চলমান সংবাদ

বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ে দেশের সর্বপ্রথম স্থাপিত শেখ কামাল আইটি বিজনেস ইনকিউবেটর

 আজ উদ্বোধন করছেন প্রধানমন্ত্রী ‘স্মার্ট বাংলাদেশ’ বিনির্মাণের পথে আরো এক ধাপ এগিয়ে বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ে দেশের সর্বপ্রথম স্থাপিত শেখ কামাল আইটি বিজনেস ইনকিউবেটর যাত্রা শুরু করছে। চট্টগ্রাম প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়-চুয়েট’এ স্থাপিত এই বিজনেস ইনকিউবেটর ২০৪১ সালের মধ্যে ‘স্মার্ট বাংলাদেশ’ বিনির্মাণের পথে সরকারের আরও একটি সফল পদক্ষেপ হিসেবে গণ্য করা হচ্ছে। চতুর্থ শিল্পবিপ্লবের চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় তথ্যপ্রযুক্তি খাতে দক্ষ গ্র্যাজুয়েট তৈরির ক্ষেত্রে এ ইনকিউবেটর ভূমিকা রাখবে এমন আশা সংশ্লিদের। তথ্যপ্রযুক্তি খাতে সফল উদ্যোক্তা তৈরি এবং জ্ঞান-ভিত্তিক কোম্পানি গড়ে তুলতে বিশ্বের নামকরা বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে এই ধরনের বিজনেস ইনকিউবেটর থাকলেও বাংলাদেশের কোনো বিশ্ববিদ্যালয়ে এটিই প্রথম। বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ে গবেষণা ও উদ্ভাবনী কার্যক্রমকে উৎসাহিত করা এবং ইন্ডাস্ট্রি-একাডেমিয়া কোলাবোরেশন আরও সমৃদ্ধ হবে বলে আশা করছেন সংশ্লিষ্টরা। এখানে বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থীদের আইডিয়াগুলোকে বাস্তবায়ন এবং একজন উদ্যোক্তা হিসেবে গড়ে উঠতে প্রয়োজনীয় গবেষণা, প্রশিক্ষণ-অবকাঠামো সহায়তা দেওয়া হবে। পাশাপাশি তথ্যপ্রযুক্তি খাতে বিশ্বব্যাপী বাংলাদেশের সুযোগ আরও অবারিত করার মাধ্যমে তথ্যপ্রযুক্তি খাতের আয় প্রত্যাশিত মাত্রা অর্জনে এই আইটি বিজনেস ইনকিউবেটর স্থাপন করা হয়েছে। চুয়েটের এই উদ্যোগটি সফল হলে পর্যায়ক্রমে দেশের অন্যান্য বিশ্ববিদ্যালয়েও এই ধরনের বিজনেস ইনকিউবেটর স্থাপন করার পরিকল্পনা রয়েছে সরকারের। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা কাল বুধবার (৬ জুলাই) সকালে গণভবন থেকে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে ‘শেখ কামাল আইটি বিজনেস ইনকিউবেটর’ উদ্বোধন করবেন। এ উপলক্ষে আয়োজিত অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী গণভবন প্রান্ত থেকে অনলাইনে যুক্ত হয়ে শেখ কামাল আইটি বিজনেস ইনকিউবেটরের পাশাপাশি শেখ জামাল ডরমিটরি ও রোজী জামাল ডরমিটরির উদ্বোধন করবেন। অনুষ্ঠানে সংযুক্ত থাকবেন প্রধানমন্ত্রীর তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বিষয়ক উপদেষ্টা সজীব ওয়াজেদ জয়। স্বাগত বক্তব্য দেবেন তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলক। অনুষ্ঠানটি গণভবন, আইসিটি মন্ত্রণালয় ও চুয়েট তিন প্রান্ত থেকে একযোগে অনলাইন প্ল্যাটফর্মে অনুষ্ঠিত হবে। উদ্বোধন অনুষ্ঠানে চট্টগ্রাম প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় প্রান্ত থেকে চট্টগ্রাম-৬ সংসদীয় আসনের সংসদ সদস্য এবিএম ফজলে করিম চৌধুরী, চুয়েট’র ভাইস চ্যান্সেলর অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ রফিকুল আলম, চট্টগ্রাম বিভাগীয় কমিশনার ও জেলা প্রশাসকসহ সরকারি কর্মকর্তা, জনপ্রতিনিধি, রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব, চুয়েট’র শিক্ষক, কর্মকর্তা ও শিক্ষার্থী এবং শেখ কামাল আইটি বিজনেস ইনকিউবেটররের উপকারভোগী বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষ অংশ নেবেন। তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বিভাগের অধীনে বাংলাদেশ হাইটেক পার্ক কর্তৃপক্ষের তত্ত্বাবধানে বাস্তবায়িত হয়েছে এই বিজনেস ইনকিউবেটর প্রকল্প। ২০১৭ সালের জুলাই থেকে শুরু করে ২০২২ সালের জুন পর্যন্ত নির্ধারিত মেয়াদেই ইউনিক এই প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করা হয়। এই প্রকল্প বাস্তবায়নে ১১৭ কোটি ৯ লাখ টাকা বরাদ্দ রাখা হলেও ১১৩ কোটি ৮৭ লাখ টাকায় সমুদয় কাজ শেষ করেন সংশ্লিষ্টরা। বাকি ৩ কোটি ২২ লাখ টাকা সাশ্রয় করে রাষ্ট্রীয় কোষাগারে ফেরত দেওয়া হয়। শেখ কামাল আইটি বিজনেস ইনকিউবেটর প্রকল্পের আওতায় রাউজানের চুয়েট ক্যাম্পাসে প্রায় ৫ একর জমির ওপর ৫০ হাজার বর্গফুট আয়তনের ১০ তলা একটি ইনকিউবেশন ভবন এবং ৩৬ হাজার বর্গফুটের ৬ তলা একটি মাল্টিপারপাস প্রশিক্ষণ ভবন নির্মিত হয়েছে। ইনকিউবেশন ভবনের মধ্যে রয়েছে- স্টার্টআপ জোন, আইডিয়া/ইনোভেশন জোন, ইন্ডাস্ট্রি-একাডেমিক জোন, ব্রেইনস্ট্রর্মিং জোন, ই-লাইব্রেরি, ডাটা সেন্টার, রিসার্চ ল্যাব, বঙ্গবন্ধু কর্নার, এক্সিবিশন/প্রদর্শনী সেন্টার, ভিডিও কনফারেন্সিং কক্ষ, সভাকক্ষ ইত্যাদি। উদ্যোক্তা ও গবেষকদের কাজের সুবিধার্থে একটি আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স (এআই) ল্যাব, একটি মেশিন লার্নিং ল্যাব, একটি বিগ ডাটা ল্যাব, অপটিক্যাল ফাইবার ব্যাকবোন, একটি সাব-স্টেশন ও সোলার প্যানেল রয়েছে। এছাড়া ব্যাংক ও আইটি ফার্মের জন্য পৃথক কর্নার, অত্যাধুনিক সাইবার ক্যাফে, ফুড কোর্ট, ক্যাফেটেরিয়া, রিক্রিয়েশন জোন, মেকার স্পেস, ডিসপ্লে জোন, প্রেস/মিডিয়া কাভারেজ জোন, নিজস্ব পার্কিং সুবিধা রাখা হয়েছে। অন্যদিকে মাল্টিপারপাস প্রশিক্ষণ ভবনে ২৫০ জন ধারণক্ষমতার সুসজ্জিত অডিটোরিয়াম এবং ৩০ জনের ধারণক্ষমতার পৃথক ৮টি কম্পিউটার ল্যাব কাম সেমিনার কক্ষ রয়েছে। পাশাপাশি প্রতিটি ২০ হাজার বর্গফুট আয়তনের ৪ তলা পৃথক দুইটি (১টি নারী ও ১টি পুরুষ) আবাসিক ডরমিটরি ভবন নির্মিত হয়েছে। প্রতিটি ডরমিটরিতে ৪০টি কক্ষ রয়েছে। এছাড়া দুুটি মিনি সুপার কম্পিউটার সম্বলিত অত্যাধুনিক গবেষণা ল্যাব শিগগির স্থাপিত হবে। চুয়েট শেখ কামাল আইটি বিজনেস ইনকিউবেটরের পরিচালক এবং চুয়েট’র ইলেকট্রিক্যাল ও কম্পিউটার প্রকৌশল অনুষদের ডিন অধ্যাপক ড. এম মশিউল হক বলেন, আগামী ২০৪১ সালের মধ্যে স্মার্ট বাংলাদেশ বির্নিমাণে সরকারের যে অঙ্গীকার, তা বাস্তবায়নে আইটি বিজনেস ইনকিউবেটরের মতো অবকাঠামো অগ্রণী ভূমিকা রাখবে। কারণ এখান থেকেই উদ্ভাবিত হবে নতুন নতুন আইডিয়া এবং সেই সকল আইডিয়াকে বাস্তবায়নে রূপদান করার একটি ক্ষেত্র হবে এই আইটি বিজনেস ইনকিউবেটর। এই সকল অবকাঠামোই হবে আমাদের আগামীর তরুণ প্রজন্মের মেধা, বুদ্ধি ও জ্ঞানের বিকাশকেন্দ্র। চুয়েট’র উপাচার্য অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ রফিকুল আলম বলেন, মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ডায়নামিক নেতৃত্ব ডিজিটাল বিশ্বে বাংলাদেশ এখন একটা উদীয়মান নাম। গবেষণা ও প্রযুক্তি খাতে বিপ্লব ঘটাবে এই ইনকিউবেটর। চতুর্থ শিল্পবিপ্লবের চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স, ইন্টারনেট অফ থিংনস, ক্লাউড কম্পিউটিং, রোবটিক্স, থ্রিডি প্রিন্টিং, ব্লকচেইন, উচ্চক্ষমতাসম্পন্ন তারবিহীন প্রযুক্তি প্রভৃতি ক্ষেত্রে আমাদের সক্ষমতাকে আরও এগিয়ে নিতে সহায়তা করবে।
#০৫/০৭/২০২২#