জানিয়ে তিনি বলেন, ‘প্রতিবছর দেশ থেকে ৮০ হাজার কোটি টাকা পাচার হচ্ছে। সরকারের কাছে সব তথ্য আছে। সরকারকে বলব- পাচার হওয়া টাকা ফেরত আনেন। টাকা পাচারকারীদের তালিকা প্রকাশ করুন, ঋণখেলাপিদের তালিকা প্রকাশ করুন।’
তিনি বলেন, এ সরকার পণ্যমূল্য নিয়ন্ত্রণ করতে পারবে না, তাদের সে ক্ষমতা নেই। সরকার চালায় সিন্ডিকেটওয়ালারা। মতিঝিলে-খাতুনগঞ্জে বসে আছে টাকা পাচারকারীদের সিন্ডিকেট। একেকজনের গাড়ির কী বাহার ! বিএমডব্লিউ ছাড়া চলে না ! লুটেরা, টাকা পাচারকারী আর বিএমডব্লিউওয়ালারা আজ দেশের পার্লামেন্ট দখল করেছে। পার্লামেন্টে ১৯৯ জন ব্যবসায়ী। যে সিন্ডিকেট জিনিসপত্রের দাম বাড়ায়, তারা পার্লামেন্টে গিয়ে বসে আছে। আর সরকার অভিযানের নামে মানুষকে ধোঁকা দিচ্ছে। ছোট ছোট ব্যবসায়ীদের হয়রানি করছে। সবার আগে এ মুনাফাখোরি বাজার ব্যবস্থাকে লাথি দিতে হবে। গ্রাম-শহরে রেশন ব্যবস্থা চালু করতে হবে। সিন্ডিকেটওয়ালাদের সিন্ডিকেট ভেঙ্গে দিতে হবে। টাকা পাচারকারী-বিএমডব্লিউওয়ালাদের দখল থেকে পার্লামেন্টকে মুক্ত করতে হবে। তাদের পার্লামেন্ট থেকে বের করে দিতে হবে।’
সিপিবি সভাপতি বলেন, ‘লুটেরা সিন্ডিকেট, টাকা পাচারকারী আর তাদের লালন-পালনকারী সরকারের বিরুদ্ধে কমিউনিস্ট পার্টি লড়াই করছে। এ লড়াই চলবে। এ লড়াইয়ের মধ্য দিয়ে জনগণের রাজনীতি গড়ে তুলতে হবে। এ দেশ আমরা লুটেরাদের হতে দেব না। লুটেরাদের সরকারকে ক্ষমতার গদি থেকে নামাতে হবে। লুটেরাদের হাত থেকে দেশকে উদ্ধার করতে হবে। আসুন আমরা ঐক্যবদ্ধ হই, গণআন্দোলন গড়ে তুলি, গণপ্রতিরোধ গড়ে তুলি। সিপিবির নেতৃত্বে জনগণের পক্ষের লুটেরাদের বিকল্প রাজনৈতিক শক্তি গড়ে তুলতে হবে।’
সমাবেশে সিপিবির কেন্দ্রীয় প্রেসিডিয়াম সদস্য পরেশ কর বলেন, ‘১৯৪৯ সালে যে আওয়ামী লীগ প্রতিষ্ঠা হয়েছিল, সে আওয়ামী লীগ এখন আর নেই। এখন যে আওয়ামী লীগ সেটা জনগণের নয়, সেটা সালমান এফ রহমানের আওয়ামী লীগ। বাংলাদেশ এখন এক মহাবিপদে আছে। কমিউনিস্ট পার্টি সে মহাবিপদ অতিক্রমের জন্য লড়াই-সংগ্রাম করছে। একদিন সংগ্রাম করে আমরা স্বৈরশাসন হটিয়েছিলাম। এখন আবার ক্ষমতার গদিতে স্বৈরশাসন চেপে বসেছে। দলগতভাবে আওয়ামী লীগ বিএনপির চেয়েও খারাপ অবস্থানে আছে। আওয়ামী লীগের কাছে জনগণের কোনো দাম নেই। এখন জনগণের শেষ ভরসা কমিউনিস্ট পার্টি। বাংলাদেশের গণতন্ত্র ফেরাতে হলে, জনগণের অধিকার কায়েম করতে হলে কমিউনিস্ট পার্টিকে শক্তিশালী করা ছাড়া উপায় নেই।’
সিপিবি কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য লাকী আক্তার বলেন, ‘ভোট ও ভাতের জন্য, গণতন্ত্রের জন্য, লুটপাট, দুর্বৃত্তায়নের বিরুদ্ধে কমিউনিস্ট পার্টি লড়াই করে যাচ্ছে। এদেশে যত গণআন্দোলন, সব  কমিউনিস্ট পার্টির নেতৃত্বে গড়ে উঠেছে। দেশে যে নীতিহীন রাজনীতি চলছে, সেটার বিরুদ্ধে নীতিনিষ্ঠ রাজনীতি করে যাচ্ছে কমিউনিস্ট পার্টি। চলমান দুঃশাসনে আমরা এক দুর্বিসহ পরিস্থিতিতে দিন কাটাচ্ছি। নাগরিকদের ভোটাধিকার হরণ করা হয়েছে। এ দুঃশাসনের বিরুদ্ধে সবাইকে রাজপথে নামতে হবে।’
সিপিবি চট্টগ্রাম জেলা শাখার সভাপতি অশোক সাহার সভাপতিত্বে ও সহকারি সাধারণ সম্পাদক নুরুচ্ছাফা ভূঁইয়ার সঞ্চালনায় সমাবেশে আরও বক্তব্য রাখেন জেলা সিপিবির সাধারণ সম্পাদক মো. জাহাঙ্গীর, সম্পাদকমণ্ডলির সদস্য উত্তম চৌধুরী ও মো. মছিউদ্দৌলা এবং দক্ষিণ জেলার সভাপতি কানাই লাল দাশ ও সাধারণ সম্পাদক শওকত আলী।
সিপিবি, চট্টগ্রাম জেলার সংস্কৃতি শাখার শিল্পীদের গণসঙ্গীত পরিবেশনের মধ্য দিয়ে সমাবেশ শুরু হয়। সমাবেশ শেষে লাল-পতাকার মিছিল পুরাতন রেলস্টেশন থেকে নিউমার্কেট, কোতোয়ালী মোড়, লালদিঘীর পাড় হয়ে সিনেমা প্যালেস চত্ত্বরে গিয়ে শেষ হয়।