চলমান সংবাদ

চট্টগ্রাম মেডিকেলে বিনামূল্যের ওষুধ সংকট

ওয়ার্ডে ভর্তি থাকা রোগীদের বিভিন্ন ওষুধের পাশাপাশি ইনজেকশনও লিখে দিয়ে থাকেন চিকিৎসকরা। যদিও প্যারাসিটামল-ওমিপ্রাজল জাতীয় কয়েকটি ছাড়া এসব ওষুধ-ইনজেকশনের অধিকাংশই হাসপাতালে মেলে না। বাইরের ওষুধের দোকান থেকেই কিনতে হয় রোগীদের। তবে বিনামূল্যের এসব ওষুধেও টান পড়েছে ওয়ার্ডে। গ্যাস্ট্রিক বা ব্যথার কমন ওষুধ-ইনজেকশনও পাচ্ছেন না রোগীরা। ক্যান্সারের মতো দামি ওষুধের কথা বলাই বাহুল্য। শুধু ওষুধ নয়, ইনজেকশনের সিরিঞ্জ, স্লাইড, প্লাস্টারের সরঞ্জামের মতো জরুরি ও অত্যাবশ্যকীয় সরঞ্জামও মিলছে না ওয়ার্ডে। বিনামূল্যের এসব সরঞ্জামও বাইরে থেকে কিনতে হচ্ছে রোগীদের।
বেশ কিছুদিন ধরে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ (চমেক) হাসপাতালের ওয়ার্ডগুলোর চিত্র এরকমই। ওয়ার্ডে দায়িত্বরতরা বলছেন, হাসপাতাল থেকে সরবরাহ না থাকায় বিনামূল্যের এসব ওষুধ-সরঞ্জাম রোগীদের সরবরাহ করা যাচ্ছে না। সরেজমিনে বিভিন্ন ওয়ার্ডে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, অন্তত দুই মাস ধরে বিনামূল্যের অধিকাংশ ওষুধের পাশাপাশি জরুরি ও অত্যাবশ্যকীয় এসব সরঞ্জামের সংকট চলছে হাসপাতালে। তবে ক্যান্সারের ওষুধ সরবরাহ বন্ধ রয়েছে সবচেয়ে বেশি সময় ধরে। অন্তত ৬/৭ মাস ধরে ক্যান্সার আক্রান্ত গরিব-অসহায় রোগীরা বিনামূল্যের ওষুধ পাওয়া থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন।

দুর্ঘটনাকবলিত রোগীদের প্লাস্টারের প্রয়োজন হলে প্লাস্টার, সফট রোল, গজ-কটন অপরিহার্য। এসব সরঞ্জামের সবটাই ওয়ার্ড থেকে সরবরাহ করা হয়ে থাকে। কিন্তু গজ-কটন থাকলেও বেশ কিছুদিন ধরে প্লাস্টার-সফট রোলসহ প্লাস্টারের অন্যান্য সরঞ্জাম মিলছে না। আর ইনজেকশন পুশ করতে অত্যাবশ্যকীয় সিরিঞ্জ ও স্লাইড মিলছে না কোনো ওয়ার্ডেই। এছাড়া ব্লাড ব্যাংকে মিলছে না ব্লাড ট্রান্সফিউশন সেট। হাসপাতালে ভর্তি থাকা রোগীদের ব্লাড ট্রান্সফিউশনের ক্ষেত্রে এ সেটটি বিনামূল্যে দেয়া হয়। কিন্তু সরবরাহ না থাকায় বেশ কিছুদিন ধরে ব্লাড ট্রান্সফিউশনের এই সেটও বাইরে থেকে কিনতে হচ্ছে রোগীদের।
ক্যান্সারের ওষুধের সংকটের কথা স্বীকার করলেও বিনামূল্যের অন্যান্য ওষুধ-সরঞ্জাম একদম না থাকার বিষয়টি সঠিক নয় বলে দাবি করেছেন চমেক হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল শামীম আহসান। হাসপাতাল পরিচালক সংবাদ মাধ্যমকে বলেন, ক্যান্সারের ওষুধ ক্রয় নিয়ে একটু জটিলতা রয়ে গেছে। যা এখনো সমাধান হয়নি। যার কারণে ক্যান্সারের ওষুধ সরবরাহ করা যাচ্ছে না। আর বিনামূল্যের অন্যান্য ওষুধ ও সরঞ্জামের কিছুটা সংকট রয়েছে ঠিকই, কিন্তু একদম না থাকার বিষয়টি সঠিক নয়। কিছু কিছু সরঞ্জাম এবার কম কেনা হয়েছিল। ফলে এই সংকট হতে পারে। এটা সাময়িক। নতুন করে ওষুধ-সরঞ্জাম ক্রয়ে এরইমধ্যে টেন্ডার প্রক্রিয়া সম্পন্ন হয়েছে। কিছুদিনের মধ্যেই এ সংকট কেটে যাবে বলে দাবি হাসপাতাল পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল শামীম আহসানের।
সংশ্লিষ্টদের সাথে কথা বলে জানা যায়, দুর্ঘটনাকবলিত রোগীদের ঠিকানা হয় অর্থোপেডিক ও সার্জারি ওয়ার্ডে। ওয়ার্ডগুলোতে কাটাছেঁড়ায় প্লাস্টার করানো অপরিহার্য ও অতি জরুরি একটি চিকিৎসা। কিন্তু এসব ওয়ার্ডে গজ-কটন ছাড়া প্লাস্টারের অন্যান্য
কোনো সরঞ্জামই মিলছে না। প্লাস্টার-সফট রোলসসহ জরুরি এসব সরঞ্জামও বাইরে থেকে কিনতে হচ্ছে রোগীদের। ওয়ার্ডে দায়িত্বরতরা জানিয়েছেন, হাসপাতাল থেকে সরবরাহ না থাকায় এসব সরঞ্জাম রোগীদের দেয়া যাচ্ছে না।
সরবরাহ না থাকায় অনেক দিন ধরে রোগীদের ক্যান্সারের ওষুধ দেয়া সম্ভব হচ্ছে না বলে জানিয়েছেন ক্যান্সার (রেডিওথেরাপি) ওয়ার্ডের প্রধান অধ্যাপক ডা. সাজ্জাদ মোহাম্মদ ইউসুফ। অন্য বেশ কয়টি ওয়ার্ডের চিকিৎসকরা জানান, গ্যাস্ট্রিক ও ব্যথার কমন কিছু ওষুধ-ইনজেকশনও রোগীদের সরবরাহ করা যাচ্ছে না। এছাড়া ইনজেকশনের সিরিঞ্জ, স্লাইড, ব্লাড ট্রান্সফিউশনের সেটসহ আরো বেশ কিছু সরঞ্জামের সরবরাহ নেই হাসপাতালে।
বিভিন্ন সরঞ্জামের সংকটের কথা স্বীকার করে
হাসপাতালের সিনিয়র স্টোর অফিসার ডা. হুমায়ুন কবীর আজাদীকে বলেন, বেশ কিছু সরঞ্জামের স্টক শেষ হয়ে যাওয়ায় সংকট দেখা দিয়েছে। তবে এরইমধ্যে টেন্ডারের প্রক্রিয়া সম্পন্ন হয়েছে। কিছুদিনের মধ্যেই সবকিছুর সংকট কেটে যাবে।
অবশ্য, ওষুধ-সরঞ্জামের সংকটের পিছনে বরাদ্দের অপ্রতুলতাও মূল কারণ মন্তব্য করে হাসপাতাল পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল শামীম আহসান বলছেন, ১৩১৩ শয্যার হিসেবে বাজেট-বরাদ্দ দিলেও রোগী থাকছে প্রায় তিন হাজার। এখন নতুন করে হাসপাতালের শয্যা সংখ্যা বেড়ে ২২’শ-তে উন্নীত হয়েছে। কিন্তু এখনো পর্যন্ত অতিরিক্ত বরাদ্দ পাওয়া যায়নি। বর্তমান বরাদ্দে যে পরিমাণ ওষুধ-সরঞ্জাম কেনা হয়, রোগীর সংখ্যা বিবেচনায় তা খুবই অপ্রতুল। তাই এ খাতে বরাদ্দের পরিমাণ আরো বাড়ানো জরুরি। বরাদ্দ বাড়লে আরো বেশি সংখ্যক রোগীকে বিনামূল্যের এসব ওষুধ-সরঞ্জাম দেয়া সম্ভব হতো বলে অভিমত হাসপাতাল পরিচালকের।

# ২৪/১২/২০২২, চট্টগ্রাম #