চলমান সংবাদ

প্লাস্টিক-পলিথিনে দূষণ বাড়ছে কর্ণফুলীতে, প্রতিদিন পড়ছে ২৫০ টন বর্জ্য

চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন এলাকায় প্রতিদিন তিন হাজার টন বর্জ্য হয়। এরমধ্যে ৮ দশমিক ৩ শতাংশ হিসাবে প্লাস্টিক-পলিথিন বর্জ্যেই ২৪৯ টন। যার ৩৫ দশমিক ৬১ শতাংশ রিসাইক্লিং যোগ্য। কিন্তু এসব প্লাস্টিক-পলিথিন বর্জ্যের মধ্যে সংগ্রহ হয় ১০৯ টন আর অসংগৃহীত থেকে যায় ১৪০ টন। অসংগৃহীত এ ৫৬ দশমিক ২২ শতাংশ (১৪০ টন) প্লাস্টিক-পলিথিন বর্জ্যেই নগরের জলাবদ্ধতার প্রধান কারণ। প্লাস্টিক বর্জ্যে মানবদেহ, পরিবেশ- প্রতিবেশের ক্ষতি নিয়ে চুয়েটের এক গবেষণায় উঠে এসেছে এমন তথ্য। চুয়েটের এ গবেষণায় বলা হয়, প্লাস্টিক-পলিথিনের কারণই চট্টগ্রামের জলাবদ্ধতা, বায়ু দূষণ, মাটি দূষণ, কর্ণফুলী নদীতে প্লাস্টিক-পলিথিনের স্তর পড়ে যাচ্ছে। এছাড়াও অব্যবস্থাপনায় পড়ে থাকা এসকল প্লাস্টিক বর্জ্যে ভয়াবহ পরিবেশ বিপর্যয়ের মুখে চট্টগ্রামের নদী খাল। এমনকি প্লাস্টিকের অনুকণা ছড়িয়ে পড়ছে মানুষ, মাছসহ বিভিন্ন প্রাণী দেহে। শনিবার (১০ সেপ্টেম্বর) চট্টগ্রাম প্রেসক্লাবে এক সংবাদ সম্মেলনের মাধ্যমে প্লাস্টিক-পলিথিন বর্জ্যের কারণে পরিবেশ দূষণ ও বিরূপ প্রভাব এবং রাস্তা নির্মাণে বিকল্প ব্যবহার শীর্ষক এক গবেষণায় এ তথ্য জানানো হয়। এতে গবেষণা প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন চট্টগ্রাম প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (চুয়েট) পুরকৌশল বিভাগের দুই শিক্ষার্থী পিয়াল বড়ুয়া ও আল আমিন। এটি তত্ত্বাবধান করেছেন চুয়েটের পুরকৌশল বিভাগের অধ্যাপক ড. স্বপন কুমার পালিত। নগরের পনেরো ওয়ার্ডে গত এক বছর ধরে এ গবেষণা চালায় চুয়েট। গবেষণা কাজে সার্বিক সহযোগিতা করেন বাংলাদেশ পরিবেশ ফোরাম। গবেষণা প্রবন্ধে বলা হয়, যত্রতত্র প্লাস্টিক ছুড়ে ফেলা, পর্যাপ্ত ডাস্টবিন না থাকা, প্রয়োজনীয় আইনি পদক্ষেপ গ্রহণের অভাব, প্লাস্টিক পোড়ানো, প্লাস্টিক দূষণের কারণ সম্পর্কে অজ্ঞতা, অপচনশীলতা ও জনসংখ্যা বৃদ্ধির কারণে প্লাস্টিক বর্জ্যে দূষণ দিন দিন বাড়ছে। আর এ প্লাস্টিক দূষণের কারণে খাবার, পানি পান, নিশ্বাসের সাথে মাইক্রোপ্লাস্টিক মানুষের দেহে প্রবেশ করছে। প্লাস্টিক পলিথিনের সাথে থাকা ক্যামিক্যাল এডিটিবস মানুষের শরীরে ঢুকে ক্যান্সার, বন্ধ্যাত্ব এবং অটিজমের মতো রোগ সৃষ্টি করছে। প্লাস্টিক পলিথিন বর্জ্য পরিবেশ এসে ক্ষতিকারক ব্যাকটেরিয়া (প্যাথোজেন) এর মতো অনুজীবকে আকর্ষণ করে যা পরবর্তীতে প্যাথেজেন ধারণকারী মাইক্রোপ্লাস্টিককনা মানুষের শরীরে প্রবেশ করে সংক্রমণের ঝুঁকি বাড়ায়। ২০৫১ সালের মধ্যে চট্টগ্রাম নগরে প্লাস্টিক ও পলিথিন বর্জ্যের পরিমাণ বেড়ে ৪২৮ টনে দাঁড়াবে। গবেষণায় আরও বলা হয়, ৩০ শতাংশ মানুষ প্লাস্টিক পলিথিনের পুর্নব্যবহার করে, ৪৬ শতাংশ মানুষ কখনও প্লাস্টিকের পুর্নব্যবহার করে না, ১১ শতাংশ মানুষ কখনো কখনো পুর্নব্যবহার করে, এবং ১৩ শতাংশ মানুষ মোটেও সচেতন নয়। সড়ক কার্পেটিং এ বিটুমিনের সাথে ৫-১০ শতাংশ প্লাস্টিক পলিথিন মেশানোর ফলে পরিবেশ দূষণ কমবে, প্রতি কিলোমিটার সড়ক কার্পেটিং এ দুই লক্ষ পঁচাত্তর হাজার টাকা সাশ্রয় হবে সেই সাথে তৈরি সড়ক দ্বিগুন স্থায়ী হবে বলে গবেষণায় উঠে আসে। সংবাদ সম্মেলনে আরও উপস্থিত ছিলেন, চুয়েটের পুরকৌশল বিভাগের অধ্যাপক ড. স্বপন কুমার পালিত, বাংলাদেশ পরিবেশ ফোরাম, চট্টগ্রাম চেপ্টারের সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক প্রদীপ কুমার দাশ, পরিবেশ সংগঠক মনোজ কুমার দেব প্রমুখ। # ১০.০৯.২০২২ চট্টগ্রাম #