স্বাস্থ্য

ত্বকে মোড়ানো আমাদের শরীর

-মিলন কিবরিয়া

আমাদের পুরো শরীর ত্বক বা চামড়া দিয়ে মোড়ানো, মাথা থেকে শুরু করে পায়ের পাতা পর্যন্ত। এমনকি মাথার যে চুল তাও ত্বকেরই একটি ভিন্নতর রূপ।
ত্বক ছাড়া আমাদের ভাবাই যায় না। যদি চামড়া না থাকতো আমাদের কেমন দেখাতো ? ভাবো তো!
আমাদের দেহ দেখতে যে এতো সুন্দর তার একটা বড় কারণ আমাদের ত্বক। শুধু তাই নয়, ত্বক আমাদের দেয় সুরক্ষা। ত্বকের শক্ত আবরণ আমাদের ধূলা-বালি, ময়লা ও রোগ জীবাণু থেকে বাঁচায়। দরকারি লবণ ও পানি শরীরে ধরে রাখে। আমাদের শরীরের তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করে; শীতের দিনে আমাদের শরীরে তাপ ধরে রাখে, আর গরমের দিনে শরীর থেকে তাপ ছেড়ে দেয়।
ত্বক আমাদের এই পৃথিবীকে জানতে ও বুঝতে সাহায্য করে। ত্বক আমাদের দেয় স্পর্শ ও চাপের অনুভূতি। কোন বস্তু মসৃণ না রুক্ষ, শক্ত না নরম, ভিজা না শুকনো তা স্পর্শের মাধ্যমে বুঝতে পারি। ত্বকের সাহায্যে তাপমাত্রার পার্থক্য বুঝতে পারি; বুঝতে পারি চা গরম আর আইসক্রিম ঠান্ডা।
মা যখন আমাদের জড়িয়ে ধরে, চুমু দেয়; সেই উষ্ণতা আর আদরের অনুভূতি ত্বকই আমাদের জানান দেয়।
শরীরের সব জায়গায় ত্বক সমান পুরু নয়। কানের লতি, চোখের পাতার চামড়া পাতলা কিন্তু হাত ও পায়ের তালুর চামড়া মোটা। কাজের ভিন্নতার জন্য এমনটি হয়। হাত দিয়ে আমরা সব সময় কোন না কোন কাজ করছি, ফলে হাতের তালুর ওপর চাপ পড়ে বেশি, ক্ষয় হয় বেশি। আর তা সামাল দেয়ার জন্য তালুর ত্বক হয় পুরু। পায়ের তালুর উপর থাকে সারা শরীরের ভর।
প্রাণীদের মধ্যে গন্ডারের চামড়া বেশ পুরু, প্রায় ৫ সেন্টিমিটার। পুরু ত্বকের উদাহরণ হিসাবে আমরা ‘গন্ডারের চামড়া’ প্রবচন ব্যবহার করি। যাদের অনুভূতি ভোঁতা, মান-অপমান গায়ে লাগে না বা যখন কোন সহজ বিষয় বুঝতে দেরি হয় তাদের বলি, ‘কেমন গন্ডারের চামড়া’ ওর! কিন্তু সত্য হচ্ছে পুরু হলেও গন্ডারের চামড়া যথেষ্ট সংবেদী। বেচারা গন্ডার!
২.১ আমাদের রোমশ শরীর
আমাদের দেহ জুড়ে ছড়িয়ে আছে অসংখ্য লোম; গরিলা, বেবুন বা শিম্পাঞ্জির চেয়ে কম নয়। কি, শুনে খুব অবাক লাগছে তাই না! আমাদের দেহের বেশির ভাগ লোম ছোট, সরু ও নরম হওয়ায় আমরা সেভাবে খেয়াল করি না যেমনটি চোখে পড়ে অন্য প্রাণীদের ক্ষেত্রে। এই লোম ত্বকেরই একটি ভিন্নতর রূপ।
শরীরের সব অংশের লোম দেখতে একই রকম নয়, আমরা ডাকিও নানান নামে; মাথায় চুল, চোখের পাতায় পাপড়ি, বয়স্ক পুরুষ মানুষের মুখে দাড়ি, ঠোঁটের উপরে গোঁফ।
জাতি-গোষ্ঠী ও বয়স ভেদে চুলের রংও ভিন্ন হয়; কালো, বাদামী, লাল, সাদা।
যখন আমরা খুব ভয় পাই তখন আমাদের শরীরের লোমগুলো অদ্ভুত কান্ড করে। ত্বকের উপর চুপচাপ শুয়ে থাকা লোমগুলো সটান দাঁড়িয়ে পড়ে। ভূতের গল্প শুনতে শুনতে বা ভয়ের কাহিনি পড়তে পড়তে উত্তেজনায় ‘শরীরের লোম খাড়া হয়ে যায়’। যাকে বলে একেবারে ‘রোমহর্ষক’ ব্যাপার। বেশি শীত লাগলেও এমনটি হয়।
আলোকচিত্র ইন্টারনেট থেকে নেয়া।
মিলন কিবরিয়াঃ চিকিৎসক ও গল্পকার