চলমান সংবাদ

সাকা পুত্র হুম্মাম কাদেরের বক্তব্যের দায় নিচ্ছে না বিএনপি

চট্টগ্রামে বিএনপির বিভাগীয় গণসমাবেশে বক্তব্য রাখেন একাত্তরের মানবতাবিরোধী অপরাধের দায়ে ফাঁসিতে ঝুলা কুখ্যাত রাহাকার সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরীর ছেলে হুম্মাম কাদের চৌধুরী। সমাবেশে নিজেকে সালাউদ্দিন কাদেরের ছেলে হিসেবে বক্তব্য রাখার কথা বলে হুম্মাম কাদের চৌধুরী ‘নারায়ে তাকবীর’ স্লোগান দেন। এসময় তিনি আওয়ামী লীগকে ক্ষমতা ছাড়ার পর একা বাড়ি যেতে না দেওয়ারও হুমকিও দেন। বিএনপি’র কেন্দ্রীয় কমিটি সদস্য সাকা পুত্র হুম্মামের বক্তব্য ও স্লোগানের দায় নিচ্ছে না খোদ বিএনপি। হুম্মামের বক্তব্য-স্লোগানের সঙ্গে দলের কোনো সম্পৃক্ততা নেই এবং এটি তার একান্তই ব্যক্তিগত বলে মনে করছে দলটি, যেই দলের কেন্দ্রীয় সদস্য হিসেবে সমাবেশে বক্তব্য দিয়েছিলেন হুম্মাম কাদের। বুধবার (১২ অক্টোবর) বিকেলে চট্টগ্রামের পলোগ্রাউন্ডে বিএনপির বিভাগীয় সমাবেশে বক্তব্য দেওয়ার সময় হুম্মাম কাদের চৌধুরী আওয়ামী লীগকে ক্ষমতা ছাড়ার পর একা বাড়ি যেতে না দেওয়ারও হুঙ্কার দেন। এসময় তিনি তিনবার ‘নারায়ে তাকবীর’ স্লোগান দিয়ে বক্তব্য শেষ করেন, যে স্লোগান বিএনপি দলীয়ভাবে ব্যবহার করে না। সমাবেশ পরবর্তী বৃহস্পতিবার (১৩ অক্টোবর) সংবাদ সম্মেলনে এসে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরীকে সাকা পুত্রের দেয়া বক্তব্যের বিষয়ে প্রশ্ন করেন সাংবাদিকরা। বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবীর রিজভী আহমেদকে পাশে রেখে দলের অবস্থান পরিষ্কার করে আমীর খসরু বলেছেন, ‘এই স্লোগান বিএনপির রাজনীতির অংশ নয়। হুম্মামের বক্তব্যের সঙ্গে বিএনপির কোনো সম্পৃক্ততাও নেই।’ বুধবারের সমাবেশে সাকা পুত্র হুম্মাম কাদের চৌধুরী বলেছিলেন, ‘বেশি সময় নেব না। অনেক সিনিয়র নেতা এসেছেন। আপনাদের সামনে উপস্থিত হয়েছি নিজে কোন বড় নেতা হিসেবে নয়। আজকে এসেছি সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরীর ছেলে হিসেবে। আপনারা সকলে সাথে থাকলে আমাদের পরাজিত করার শক্তি কারো নেই।’ যুদ্ধাপরাধীর সন্তান হুম্মম কাদের হুঙ্কার দিয়ে বলেন, ‘এই আওয়ামী লীগ সরকারকে বলে দিতে চাই ক্ষমতা ছাড়ার পর একা বাড়িতে যেতে পারবেন না। বাধ্য করবো প্রত্যেকটা শহীদের বাড়িতে গিয়ে ক্ষমা চেয়ে যেতে হবে। যাবার আগে বাবার স্লোগান আপনাদের বলে যেতে চাই- ‘নারায়ে তাকবীর’। হুম্মাম কাদের যখন ‘নারায়ে তাকবীর’ বলে তিনবার স্লোগান দেন, জনসভাস্থল থেকে বিএনপি ও অঙ্গ-সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মীরা ‘আল্লাহু আকবর’ বলে জবাব দেন। বিষয়টিকে রাজনৈতিক প্রতিশোধের হুমকি কিনা সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে বিএনপির শীর্ষ পর্যায়ের নেতা আমীর খসরু বলেন, ‘এটা তার একান্ত ব্যক্তিগত বক্তব্য। এর সঙ্গে বিএনপির কোনো ধরনের সম্পৃক্ততা নেই। এটা কেন্দ্রীয় রাজনীতির অংশ নয়।’ এ বিষয়ে চট্টগ্রাম মহানগর বিএনপির আহবায়ক শাহাদাত হোসেন বলেন, ‘নারায়ে তাকবীর আমাদের সাংগঠনিক স্লোগান নয়। পুরো সমাবেশে এই স্লোগান আর কোনো নেতা দেননি। উনি (হুম্মাম) দিয়েছেন উনার ব্যক্তিগত জায়গা থেকে। দেয়ার আগে উনি নিজেই বলেছেন যে- বাবার স্লোগানটা দিচ্ছি। হুম্মামের বাবা সালাহউদ্দিন কাদের চৌধুরী একাত্তরে মুক্তিযুদ্ধের বিরোধিতা করে মানবতা বিরোধী বিভিন্ন অপরাধে অংশ নেন। সাকা চৌধুরীর বাবাও তৎকালীন মুসলিম লীগ নেতা ফজলুল কাদের চৌধুরীও মুক্তিযুদ্ধের বিরোধী ভূমিকায় ছিলেন। মুক্তিযুদ্ধ চলাকালেই মুক্তিযোদ্ধাদের হামলায় আহত হয়ে সালাহউদ্দিন কাদের চৌধুরী দেশ ছেড়েছিলেন। ১৯৭৫ সালে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে হত্যার পর তিনি দেশে ফিরে রাজনীতি শুরু করেন। মুসলিম লীগ, জাতীয় পার্টি, এনডিপি এবং ফাঁসিতে দণ্ডিত হওয়ার সময় পর্যন্ত তিনি বিএনপির রাজনীতিতে জড়িত ছিলেন। দলটির স্থায়ী কমিটির সদস্য ছিলেন তিনি। একাত্তরের মানবতা বিরোধীদের বিচার শুরু হলে সালাহউদ্দিন কাদেরকে গ্রেপ্তার করা হয়। মানবতা বিরোধী অপরাধের দায় প্রমাণিত হওয়ায় সাকা চৌধুরীর ফাঁসির রায় দেন আদালত। ২০১৫ সালের ২২ নভেম্বর তার ফাঁসির রায় কার্যকর হয়।

# ১৪.১০.২০২২ চট্টগ্রাম #