বিজ্ঞান প্রযুক্তি

বিজ্ঞান ভাবনা (১১৮): যুদ্ধের অনির্বাণ শিখা

-বিজন সাহা

বিজন সাহা (ফাইল ফটো)

গতকাল রাতে ক্লাব থেকে ফিরতে না ফিরতেই গুলিয়া ক্ষোভের সাথে বলল,

– যদি এতই চায় তাহলে ওরা সবাইকে মেরে ফেললেই তো পারে! কেন নারী, শিশু, বৃদ্ধ আর নিরীহ মানুষদের নিয়ে এই মস্করা? এই উপহাস। বুঝলাম হামাস আক্রমণ করেছে, তাই বলে একটা দেশকে, দেশের সবাইকে ফাঁসির কাঠগড়ায় দাড় করাবে? সবাইকে অমানুষিক কষ্ট দিয়ে মারবে?

একটু অপ্রস্তুত হলেও বুঝলাম কথা হচ্ছে প্যালেস্টাইনকে নিয়ে। কিন্তু ওর গলার স্বর এমন যেন আমিই এ জন্যে দায়ী। গত কয়েকদিন হল রুশ টিভির খবর শুরু হচ্ছে এই যুদ্ধ নিয়ে। ইউক্রেনকে সরিয়ে ইসরাইল এখন প্রথম পাতায় চলে এসেছে। আসলে এখানে ইউক্রেনের খবর অনেক দিনই প্রথম পাতায় নেই। আগে আসে অর্থনৈতিক ক্ষেত্রে দেশের বিভিন্ন পদক্ষেপের কথা, তারপর ইউক্রেন। এখন ইউক্রেনকে সরিয়ে দিয়ে এসেছে ইসরাইল।

আরব-ইসরাইল সম্পর্ক রাশিয়ার জন্য খুবই স্পর্শকাতর। সোভিয়েত আমলে অবশ্য কোন রকম অনিশ্চয়তা ছিল না, সবাই জানত সোভিয়েত ইউনিয়ন আরবদের পক্ষে আর ইসরাইলের বিরুদ্ধে কথা বলবে, তবে এখন আর সেই পরিস্থিতি নেই। উল্লেখ করা যেতে পারে যে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় সারা বিশ্বে, বিশেষ করে ইউরোপে ইহুদীদের উপরে যে অত্যাচের নেমে এসেছিল আর সে কারণে ইহুদীদের জন্য একটা আলাদা রাষ্ট্র কায়েমের যে সিদ্ধান্ত নেয়া হয় তাতে স্তালিনের সার্বিক সমর্থন ছিল। সেই সময়ে কতগুলো সম্ভাব্য জায়গার মধ্যে বর্তমান ইসরাইল ছাড়াও ছিল ইথিওপিয়া আর রাশিয়ার নাম। অন্তত ছাত্রজীবনে আমাদের বৈজ্ঞানিক সাম্যবাদ পড়াতে গিয়ে সেটাই বলেছিলেন এক শিক্ষক। জারের রাশিয়ায় ইহুদীরা বিভিন্ন ভাবে অধিকার বঞ্চিত ছিল। উচ্চ শিক্ষার ক্ষেত্রে বৈষম্যের শিকার হত। এসব কারণে রাশিয়ার ইহুদীদের একটা বড় অংশ অক্টোবর বিপ্লব সমর্থন করে। বৈষম্যের শিকার ইহুদীদের জন্য তাই ১৯৩৪ সালে রাশিয়ার দূর প্রাচ্যে ভ্লাদিভোস্তকের পূর্বে বিরোবিজনকে রাজধানী করে গঠিত হয় ইহুদীদের জন্য স্বতন্ত্র এলাকা যা এখনও বিদ্যমান। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় সোভিয়েত ইউনিয়নের অন্যান্য জাতির সাথে ইহুদীরাও বীর বিক্রমে যুদ্ধ করে। আর সে কারণেই স্তালিন ইহুদি রাষ্ট্র গঠনের পক্ষে মত দেন। পরবর্তীতে সে দেশ আমেরিকার প্রভাব বলয়ে চলে গেলে আর সোভিয়েত সমর্থন প্রাপ্ত বিভিন্ন দেশ যেমন নাসেরের মিশর ইসরাইলের সাথে যুদ্ধে জড়িয়ে পড়লে রাশিয়া ও ইসরাইলের সম্পর্কের চরম অবনতি ঘটে। এছাড়া সোভিয়েত ইউনিয়ন থেকে ইহুদীদের ব্যাপক ভাবে ইসরায়েল চলে যাওয়া নিয়েও বিভিন্ন ধরণের সমস্যা দেখা দেয়। তাই সে সময় আরব ইসরাইল যুদ্ধে রাশিয়া বা সোভিয়েত ইউনিয়ন কোন পক্ষ নেবে তাতে কোন সন্দেহ ছিল না। বর্তমানে ইসরাইলে দশ লাখের মত মানুষ বাস করে যারা সাবেক সোভিয়েত ইউনিয়ন থেকে বিভিন্ন সময়ে এ দেশে পারি জমিয়েছে। এদের বেশির ভাগ রাশিয়া থেকে। এদের অনেকেই রাশিয়ার নাগরিক এবং এখনও রাশিয়া থেকে নিয়মিত পেনশন পাচ্ছেন। এদের সবাই যে রাশিয়াকে পছন্দ করে না বলে সেদেশে পাড়ি জমিয়েছে তা কিন্তু নয়। প্রচুর লোকজন সেখানে যায় উষ্ণতার খোঁজে। এটা তো আর গোপন নয় যে রাশিয়ার আবহাওয়া খুবই কঠোর। তাই অনেকেই চাকরি জীবন শেষ করে সেখানে যায় বাকি দিনগুলো উষ্ণ আবহাওয়ায় কাটাতে। সে দেশ তাদের গ্রহণ করে। আছে বিশাল রুশ ভাষাভাষী ডায়াস্পোরা। তাই ভাষাটাও সমস্যা নয়। এমনকি সেখানে তারা রুশ ভাষাতেই শুধু দৈনন্দিন জীবন যাপন করে না, সাহিত্য শিল্প এসব চর্চাও করে। উল্লেখ করা যেতে পারে যে এ দেশে মানে সোভিয়েত ইউনিয়ন বা রাশিয়ায় শিক্ষা, সাহিত্য, শিল্প ইত্যাদি ক্ষেত্রে প্রচুর ইহুদি কাজ করেন, করতেন। এক বন্ধুকে জিজ্ঞেস করায় বলেছিল যে এক সময়ে ইহুদীদের সব জায়গা থেকে তাড়িয়ে দেয়া হত। ব্যবসা বানিজ্যের তারা সফল হলেও প্রায়ই অন্যেরা সেসব লুট করে নিয়ে যেত। পরে তারা এই সিদ্ধান্তে আসে যে কোন স্থাবর সম্পত্তি বা টাকা পয়সা নয় একমাত্র শিক্ষাই তাদের রক্ষা করতে পারে। কারণ ধন সম্পদ অন্যেরা বিভিন্ন অজুহাতে কুক্ষিগত করতে পারে কিন্তু জ্ঞান সব সময়ই নিজের কাছে থেকে যায় আর সেটা দিয়ে পৃথিবীর যেকোনো দেশে কিছু একটা করে খাওয়া যায়। তাই ইহুদীরা আর যাই করুক না কেন পড়াশুনা সব সময়ই খুব গুরুত্বের সাথে করে। একই কথা বলা চলে তাদের সন্তানদের ক্ষেত্রে। যদি অন্যান্য জাতির সন্তানের পরিচয় হয় পিতৃ পরিচয়ে, ওদের হয় মাতৃ পরিচয়ে। তাই এমনকি ইহুদীদের সমস্ত পুরুষদের হত্যা করা হলেও, যা সাধারণত বিজয়ীরা করে থাকে, ইহুদীরা টিকে থাকবে। যাহোক, ইসরাইলে প্রচুর সংখ্যক সোভিয়েত ইহুদী বসবাস করে যাদের কয়েকগুন বেশী আত্মীয় স্বজন বাস করে রাশিয়ায়। তাই এখানে তাদের ব্যালেন্স করে চলতে হয়। প্রসঙ্গ ক্রমে বলে রাখি রাশিয়ায় যারা নিজেদের ইহুদি বলে পরিচয় দেয়, ইসরাইলে গিয়ে তারা রুশ বলে পরিচিত হয়। এই রুশ ভাষাভাষী ইহুদীরা ইসরাইলের রাজনীতিতে কখনও কখনও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। তাই আগে রাশিয়া যত সহজে প্যালেস্টাইনের পক্ষ নিতে পারত, এখন আর পারে না। ভাবতে হয় ইসরাইলে বসবাসকারী লাখ লাখ স্বদেশীদের কথা, ভাবতে হয় দেশে তাদের আত্মীয়দের কথা। অন্য দিকে রাশিয়ায় অর্থোডক্স খ্রিস্টান ছাড়াও প্রচুর মুসলিম, ইহুদী ও বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বী লোকজন বাস করে, বাস করে ধর্মীয় সম্প্রীতি বজায় রেখে। পশ্চিমা বিশ্ব সব সময়ই চায় ধর্মীয় ও জাতিগত প্রশ্ন বিভিন্ন ভাবে ব্যবহার রাশিয়া ভেতরে সমস্যা তৈরি করতে। তাই তাকে সব দিন বিবেচনায় নিয়েই পদক্ষেপ নিতে হয়।

এখনও পৃথিবী হলকস্টের কথা ভুলেনি, যখন শুধুমাত্র ইহুদি হবার কারণে লাখ লাখ মানুষকে হত্যা করা হয়েছিল। ইহুদীদের মানুষ হিসেবে গণ্য করা হত না। তাই আজ যখন ইসরাইলের এক মন্ত্রী ফিলিস্তিনিদের মানুষ হিসেবে গণ্য করতে অস্বীকার করে, লাখ লাখ ফিলিস্তিনিদের মৃত্যুর মুখে ঠেলে দেয়, তখন মনে হয় আবার সেই ভয়াবহ দিন ফিরে এসেছে, শুধু এবার ইহুদীরা বা সঠিক ভাবে বললে ইসরাইলের নেতারা অত্যাচারীর ভূমিকায়। তবে এতে নতুন কিছু নেই। এক সময় আমরা বলতাম পৃথিবীতে দুটো শ্রেণী আছে – শোষক ও শোষিত। এখন আছে পশ্চিমা বিশ্ব ও বাকিরা। যখন দনবাসের শিশুরা নিহত হয় তখন সেটা কারো চোখে পড়ে না, ইসরাইলের শিশুর মূল্য ভিন্ন। যখন ইউক্রেনের সেনারা বন্দী রুশ সেনাদের পায়ে গুলি করে হত্যা করে সেটা কারো চোখে পড়ে না, কিন্তু ইসরাইলের সেনারা বন্দী হলে তা নিয়ে তোলপাড় পশ্চিমা বিশ্ব। শুনলাম ক্যানাডার এক পত্রিকায় লিখেছে ইসরাইলের শিশুদের হত্যা করা হয়েছে আর ফিলিস্তিনি শিশুরা মারা গেছে। আসলে মানবতা, সাম্য এসব শুধুই বুলি – সাম্যে বিশ্বাস করতে হলে আগে অন্যদের মানুষ বলে স্বীকার করতে হয়। দনবাসের মানুষদের ইউক্রেনের নেতারা বলত অপূর্ণ মানুষ আর সেটা বলত পশ্চিমাদের ছত্রছায়ায়। জেলেনস্কি ভয়ে আছে যে এখন ইউক্রেন লাইম লাইটে থাকবে না। ভয়ের কিছু নেই। ইউক্রেন পশ্চিমা বিশ্বের বলির পাঁঠা, শেষ ইউক্রেনিয়ান না মরা পর্যন্ত ওরা এ যুদ্ধ চালিয়ে যাবে। তাই চাইলেও তার পালানোর উপায় নেই – সমাধিই হবে ইউক্রেন সমস্যার একমাত্র সমাধান। এই যুদ্ধে ইউক্রেন যুদ্ধের ছাপ দেখা যায়। ইউক্রেন যুদ্ধের মতই এখানেও ড্রোনের ব্যবহার উল্লেখযোগ্য। ইউক্রেনের কৌশল অনুসরণ করে হামাস আবাসিক এলাকাকে সামরিক ঘাঁটি হিসেবে ব্যবহার করছে। মারিওপলে যেমন আজভ, এখানে হামাস সাধারণ নাগরিকদের জিম্মি করে যুদ্ধ করছে। ড্রোনের ব্যবহারে যুদ্ধ আজকাল শুধু প্রযুক্তিগত ভাবে উন্নত হচ্ছে না, সস্তাও হচ্ছে। আরও লক্ষ্য করার বিষয় যে রাশিয়া ইউক্রেনে বেসামরিক স্থাপনা আক্রমণ না করার পরেও পশ্চিমা বিশ্ব রাশিয়ার দোষারোপ করছে, অথচ ইসরাইল যখন সামরিক বেসামরিক সব কিছুই আক্রমণ করছে মানবতার ঝান্ডাধারী পশ্চিমা বিশ্ব তাকে সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিচ্ছে। মানবতার নামে এর চেয়ে বড় অমানবিক কাজের উদাহরণ আর কী হতে পারে?

পড়ুন:  বিজ্ঞান ভাবনা (১১৯): শিশু ও ঈশ্বর - বিজন সাহা

শুধু ধর্মই নয়, রুশ জনমত তৈরিতে আরও কয়েকটি বিষয় কাজ করে – যেটাকে আমি বলব রুশদের জাতিগত বৈশিষ্ট্য। এখানে রুশ বলতে আমি এদেশে বসবাসকারী সমস্ত জাতিকেই বোঝাচ্ছি। এখানে চল্লিশ বছর অবস্থান করে দেখেছি বাচ্চাদের প্রতি এদের ভালোবাসা। যখনই বাচ্চাদের প্রতি অন্যায় করা হয় এরা তার প্রতিবাদ করে। শুধু শিশু নয়, নারী ও বৃদ্ধদের প্রতি যেকোনো অন্যায় এরা একই রকম ঘৃণার চোখে দেখে। আর আছে সন্ত্রাস। সেই জারের আমল থেকে শুরু করে এখন পর্যন্ত বিভিন্ন সময়ে এরা সন্ত্রাসবাদী আক্রমণের শিকার হয়েছে। ফলে এদের যেকোনো সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে আছে প্রবল ঘৃণা। মনে আছে ২০০১ সালের ১১ সেপ্টেম্বর নিউ ইয়র্ক আক্রান্ত হলে বিদেশী নেতাদের মধ্যে পুতিনই সর্বপ্রথম আমেরিকাকে সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিয়েছিলেন। তাই হামাসের নিরীহ মানুষের উপর আক্রমণে নারী, শিশু (গলা কেটে ৪০ জন শিশু হত্যার খবরের সত্যটা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে) ও বৃদ্ধরা আহত বা নিহত হবার ঘটনা এখানে ধিক্কৃত হয়েছে। আবার এর পাশাপাশি এদের আছে লেনিনগ্রাদের অবরোধের স্মৃতি। ৯০০ দিন অবরোধে থাকা লেনিনগ্রাদে লাখ লাখ মানুষ অনাহারে, অর্ধাহারে মৃত্যুবরণ করেছিল। তাই ইসরাইল যখন ঘোষণা দিয়েছে সেক্টর গাজা অবরোধের, রাশিয়ার মানুষ সেটার নিন্দা জানাতে ভুলেনি। এই অবরোধ মানে গাজায় বিদ্যুৎ, জল – এসব সরবরাহ প্রায় বন্ধ। আর একারণেই গুলিয়ার এই ক্ষোভ।

স্বাভাবিক ভাবেই প্রশ্ন চলে আসে এই আক্রমণে কার লাভ? কেন এই আক্রমণ? যদিও অন্য যেকোনো সময়ের চেয়ে হামাস এবার ইসরাইলের অনেক বেশি ক্ষতি করতে পেরেছে, তারপরেও যেটা সত্য তা হল, এটা দিয়ে আর যাই হোক ইসরাইলে পরাজিত করা যাবে না, বরং তাকে হিংস্র করে তোলা যাবে। আর এতে মারা যাবে হাজার হাজার সাধারণ মানুষ যার বেশির ভাগ ফিলিস্তিনি। তাহলে? আমেরিকা যেমন নিজ স্বার্থে বিভিন্ন সময় তালেবান, আল কায়েদা, ইসলামিক স্টেট ইত্যাদি গড়ে তুলেছিল। অনেকের ধারণা ইসরাইলও একই ভাবে পিএলওর ক্ষমতা হ্রাস করতে হামাস তৈরি করেছিল। আর যদি তৈরি নাও করে হামাসকে নিজেদের স্বার্থে ব্যবহার করেছিল। ডিভাইড অ্যান্ড রুল – ইংল্যান্ডের এই টেকনোলোজি বিভিন্ন সময় বিভিন্ন দেশ ব্যবহার করেছে, করছে। তবে ই আক্রমণ হঠাৎ করে হয়নি, ছিল দীর্ঘ প্রস্তুতি। প্রশ্ন জাগে মাসাদ বা সিআইএ এটাকে কীভাবে এড়িয়ে গেল বা স্বেচ্ছায় সেটা করল কি না। ইউক্রেনে জয় সুদূর পরাহুত। আভ্যন্তরীণ রাজনীতিতে বাইডেনের বাজারদর মন্দা। ইউক্রেন থেকে চোরা পথে বিভিন্ন দেশে পশ্চিমা অস্ত্র পাচার হচ্ছিল সে খবর শুধু রুশ মাধ্যম নয় পশ্চিমা অনেক মাধ্যমই প্রকাশ করেছে। হামাস যে অস্ত্র ব্যবহার করে ইসরাইল আক্রমণ করল তার অনেকটাই পশ্চিমা। কথা হল সেটা কোত্থেকে আসা। আমেরিকা যে অস্ত্র রেখে আফগানিস্থান থেকে পালিয়েছিল সেখান থেকে এটা এসেছে নাকি ইউক্রেন থেকে। এছাড়া বাল্টিক সাগরে পাইপ লাইনে বিস্ফোরণ ঘটেছে। এ নিয়ে পশ্চিমা বিশ্ব রাশিয়াকে দোষারোপ করছে। ফিনল্যান্ড, পোল্যান্ডে ন্যাটোর মহড়া চলছে। এর মানে বাল্টিক সাগর থেকে কৃষ্ণ সাগর হয়ে মধ্যপ্রাচ্য পর্যন্ত সব জায়গায় বাজছে যুদ্ধের দামামা। ইউরোপ, আমেরিকার বিভিন্ন দেশের ক্ষমতাসীনদের প্রতি জন সমর্থন কমছে। এসব কি জন সমর্থন ফিরে পাবার চেষ্টা? অথবা এই সুযোগে গাজার চ্যাপ্টার পুরোপুরি বন্ধ করার ইসরাইলী নীল নকশা এটা? যুদ্ধে কেউ জেতে, কেউ হারে – তারপর আলোচনার টেবিলে বসে সমঝোতা করে। রাজনীতিবিদরা কোলাকুলি করে। কিন্তু জনগণ? সাধারণ মানুষ? এই দল সব সময়ই হারে, হারে বিদেশী হানাদারদের কাছে, হারে দেশীয় ক্ষমতাসীনদের কাছে। দুই দিন আগে হোক আর দুই দিন পরে হোক, এই যুদ্ধ শেষ হবে, কিন্তু যে মা তার সন্তান হারিয়েছে, যে শিশু হারিয়েছে তার মা বা বাবাকে, যে স্ত্রী হারিয়েছে তার স্বামীকে – তাদের যুদ্ধ কোন দিনই শেষ হবে না, তাদের যুদ্ধ শেষ হয় না। পৃথিবীতে যুদ্ধটাই চিরস্থায়ী আর শান্তি ক্ষণস্থায়ী, সাময়িক। পৃথিবীর ভাগ্য বিধাতারা যখন যুদ্ধ যুদ্ধ খেলতে খেলতে ক্লান্ত হয়ে পড়ে তখন যুদ্ধ বিরতি ঘোষণা করে, ঠিক হিংস্র প্রাণীরা যেমন শিকার শেষে খেয়ে ঘুমুতে গেলে নিরীহ প্রাণীদের জীবনে সাময়িক স্বস্তি ফিরে আসে। তবে হিংস্র প্রাণীরা শুধু নিকট ভবিষ্যতের কথা ভেবে শিকারে নামে আর মানুষ ভাবে পরবর্তী কয়েক প্রজন্মের কথা, বড় বড় মানুষ চিরদিনের জন্য নিজের নাম লেখাতে চায় পৃথিবীর ইতিহাসে। তাই ওদের যুদ্ধ যুদ্ধ খেলাটাও প্রায় বিরতিহীন ভাবেই চলে।

গবেষক, জয়েন্ট ইনস্টিটিউট ফর নিউক্লিয়ার রিসার্চ
শিক্ষক, রাশিয়ান পিপলস ফ্রেন্ডশিপ ইউনিভার্সিটি, মস্কো