চলমান সংবাদ

বায়েজিদ লিংক রোডে ঝুঁকিপূর্ণ স্থাপনা অপসারণে বাধা, আহত ১০

কিছুদিন আগেও সন্ত্রাসীদের অভয়ারণ্য হিসেবে পরিচিত চট্টগ্রামের সীতাকুন্ডের জঙ্গল সলিমপুরে প্রশাসন ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর উচ্চ পর্যায়ের কর্মকর্তাদের অংশগ্রহণে দফায় দফায় অভিযান চালিয়ে উদ্ধার করা হয় তিন হাজার ১০০ একর সরকারি জায়গা।

এরই ধারাবািহকতায় বায়েজিদ লিংক রোডের দুই পাশের ফুটপাত ও কর্ণফুলী গ্যাস ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি লিমিটেডের পাইপলাইনের ওপর ঝুঁকিপূর্ণ স্থাপনা অপসারণকালে সলিমপুরে অবৈধ বসবাসকারী সঙ্গে পুলিশের সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে। এতে আহত হয়েছেন ১০ জন।

বৃহস্পতিবার (৮ সেপ্টেম্বর) সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত এ অভিযান পরিচালনা করে জেলা প্রশাসন, সিডিএ, সিটি করপোরেশন, পরিবেশ অধিদফতরের। এ সময় অবৈধ বসবাসকারীরা বাধা দিলে পুলিশের সঙ্গে তাদের ধাওয়া পাল্টা ধাওয়ার ঘটনা ঘটে।

আহতরা হলেন- আমেনা বেগম (৩০), মো. আলী রাজ হাসান সাগর (২৪), আনসার (২৪), আমেনা বেগম (৫০), মো. বাবুল (৩৫), মো. পারভেজ (২৩)। আহতদের চট্টগ্রাম মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের ২০, ২৬ ও ২৭ নং ওয়ার্ডে ভর্তি করা হয়েছে। বাকি চারজন স্থানীয়ভাবে চিকিৎসা নিয়েছেন। আনসার ব্যাটেলিয়ানের সদস্য মো. বাবুল মণ্ডল আহত হয়েছেন। বাকিদের নাম পাওয়া যায়নি।

চট্টগ্রাম মেডিক্যাল কলেজ (চমেক) হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মো. শামীম বলেন, ছয়জন আহত চমেক হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন। তিনজনের চোখে আঘাত রয়েছে, একজনের পায়ে এবং একজনের পিঠে আঘাত রয়েছে। এ ছাড়া একজনের হাত ভেঙে গেছে। সবাই আশঙ্কামুক্ত।

দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে এসে অপরাধীরা আস্তানা গাড়তো এখানে। ছিন্নমূলের নামে সেখানে দখল করা হয় পাহাড়ি দুর্গম সরকারি এই খাসজমি। স্থানীয়রা ছাড়া বাইরের কেউ প্রবেশ করতে পারতো না। এ রাজ্যে প্রশাসন ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর প্রবেশও অনেকটা চ্যালেঞ্জ ছিল। সন্ত্রাসীদের সেই অভয়ারণ্য জঙ্গল সলিমপুরে উন্নয়নের মহাপরিকল্পনা বাস্তবায়ন করছে সরকার। সেখানে স্পোর্টস ভিলেজ থেকে শুরু করে হার্ট ফাউন্ডেশন হাসপাতালসহ কেন্দ্রীয় কারাগারের মতো গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনা প্রতিষ্ঠার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। কিন্তু সরকারের এই মহাপরিকল্পনা বাস্তবায়নে নানা কৌশলে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করছে ভূমিদস্যু-সন্ত্রাসরীরা। সেখানে প্রশাসন ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনী সদস্যদের অভিযানে বাধা দেয়া, আইনশৃঙ্খলা বাহিনী সদস্যদের প্রবেশ ঠেকাতে রাস্তা কেটে নালা সৃষ্টি করা, স্থানীয় বাসিন্দাদের উসকে দিয়ে অবরোধ সৃষ্টি করা, আন্দোলনের নামে ব্যস্ততম ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়ক অবরোধ করাসহ নানা প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করা হচ্ছে। প্রশাসনের আহবানে সাড়া দিয়ে সেখানকার বাসিন্দারা সরে যেতে চাইলেও পড়তে হচ্ছে সন্ত্রাসীদের বাধার মুখে।

জেলা প্রশাসন সূত্র জানায়, মহাপরিকল্পনা বাস্তবায়নের ধারাবাহিকতায় জঙ্গল সলিমপুর ও আলীনগরের বাসিন্দাদের পাহাড় ছাড়তে কয়েক দফা তাগাদা দেয় চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসন। লাল পতাকা টাঙিয়ে হুঁশিয়ারিও দেওয়া হয়। মাইকিং করে সতর্ক করা হয় তাদের। অনেকেই আলীনগর ছাড়লেও, বেশিভাগই পড়ছেন সন্ত্রাসীদের বাধার মুখে। সোমবার (৫ সেপ্টেম্বর) রাতে জঙ্গল সলিমপুরের চেকপোস্টে দায়িত্বরত চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসনের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট উমর ফারুকের সহায়তায় ১০টি পরিবারকে নিরাপদে অন্যত্রে পৌঁছে দেওয়া হয়। তারাও সন্ত্রাসীদের বাধার মুখে পড়েছিল। আজ বৃহস্পতিবারও (৮ সেপ্টেম্বর) জঙ্গল সলিমপুরের পাহাড়ে বসবাসরতদের অন্যত্র চলে যেতে সহযোগিতা করেছে জেলা প্রশাসন। সন্ত্রাসীদের বাধার মুখে যারা সলিমপুর ছেড়ে যেতে পারেনি তাদের সরে যেতে প্রশাসন আগামী শনিবার পর্যন্ত সহযোগীতা রবে। এরপর যদি কেউ অবৈধভাবে সেখানে বসবাস করে আগের চেয়েও বড় ধরনের উচ্ছেদ অভিযান চালানো হবে বলে জানিয়েছেন চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসন।

জানা গেছে, দুর্গম জঙ্গল সলিমপুরের আলীনগর পাহাড়ে ৩ হাজার ১০০ একর খাস জায়গা অবৈধভাবে দখলে নিয়ে সন্ত্রাসী রাজত্ব কায়েম করেছিল কয়েকটি গ্রুপ। এর মধ্যে বেশিরভাগ জায়গাই দখল করে রেখেছে আলীনগরের চিহ্নিত সন্ত্রাসী ইয়াছিন বাহিনী। দখল করা জায়গায় পাহাড় কেটে প্লট তৈরি করে তা শত শত মানুষের কাছে বিক্রির মাধ্যমে এই বাহিনী কোটি কোটি টাকা বাণিজ্য করেছে। ইয়াছিনকে জেলে থাকায় পলাতক রয়েছে তার বাহিনীও। যখন সরকারি নির্দেশনা মেনে জঙ্গল সলিমপুরের মানুষ অবৈধ বসতি ছাড়তে শুরু করে ঠিক তখনই হাজির ইয়াছিন বাহিনী। জঙ্গল সলিমপুর ছাড়তে বাধা দিচ্ছে তারা।

# ০৮.০৯.২০২২ চট্টগ্রাম #