চলমান সংবাদ

চার কোটি টাকা খরচ চলেনি চারদিনও

-জাকির হোসেন রোড থেকে ব্যস্ত মোড়ে সরিয়ে নেয়ার পরামর্শ

প্রায় চার কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মিত অত্যাধুনিক ফুটওভার ব্রিজটি চারদিনও চলেনি। গত দুই বছরেরও বেশি সময় ধরে ব্রিজটিতে গেট লাগিয়ে তালা ঝুলিয়ে দেয়া হয়েছে। আর ব্রিজের উপর কয়েক স্তরে পড়েছে ধুলোবালির আস্তর। পুরো ব্যাপারটিকে একটি বিলাসী উদ্যোগ বলে মন্তব্য করে সংশ্লিষ্ট বিশেষজ্ঞরা ব্রিজটিকে ওখান থেকে সরিয়ে জিইসি মোড় কিংবা লালখান বাজার মোড়ের মতো ব্যস্ত কোনো জায়গায় স্থাপনের পরামর্শ দেয়া হয়েছে।

সূত্র জানিয়েছে, নগরীর জাকির হোসেন রোডের ডায়াবেটিস হাসপাতালের সামনে একটি ফুটওভার ব্রিজ নির্মাণ করা হয় বছর দুয়েক আগে। এটিই শহরের সবচেয়ে অত্যাধুনিক ফুটওভার ব্রিজ। চট্টগ্রামের প্রথম এস্কেলেটর ফুটওভার ব্রিজ হিসেবে এটির প্রতি মানুষের কৌতূহল ছিল অনেক। ২০২০ সালের ৩০ জানুয়ারি ব্রিজটি উদ্বোধন করেন তৎকালীন সিটি মেয়র আ জ ম নাছির উদ্দীন। পথচারীদের রাস্তা পারাপারে নিরাপত্তা এবং অসুস্থ ও বয়স্ক মানুষদের রাস্তা পারাপারের সুবিধার জন্য এস্কেলেটর ব্রিজ নির্মাণ করা হয়। এই ব্রিজটি বিদ্যুতের সাহায্যে স্বয়ংক্রিয়ভাবে উপরের দিকে উঠে পথচারীদের সিঁড়ি ভাঙার কষ্ট থেকে রক্ষা করার কথা। ৬৫ ফুট দীর্ঘ এবং ৯ ফুট প্রস্থের এই ফুটওভার ব্রিজ নির্মাণে ব্যয় হয়েছে ৩ কোটি ৯০ লাখ টাকা। ব্রিজটিতে উপরের দিকে উঠার জন্য দুইটি এস্কেলেটর লাগানো হয়।

তবে নিচের দিকে নামার জন্য রাখা হয়েছে সিঁড়ি। ওই সময় বলা হয়েছিল যে, মানুষের উপরের দিকে চড়তে কষ্ট হয় কিন্তু নিচের দিকে নামতে কোনো সমস্যা হয় না। তাই উপরের দিকে উঠার জন্য এস্কেলেটর দেয়া হয়, নিচের দিকে সিঁড়ি। ব্রিজে বিদ্যুৎ সংযোগ দেয়া হয়, লাগানো হয় সেনসর। ব্রিজটিকে এতই আধুনিক করা হয় যে, কোনো পথচারী ব্রিজের সামনে দাঁড়ানোর সাথে সাথে ব্রিজের এস্কেলেটর চালু হয়ে যাবে। পথচারী এস্কেলেটরে দাঁড়িয়ে উপরে উঠে যাবেন। কোনো পথচারী না থাকলে ব্রিজ স্বয়ংক্রিয়ভাবে বন্ধ হয়ে যাবে। বিদ্যুৎ সাশ্রয়ের জন্য এই ব্যবস্থা বলে উল্লেখ করে উদ্বোধনের দিন বলা হয়েছিল যে, ব্রিজটিতে বিদ্যুতের অপচয় হওয়ার কোনো সুযোগ নেই। এটি খুবই বিদ্যুৎ সাশ্রয়ী এবং সর্বাধুনিক একটি ব্রিজ। যা নগরবাসীর সুবিধার্থে সিটি কর্পোরেশন থেকে স্থাপন করা হয়েছে। ২০২০ সালের ৩০ জানুয়ারি বিকেলে উদ্বোধনের সময় ব্রিজটি সচল ছিল। সিটি মেয়রসহ অতিথিরা এই ব্রিজে চড়ে উপরের দিকে উঠেন। কিন্তু মাত্র দিন তিনেক পরেই এটি বন্ধ হয়ে যায়। এরপর থেকে এই ব্রিজটি আর কোনোদিন চলেনি। এমনকি এস্কেলেটর বাদ দিয়ে কোনো মানুষ হেঁটেও ব্রিজটি পার হতে পারেনি।

স্থানীয় সূত্রগুলো বলেছে, ডায়াবেটিস হাসপাতালের সামনের রাস্তাটি ব্যস্ত হলেও এপার থেকে ওপারে পারাপার হওয়ার মানুষ খুব বেশি থাকে না। অধিকাংশ মানুষই হাসপাতালে আসতে নিজেরাই টেঙি-রিকশা নিয়ে আসেন। টেঙি হাসপাতালের গেটেই মানুষকে নামিয়ে দেয়। ওখানে কোনো স্বীকৃত বাস স্টপেজ নেই। শহর এলাকার কিছু বাস দাঁড়িয়ে যাত্রী উঠানামা করলেও তা শহরের খুব ব্যস্ত এলাকা নয়। এত বিপুল অর্থ ব্যয় করে এমন একটি ফুটওভার ব্রিজ কেন যে ওখানে স্থাপন করা হয়েছিল তা নিয়ে ওই সময়ও প্রশ্ন উঠেছিল।

সংশ্লিষ্ট বিশেষজ্ঞরা বলেছেন, এই ব্রিজটিকে অনায়াসে অন্যত্র সরিয়ে নেয়া যায়। এটিকে ডায়াবেটিস হাসপাতালের সামনে থেকে সরিয়ে জিইসি মোড় কিংবা লালখান বাজারে স্থাপন করা হলে অনেক বেশি মানুষ উপকৃত হবে। নিদেনপক্ষে মহিলা কলেজ মোড়, ইস্পাহানী স্কুল এবং এমইএস কলেজের সামনে স্থাপন করলেও এর থেকে বেশি মানুষের কাজে লাগতো বলে তারা মন্তব্য করেন। কিন্তু অব্যবহৃত হয়ে পড়ে থাকা ব্রিজটিতে ধুলোবালি জমছে। নষ্ট হচ্ছে যন্ত্রপাতি। এটির মোটর কিংবা সেনসরসহ আনুষঙ্গিক যন্ত্রপাতির কী অবস্থা তাও কেউ নিশ্চিত নন।

এ ব্যাপারে চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের একজন প্রকৌশলী নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, এটি একটি বিলাসী প্রজেক্ট। এই প্রজেক্টের কোনো ভবিষ্যত নেই। শহরে যেখানে দিনভর বিদ্যুতই থাকে না, সেখানে বিদ্যুৎ চালিয়ে এস্কেলেটর ফুটওভার ব্রিজ অচিন্তনীয়। এটি চালাতে লাখ লাখ টাকার বিদ্যুৎ দরকার। এই টাকা কোত্থেকে আসবে? তিনি ব্রিজটিকে অন্যত্র সরিয়ে নেয়া জরুরি বলে মন্তব্য করে বলেন, এটির এস্কেলেটর খুলে সেখানে সাধারণ সিঁড়ি বসিয়ে অন্যত্র স্থাপন করলে মানুষ উপকৃত হবে।

বিষয়টি নিয়ে গতকাল রাতে চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের মেয়র বীর মুক্তিযোদ্ধা রেজাউল করিম চৌধুরী বলেন, ব্রিজটি ওখানে চলেনি। এমন একটি ব্রিজের কোনো প্রয়োজনও ছিল না ওখানে। আমরা ব্রিজটি বন্ধ করে রেখেছি এবং অন্যত্র সরিয়ে নেয়ার চেষ্টা করছি। মেয়র বলেন, আমি মাসখানেক আগে প্রকৌশলীদের সাথে বিষয়টি নিয়ে কথা বলেছি। আমরা শহরের কোনো জনবহুল বা ব্যস্ত জায়গায় ফুটওভার ব্রিজটি স্থাপন করবো। তবে সমস্যা হচ্ছে ব্রিজটি ওখানে যেই দৈর্ঘ্য বা সেটআপে রয়েছে ঠিক একই সেটআপে অন্যত্র বসাতে হবে। আমরা ঠিক ওই সেটআপে কোথায় ব্রিজটি বসানো যায় তা খুঁজে দেখছি।

সূত্রঃ দৈনিক আজাদী