চলমান সংবাদ

নতুন কারিকুলামের দেড় কোটি বই আসছে চট্টগ্রামে

নতুন কারিকুলামে মুদ্রিত প্রায় দেড় কোটি বই আসতে শুরু করেছে চট্টগ্রামে। বছরের প্রথম দিকেই এসব বই শিক্ষার্থীদের হাতে তুলে দেয়া হবে। মাধ্যমিক পর্যায় থেকে বিভাগ বিভাজন তুলে দেয়ায় সব পাঠ্যবই সকল শিক্ষার্থীকেই পড়তে হবে। একাদশ শ্রেণিতে গিয়ে বিজ্ঞান মানবিক কিংবা ব্যবসা শিক্ষায় শিক্ষার্থীদের বিভাজন হবে। নয়া কারিকুলামের আওতায় একেবারে নতুন ধাঁচের জীবনমুখী, পেশামুখী, যুগোপযুগী এবং আন্তর্জাতিক মানের শিক্ষার সাথে সমন্বয় করে নয়া কারিকুলাম তৈরি এবং তার ভিত্তিতে নতুন বই ছাপানো হয়েছে। ৬ষ্ঠ থেকে দশম ১০ম শ্রেণি পর্যন্ত সব শিক্ষার্থীকেই অভিন্ন দশটি বই পড়তে হবে।

জেলা শিক্ষা অফিস সূত্র জানায়, চট্টগ্রামে মাধ্যমিক পর্যায়ে ৩ লক্ষাধিক শিক্ষার্থী রয়েছে। বাংলা এবং ইংলিশ মিডিয়ামের পাশাপাশি সাধারণ শিক্ষা, কারিগরি শিক্ষা এবং মাদ্রাসার এসব শিক্ষার্থীকে সরকার নতুন বই প্রদান করে। এবারও যথারীতি নতুন বই প্রদানের তোড়জোড় শুরু হয়েছে। ইতোমধ্যে ঢাকা থেকে চট্টগ্রামের প্রয়োজনীয় বই আসতে শুরু করে। গত মাসের শেষ সপ্তাহে চট্টগ্রামে নয়া বই’র প্রথম চালান পৌঁছায়। ইতোমধ্যে বিপুল সংখ্যক বই চট্টগ্রামের শহর এবং উপজেলা পর্যায়ের সরকারি স্কুলসহ বিভিন্ন স্থানে মজুদ করা হয়েছে। আগামী ১৫ নভেম্বরের মধ্যে চট্টগ্রামের বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের ৬ষ্ঠ থেকে ৯ম শ্রেণির ১ কোটি ৪৯ লাখ ৬০ হাজার ৩৩১টি বই এসে পৌঁছে যাবে। বছরের প্রথম দিকেই উৎসবমুখর পরিবেশে নতুন বই বিতরণ করা হবে বলেও জেলা শিক্ষা অফিস সূত্র জানিয়েছে।

জেলা শিক্ষা অফিসার উত্তম খীসা গতকাল জানান, বই আসতে শুরু করেছে। আমরা যত্ন সহকারে বইগুলো সংরক্ষণ করছি। আগামী বছরের শুরুতে এসব বই যাতে শিক্ষার্থীদের হাতে তুলে দিতে পারি সেই লক্ষ্যে আমরা অ্যাকশন প্ল্যান তৈরি করছি। তিনি আগামী বছর থেকে নতুন কারিকুলামে শিক্ষার্থীরা জীবনমুখী এবং পেশামুখী শিক্ষা লাভ করবে বলে মন্তব্য করেন। তিনি বলেন, নতুন কারিকুলামে একজন শিক্ষার্থীকে জীবনমুখী মানুষ হিসেবে গড়ে তোলার প্রচেষ্টা রয়েছে।

তিনি জানান, দেশে এ পর্যন্ত তিনটি কারিকুলাম হয়েছে। ৮৫ সালে প্রণীত হয় প্রথম কারিকুলাম, ২০১২ সালে দ্বিতীয় কারিকুলাম এবং ২০২১ সালে তৃতীয় কারিকুলাম প্রণয়ন করা হয়। সর্বশেষ এই কারিকুলাম অনুসরণ করেই শিক্ষা ব্যবস্থা এবং পাঠদান পদ্ধতি গড়ে তোলা হচ্ছে। এতে মাধ্যমিক পর্যায়ে আর কোন বিভাগ থাকছে না। প্রতিটি শিক্ষার্থীকে সমান গুরুত্ব দিয়ে শিক্ষা ব্যবস্থায় আমূল পরিবর্তন আনা হচ্ছে। শহর এবং গ্রামাঞ্চলের কোন স্কুলেই ইচ্ছে মাফিক শিক্ষার্থী ভর্তি করাতে পারবে না বলে উল্লেখ করে তিনি বলেন, স্কুলের একটি শ্রেণিতে এক সেকশনে সর্বোচ্চ ৬০জন শিক্ষার্থী ভর্তি করাতে পারবে। কোন স্কুল একাধিক সেকশন খুলতে চাইলে আগেভাগে অনুমোদন নিতে হবে। এই অনুমোদন প্রদানের ক্ষেত্রে স্কুলের অবকাঠামোগত বিভিন্ন দিকের পাশাপাশি শ্রেণি কক্ষের আকার আয়তনও পরীক্ষা করা হবে। একটি শ্রেণিকক্ষে ৬০ জন শিক্ষার্থী যেনো সুষ্ঠুভাবে বসে ক্লাস করতে পারে স্কুলগুলোকে তা নিশ্চিত করতে হবে। ভর্তি কার্যক্রম পুরোপুরি অনলাইনে সম্পন্ন হবে, যাতে কোন ধরণের গোঁজামিলের সুযোগ না থাকে।

তিনি বলেন, গণমুখী, জীবনমুখী, পেশামুখী এবং বাস্তবভিত্তিক একটি শিক্ষা ব্যবস্থা গড়ে তোলার জন্য সরকারের নেয়া নানা পদক্ষেপ বাস্তবায়নের যে অ্যাকশন প্ল্যান তারই ধারাবাহিকতায় এই নতুন বই। মহান মুক্তিযুদ্ধ, স্বাধীনতা, জাতীয়তাবোধের চেতনা এবং বঙ্গবন্ধুর দর্শনভিত্তিক শিক্ষায় একটি শিক্ষিত জনগোষ্ঠী গড়ে তুলতে বইগুলো প্রণিত হয়েছে। মাধ্যমিক পর্যায়ে বিভাগ বিভাজন না থাকায় সব শিক্ষার্থীকেই এসব বই পড়তে হবে বলেও তিনি উল্লেখ করেন।

নতুন শিক্ষাক্রমের আলোকে ষষ্ঠ থেকে দশম শ্রেণি পর্যন্ত শিক্ষাথীদের বাংলা, ইংরেজি, গণিত, বিজ্ঞান, জীবন ও জীবিকা, ডিজিটাল প্রযুক্তি, শিল্প ও সংস্কৃতি, ইতিহাস ও সামাজিক বিজ্ঞান, স্বাস্থ্য সুরক্ষা, ধর্ম ও নৈতিক শিক্ষা (প্রত্যেকের ধর্ম অনুযায়ী) নামের ১০টি বই পড়তে হবে। বর্তমানে মাধ্যমিকের শিক্ষার্থীদের ১৪টি বই পড়তে হয়। বর্তমানে অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত কয়েকটি বিষয়ে অভিন্ন বই থাকলেও নবম শ্রেণিতে বিভাগ বিভাজন হয়ে যায়। নতুন শিক্ষাক্রমে মাধ্যমিক আর কোন বিভাগ বিভাজন থাকছে না। সব শিক্ষার্থীকেই সব বই–ই পড়তে হবে। আসছে বছরের প্রথম দিন থেকেই এসব বই শিক্ষার্থীদের হাতে তুলে দেয়া হবে বলেও জানিয়েছেন জেলা শিক্ষা কর্মকর্তা উত্তম খীসা।

# ২০/১০/২০২৩, চট্টগ্রাম