বীর মুক্তিযোদ্ধার কোমরে দড়ি, দায় কার?
সংবাদমাধ্যম ও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে এই ন্যাক্কারজনক ঘটনা নিয়ে ব্যাপক সমালোচনা হলেও জেলা পুলিশ সুপার নাকি বিষয়টি এখনো জানেন না বলে ডয়চে ভেলের কাছে দাবি করেছেন৷
গত শনিবার ছালেক রিকাবদারকে কোমরে দড়ি ও হ্যান্ডকাপ পরিয়ে নরসিংদীর আদালতে হাজির করা হয়৷ ওই দিন তাকে জামিনও দেয়া হয়নি৷ তবে বৃহস্পতিবার তিনি জামিনে মুক্তি পেয়েছেন৷ তাকে দড়ি বেঁধে ও হ্যান্ডকাপ পরিয়ে আদালতে নেয়ার ছবি এরইমধ্যে ভাইরাল হয়েছে৷ তার সঙ্গে আরো কয়েকজনকে এক দড়িতে বেধে আদালতে নেয়া হয়৷ তিনি শিবপুর উপজেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক৷ তার স্ত্রী বিউটি আক্তার জানান, ‘‘শুক্রবার রাতে তাকে বাড়ির ভিতর থেকে ধরে নিয়ে যায় পুলিশ৷ পরদিন তাকে দড়ি বেঁধে ও হ্যান্ডকাপ পরিয়ে আরো কয়েকজনের সঙ্গে আদালতে হাজির করা হয়৷ আমরা তখন আবেদন জানালেও জামিন হয়নি৷”
শিবপুর থানা পুলিশ জানায় তাকে নভেম্বরে দায়ের হওয়া বিস্ফোরক আইনের একটি মামলায় গ্রেপ্তার করা হয়েছে৷
তবে শিবপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা ফিরোজ তালুকদার দাবি করেন, ‘‘আমরা তাকে কোমড়ে দড়ি বাঁধিনি৷ এটা কোর্ট পুলিশ করেছে৷ তাকে আদালতে হাজির করে কোর্ট পুলিশ৷”
তবে নরসিংদী কোর্ট পুলিশের ইন্সপেক্টর দেলোয়ার হেসেন দাবী করেন, ‘‘আমরা কোমড়ে দড়ি বাঁধিনি৷ আমাদের কোর্ট হাজতে কেনো দড়িই নাই৷ শুধু হ্যান্ডকাপ আছে৷ থানা থেকে তাকে যেভাবে পাঠানো হয়েছে আমরা সেভাবেই আদালতে হাজির করেছি আমাদের কোনো দায় নেই৷”
থানা পুলিশ আর কোর্ট পুলিশ উভয়ই নরসিংদী জেলা পুলিশ সুপারের অধীন৷ পুলিশ সুপার কাজী আশরাফুল আজিমের কাছে বিষয়টি জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘‘কোনো মুক্তিযোদ্ধাকে কোমরে দড়ি বেঁধে আদালতে হাজির করার ঘটনা আমরা জানা নেই৷ আপনি যেহেতু বললেন বিষয়টি এখন আমি খোঁজ খবর নিয়ে দেখব৷”
সেক্টর কমান্ডার ফোরাম ‘৭১ নরসিংদীর সভাপতি ও সাবেক জেলা মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার মোতালিব পাঠান বলেন, ‘‘এই ঘটনায় আমি তীব্র নিন্দা ও ঘৃণা জানাই৷ এটা কোনোভাবেই গ্রহলযোগ্য নয়৷”
তার কথা, ‘‘ তিনি আমাদের থেকে ভিন্ন আদর্শের দল, বিএনপি করেন৷ তাই হয়তো পুলিশ অতি উৎসাহী হয়ে এই কাজ করেছে৷ কিন্তু তিনি ভিন্ন আদর্শের হলেও তো মুক্তিযোদ্ধা৷ মুক্তিযোদ্ধার সম্মান তো রাখতে হবে৷”
তদন্তের প্রশ্নে তিনি বলেন, ‘‘কে তদন্ত করবে আমি জানি না৷ তার পরিবার অভিযোগ করলে হয়তো হতে পারে৷ আমি বিষয়টি নিয়ে এসপি সাহেবের সঙ্গে কথা বলেছি৷ আমাদের অবস্থা হয়েছে, কইতেও পারি না, সইতেও পারি না৷”
শিবপুর উপজেলা বিএনপির সভাপতি হারিস রিকাবদার বলেন, ‘‘পুলিশ জানে যে তিনি একজন মুক্তিযোদ্ধা৷ তারা জেনে শুনেই তার কোমরে দড়ি বেঁধেছে৷ এর পিছনে হয়তো কারো ইন্ধন থাকতে পারে৷ হয়তো তিনি বিএনপি করেন, সে কারণেও হতে পারে৷ আর যে মামলায় তাকে আটক করা হয়েছে সেটা পুলিশের মামলা৷ তবে আমাদের দলের মধ্যেও স্থানীয়ভাবে সমস্যা আছে৷ সেখান থেকেও কোনো ইন্ধন ধাকতে পারে৷ কিন্তু একজন মুক্তিযোদ্ধাকে তো এভাবে অপমান করা যায় না৷”
আর শিবপুর উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি এবং বীর মুক্তিযোদ্ধা মুহসীন নাজির বলেন, ‘‘তিনি বিএনপি করুক বা অন্যদল করুক আমরা মুক্তিযোদ্ধারা ভাই ভাই৷ একসঙ্গে দেশ স্বাধীন করেছি৷ তার এই অপমানে আমি লজ্জিত৷ আমি দুঃখ প্রকাশ করছি৷ তবে এখানে বিএনপির নিজেদের মধ্যে সমস্যা আছে৷ কেউ ইন্ধন দিয়ে থাকতে পারে৷”
তিনি বলেন, ‘‘এ নিয়ে আমি প্রশাসনের সঙ্গেও কথা বলেছি৷ প্রতিবাদ জানিয়েছি৷ আমি এই ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত ও বিচার চাই৷”