বিজ্ঞান প্রযুক্তি

বিজ্ঞান ভাবনা (১১৯): শিশু ও ঈশ্বর

– বিজন সাহা

গত সপ্তাহে যখন প্যালেস্টাইন নিয়ে লিখি তখন ভাবিনি এই প্রসঙ্গে আবারও ফিরে আসব। কিন্তু যুদ্ধ থামার নাম তো নেইই, বরং সেটা যেন ধীরে ধীরে জ্বলে উঠছে, আরও বেশি বেশি দেশ ও মানুষকে জড়িয়ে ফেলছে নিজের জালে। বাড়ছে মৃতের সংখ্যা। মরছে সাধারণ মানুষ, মরছে নারী, শিশু, বৃদ্ধ, মরছেঅসুস্থমানুষযারাজীবনেরআশায়এসেছিলহাসপাতালে।

গত লেখায় বলেছিলাম যে জন্মের পেছনে না থাকলেও রাজনৈতিক অঙ্গনে হামাসকে প্রতিষ্ঠিত করার পেছনে ইসরাইলের সমর্থন ছিল। অন্তত নেটে ঘুরে বেড়ানো বিভিন্ন দলিল সে কথাই বলে। উল্লেখ করা যেতে পারে যে ১৯৮৭ সালে হামাসের প্রতিষ্ঠার আগে পর্যন্ত প্যালেস্টাইনের জনগণের একমাত্র (অন্তত বহির্বিশ্বে) প্রতিনিধি ছিল ইয়াসির আরাফাতের পিএলও। সে সময় ইসরাইলের চোখে পিএলও ছিল সন্ত্রাসবাদী সংগঠন। সন্ত্রাসবাদ অবশ্য রাজনীতিতে নতুন কিছু নয়। পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে সন্ত্রাসবাদ রাজনৈতিক দাবি আদায়ে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছে। রাশিয়ায় জারের আমলে বিভিন্ন সন্ত্রাসবাদী সংগঠন ছিল। ভারতের স্বাধীনতা আন্দোলনে সন্ত্রাসবাদ এক সময় আলোড়ন সৃষ্টি করে। এমনকি ইসরাইলের সৃষ্টির আগে ইহুদি নেতারাও সন্ত্রাসবাদী পথ গ্রহণ করে। তবে সে সময় সন্ত্রাসের শিকার হত সাধারণত শাসক শ্রেণীর উচ্চপদস্থ কর্মকর্তারা। বর্তমানে সন্ত্রাসের শিকার হয় সাধারণ মানুষ। সেটা এখন প্রায় সব দেশের সো ধরণের সন্ত্রাসবাদী সংগঠনের অন্যতম প্রধান অস্ত্র। যাহোক, ইসরাইলের বিরুদ্ধে প্রথম ইন্টিফাদের শুরুতে হামাসের জন্ম। ১৯৮৭ থেকে ১৯৯১ সাল পর্যন্ত চলমান এই ইন্টিফাদ বা অভ্যুত্থানের উদ্দেশ্য ছিল দখলদার ইসরাইলের হাত থেকে ১৯৬৭ সালে ছয় দিনের যুদ্ধে হারানো ভূমি উদ্ধার করা। হামাসের জন্ম হয়েছিল স্বেচ্ছাসেবক সংগঠন মুসলিম ব্রাদারহুডের ভেতর থেকে যার প্রথম নেতা ছিলেন আহমেদ ইয়াসিন। প্রথম ইন্টিফাদের ফলশ্রুতিতে ইসরাইল পিএলওর সাথে ১৯৯৩ সালে অসলো শান্তি চুক্তি স্বাক্ষর করে, কিন্তু হামাস সেই চুক্তি মানতে অস্বীকার করে এবং ইসরাইলের বিরুদ্ধে সশস্ত্র সংগ্রাম চালিয়ে যেতে প্রতিজ্ঞাবদ্ধ হয়। হামাস ইসরাইল, সেক্টর গাজা ও পশ্চিম তীরে ইসলামিক রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার ঘোষণা দেয়। সে সময় তো বটেই, তার পরেও ইসরাইলি এস্টাব্লিসমেন্টের একটা অংশ হামাসকে পিএলওর বিরুদ্ধে সংগ্রামের হাতিয়ার হিসেবে দেখে এবং বিভিন্ন ভাবে হামাসকে সাহায্য করে। অনেকের ধারণা এর পেছনে শুধু ইসরাইলি নয়, আমেরিকা ও ব্রিটেনের গোয়েন্দা সংস্থাও জড়িত ছিল। তবে এ ধরণের পদ্ধতি যে ব্রিটিশরা আগেও ব্যবহার করেছিল তার প্রমাণ ভারত। তাদের সক্রিয় অংশগ্রহণেই অবিভক্ত ভারতে জন্ম নেয় মুসলিম লীগ ও হিন্দু মহাসভা। উদ্দেশ্য এর মধ্য দিয়ে কংগ্রেসের ভেতরে স্বাধীন ভারতের জন্য যে আন্দোলন দানা বেঁধে উঠেছিল সেটাকে ধ্বংস করতে না পারলেও বিপথগামী করা, স্বাধীনতাকামী ভারতবাসীর মধ্যে বিভেদের বীজ রোপণ করে নিজেদের শাসন ও শোষণ চালিয়ে যাওয়া। সেদিক থেকে ইসরাইলের জন্য হামাস ছিল আইডিয়াল। ২০০৬ সালের নির্বাচনে হামাস জয়লাভ করে এবং সশস্ত্র সংগ্রামের মধ্য দিয়ে পিএলওর সমর্থকদের সেক্টর গাজা থেকে চলে যেতে বাধ্য করে সেই এলাকার নিয়ন্ত্রণ নিজেদের হাতে নিয়ে নেয়। এর ফলে সেক্টর গাজায় সংঘাত নতুন গতি পায় আর ইসরাইল সেখানে বিভিন্ন ধরণের অর্থনৈতিক নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে। তাই প্যালেস্টাইনের জনগণের স্বাধীনতা সংগ্রামে হামাসের ভূমিকা প্রশ্নাতীত নয়, কেননা তার যুদ্ধ ইসরাইলের বিরুদ্ধে যত না তীব্র তারচেয়ে বেশি তীব্র ছিল পিএলওর বিরুদ্ধে। যখন প্যালেস্টাইনের জনগণের ঐক্যবদ্ধ হওয়া দরকার তখন সেদেশের রাজনৈতিক শক্তির এই পরস্পর বিরোধী অবস্থান সেদেশের মুক্তি সংগ্রামে মোটেই সহায়ক নয়। এটাই মনে হয় প্যালেস্টাইনের জনগণের স্বাধীনতার পথে সবচেয়ে বড় বাঁধা। তবে এটা শুধু প্যালেস্টাইন নয়, সমস্ত তৃতীয় বিশ্বের চিত্র। এই প্রসঙ্গে একটা কথা মাথায় এলো। একথা তো অজানা নয় যে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের হত্যা তথা পঁচাত্তরের পট পরিবর্তনের পেছনে আমেরিকার হাত ছিল। এই হত্যাকাণ্ডের মধ্য দিয়ে দেশের ইতিহাসের মোড় ঘুরিয়ে দেয়া হয়েছিল। আচ্ছা বিএনপির প্রতিষ্ঠার পেছনেও কি তাদের হাত ছিল? কেননা বিএনপি জিয়াকে স্বাধীনতার ঘোষক হিসেবে দাবি করলেও দল হিসেবে একাত্তরের চেতনার বিরুদ্ধে কাজ করে আর আমেরিকা নিজেও একাত্তরে বাংলাদেশের স্বাধীনতার বিপক্ষেই কাজ করেছিল। শুধু তাই নয়, এমনকি স্বাধীনতার চল্লিশ বছর পরে যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের বিরোধিতা করেছিল – বিএনপি ও আমেরিকা, উভয়েই। আওয়ামী লীগ ও বিএনপি এতটাই আন্টাগোনিস্টিক যে এদের উপস্থিতিই দেশে অস্থিরতা সৃষ্টির জন্য যথেষ্ট। এটাই সাম্রাজবাদীদের সুযোগ দেয় দেশের আভ্যন্তরীণ ব্যাপারে নাক গলাতে, হস্তক্ষেপ করতে। আর সেটা তারা করে এসব দলের আহ্বানেই। বর্তমান বাংলাদেশের রাজনৈতিক অস্থিরতা, বিভিন্ন উস্কানিমূলক কর্মকাণ্ড এর পেছনে আমেরিকার হাত স্পষ্ট। আমাদের দেশের রাজনীতির গতিবিধি পর্যালোচনা করলেও প্যালেস্টাইনের আভ্যন্তরীণ রাজনীতি ও সেখানে ইসরাইল ও আমেরিকা – ব্রিটেনের ভূমিকা অনেকটাই বোঝা যায়। তাই এক দিকে যেমন প্যলেস্টাইনের সাধারণ মানুষের উপর ইসরাইলি হামলার নিন্দা করতে হবে, একই সাথে প্যালেস্টাইনের বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের উপর চাপ তৈরি করতে হবে নিজেদের উচ্চাভিলাষ ত্যাগ করে দেশের মানুষের স্বার্থে ঐক্যবদ্ধ হতে।

এই যুদ্ধে আরও একটা জিনিস খেয়াল করলাম। অনেকেই হিটলারের ছবি দিয়ে তার ইহুদি হত্যাকে সমর্থন করছে। প্যালেস্টাইনের সাধারণ মানুষের উপর ইসরাইলের হামলার প্রতিবাদ করতে গিয়ে যদি হিটলারের ইহুদি নিধন যজ্ঞ সমর্থন করা হয় তাহলে বুঝতে হবে এরা আর যাই চাক মানুষের মুক্তি চায় না, চায় নিজের পছন্দের কোন বিশেষ গোষ্ঠীর মানুষের মুক্তি। মানুষকে যারা ধর্ম দিয়ে, জাতি দিয়ে, বর্ণ দিয়ে ভাগ করে তারা মানবতার প্রতি কতটুকু প্রতিশ্রুতিবদ্ধ সেটা প্রশ্ন সাপেক্ষ। সুযোগ পেলে তারা নিজেরাও যে একদিন ইসরাইলি সেনার ভূমিকায় অবতীর্ণ হয়ে ভিন্ন মতাবলম্বীদের ধ্বংস করবে না সেই গ্যারন্টি কি আছে। তাছাড়া মনে রাখা দরকার, হিটলার শুধু ইহুদিদের মারেনি, মেরেছে কোটি কোটি মানুষ। সোভিয়েত ইউনিয়নের দুই কোটি সত্তর লাখ মানুষের মধ্যে প্রচুর মুসলিম ছিল, ছিল অন্যান্য ধর্মের লোকেরা। তাই হিটলারকে হিরো বানানোর আগে অন্তত সেই সব চেচেন, তাতার, বাসকির, দাগেস্তানি, কিরঘিজ, তাজিক, উজবেক, কাজাখ মুসলিমদের কথা মনে রাখা দরকার। আরও ভালো হয় যদি জাতিধর্ম বর্ণ নির্বিশেষে কোটি কোটি প্রাণের কথা মনে রাখেন যারা হিটলারের জাত্যাভিমানের শিকার হয়ে অকালে ঝরে পড়েছে।

পড়ুন:  বিজ্ঞান ভাবনা (১১৮): যুদ্ধের অনির্বাণ শিখা -বিজন সাহা

সেক্টর গাজার এক হাসপাতালে আক্রমণে শত শত মানুষ মারা গেছে। এ নিয়ে চলছে অভিযোগ, পাল্টা অভিযোগ। ইসরাইল বলছে সে সময় তাদের কোন বিমান আকাশে ছিল না, এটা আসলে প্যালেস্টাইনের ছোট এক গ্রুপের কাজ যাদের রকেট লক্ষ্যভ্রষ্ট হয়ে হাসপাতালে পড়ে। ইউক্রেনে রাশিয়ার বিরুদ্ধে এসব অভিযোগ পশ্চিমা মাধ্যম সাধারণ মানুষকে খাওয়াতে পারলেও এখানে ব্যর্থ হয়েছে। কোন কোন রুশ যুদ্ধ বিশেষজ্ঞের মতে হামাস ও অন্য কোন প্যালেস্টাইনী গ্রুপের সেই শক্তি নেই। কারণ যে ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে সে জন্য ৫০০ কেজি থেকে এক টনের বোমা দরকার। আর সেটাকে বহন করার জন্য যে রকেট দরকার তার ওজন দুই থেকে চার টন। গাজার বর্তমান অবস্থায় সেটা কোন গ্রুপের পক্ষে করা সম্ভব নয়। তাছাড়া সেটা হলে বিস্ফোরণের স্থানে রকেটের ধ্বংসাবশেষ পাওয়া যেত, যেটা এখনও দেখানো হয়নি। ছোট রকেটের আক্রমণ ও পরবর্তীতে হাসপাতালে গ্যাস সিলিন্ডারের বিস্ফোরণের কথা বলা হচ্ছে। সেটা হলে ধ্বংসের গতি হত নীচ থেকে উপরের দিকে। এসব থেকে বল যায় যে এই মুহূর্তে একমাত্র ইসরাইলের এ ধরণের আক্রমণের ক্ষমতা আছে আর সেক্ষেত্রে সে আমেরিকান বোমা ব্যবহার করা হয়েছে যদিও এটা শুধুই ঘটনার তাত্ত্বিক বিশ্লেষণ, অভিযোগ নয়। তবে বিস্ফোরণ যেই ঘটাক না কেন এর ফলে যে সারাবিশ্বে ইসরাইল বিরোধী জনমত গড়ে উঠছে সেটা ঠিক। ইউরোপ, আমেরিকা সরকারি ভাবে ইসরাইলের পক্ষে কথা বললেও সাধারণ মানুষ সেটা আর গিলছে না। আরব বিশ্বের অনেক নেতাই বাইডেনের সাথে তাদের নির্ধারিত সাক্ষাৎ বাতিল করেছেন। এমনকি ইসরাইলের ভেতরের শান্তির জন্য চাপ বাড়ছে। শান্তির জন্য চাপ বাড়ছে পশ্চিমা বিশ্বেও। শোনা যায় আমেরিকার ইসরাইল নীতিতে খোদ হোয়াইট হাউসের অনেক মুসলিম কর্মচারীর মধ্যেও অসন্তোষ দানা বেঁধে উঠেছে। বেশ কিছুদিন হল বিভিন্ন দেশ আমেরিকার নাগপাশ থেকে বের হবার সুযোগ খুঁজছিল। ইউক্রেনের যুদ্ধ, বিশেষ করে রাশিয়ার উপর আরোপিত বিভিন্ন নিষেধাজ্ঞা সেটাকে গতি দেয়। এই যুদ্ধ আরব বিশ্বকে আমেরিকা থেকে আরও দূরে সরিয়ে দেবে, পশ্চিমা বিশ্বের আধিপত্যের পতনকে আরও ত্বরান্বিত করবে। সারাবিশ্বের শান্তিকামী মানুষের কাজ হবে খুব বেশি ক্ষতি হয়ে যাবার আগেই আমেরিকান প্রশাসন নামে পাগলা ঘোড়াটার লাগাম টেনে ধরা। তবে আমার মনে হয় যতক্ষণ না আমরা শিশুকে শিশু হিসেবে না দেখে, মানুষকে মানুষ হিসেবে না দেখে প্যালেস্টাইনি বা ইসরাইলি হিসেবে দেখব, মানুষকে ধর্ম, বর্ণ, জাতি দিয়ে বিচার করব, ততক্ষণ এ সমস্যা থেকে বেরুনোর কোন উপায় নেই। সমস্যা ছাইয়ের আগুনের মত জ্বলতেই থাকবে আর অনুকূল বাতাস পেলেই আবার ফনা তুলে দাঁড়াবে। আমরা সব সময়ই পশ্চিমে সমাধান খুঁজি, সব দেখে মনে হয় পশ্চিম আজ আর সমাধান নয়, পশ্চিম এখন নিজেই সারা বিশ্বের জন্য বিশাল এক সমস্যা।

দেশেদেশেযুদ্ধেবিশেষকরেশিশুদেরমৃত্যুদেখেঅনেকেরমনেইপ্রশ্নজাগে

শিশু ঈশ্বর
একটি শিশু যার কোন দেশ নেই, জাতি নেই, ধর্ম নেই
বা থাকলেও এসব সে জানে না, এসব নিয়ে তার মাথা ব্যথা নেই
মারা গেল গুলিবিদ্ধ হয়ে।
একটি গুলি যার নিজেরও কোন দেশ নেই, জাতি নেই, ধর্ম নেই
নিজের অনিচ্ছায় কেঁড়ে নিল এক তাজা প্রাণ।
একটা শিশু আর একটা গুলি – দুজনেই নিষ্পাপ।

তোমরা যারা ঈশ্বরে বিশ্বাস কর তাদের কী মনে হয়?
সেই শিশু গিয়ে জানতে চাইল ঈশ্বরের কাছে
কী অপরাধে তার জীবনের শুরুটাই শেষ হয়ে গেল।
ঈশ্বর নীরব। কি বলবেন তিনি?
কিন্তু শিশু নাছোড়বান্দা। বলল
তুমি যাদের বশ করেছ তাদের কাছে তুমি দায়বদ্ধ।
এই যে বড়রা ধর্মের নামে, তোমার নামে নিষ্পাপ আমাকে মারল
তাতে কি তোমার এতটুকু দায় নেই?
কিন্তু কী বলবেন ঈশ্বর? কী বলার আছে?
তিনি নিজেই আজ ভক্তদের কাছে জিম্মি,
বন্দী তিনি নিজ গৃহে।
একজন মানুষ – সে শুধুই মানুষ।
সে হিন্দু নয়, সে মুসলমান নয়, সে বৌদ্ধ নয়,
সে খ্রিষ্টান, ইহুদি কিংবা অন্য কিছু নয়।
সে অতি সামান্য এক মানুষ ।
ঈশ্বরের নামে, ধর্মের নামে মানুষ হত্য বন্ধ হোক।
তাতে তোমাদের ঈশ্বর লজ্জা পান,
তিনি অসহায়ের মত মাথা নিচু করে দাঁড়িয়ে থাকেন সদ্য মৃত
শিশুটির সামনে।
গবেষক, জয়েন্ট ইনস্টিটিউট ফর নিউক্লিয়ার রিসার্চ
শিক্ষক, রাশিয়ান পিপলস ফ্রেন্ডশিপ ইউনিভার্সিটি, মস্কো