মতামত

শ্রম বিধিমালা ২০১৫ সংশোধনী প্রসঙ্গে

-ফজলুল কবির মিন্টু

 

-এক-

বিগত ১ সেপ্টেম্বর শ্রম বিধিমালা ২০১৫ সংশোধনীর গ্যাজেট প্রকাশ করা হয়েছে। উক্ত সংশোধনী পড়ে আমার মনে হল কিছু কিছু জায়গায় পূর্বের তুলনায় শ্রমিকের অধিকার খর্ব করা হয়েছে আবার কিছু কিছু জায়গায় শ্রম আইন ২০০৬ এর সাথে সাংঘর্ষিক করা হয়েছে । ফলে সংশোধনীর পরেও বিধিমালাতে কিছু অসংগতি ও সংশয় রয়ে গেছে। নিচে সংশ্লিষ্ট সবার জ্ঞাতার্থে বিভিন্ন অসংগতি ও সংশয়গুলো তুলে ধরা হলঃ

১) বিধি ১১, উপবিধি ৩ এর সদ্য সংযুক্ত দফা ‘জ’ ঠিকাদারের জামানত, জামানত তহবিল পরিচালনার জন্য গঠিত বোর্ডে – শ্রমিক পক্ষের প্রতিনিধিত্ব করার জন্য “ন্যাশনাল কোঅর্ডিনেশন কমিটি ফর ওয়ার্কার্স এডুকেশন (এনসিসিডাব্লিউই) হতে একজন প্রতিনিধি নিয়োগের কথা বলা হয়েছে।

আমরা জানি, বাংলাদেশে শ্রমিকদের প্রতিনিধিত্বকারী সবচেয়ে বেশী গ্রহণযোগ্য এবং বৃহত্তম সংগঠন হচ্ছে শ্রমিক কর্মচারী ঐক্য পরিষদ –স্কপ। এনসিসিডাব্লিউই হচ্ছে স্কপের একটা এডুকেশন উইংস। যাদের অন্যতম কাজ হচ্ছে ট্রেড ইউনিয়ন কর্মীদের প্রশিক্ষণের মাধ্যমে দক্ষ সংগঠক এবং নেতা হিসাবে গড়ে তোলা। শ্রমজীবী মানুষের প্রতিনিধিত্বকারী সংগঠন স্কপকে স্কিপ করে এনসিসিডাব্লিউই থেকে প্রতিনিধি নিয়োগের বিষয়টি আমার কাছে সঠিক মনে হয়নি। তাই এনসিসিডাব্লিউই এর পরিবর্তে শ্রমিক কর্মচারী ঐক্য পরিষদ –স্কপ প্রতিস্থাপন করার সুপারিশ করছি।

২) বিধি ১৬ এর উপবিধি ২ এ সংযোজিত অনুচ্ছেদে বলা হয়েছে ঠিকাদার সংস্থার মাধ্যমে সরবরাহকৃত শ্রমিকের মূল মজুরি মোট মজুরির ৫০% এর কম হবেনা। অর্থাৎ এখন থেকে ঠিকাদার সংস্থার মাধ্যমে নিয়োজিত শ্রমিকদের মূল মজুরি মোট মজুরির ৫০% নির্দিষ্ট হয়ে যাবে। এটাও সঠিক নয় বলে আমি মনে করি। কেননা, মূল মজুরি মোট মজুরির অর্ধেক হলে এতে একজন শ্রমিক অতিরিক্ত সময়ে কাজের জন্য যে মজুরি পাবে তাতে ক্ষতিগ্রস্ত হবে। এছাড়া মূল মজুরির উপর ভিত্তি করে শ্রমিকেরা উৎসব বোনাস পায়, চাকুরি অবসানে ক্ষতিপূরণ বা গ্র্যচুইটি পায় ফলে ন্যায় সংগত মূল মজুরি নির্ধারন খুব গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। আমি “মূল মজুরি মোট মজুরির ৫০% এর কম হবেনা” এর পরিবর্তে মূল মজুরি মোট মজুরির ৫৫% এর কম হবেনা যুক্ত করার করা সুপারিশ করছি।

৩) পূর্বে বিধি ১৭ তে ঠিকাদারের অধীনে নিযুক্ত শ্রমিকদের যে কোন ধরণের চাকুরী অবসানে তাদের চাকরির ক্ষতিপূরণ বা গ্র্যাচুইটি নিশ্চিত করার লক্ষে “কর্মী সামাজিক নিরাপত্তা তহবিল” নামে যেকোন তফসিলি ব্যাংকে একটি হিসাব খুলে তাতে প্রত্যেক কর্মীর বিপরীতে কর্মীর প্রতি সম্পূর্ণ বছর চাকরির জন্য এক মাসের মূল মজুরির সমান অর্থ  অথবা ২(১০) ধারা অনুসারে গ্র্যাচুইটি (যদি প্রযোজ্য হয়) জমা রাখার কথা বলা হয়েছিল। সংশোধনীতে আগের বিষয়টি বাদ দিয়ে উল্লেখ করা হয়েছে কেবল প্রথম বছর এক মাসের মূল মজুরির সমান অর্থ জমা রাখতে হবে এবং পরবর্তী বছর হতে কেবল মূল মজুরি ১৫% হারে রাখতে হবে। এতে শ্রমিকদের সামাজিক নিরাপত্তা বিঘ্নিত হবে এবং ঠিকাদারের অধীনে নিযুক্ত শ্রমিকদের চাকুরী অবসানে ক্ষতিপূরণ পাওয়ার ক্ষেত্রে ভোগান্তিতে পড়ার যথেষ্ট সম্ভাবনা রয়েছে বলে আমি মনে করি।

– চলবে . . .

লেখকঃ সংগঠক টিইউসি, কেন্দ্রীয় কমিটি