স্বাস্থ্য

রহস্যময় আমাদের শরীর

-মিলন কিবরিয়া

Human heart with blood vessels. 3d illustration
আমাদের শরীর আমাদের কত চেনা। এই হাত, এই মুখ, এই চোখ, এই চেহারা সব মিলিয়ে আমি। প্রতিদিন খাই, ঘুমাই; নানা কাজ করি – স্কুলে যাই, পড়াশোনা করি, খেলাধুলা করি, টিভি দেখি, কম্পিউটারে সারা পৃথিবীর সাথে তাল রাখি। আনন্দে হাসি, ব্যথা পেলে কাঁদি।
আমাদের রোজকার এই সব কাজে শরীরের একাধিক অঙ্গ সব সময় কাজ করছে, এমনকি আমরা যখন ঘুমিয়ে থাকি তখনও। ঠিক ঠিক কাজ করে বলেই আমরা সুস্থ থাকি, বেঁচে থাকি। এর নড়চড় হলেই আমাদের শরীর খারাপ হয়, আমাদের অসুখ হয়।
প্রতিদিনের কাজ আমাদের কতই না সহজ মনে হয়! এই যে এখন এই লেখাটি পড়তে পারছি। মনে হচ্ছে কোন ব্যাপারই না। চোখে পড়া মাত্র পড়ে ফেলছি, বুঝতে পারছি। অথচ এই পৃষ্ঠার/স্ক্রিনের লেখা থেকে আলো আমাদের চোখে প্রবেশ করে, চোখের পিছন দিকে রেটিনায় প্রতিবিম্ব তৈরি হয়। রেটিনা থেকে তা পৌঁছে মস্তিষ্কে। মস্তিষ্ক তার তথ্য ভান্ডারের সাথে মিলিয়ে দেখে, পরিচিত ভাষা আমরা পড়তে পারি। অপরিচিত ভাষা আমরা দেখতে পেলেও পড়তে পারি না। কিন্তু এই অপরিচিত ভাষার বিষয়টিও মস্তিষ্কের তথ্য ভান্ডারে যোগ হয়। এই কাজগুলো এতই দ্রুত হয় যে আমরা পরিচিত ভাষা তর তর করে পড়ে ফেলি।
কাজের ফিরিস্তি তৈরি করলে শেষ হবে না। আর প্রতিটি কাজেই শরীরের নানান অঙ্গ নানা ভাবে কাজ করে চলেছে।
তামিম ইকবাল যখন ছক্কা হাঁকায় তখন কতগুলো কাজ একই সাথে হয় চিন্তা করতে পার! একশ কিলোমিটারেরও বেশি বেগে যে বল ধেয়ে আসছে তা ব্যাটার চোখ দিয়ে দেখতে পায়, নিমেষের মধ্যে তা মস্তিষ্কে পৌঁছে যায়, মস্তিষ্ক তা বিশ্লেষণ করে জানান দেয় কি করতে হবে; হুক, পুল না ড্রাইভ। এই তথ্য স্নায়ুতন্তুর মাধ্যমে পৌঁছে যায় মাংসপেশি ও অস্থিসন্ধিতে, ঠিকঠাক মতো ব্যাটে-বলে হলেই তবে ছক্কা। ভেবে দেখতো কতোই না অল্প সময়ের মধ্যে এতোগুলো ঘটনা ঘটে যায়!
খানিকটা দৌড়ে এসে বুকের বাম দিকে হাত দিলে টের পাওয়া যায় ধুক-পুক করে বুকের ভিতরে আমাদের হৃৎপিন্ড বিরামহীন ভাবে চলছে, কোন থামাথামি নেই। প্রতিটি স্পন্দনের সাথে সাথে হৃৎপিন্ড শরীরের শেষ প্রান্ত পর্যন্ত পৌঁছে দিচ্ছে রক্ত। এই রক্ত বয়ে নিয়ে যাচ্ছে আমাদের শরীরের প্রতিটি কোষের জন্য দরকারি পুষ্টি, শক্তি তৈরীর জন্য অক্সিজেন, আরও অনেক রাসায়নিক যৌগ যেমন হরমোন। আর এই রক্ত পরিবহনের কাজের জন্য শরীরের শেষ প্রান্ত পর্যন্ত জালের মত ছড়িয়ে আছে রক্তনালি। আঙ্গুলে একটা সুই ফুটলেও বেরিয়ে আসে রক্ত।
খাবার আমাদের প্রতিদিনই খেতে হয়, নানা ধরণের খাবার। বেঁচে থাকার জন্য সবার আগে দরকার খাবার। এই খাবার আমাদের পুষ্টি যোগায়, শক্তি যোগায়। মুখ থেকে শুরু করে পায়ুপথ পর্যন্ত খাবার দীর্ঘ পথ পাড়ি দেয়। এই পথ পাড়ি দিতে দিতে পরিপাক তন্ত্রের বিভিন্ন স্থানে ধাপে ধাপে নানান প্রক্রিয়ায় এই খাবারের পরিবর্তন হয়। এই পরিবর্তনে সাহায্য করে হরেক ধরণের পাচক রস আর হরমোন। এই পরিবর্তিত খাবার আমাদের শরীরে মিশে যায়। রক্ত তাকে পৌঁছে দেয় প্রতিটি কোষে। প্রতিটি কোষ পায় তার পুষ্টি, তার শক্তি। একই সময়ে খাবারের অদরকারী, উচ্ছিষ্ট অংশ শরীর থেকে বের হয়ে যায় মল রূপে। কি ভাবে?
এমন হাজারো জিজ্ঞাসা আমাদের মনে খেলা করে যায়। প্রশ্নের যেন শেষ নেই !
কি?
কেন?
কেমন করে?
আর এই জিজ্ঞাসার জবাবের ভিতরে লুকিয়ে আছে নানা বিস্ময়।
মাথার চুল থেকে শুরু করে পায়ের পাতা পর্যন্ত আমাদের শরীরের পরতে পরতে জড়িয়ে আছে নানা রহস্য।
আলোকচিত্র দুইটি ইন্টারনেট থেকে নেয়া।
মিলন কিবরিয়াঃ চিকিৎসক ও গল্পকার