চলমান সংবাদ

মাস্টারদা সূর্যসেনের ৯০ তম ফাঁসি দিবসে বাসদ(মার্কসবাদী) চট্টগ্রাম জেলার শ্রদ্ধাঞ্জলি

-চট্টগ্রামে সূর্যসেন স্মৃতি জাদুঘর স্থাপনসহ ব্রিটিশবিরোধী আন্দোলনের বিপ্লবীদের স্মৃতি সংরক্ষণের রাষ্ট্রীয় উদ্যোগ নিতে হবে।  

সূর্যসেনের ৯০ তম ফাঁসি দিবসে জেএসমেন হলস্থ আবক্ষ মূর্তিতে বাসদ(মার্কসবাদী) চট্টগ্রাম জেলা শাখার শ্রদ্ধাঞ্জলি।” মাস্টারদা সূর্যসেন ব্রিটিশবিরোধী লড়াইয়ে জীবন দিয়ে দেশবাসীর মনে স্বাধীনতার প্রবল স্পৃহা সৃষ্টি করেছিলেন। তিনি ছাত্র-যুবকদের বলতেন, “জন্মেছি যখন মৃত্যু তো অনিবার্য। মরবই যখন তখন সার্থক মৃত্যুবরণই শ্রেয় নয় কি? কোটি কোটি মানুষের দাসত্ব শৃঙ্খল মোচনের পথে যে মৃত্যু আসবে, তাই আমরা বরণ করব।” সূর্যসেনের সংস্পর্শে প্রীতিলতা, কল্পনা দত্তের মতো সংগ্রামী নারী চরিত্র সৃষ্টি হয়েছিল।তিনি দেশবাসীর সামনে দৃষ্টান্ত স্থাপন করতে চেয়েছিলেন, শুধু পুরুষরা নয়, নারীরাও সশস্ত্র লড়াইয়ে নেতৃত্ব দিতে পারে। গণভিত্তি তৈরির উপর তিনি জোর দিয়েছিলেন। এজন্য চট্টগ্রাম শহরসহ আশেপাশের অঞ্চলে নানা ধরনের সেবামূলক কাজ পরিচালনার জন্য কর্মীদের পাঠাতেন। তখনকার দিনে বিপ্লবীরা অস্ত্র কেনার টাকা সংগ্রহ করত কখনও কখনও ডাকাতি করে, এটাকে বলা হতো স্বদেশি ডাকাতি।সূর্যসেন এ পথ বর্জন করলেন। বললেন, “যাঁরা স্বদেশি, যাঁরা দেশের জন্য প্রাণ দেবে, তাঁরা অন্যের বাড়িতে ডাকাতি করবে কেন? তাঁরা নিজের ঘর থেকে আনবে, সেটাই তো তাঁদের আত্মত্যাগ।’’ সূর্যসেনের বিপ্লবী দলে জাতি-ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে সবার জন্য অবারিত দ্বার ছিল। মীর আহমেদ, আফসারউদ্দিন, আবদুস সাত্তার, কামালউদ্দিন আহমদ, সৈয়দুল হকের মতো মুসলিম তরুণদের বিপ্লবী হিসেবে গড়ে তুলেছিলেন। জালালাবাদ যুদ্ধের পর চার বছর আত্মগোপনকালীন সময়ের বড় অংশ ছিলেন বিভিন্ন গ্রামে গরীব মুসলিম চাষীদের পরিবারে।ব্রিটিশ,পাকিস্তান শাসনের অবসান হলেও,মাস্টারদার শোষণমুক্তির আকাঙ্ক্ষা আজও পূরণ হয়নি।  আজ যখন দেশের রাজনীতি-সমাজনীতি-শিক্ষা-সংস্কৃতি-মূল্যবোধ সমস্তকিছুতে পচন ধরেছে,  তখন সূর্যসেনের মহৎ  চরিত্র ও সংগ্রাম আমাদের পথ দেখায়।পুঁজিবাদ-সাম্রাজ্যবাদী শোষণ-শাসন থেকে মুক্তির লড়াইয়ে সূর্য সেন বিরাট প্রেরণা হয়ে থাকবেন।”

ব্রিটিশ সাম্রাজ্যবাদবিরোধী আন্দোলনের মহানায়ক মাস্টারদা সূর্যসেনের ৯০ তম ফাঁসি দিবসে আজ সকাল ৯ টায় নগরীর জেএমসেন হল প্রাঙ্গনে সূর্যসেনের আবক্ষ মূর্তিতে পুষ্পস্তবক অর্পণ ও লাল সালাম জানিয়ে শ্রদ্ধা জানিয়েছে বাসদ(মার্কসবাদী)  চট্টগ্রাম জেলা শাখা।এসময় উপস্থিত ছিলেন, বাসদ (মার্কসবাদী)  জেলা সদস্য সচিব শফিউদ্দিন কবির আবিদ, জেলা কমিটির সদস্য ও চারণ সাংস্কৃতিক কেন্দ্রের ইনচার্জ ইন্দ্রানী ভট্টাচার্য সোমা,সমাজতান্ত্রিক ছাত্র ফ্রন্টের নেতা রিপা মজুমদার,পুষ্পিতা নাথ,আবদুল্লাহ জাওয়াদ প্রমুখ।

পুষ্পস্তবক অর্পণ শেষে সংক্ষিপ্ত সভায় নেতৃবৃন্দ বলেন,‘‘ সূর্যসেন বৃটিশ সাম্রাজ্যবাদী শৃঙ্খলে পরাধীন ভারতের এক কোণে এ চট্টগ্রামে স্বাধীনতার স্ফুলিঙ্গ সৃষ্টি করেছিলেন,যা দাবানল হয়ে পুরো ভারতবর্ষে ছড়িয়ে গিয়েছিলো। দুঃখজনক হলেও সত্যি, চট্টগ্রামে সূর্যসেন বিপ্লবী অভ্যুত্থান সংঘটিত করেছিলেন,অথচ এখানে সে ঐতিহাসিক অভ্যুত্থান ও সূর্যসেনসহ বিপ্লবীদের স্মৃতিজড়িত স্থান সংরক্ষণ ও সে গৌরবজনক ইতিহাস নতুন প্রজন্মের সামনে তুলে ধরার কোন রাষ্ট্রীয় আয়োজন নেই।আমরা দাবি জানাই অবিলম্বে চট্টগ্রামে সূর্যসেন স্মৃতি জাদুঘর স্থাপন ও প্রীতিলতা,তারকেশ্বর দস্তিদারসহ বিপ্লবীদের স্মৃতি সংরক্ষণের রাষ্ট্রীয় উদ্যোগ নিতে হবে।’’

# ১৪/০১/২০২৩, চট্টগ্রাম #