বিজ্ঞান প্রযুক্তি

বিজ্ঞান ভাবনা (৯৯): হিন্দু সম্পত্তিতে মেয়েদের অধিকার 

– বিজন সাহা

বাংলাদেশে হিন্দু সম্পত্তিতে মেয়েদের অধিকার নিয়ে অনেক কথাবার্তা হচ্ছে। পক্ষে বিপক্ষে বিভিন্ন মতামত আসছে। কিন্তু সমস্যার যুক্তিসঙ্গত সমাধান যেটা হতে পারত সেটা নিয়েই বিশেষ করে হিন্দু অধিকার রক্ষায় যাদের অগ্রণী ভূমিকা রাখার কথা তারা গরিমসি করছে বিভিন্ন অজুহাতে। আমাদের মনে রাখতে হবে যে প্রতিটি মানুষ বিভিন্ন সংগঠনের সদস্য। সে পরিবারের সদস্য, সমাজের সদস্য, সে দেশের নাগরিক ইত্যাদি। তার মানে তাকে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের নিয়ম কানুন মেনে চলতে হয়। আর এক্ষেত্রে দেশের আইন অন্যান্য আইনের ঊর্ধ্বে। তাই অন্যান্য নিয়ম যেমন পারিবিরিক, সামাজিক, ধর্মীয় ইত্যাদি নিয়ম দেশের আইনের সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ হতে হবে। যদি ভিন্ন রকম কিছু হয় তাহলে সেসব বিষয় বিশেষ আইন দ্বারা নিয়ন্ত্রণ করা হয়। আমাদের সব দেশে ধর্মীয় রীতিনীতি এই বিশেষ আইনের মধ্যে পড়ে। কিন্তু কোন ধর্মীয় আইন যদি দেশের নাগরিকের নাগরিক অধিকার খর্ব করে তাহলে?

প্রায় নয় বছর আগে ১৩ মে ২০১৪ এ নিয়ে ফেসবুকে ও নিজের গুগল ব্লগে লিখেছিলাম (https://bijansahawhispers.blogspot.com/2014/05/blog-post_2050.html), এখনও মনে করি বাবার সম্পত্তিতে মেয়েদের অধিকার থাকা উচিৎ। কিন্তু যারা এর বিরোধিতা করছে তাদের কথাও শোনা দরকার। আমাদের সমস্যা হচ্ছে, আমরা প্রায়ই নিজের যুক্তিটাকে ঠিক মনে করে অন্যদের কথা শুনতে চাই না বা তাতে গুরুত্ব দিতে চাই না। আমি বলব না যে যারা বিরোধিতা করেছেন তারা ঠিক, কিন্তু কেন বিরোধিতা করছেন সেটা যদি বোঝার চেষ্টা করি তাহলে হয়তো বিতর্ক করা বা মতৈক্যে আসা একটু সহজ হয়। মনে রাখা দরকার যে আইন প্রণয়ন করা আর সেটার প্রয়োগ করা এক নয়। অনেকেই ভাবতে পারেন আগে আইন তো হোক, তারপর এসব দেখা যাবে। কিন্তু যদি আইনের অপব্যবহারের সুযোগ থাকে তখন? যারা আইন সংশোধনের বিপক্ষে বলছেন তারা নারীর অধিকারের চেয়েও এর অপব্যবহারের উপর জোর দিচ্ছেন। যেমন এর ফলে সংখ্যাগুরু সম্প্রদায়ের ছেলেরা হিন্দু মেয়েদের বিয়ে করবে শুধুমাত্র সম্পত্তি দখলের জন্য। এই আশঙ্কা তারা করে এ কারণে যে দেশে প্রতিনিয়ত সম্পত্তি দখলের ঘটনা ঘটছে। শত্রু সম্পত্তি বিষয়ক আইন সংশোধন করা হলেও ভূমি দখলের ঘটনা তেমন একটি কমেনি। ফলে এদের অনেকেই মনে করে মেয়েদের সম্পত্তিতে অধিকার দিলে এ ধরণের ঘটনা আরও বাড়বে। যদি আইনের সঠিক প্রয়োগ হত, যদি সরকার বা বিচার বিভাগ আইন প্রয়োগের ক্ষেত্রে পক্ষপাতদুষ্ট না হত আজ হয়তো এ ধরনে আশঙ্কা দেখা দিত না। এটা গেল বাহ্যিক ব্যাপার। ধরুন বাবার সম্পত্তিতে মেয়েদের অধিকার দেয়া হল। তারপর? আমাদের দেশে সাধারণত বিয়ে হয় পরিবারের আয়োজনে।  এর মধ্য দিয়ে সম্পূর্ণ অপরিচিত ছেলে ও মেয়ে তাদের নতুন জীবন শুরু করে। অধিকাংশ ক্ষেত্রে দুজনে দুই ভিন্ন এলাকার বাসিন্দা। অধিকাংশ বাবা মার বসত ভিটে ছাড়া তেমন কিছু নেই। এখন যদি বিয়ের পর মেয়ে নিজের সম্পত্তি দাবি করে তাহলে কি বাড়ি বিক্রি করতে হবে? বাড়ির অন্যরা থাকবে কোথায়? এটা ঠিক দুই ভাইও ভিন্ন হবার সময় এটা করতে পারে। সোভিয়েত ইউনিয়নে এ রকম ব্যবস্থা ছিল। ছেলেমেয়ে বাবামার বাড়ির উত্তরাধিকার পেত। বিয়ের পরে তারা যদি এক বাসায় বাস করতে না পারত, সেই বাড়ি বদলিয়ে তাদের আলাদা আলাদা বাসা দেওয়া হত, না হলে একই বাসায় দুটো পরিবার বাস করত। এতে সবাই ক্ষতিগ্রস্থ হত। ইতিহাস সেটাই বলে। তাই সম্পত্তি দিলেই হবে না, এর পরবর্তী ভাগাভাগি যাতে আরও করুণ পরিণতি ডেকে না আনে সে বিষয়ে ভাবতে হবে। অন্যদিকে সম্পত্তির লোভে বরপক্ষ যাতে কনের উপর চাপ সৃষ্টি না করে সেটাও নিশ্চিত করতে হবে। কেননা আমাদের দেশে পারিবারিক নির্যাতনের অন্যতম প্রধান কারণ যৌতুক। মেয়েদের চাপ দেওয়া হয় বাবার বাড়ি থেকে টাকা আদায় করতে আর এর ফলে হত্যা, আত্মহত্যা এ ধরণের ঘটনা প্রায়ই ঘটে। আমাদের মনে রাখতে হবে এই আইনের মূল উদ্দেশ্য অধিকার রক্ষা করা, সবার অবস্থার উন্নতি করা। কন্যার সাথে সাথে স্ত্রীর অধিকারের কথাও ভাবা দরকার, কেননা অনেক ক্ষেত্রেই স্বামীর অকাল মৃত্যুর পর স্ত্রী সমস্ত কিছু থেকে বঞ্চিত হয়ে পথে নামে যদি না তার ছেলে সন্তান থাকে। এতে বাঁধা আসবে, কিন্তু রাষ্ট্রকে দায়িত্ব নিয়েই এই আইন পাশ করতে হবে ও তার সঠিক প্রয়োগ নিশ্চিত করতে হবে। কারণ রাষ্ট্র যদি তার নাগরিকদের অধিকার নিশ্চিত না করে অন্য কেউ সেটা পারবে না। বলা হয়ে থাকে বর্তমান বাংলাদেশের হিন্দুদের সংখ্যা কমবেশি ৮%। দেশের জনসংখ্যা প্রায় ১৭ কোটি। এর অর্থ প্রায় ১ কোটি ৩৬ লক্ষ হিন্দু যার অর্ধেক নারী, আর সেই সংখ্যা ৬৮ লাখ। পৃথিবীতে অনেক দেশ আছে যেখানে মোট জনসংখ্যা এর চেয়ে কম। রাষ্ট্র কি পারে এই বিশাল সংখ্যক নাগরিকের ভাগ্য এড়িয়ে যেতে? একথা তো কেউ বলতে পারবে না যে হিন্দু সমাজের নারীরা বঞ্চিত নয়। তাই রাষ্ট্রের নিজের স্বার্থেই এটা করা দরকার। রাষ্ট্র তার সমস্ত নাগরিকের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে বাধ্য আর সেটা শুধু অন্য সম্প্রদায়ের হাত থেকেই নয়, সম্প্রদায়ের আভ্যন্তরীণ অনিয়মের হাত থেকেও।

প্রশ্ন এসেছে বিয়ের রেজিস্ট্রেশন নিয়ে। আমরা এখন আধুনিক যুগে বসবাস করি। যখন মানুষের চলাফেরার গন্ডি ছোট ছিল, যখন বিবাহবিচ্ছেদ বলে তেমন কিছু ছিল না বা থাকলেও তা নগণ্য ছিল তখন রেজিস্ট্রি ছাড়াও হয়তো চলা যেত। তাছাড়া যদি বিয়ের সরকারি কোন ডকুমেন্ট না থাকে তাহলে স্ত্রী বা সন্তান সম্পত্তির অধিকার দাবি করবে কিভাবে, রাষ্ট্রই বা তাদের পাশে দাঁড়াবে কিসের ভিত্তিতে? উল্লেখ করা যেতে পারে যে ইউরোপের অনেক দেশেই লিভ টুগেদারের সিস্টেম আছে। দু’ জন লোক একে অন্যকে ভালোবাসে এক সাথে থাকে, সন্তান সন্তুতির জন্ম দেয়, এমনকি জীবন কাটিয়ে দেয়। তবে সেখানেও উত্তরাধিকার প্রশ্নে, সম্পত্তির প্রশ্নে কথা থেকে যায়। এমনকি ধর্মীয় নিয়মে বিয়ে হলেও সরকারি রেজিস্ট্রেশন না থাকলে স্বামী বা স্ত্রী একে অন্যের সম্পত্তি দাবি করতে পারে না। ধরুন আপনি পড়াশুনা করলেন, জ্ঞান অর্জন করলেন, এমনকি পরীক্ষায় পাশ করলেন – কিন্তু যতক্ষণ আপনার হাতে সার্টিফিকেট না আসছে এ সবই মুল্যহীন, অন্তত চাকরির ক্ষেত্রে। একই কথা বলা চলে জমি জমার ক্ষেত্রে। কোন জমি যত দিনই আপনার অধিকারে থাকুক না কেন দলিল যদি না থাকে সে জমি আপনার নয়। মেয়েদের পাসপোর্টে অভিভাবক হিসেবে পিতা বা স্বামীর নাম উল্লেখ থাকবে অথচ সেটা প্রমাণের কোন উপায় থাকবে না তা কি করে হয়। রেজিস্ট্রি, তা সে সন্তান জন্মের হোক আর বিবাহের হোক বর্তমান যুগে একান্তই আবশ্যিক। তাছাড়া বিবাহ বিচ্ছেদ না করে বউকে বাপের বাড়ি পাঠিয়ে নতুন বিয়ে করার ঘটনা কম নয়। বিয়ের সার্টিফিকেট না থাকা ব্যাভিচারের জন্ম দেয়। আদালত মুখের কথায় বিশ্বাস করে না, সে চায় ডকুমেন্ট। আমরা যদি জীবনের সমস্ত ক্ষেত্রেই বিভিন্ন ডকুমেন্ট ব্যবহার করতে বাধ্য হই, বিবাহ রেজিস্ট্রি করতে এত আপত্তি কেন? যদি বিয়ের সার্টিফিকেট না থাকে বিবাহ বিচ্ছেদ কিভাবে হবে? কিভাবে একজন নারী তার জীবন নতুন করে গড়ে তুলবে? আপনার সন্তানকে যখন বিদেশে পাঠান, ছেলের বৌ যখন বিদেশে যেতে চায় আপনি কিন্তু বাধ্য হন সেটা প্রমাণ করতে আর প্রমাণ করেন ম্যারেজ সার্টিফিকেট দেখিয়ে। তাই যুগের সাথে তাল মিলিয়ে চলতে হলে আপনাকে এসব করতেই হবে। তবে এটা বলতে গিয়ে আমাদের আরেকটা কথা মনে রাখতে হবে। এতদিন পর্যন্ত বিয়ের রেজিস্ট্রেশন মানুষ করত ব্যক্তিগত উদ্যোগে, নিজেদের প্রয়োজনে। মানুষ সাধারণত খুবই কনজারভেটিভ। সহজে সে পরিবর্তন মেনে নেয় না। একজন শিশুকে আমরা সকালে ঘুম থেকে উঠতে শিখাই, ব্রেকফাস্ট করতে শিখাই। প্রথম দিকে এটা রুটিন কাজ হলেও পরে সেটা অভ্যাসে পরিণত হয়। সামাজিক রীতিনীতিও তাই। তাই সে যতটা না নতুন নিয়মকে ভয় পায় তার চেয়ে বেশি ভয় পায় নিজেকে বদলাতে, অভ্যেস বদলাতে, ভয় পায় অজানাকে। আর এতে ইন্ধন যোগায় সামাজিক পরিস্থিতি। যে দেশে ঘুষ ছাড়া এক টেবিল থেকে অন্য টেবিলে কাগজ স্থানান্তরিত করা যায় না সেখানে কোন ঝামেলা ছাড়াই রেজিস্ত্রেশন করা যাবে সেই গ্যারান্টি কে দেবে? হয়তো এই ভয় থেকেও অনেকেই বিপক্ষে বলে। কারণ এটা যখন আইনে পরিণত হবে, মানুষ বাধ্য হবে রেজিস্ট্রেশন করতে আর এই ফাঁকে কত লোক কত ভাবে যে অতিরিক্ত ইনকামের চেষ্টা করবে কে জানে? তাই আইন করার সাথে সাথে স্বচ্ছ ভাবে সেই আইন প্রয়োগের ব্যবস্থা না করলে দুর্নীতির আরেকটা খুচরা দোকান যে খোলা হবে না সেটা কে বলবে? তাই বিবাহ ও সম্পত্তি সংক্রান্ত আইন প্রণয়নের সাথে সাথে এর সঠিক ও স্বচ্ছ প্রয়োগের ব্যবস্থা না করতে পারলে সমস্যা বাড়বে বই কমবে না।

পড়ুন:  বিজ্ঞান ভাবনা (১০০): কাউন্টার অ্যাটাক - বিজন সাহা  

তবে শুধু সরকারের উপর সব কিছু ছেড়ে দিয়ে বসে থাকলেই চলবে না। যারা গেল গেল করে সব কিছুর বিরোধিতা করেন তারা কি এ ছাড়া আর কিছুই করতে পারেন না? হিন্দু সমাজের মূল সমস্যা বাইরে নয়, ভেতরে। তাই এদের আগে ভিতরের সমস্যা সমাধান করতে হবে। প্রতিরক্ষা যুদ্ধের সময়ে খুবই গুরুত্বপূর্ণ, তবে বেশির ভাগ সময় আমরা যুদ্ধ করি না, তাই বেশি গুরুত্বপূর্ণ সমাজকল্যাণ, আভ্যন্তরীণ শান্তি শৃঙ্খলা এসব। কিন্তু আমাদের ভেতরে কি সেটা আছে? সমাজে বিভিন্ন অসাম্য দেখে সেটা মনে হয় না। তাই প্রথমেই দরকার (ক) সমাজের ভিতরে বিভিন্ন গোষ্ঠির মধ্যে যে বৈষম্য বিরাজমান তা দূর করা; (খ) সামাজিক ভাবে মেয়েদের অধিকার প্রতিষ্ঠা করা; (গ) হিন্দু সমাজে নতুন রক্ত আমদানী করা। ইতিহাস ঘাঁটলে দেখা যাবে হিন্দু সমাজ বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন দেশ থেকে আসা বিভিন্ন মতবাদ অনায়াসে গ্রহণ করেছে। এমনকি বহু-ঈশ্বরের ধারণা মনে হয় বিভিন্ন বিশ্বাসে বিশ্বাসী লোকজনের মিলনের ফল। হিন্দু ধর্ম ত্যাগ করে মানুষ অন্য ধর্ম গ্রহণ করে সেসব ধর্মের সাম্যের আবেদনের কারণে আর হিন্দু ধর্মের আভ্যন্তরীণ অসাম্যের কারণে। আপনি বর্ণ বৈষম্য, জাতিভেদ এসব প্রশ্রয় দেবেন আবার ঐক্যের কথা বলবেন সেটা তো হয় না। তাই জাতপাতের যে সামাজিক বিধি আছে সেটাকে ঝেটিয়ে বিদায় করতে হবে। জাতপাত নয়, মানুষকে সবার আগে মূল্য দিতে হবে। এবার আসি মেয়েদের কথায়। মেয়ে – কে সে? জীবনের প্রথম মহিলা, এটা মা। তার পর বোন। এরপর স্ত্রী আর সব শেষে কন্যা। আমরা কি কখনো ভেবে দেখি, এই যে মহিলারা, যারা আমাদের সব চেয়ে আপন জন, যাকে ছাড়া আমাদের জন্ম হতনা, হতনা আমাদের বংশ রক্ষা, তারা কতটা অসহায়? হিন্দু আইনে তারা কোন কিছুরই অধিকার পান না, না মা হিসেবে, না স্ত্রী হিসেবে, না কন্যা হিসেবে। আমরা কি পারি না নিজেরা এটার পরিবর্তন করতে? আমরা কি পারি না বলতে যে আমাদের মত মেয়েরাও বাবার সম্পত্তির ভাগ পাবে? তাহলে হয়তো যৌতুক ব্যাপারটার গুরুত্ব কমে যাবে। যারা লাভ জিহাদের কথা তুলছেন তারা কি ভেবেছেন কেন এমন হয়? কেন আপনারা নিজেদের উদ্যোগে যৌতুক প্রথা বাতিল করতে পারেন না, জাতপাতের বিচার না করে বিবাহযোগ্যা মেয়েকে গ্রহণ করতে পারেন না? আপনারা একদিকে বিভিন্ন ভাবে হাজারটা ফাঁদ পেতে রাখবেন মেয়েদের বিয়ে দেয়া বাবামার জন্য সবচেয়ে বড় দুশ্চিন্তার কারণ হয়ে দাঁড়ায় আবার এই আপনারাই প্রশ্ন তুলবেন কেন আপনাদের মেয়েরা ভিন্ন সম্প্রদায়ের ছেলেদের বিয়ে করে – সেটা কি করে হয়? মানুষ ভিন দেশে যায় দেশে কাজকর্ম বা উপযুক্ত মর্যাদা না পেলে। এটাও সেই নিয়ম ধরেই হয়। আগে নিজেদের ছেলেদের উপযুক্ত করে গড়ে তুলুন, তাদের যৌতুক না নিয়ে ও জাতপাতের বিচার না করে বিয়ে করতে উৎসাহিত করুন, দেখবেন আপনাদের ধারণা কতা অমুলক। হিন্দু সমাজে বাস করলেও আমরা আজ বিশ্বমানবের একটা অংশ। সেটা ভেবে হলেও বিবাহ ধর্মীয় নীতিতে হলেও তার আইনগত রূপ দিতে হবে রেজিস্টির মাধ্যমে। কেননা ধর্মীয় বিবাহে দায়বদ্ধতা শুধুই মৌখিক, তা পালন করা না করা নির্ভর করে বিবেকের উপরে, আর আজ কাল এটার খুবই অভাব। এ জন্যে সরকারের অপেক্ষা না করে নিজেদের অগ্রসর হওয়া উচিৎ। আইন হবে কিনা সে প্রশ্ন নয় – দাবি তুলুন পিতা ও স্বামীর সম্পত্তিতে নারীর অধিকার কায়েম করার আর যাতে সেই আইনের প্রয়োগ স্বচ্ছ ও নিষ্কণ্টক হয়, এই আইনকে ব্যবহার করে কেউ যাতে বেআইনি ভাবে আপনাদের ঠকাতে না পারে সেটা নিশ্চিত করার জন্যেও দাবি তুলুন। একই কথা সরকারের জন্যও খাটে। যেহেতু দেশের স্বার্থেই এ ধরণের আইন প্রণয়ন করা দরকার সরকারকেও নিজের কাজ দিয়েই বোঝাতে হবে যে সে এই আইন শুধু প্রণয়ন নয়, তার সঠিক প্রয়োগের ব্যাপারেও খুবই আন্তরিক। ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত করার মিথ্যে অজুহাতে যারা অন্যায় ভাবে হাজতে বা কারাগারে আছে তাদের নিঃশর্ত মুক্তি ও সত্যকার দোষীদের উপযুক্ত সাঁজা এ ক্ষেত্রে ইতিবাচক পদক্ষেপ হতে পারে।

গবেষক, জয়েন্ট ইনস্টিটিউট ফর নিউক্লিয়ার রিসার্চ
শিক্ষক, রাশিয়ান পিপলস ফ্রেন্ডশিপ ইউনিভার্সিটি, মস্কো