চলমান সংবাদ

নদী জনঅধিকার সম্পত্তি বিক্রি বা লিজ দেয়া যাবে নাঃ নদী রক্ষা কমিশনের চেয়ারম্যান ড. মনজুর আহমেদ

জাতীয় নদী রক্ষা কমিশনের চেয়ারম্যান ড. মনজুর আহমেদ চৌধুরী বলেছেন, বালুচর নদীর অংশ, নদীর জমি। নদীর জমি বিক্রি করা যাবে না। এমনকি কাউকে লিজও দেওয়া যাবে না। ব্যবসায়িক উদ্দেশ্যে ব্যবহার করা যাবে না। নদী জনঅধিকার সম্পত্তি। এখানে সকলের সমান অধিকার থাকবে। সকলের অধিকার নিশ্চিত করা না গেলে সরকার এর স্বত্ব নিজের কাছে রেখে দেবে। ডিসি, এসি ল্যান্ডসহ সংশ্লিষ্ট সকলের দায়িত্ব হচ্ছে নদীর জমি রক্ষা করা।

গতকাল মঙ্গলবার সকালে কর্ণফুলী নদীতীরের আনোয়ারার বদলপুরা এলাকা সরেজমিনে পরিদর্শনকালে তিনি এসব কথা বলেন। তিনি বলেন, সূর্যের আলো, বাতাস, সাগর, নদী, খাল-বিল এসব বিক্রি করা যায় না। সরেজমিনে এসে দেখলাম বদলপুরা মেরিন একাডেমি সড়কের পশ্চিমের পুরো এলাকা চর ও নদী। স্পষ্ট বোঝাই যাচ্ছে, কর্ণফুলী ড্রাইডকও হয়েছে নদীর জমিতে। সরেজমিনে পরিদর্শন শেষে প্রাপ্ত তথ্য-উপাত্তের ভিত্তিতে আজ বুধবার চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসকের সঙ্গে বৈঠক করে সাংবাদিকদের বিস্তারিত জানানো হবে বলে জানান তিনি।

কমিশনের চেয়ারম্যান বলেন, নদীর জমি কোনো বাণিজ্যিক বা ব্যক্তিগত কাজেও ব্যবহার করা যায় না। এটা ১ নং খাস খতিয়ানে লিপিবদ্ধ করা আছে। সরকারের এই সম্পত্তির মালিক সর্বসাধারণ। এই জমি রক্ষা করার দায়িত্ব কালেক্টর বা ডিসি, ইউএনও, এসিল্যান্ড, সার্ভেয়ারসহ সংশ্লিষ্টদের দায়িত্বের মধ্যে পড়ে। রাষ্ট্রের গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনা ছাড়া নদীর জমিতে কাউকে দীর্ঘমেয়াদী লিজ দেওয়া যাবে না, কমার্শিয়াল কাজেও এই জমি ব্যবহার করা যাবে না। এটি জনগণের জন্য উন্মুক্ত থাকবে। এই ব্যাপারে উচ্চ আদালতের বিচারপতি খাইরুল হক যুগান্তকারী রায় দিয়েছেন।

কর্ণফুলী নদী তিন কিলোমিটার প্রশস্ত ছিল উল্লেখ করে তিনি বলেন, বর্তমানে উভয় পাশে এক কিলোমিটার করে দখল করা হয়েছে। আর নদীর জমির মধ্যে কন্টেনার টার্মিনাল হতে পারে না। টার্মিনাল হবে নদীর পাড়ে। প্রয়োজনে জেটি করা যেতে পারে, কিন্তু এর ফলে নদীর গতিপথ বাধাগ্রস্ত করা যাবে না। বন্দর আইন ১৯০৮-এ জেটি নির্মাণের নির্দেশনাও দেওয়া আছে। নিজের ইচ্ছেমতো জেটি করা যাবে না। এতে বন্দর কর্তৃপক্ষের নেভিগেশন নষ্ট হয়ে যাবে। এ ব্যাপারে আমরা সকল ডকুমেন্টস পর্যালোচনা করে দেখব।

বনবিভাগের অনুমতি নিয়ে গাছ কাটা প্রসঙ্গে এই প্রতিবেদকের প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, বদলপুরা এলাকার মেরিন একাডেমি সড়কের পশ্চিমের অংশের পর থেকে বালুচর ও নদী। খতিয়ানেও এটি নদী হিসেবে শ্রেণীভুক্ত রয়েছে। কাজেই বনবিভাগ চাইলে এই চরে গাছ লাগাতে পারে। কিন্তু কঠিন যুক্তি ছাড়া বনবিভাগের গাছ কাটার অনুমতি দেওয়ার কোনো সযোগ নেই। যদি বনবিভাগকে গাছগুলো কর্তন করতে হয় তাহলে সবার আগে জমির মালিককে জানাতে হবে। জমির মালিক তো ডিসি, ইউএনও, এসিল্যান্ড। তাদেরকে না জানিয়ে কীভাবে তারা গাছগুলো কেটেছে এই বিষয়টি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা দেখবেন।

নদীর বালুচরে গাছ কেটে ফেলার বিষয়ে কমিশনের চেয়ারম্যান বলেন, বালুচরে বেড়ে ওঠা গাছও কেউ কাটতে পারে না এবং বনবিভাগও এটা কাটার অনুমতি দিতে পারে না।

এ সময় মেরিন একাডেমির কমান্ডার অধ্যক্ষ ড. সাজিদ হোসেন নদী রক্ষা কমিশনের চেয়ারম্যান ড. মনজুর আহমেদ চৌধুরীকে বলেন, মেরিন একাডেমির জেটির দুই পাশের জমিটুকু আমরা মেরিনদের খেলাধুলা ও প্রশিক্ষণের সুবিধার্তে চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসকের কাছে আবেদন করেছিলাম। এই জমিটা আমাদের বড় প্রয়োজন।
আনোয়ারা উপজেলা আওয়ামী লীগের অর্থ সম্পাদক ও স্থানীয় বাসিন্দা আনোয়ার হোসেন কমিশনের চেয়ারম্যানকে অভিযোগ করে বলেন, নদীর চরের শত শত গাছ নির্বিচারে কাটা হয়েছে। একটি প্রভাবশালী মহল এটি দখল করে শিল্পায়নের চেষ্টা করছে। এলাকার স্বার্থে বিষয়টি বিবেচনার অনুরোধ করছি।

এ সময় আনোয়ার উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) শেখ জোবায়ের আহমেদ বলেন, এই জায়গাটি আমরা বেজাকে বন্দোবস্ত দিয়েছি। আইনত বেজা এই জায়গার মালিক। এখন বেজার সাথে তৃতীয় পক্ষের কোনো চুক্তি হয়েছে। এদিকে গাছগুলো ছিল বনবিভাগের। তাদের মধ্যে কোনো একটা আলোচনা হয়েছে। কিন্তু তারা আমাদের সাথে কোনো রকমের আলোচনা না করেই তৃতীয় পক্ষকে (কর্ণফুলী ড্রাইডক) গাছ কাটার অনুমতি দিয়েছে, যার কারণে আমরা এ বিষয়ে কিছু জানতাম না।

পরিদর্শনকালে নদী রক্ষা কমিশনের চেয়ারম্যান ড. মনজুর আহমেদ চৌধুরীর প্রশ্নে ড্রাইডক কর্তৃপক্ষের কর্মকর্তাদের অনেকটা নিশ্চুপ ভূমিকা পালন করতে দেখা যায়।
এ সময় আনোয়ারা উপজেলার সহকারী কমিশনার (ভূমি) মুহাম্মদ আব্দুল্লাহ আল মুমিন, মেরিন একাডেমির কমান্ড্যান্ট ড. সাজিদ হোসেনসহ নদী রক্ষা কমিশনের সদস্য, সংশ্লিষ্ট প্রতিনিধি ও কর্ণফুলী ড্রাইডকের সদস্যরা উপস্থিত ছিলেন। এর আগে কমিশনের চেয়ারম্যান কর্ণফুলী ড্রাইডকসহ নদীর বিভিন্ন এলাকা পরিদর্শন করেন।