মতামত

নিখিলের দিন

– চৌধুরী জহিরুল ইসলাম

সকালে বাড়ির রাস্তায় একটি ভাঙ্গা দালানের সামনে দাঁড়িয়ে রোদ পোহাচ্ছি। প্রতিবেশী জুবের প্রাতঃভ্রমণের সময় দাড়িয়ে কথা বলছিল। আলোচনার বিষয়- মানুষ কী করে দামী বিল্ডিং বানায়। সমাজে কারা-কারা নতুন বিল্ডিং বানাতে পারে!

নিখিল চন্দ্র ঘোষ পানের টুকরি মাথায় নিয়ে পাশ কেটে যাচ্ছিলেন। ভাঙা দালান দেখে ফিরে আমাদের দিকে তাকিয়ে বল্লেন- বিল্ডিং ভাঙা না হলে কি আর নতুন বিল্ডিং তোলা যায়? আমিও নতুন একটি তুলেছি! জিজ্ঞেস করলাম ‘কি তুলেছেন?’- নতুন টিনের ঘর!

নিখিল সপ্তায় দুই/তিন দিন মাথায় পানের টুকরি নিয়ে ৮ কিলোমিটার হেঁটে নন্দনপুর থেকে আসেন হবিগন্জে। গলি-গলি ঘুরে পান বিক্রি করেন। সপ্তায় আয় হয় ৮’শ থেকে ১ হাজার টাকা। ঘরে স্ত্রী, একটি পঙ্গু মেয়ে, একটি ছেলে কাজ করে পরের দোকানে।

নিখিলের ঘর বাঁধার টাকা কে যোগালো? জানতে চাইলে বললেন- ব্র্যাক। ব্র্যাক থেকে ১ বছর মেয়াদে ৩০ হাজার টাকা ঋণ নিয়েছেন। কিস্তির টাকা পরিশোধ করতে হয় প্রতি মাসে ৩৩০০ টাকা। বছরে ৩৯,৬০০ টাকা। তার মানে ৩০ হাজার টাকার মোট সুদের পরিমান- ৯,৬০০ টাকা।

১ লাখ টাকা ঋণ নিলে তাঁকে সুদ দিতে হত- ৩২ হাজার টাকা! চোখ বুজে বলা যায় সুদের হার ৩২% ?? এখন প্রশ্ন দেখা দেয়- ড. মোহাম্মদ ইউনূসকে এক হাত দেখানোর সময় শেখ হাসিনা যে বলেছিলেন- ‘রক্তচোষা’, ‘দানব’, ‘সুদখোর’ ইত্যাদি, সেই সুদখোরদের কাছেই যেতে হচ্ছে গরীব মানুষদের!

গরীব মানুষেরা জিম্মি এখনো সুদখোরদের হাতেই। আর ধনী কর্পোরেট হাউজগুলো (এস আলম, বেক্সিমকো ইত্যাদি) ব্যাংক থেকে ঋণ নিয়ে খেলাপী ঋণের বোঝা চাপিয়ে দিচ্ছে আবার সেই গরীব মানুষদেরই কাঁধে!

সরকার নিজেদের শাসন পাকাপোক্ত করার জন্য যে অসম চুক্তিগুলো করছে বাইরের দেশগুলোর সঙ্গে সেসব কথা নাইবা বললাম! তাহলে নিখিলের ভাগ্য বদলাবে কী করে? খড়ের চালা থেকে টিনের চালা, উন্নতি বটে! কিন্তু সেই উন্নতিতে সরকার, দাতা সংস্থার ভূমিকা কতটুকু?

দেশে বসে নাকি এসব প্রশ্ন করা যায় না! আমি দেশে বসে, নিখিলের মুখোমুখি দাঁড়িয়েই এই গল্পখানি লিখলাম। প্রশ্নটি রাখলাম! দেশে নাঈমুল ইসলাম খাঁনের হাতে পত্রিকা আছে, মোজাম্মেল বাবুর হাতে আছে টিভি, শাইখ সিরাজের হাতে আছে ইউটিউব! আপনাদেরকে কি এসব প্রশ্ন কখনো নাড়া দেয় না?

ঢাকা, ৭ই ফেব্রুয়ারি ২০২৩