চলমান সংবাদ

আইএস ফেরত বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত শামীমা ব্রিটিশ নাগরিকত্ব ফিরে পাচ্ছেন না

বিশেষ ট্রাইব্যুনাল বলেছে, শামীমা বেগমের নাগরিকত্ব পুনর্বহালের ক্ষেত্রে পর্যাপ্ত কারণ নেই। ২০১৫ সালে “ইসলামিক স্টেট” সন্ত্রাসী গোষ্ঠীতে যোগ দেওয়ার পরে যুক্তরাজ্য কর্তৃপক্ষ তার ব্রিটিশ নাগরিকত্ব কেড়ে নেয়। ছবি: এমপিক্স/পিকচার অ্যালায়েন্স

ইসলামিক স্টেট গোষ্ঠীর সদস্যকে বিয়ে করতে কিশোর বয়সে সিরিয়ায় পালিয়ে যাওয়ার কারণে শামীমা বেগম নামে এক নারী ব্রিটিশ নাগরিকত্ব হারান। এই নিয়ে যুক্তরাজ্যের আদালতে মামলা হয়। শুক্রবার আরেকটি রায়ে আদালত শামীমার আবেদন খারিজ করেছে। যদিও তিনি চাইলে এখনো সুপ্রিম কোর্টে আবেদন করতে পারেন।

বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত ওই নারী শামীমা বেগমের বয়স এখন ২৪ বছর। এই নারী গত বছরের অক্টোবরে লন্ডনের আপিল আদালতে তার নাগরিকত্ব ফেরানোর আবেদন জানিয়ে মামলা করেন৷

লন্ডনের আপিল আদালত শুক্রবার (২৩ ফেব্রুয়ারি) ২৪ বছর বয়সি শামীমা বেগমের উপস্থাপিত পাঁচটি যুক্তি প্রত্যাখ্যান করেছে।

বিচারক স্যু কার রায়ের সময় বলেন, “এটি যুক্তি দেওয়া যেতে পারে, মিস বেগমের মামলার সিদ্ধান্তটি কঠোর ছিল। এটাও যুক্তি দেওয়া যেতে পারে, মিস বেগম নিজেই সেই দুর্ভাগ্য লিখেছেন।”

বিচারক বলেন, “তার আবেদন খারিজ করা হয়েছে।”

তার আইনজীবী আদালতকে বলেছেন, শামীমাকে শিশুপাচারের সম্ভাব্য শিকার হিসাবে তার আইনি দায়িত্ব বিবেচনা করতে ব্যর্থ হয়েছে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়।

আদালতে রায় ঘোষণা করছেন বিচারক স্যু কার। ছবি: রয়টার্স
আদালতে রায় ঘোষণা করছেন বিচারক স্যু কার। ছবি: রয়টার্স

শামীমার পরিবার বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত৷ ২০১৫ সালে মাত্র ১৫ বছর বয়সে পূর্ব লন্ডনের বেথনাল গ্রিন এলাকা থেকে আরো দুজন বান্ধবী সহ শামীমা বেগম ইসলামিক স্টেট বা আইএসে যোগ দিতে সিরিয়ায় পালিয়ে গিয়েছিলেন। লন্ডন থেকে প্রথমে বিমানে তুরস্ক যান তারা। পরে সীমান্ত পেরিয়ে সিরিয়ায় প্রবেশ করেন বলে জানা গিয়েছে।

সিরিয়া থাকাকালীন তিনি নেদারল্যান্ডস থেকে আসা এক আইএস সদস্যকে বিয়ে করেন৷ শামীমার তিনটি সন্তান ছিল, যাদের মধ্যে কেউই বাঁচেনি বলে জানিয়েছে বার্তাসংস্থা এএফপি। তার এক বন্ধুও বোমা বিস্ফোরণে মারা যান। তবে অন্য বন্ধুর কী হয়েছিল, তা জানা যায়নি।

২০১৯ সালের ফেব্রুয়ারিতে শামীমা রাষ্ট্রহীন হয়ে পড়েন৷ সিরিয়ার আল হোল শিবিরে তাকে পাওয়ার পর জাতীয় নিরাপত্তার ভিত্তিতে শামিমার ব্রিটিশ নাগরিকত্ব প্রত্যাহার করেছিলেন ব্রিটেনের তৎকালীন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী সাজিদ জাভিদ।

১৯৮১ সালের ব্রিটিশ নাগরিকত্ব অ্যাক্ট অনুযায়ী, একজন ব্যক্তি নাগরিকত্ব হারাতে পারেন যদি তার রাষ্ট্রহীন হওয়ার ঝুঁকি না থাকে।

শুক্রবার (২৩ ফেব্রুয়ার) ব্রিটিশ আদালতে অনুষ্ঠিত শুনানি। ছবি: রয়টার্স
শুক্রবার (২৩ ফেব্রুয়ার) ব্রিটিশ আদালতে অনুষ্ঠিত শুনানি। ছবি: রয়টার্স

২০২০ সালে যুক্তরাজ্যের একটি ট্রাইব্যুনাল রায় দিয়েছিল, শামীমা রাষ্ট্রহীন নন। কারণ তিনি “বংশসূত্রে বাংলাদেশের একজন নাগরিক”। তার মা বাংলাদেশি হওয়ার কারণে এই সিদ্ধান্ত নেয়া হয়।

শামীমা এবং তার মতো যারা উত্তর সিরিয়া এবং ইরাকের বিস্তীর্ণ অঞ্চল দখলের সময় সন্ত্রাসী গোষ্ঠীতে যোগ দেয়, সেই বিভিন্ন জাতীয়তার মানুষদের জন্য কী ব্যবস্থা নেয়া হবে, তা নিয়ে বিতর্ক চলছে।

গত বছর, শামীমা বিশেষ অভিবাসন আপিল কমিশনে (এসআইএসি) সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে একটা মামলায় হেরে যান।

বিশেষ অভিবাসন আপিল কমিশন বলেছিল, “তাদের সন্দেহটাই একেবারে বিশ্বাসযোগ্য। শামীমাকে আইএস গোষ্ঠীর মাধ্যমে নিয়োগ করা হয়েছিল। তারপরে অন্যত্র পাঠানো হয়। এরপর যৌন শোষণের কারণে শামিমাকে আশ্রয় দেয়া হয়েছিল।” এই কারণেই শামীমার নাগরিকত্ব প্রত্যাহার করা হয়।

এই রায়ের অর্থ, শামীমা তার বর্তমান আশ্রয়স্থল উত্তর সিরিয়ার শরণার্থী শিবির থেকে আর যুক্তরাজ্যে ফিরতে পারবেন না।

স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের আইনজীবীরা যুক্তি দিয়েছেন, এসআইএসির সিদ্ধান্ত সঠিক ছিল।

২০২২ সালের আগস্টে প্রকাশিত এক অনুসন্ধানী প্রতিবেদনে বিবিসি জানায়, ইসলামিক স্টেট জঙ্গি গোষ্ঠীতে যোগ দেয়ার জন্য যুক্তরাজ্য থেকে পালিয়ে যাওয়া বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত শামীমা বেগমকে কানাডার নিরাপত্তা সংস্থার এক গুপ্তচর সিরিয়ায় পাচার করেছিল।

বিবিসি এমন কিছু নথি দেখেছে, যাতে এই গুপ্তচর দাবি করেছেন, তিনি শামীমা বেগমের পাসপোর্টের বিস্তারিত তথ্য কানাডাকে জানিয়েছেন এবং আরো ব্রিটিশ নাগরিককে ইসলামিক স্টেটের হয়ে লড়াই করার জন্য পাচার করেছেন।

তবে এই বিষয়টি নিরাপত্তা সংক্রান্ত বলে এ নিয়ে কানাডা এবং যুক্তরাজ্য সরকার কোনো মন্তব্য করতে চায়নি।

শামীমার আইনজীবী এসআইএসি শুনানিতে বলেন, বন্ধুদের সঙ্গে “নির্ধারিত এবং কার্যকর” আইএস গোষ্ঠীর “প্রপাগান্ডা” দ্বারা “প্রভাবিত” হন তার মক্কেল।

শামীমা ২০১৯ সাল থেকে হাজারো বিদেশি নারী ও শিশুদের সাথে উত্তর-পূর্ব সিরিয়ার

তিনি ২০১৯ সাল থেকে হাজারো বিদেশি নারী ও শিশুদের সাথে উত্তর-পূর্ব সিরিয়ার আল-রোজ ক্যাম্পে অবস্থান করছেন।

প্রায় ৯০০ জন লোক ইসলামিক স্টেটের সদস্য হতে ব্রিটেন থেকে সিরিয়া এবং ইরাকে পালিয়ে গিয়েছিল বলে অনুমান করা হচ্ছে। সরকারি পরিসংখ্যান অনুযায়ী, তাদের মধ্যে প্রায় ১৫০ জনের নাগরিকত্ব কেড়ে নেওয়া হয়েছে।

আরকেসি/এমআই (এএফপি,এপি,রয়টার্স)